somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

১৯৭১ - হুমায়ূন আহমেদ

১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ২:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

'১৯৭১' সংখ্যাটা শুনলে বাংলার
মুক্তিযুদ্ধের কথাই মনে পড়ে। সুতরাং
এই সংখ্যাটি যদি কোন উপন্যাসের
শিরোনাম হয় তাহলে অবশ্যই সে
উপন্যাসের কাহিনীর সাথে
মুক্তিযুদ্ধের সরাসরি যোগাযোগ থাকা
বা উপন্যাসটি মুক্তিযুদ্ধের
প্রেক্ষাপটে রচিত হওয়ারই কথা। এবং
বাস্তবে হুমায়ুন আহমেদের '১৯৭১'
উপন্যাসেও হয়েছে ঠিক তা-ই। হুমায়ুন
আহমেদের আরও একটি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক
উপন্যাস হল '১৯৭১'। হুমায়ুন আহমেদের
সাহিত্য জীবনের প্রথম দিককার
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপন্যাস সমূহের
একেকটিতে মুক্তিযুদ্ধের একেকটি ভিন্ন
ভিন্ন দিক ফুটে উঠেছে।
সামগ্রিকভাবে মুক্তিযুদ্ধের সার্বিক
চিত্র সেগুলোতে খুঁজে পাওয়া যাবে না।
সম্ভবত '১৯৭১'ই হল হুমায়ুন আহমেদের
প্রথম মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপন্যাস
যেখানে তিনি মুক্তিযুদ্ধ সংস্লিষ্ট
একাধিক দিকে আলোকপাত করতে
চেয়েছেন। তবে বলে রাখা জরুরি,
উপন্যাসের এক পর্যায়ে এসে লেখক
সেটি আর কন্টিনিউ করেন নাই। তাই
শেষ পর্যন্ত '১৯৭১' উপন্যাসটিতেও
কেবল একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের কিছু
খন্ডচিত্রই ফুটে উঠেছে।
এই উপন্যাসের পটভূমি হল নীলগঞ্জ
নামের একটি গ্রাম। পাঠকরা নিশ্চয়ই
খেয়াল করে থাকবেন, হুমায়ুন আহমেদের
একাধিক উপন্যাসে এই নীলগঞ্জ
গ্রামের উল্লেখ আছে। এই নীলগঞ্জ
গ্রামের নানা শ্রেণি পেশার মানুষই
হল এই উপন্যাসের বিভিন্ন চরিত্র।
সেসব চরিত্রের মধ্যে আছে বৃদ্ধ মীর
আলী, তার ছেলে বদিউজ্জামান, জয়নাল
মিয়া, আজিজ মাস্টার, ইমাম সাহেব
প্রমুখ। তবে এই উপন্যাসে সবচেয়ে
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে দেখা
যাবে পাক মিলিটারির মেজর ও তার
এক বাঙালি সহকর্মী রফিক।
মে মাসের ১ তারিখ নীলগঞ্জ গ্রামে
পাক মিলিটারি আসে। মিলিটারি এসে
বেশ কিছু হিন্দুকে হত্যা করে। আজিজ
মাস্টার, ইমাম সাহেব, জয়নাল
মিয়াদের ধরে নিয়ে যায় তাদের থেকে
জানার জন্য যে গ্রামের বনে
মুক্তিবাহিনী লুকিয়ে আছে কিনা আর
থাকলে তারা সংখ্যায় কত। ক্রমশ
মিলিটারির মেজরের বন্দিদের উপর
নিষ্ঠুরতার চিত্র প্রতীয়মান হতে
থাকে কাহিনীতে। যুদ্ধ, বাংলার মানুষ,
পাকিস্তান প্রভৃতি বিভিন্ন ইস্যুতে
মেজরের নিজস্ব থিওরি প্রকাশিত হতে
থাকে যা মূলত একাত্তরে প্রায় সকল
পাকিস্তানি হানাদারদেরই নিজস্ব
অভিমত ছিল। পাকিস্তানি
হানাদারদের দৃষ্টিভঙ্গি কতটা নিষ্ঠুর
ছিল তার উৎকৃষ্ট প্রমাণ মিলবে এই
মেজরের চরিত্রের মাধ্যমে। আর এই
উপন্যাসের সবচেয়ে রহস্যময় চরিত্র
হল রফিক যে কখনো বা নির্বিকারে
গ্রামের মানুষদের অত্যাচারিত হওয়া
দেখে চলেছে আবার কখনো মেজরের
নিষ্ঠুরতার প্রতিবাদ করতে দুঃসাহসী
হয়ে উঠছে। এই রফিক চরিত্রটিই
কাহিনীর শেষ পর্যায়ে যেভাবে
মৃত্যুভয়কে তুচ্ছ করে মেজরের মুখোমুখি
হয়, সেই ঘটনার মাধ্যমে রূপকভাবে
হলেও পাকিস্তানি হানাদারদের
বিরুদ্ধে বাঙালীর বীরত্বপূর্ণ
অবস্থানের চিত্র প্রতিফলিত হয়েছে।
নির্দিষ্ট করে এই উপন্যাসের
কাহিনীর সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেয়া
দুঃসাধ্য। তবে এটুক বলা যায়, নীলগঞ্জ
গ্রামের পটভূমিতে একাত্তরের কিছু
খন্ডচিত্র তুলে ধরেছেন লেখক। সেসব
খন্ডচিত্রকে একত্রিত করে পাঠকের
পক্ষে সম্ভব হবে একাত্তর সম্পর্কে
কিছুটা হলেও ধারণা লাভ করা।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকে উপজীব্য করে
লেখা হুমায়ুন আহমেদের উপন্যাসসমূহের
মধ্যে '১৯৭১' কখনোই অন্যতম সেরা
নয়। তারপরও লেখক এই উপন্যাসের
মাধ্যমে একাত্তরে সাধারণ বাঙালীর
অবস্থান এবং হানাদারদের
নিষ্ঠুরতাকে কিছুটা হলেও বইয়ের
পাতায় নিয়ে আসতে সমর্থ হয়েছেন।
তবে উপন্যাসটি পড়ে মনে হবে, অনেক
তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গেল। আরেকটু বড়
পরিসরে যদি লেখক কাহিনীটাকে
সাজাতেন তাহলে হয়ত আরও ডিটেইলে
একাত্তরকে উপস্থাপন করা যেত।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ২:১১
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×