ঢাকা, সেপ্টেম্বর ৭ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- ঈদে শ্রমিকদের বেতন-বোনাস দেওয়ার জন্য সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে তিন হাজার কোটি টাকা চেয়ে সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্যের জন্য ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চেয়েছে বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)।
একইসঙ্গে শ্রমিকদের বেতন-বোনাস দ্রুত দিয়ে দেওয়ার জন্য পোশাক শিল্প-মালিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
বৃহস্পতিবার ওই সংবাদ সম্মেলনের চার দিনের মাথায় সোমবার সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বিজিএমইএ ভবনে সাংবাদিকদের বলেন, "আসলে মন্দায় আমাদের যে ক্ষতি হয়েছে, মনের সেই কথাটাই আমরা বলতে চেয়েছিলাম।
"কিন্তু হতাশায় আমাদের 'এক্সপ্রেশন' (আচরণ) চেঞ্জ হয়ে গিয়েছিল এবং ল্যাঙ্গুয়েজে (ভাষা) কিছু ভুলভ্রান্তি হয়েছে।"
তিনি আরও বলেন, "ভুল মানুষের হতেই পারে। মন্দার কারণে অনেকেরই ব্যবসা খারাপ যাচ্ছে। এ ব্যাপারে স¤প্রতি অনুষ্ঠিত এক জরুরি সাধারণ সভায় মালিকদের পক্ষ থেকে চাপ ছিল। তবে আমাদের বিহেভিয়ারে কোনও সমস্যা হলে আমরা সরি," বলেন তিনি।
ব্যবসা খারাপ হওয়ার কারণ দেখিয়ে ঈদে শ্রমিকদের বেতন-বোনাস দেওয়ার জন্য সরকারের মন্দা মোকাবেলায় পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে তিন হাজার কোটি টাকা চেয়ে গত বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করে বিজিএমইএ।
সংগঠনের সভাপতি সালাম মুর্শেদী তখন বলেছিলেন, ব্যবসা ভালো না হওয়ায় ৪০ শতাংশ পোশাক কারখানা মালিক ঈদে শ্রমিকদের বেতন-বোনাস দিতে পারবে না।
শ্রমিকরা বেতন-বোনাস না পাওয়ায় পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হলে তার দায়িত্ব তারা নেবে না বলেও জানিয়েছিলেন মুর্শেদী।
বেতন-বোনাস না পাওয়ার আশঙ্কা থেকে স¤প্রতি বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন মিছিল-সমাবেশ করে। গণমাধ্যমে সমালোচনা শুরু হয়।
বিজিএমইএর বিরুদ্ধে সরকারকে ব্ল্যাকমেইল করার অভিযোগ ওঠে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও বিজিএমইএ-র বক্তব্যের সমালোচনা করেন।
অর্থমন্ত্রী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, তাদের এ দাবি মানার মতো নয়। তিনি আরও বলেছিলেন, তারা দাবি জানাতেই পারে। তবে ঈদের আগে বেতন-বোনাসের সঙ্গে প্রণোদনা প্যাকেজকে যুক্ত করা কোনোভাবেই ঠিক হয়নি। মনে হয়, এটা তারা কৌশল হিসেবে নিয়েছিল। কিন্তু এমনভাবে না বললেও পারতেন।"
এসব সমালোচনার মুখে বিজিএমইএ তার দাবি থেকে পিছু হটে রোববার রাতেই এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠায়। এরপর সোমবার সংগঠনের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের ডেকে শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, "আমরা ব্ল্যাক মেইল করতে চাইনি। এ সরকার আমাদের সরকার, জনগণের সরকার। এ সরকারকে বিব্রত করার কোন অভিপ্রায় আমাদের নেই।"
পোশাক শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করার জন্য উদ্যোক্তাদের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, "কোনও বিভ্রান্তির সুযোগ নেই এখানে। বেতন বোনাসের দায়িত্ব আমাদের। প্রত্যেক উদ্যোক্তাকে আহ্বান জানাবো, সবাই যেন সব শ্রমিককে বেতন বোনাস পরিশোধ করে দেন।"
"বেতন বোনাস কারা দিতে পারবে না সে ব্যাপারে আমরা একটা সার্ভে করছি। এক সপ্তাহের মধ্যেই এর প্রতিবেদন পাওয়া যাবে। বেতন বোনাস সবাই যাতে দিতে পারে সে ব্যাপারে আমরা সহায়তা করবো।"
গত ৩০ বছরে শ্রমিকদের অক্লান্ত পরিশ্রমে তিলে তিলে এ শিল্প গড়ে উঠেছে মন্তব্য করে মহিউদ্দিন আরো বলেন, "গত কয়েকমাস ধরে রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের প্রথম দুমাসে প্রবৃদ্ধি কমেছে। তাই এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখার জন্য সরকারের সহযোগিতা দরকার। এ সহযোগিতাকে আপনারা ভিক্ষা বলতে পারেন।"
শ্রমিকরা বেতন-বোনাস না পাওয়ায় পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হলে তার দায়িত্ব বিজিএমইএ নেবে নাÑ সালাম মুর্শেদীর এ মন্তব্যেরও বিরোধীতা করেন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি।
তিনি বলেন, "পোশাক শিল্পের কোথাও শ্রমিক অসন্তোষ হলে তার দায়িত্ব আমরা অস্বীকার করতে পারি না এবং বিষয়টিকে এড়িয়ে যেতে পারি না।"
আমার নিজস্ব ব্লগ বাংলায় দেখতে পারেন এখান হতে
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৯ রাত ১১:৪৭