প্রতিটি মানুষের ছোটবেলায় অনেক সঙ্গীসাথীর তালিকা থাকে। উপড়ের তলার ফাহিম থেকে শুরু করে পাশে এলাকায় ঝুপড়ি ঘরে থাকা তাহের পর্যন্ত সে সঙ্গীসাথীর তালিকায় থেকে যায়।
মানুষ যখন কিছুটা বড় হতে শুরু করে, ধীরে ধীরে তার সঙ্গীসাথী কমে যাবার সূচনা হয়। উপড়ের তলার ফাহিমদের বাবারা হঠাতই পোস্টিং নিয়ে চলে যান রাজশাহী কিংবা রাঙ্গামাটির মত প্রত্যন্ত কোন জায়গায়। সারাদিন রোদের মাঝে ক্রিকেটখেলা পাগল পাশের ফ্লাটের সায়েমরাও হঠাত করেই বন্দী হয়ে যায় কোন এক বয়েজ হোস্টেলে । আর তাহেরদের মত রুপোর চামচ নিয়ে জন্মানো সন্তানের বাবারা পুরো পরিবার নিয়ে হুট করেই কোথায় যেন লাপাত্তা হয়ে যায়।
সঙ্গীসাথীর পুরো তালিকা থেকে নামগুলো বিয়োগ হতে শুরু করে এমনি করেই।
নিঃসঙ্গ হবার এই খেলাটি প্রতিটি মানুষের জীবনেই শুরু হয়। যে শুরুর শেষ হয় মৃত্যুর ঠিক আগ মূহুর্তে। এই ভয়াবহ খেলাটির এক পর্যায়ে প্রতিটি মানুষের পরিবারের সদস্যও হঠাত করেই জড়িয়ে যায়। একই পুতুলকে কাগজের শাড়ি পড়িয়ে জুতোর বাক্সকে বাসর ঘর বানিয়ে সকল ভাইবোন মিলে একই পুতুলকে অজস্রবার বিয়ে দেয়ার মত বাচ্চামিগুলো একটি সময়ে আর থাকে না। তার বদলে জায়গা করে নেয় যার যার সীমাহীন ব্যস্ততার একটি না এড়িয়ে যেতে পারা জগত।
চোখের সামনে বছরের পর বছর দেখা মানুষগুলো হঠাতই ঝাপসা হতে শুরু করে...
চার্লি চ্যাপলিন একটি কথা বলেছিলেন... "তুমি যদি কখনো আয়নায় সামনে দাঁড়িয়ে হাসো, সেও হাসবে। যদি কখনো কাঁদো, তবে তা দেখে সে কখনো হাসবেনা.. সেও কাঁদবে"।
আমরা সবাই একাই আসি পৃথিবীতে... একাই থাকি.. একটি সময়ে একা একাই ধুম করে চলে যাই। মাঝখানে যাদের সাথে দেখা হয়, তারাও প্রত্যেকে একা। কেউ বুঝতে পারে.. কেউ পারে না...
যারা পারেনা, তারা শুধুমাত্র মাথার চুল ঠিকঠাক আছে কিনা দেখার জন্যেই কেবল আয়নার সামনে দাঁড়িয়েছে। কান্না করার সময়ে কখনো দাড়ায়নি, যতদিনে নিঃসঙ্গ হবার ভয়াবহ খেলাটির সে একজন বড় রকমের শিকার.....
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুন, ২০১৮ সকাল ১১:৫৪