আমার লেখার শিরোনাম খুব আক্রমণাত্মক মনে হলেও এটাই সত্য। নিজের অবস্থাটা একবার চিন্তা করে দেখুন। ধরুন আপনার সামনে টিএসসিতে কয়েকটা ছেলে মিলে কাউকে মারছে। আপনি কী করবেন? তাদের বাধা দিতে যাবেন নাকি চিন্তা করবেন এরা ক্ষমতাশীল দলের কেউ হতে পারে, বাধা দিতে গেলে আপনার সমস্যা হবে? অভিজিৎ হত্যার সময় কিন্তু অনেকেই ছিল সেখানে, কেউ ভয়ে এগিয়ে যায়নি। কেন যায়নি তার একটা সহজ উত্তর আছে। সবাই ভেবেছে ক্ষমতাশীল দলের ওরা মারামারি করছে, সাহায্য করতে গিয়ে নিজের ক্ষতি করার মানে হয় না। এমনকি আমি যখন প্রথম শুনেছিলাম বইমেলার সামনে মারামারি হয়েছে এবং একজনকে মেডিকেলের ইমার্জেন্সিতে আনা হয়েছে, আমি নিজেও ভেবেছিলাম ক্ষমতাশীল দলের দুই গ্রুপ মারামারি করেছে!
এই অবস্থা একদিনে তৈরি হয়নি। গত বছর আইবিএর সাবেক শিক্ষার্থী, বর্তমানে কানাডার নাগরিক, তার বোন আর মামাকে নিয়ে শহীদুল্লাহ হলের পুকুরের কাছে বেড়াতে গিয়েছিল। সেখানে তাদের উপর কিছু শিক্ষার্থী হামলা করে। মেয়েদের গায়ের জামা ছিঁড়ে ফেলে। এটার প্রতিবাদ করে ফেসবুকে কিছু লিখতে গেলেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা সাফাই গাইতে আসত। বলত, হল থেকে তাদের জিনিষপত্র চুরি যায়, অনেকে অসামাজিক কাজ করে পুকুরের সামনে! কানাডা থেকে একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চুরি করতে গেছে বা পুকুরপাড়ে অসামাজিক কাজ করতে গেছে সেটা বিশ্বাস করতে বলবেন না। এখানেই যদি শেষ হত তাহলে কথা ছিল না। বিশেষ করে প্রথম বর্ষের ছেলেরা এত বেশি উগ্র হয়ে গেছে যে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ঠিক করার নাম করে টিএসসিতে কাপলদের হেনস্থা করতে পারে যখন তখন। মাঝে মাঝেই এসব নিয়ে দুই গ্রুপে মারামারি লেগে যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নামটার সাথেই এক ধরণের ক্ষমতা জড়িয়ে গেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস ড্রাইভার পর্যন্ত উলটা পথে বাস ঘুরিয়ে টান দিতে পারে নির্ভয়ে। কারো কোন সমস্যা হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুদের ডাক দিয়ে পিটাবে এমন ভয় দেখাতে পারে। অবস্থা দেখে মনে হতে পারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন আর মেধাবীরা পড়ে না, পড়ে এক ঝাঁক সন্ত্রাসী!
আমার অনেক বন্ধু-বান্ধবী, ছোট বড় ভাই-বোন, স্টুডেন্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। আমি নিজেও হয়ত সরকারি মেডিকেলে চান্স না পেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই পড়তাম। ব্যক্তিগত কোন ক্ষোভ থেকে কথাগুলো লিখিনি। কিছুটা হতাশ হয়ে লিখেছি। আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাতে নিজেকে খুব নিরাপদ মনে হত। মনে হত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের মাঝেই আলাদা এক বাংলাদেশ। প্রগতিশীলদের মিলনমেলা- দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠ। আজকে যদি এই ঘটনা দেশে অন্য কোথাও ঘটত তাহলে এত খারাপ লাগত না। কিন্তু ঘটনাটি ঘটেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে, পুলিশ এবং সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের সামনে। দলীয় লেজুড়বৃত্তি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে খাদের কিনারে নিয়ে গেছে। তবে এত হতাশার মাঝে একটাই ভাল দিক দেখলাম। ছাত্র ইউনিয়নের এক নেতা নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মেয়েদের উদ্ধার করতে চেয়েছে। তারা প্রতিবাদ কর্মসূচি দিয়েছে। অথচ ক্ষমতাশীল দল ছাত্রলীগের কোন কর্মসূচি ছিল না। কর্মসূচি দিলে যদি সরকার বিপাকে পড়ে যায়! লেজুড়বৃত্তি করা এই দল সব সময় অপেক্ষা করে কখন সরকারের হাই কমান্ড থেকে অনুমতি আসবে, তখন তারা কিছু করবে। এমনকি সাধারণ ছাত্ররা কোন ন্যায্য আন্দোলন করতে গেলে দলীয় নির্দেশে নেতারা তাদের থামিয়ে দেয়। এভাবেই ধ্বংস হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নামের স্বপ্নের ক্যাম্পাস। এখনই যদি সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীরা এটার লাগাম টেনে না ধরে তাহলে ভবিষ্যতে এমন আরো অনেক ঘটনা দেখতে হবে।
ফুটনোটঃ পোস্ট পড়ে অনেকের মনে হতে পারে আমি এই পোস্ট দিয়ে বুঝাতে চেয়েছি যে ছাত্রলীগই নারীদের লাঞ্ছিত করেছে। আসলে আমি এটা বুঝাইনি। কাজগুলো কারা করেছে আমি তা জানি না। আমি বুঝাতে চেয়েছি যে, সরকার দলীয় ছাত্ররা ক্যাম্পাসে সবার সামনে অনেক অন্যায় করে কিন্তু তাদের বাধা দেয়া যায় না। তাই ক্যাম্পাসে অন্য কেউ অন্যায় করলেও সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীরা সেটার বিরুদ্ধে কিছু করতে ভয় পায়। ধন্যবাদ। (এডিটেড)
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই এপ্রিল, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৫১