somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফেব্রুয়ারি ও এলোমেলো কিছু কথা

২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ দুপুর ১২:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ফেব্রুয়ারি মাস নিয়ে তো নতুন করে কিছু বলার নাই। আমাদের মাতৃভাষার মাস, সবাই এর তাৎপর্য জানে, বোঝে, একেকজন একেকভাবে অনুভব করে।

এই ভাষার মাসে আমাদের অন্যতম একটা উৎসব বইমেলা। এইবার জানুয়ারি মাস থেকেই চিন্তা করে রেখেছিলাম বইমেলায় যাব, আগের বার যাওয়া হয়নি, এইবার অনেক বেশি ইচ্ছা যাওয়ার। কিন্তু ঢাকায় না থাকায় সময় হচ্ছিলনা। ভার্সিটি তে গণ্ডগোল হল, পরীক্ষা পিছায় গেল। সব মিলায়ে যাওয়াই হচ্ছিল না। শেষমেশ ক্লাস পরীক্ষার কথা বাদ দিয়ে রওনা দিয়ে দিলাম। বইমেলায় গেলাম। সাথে খুব ভাল একটা বন্ধু এবং আমার মামাতো ভাই ছিল। আমার এই বন্ধু অনেক সাহিত্যমনা। অনেক বই পরেছে। সে তুলনায় আমি তেমন পড়িনি। সেই যে স্কুলে অনেক বই পরা হত, তারপর আসলে পরার অভ্যাস টা কমে গেছে অনেক। তবু প্রতিবার যখন মেলায় যাই, খুব ভাল লাগে। অনেক বই একসাথে দেখার মধ্যেও অন্যরকম একটা আনন্দ আছে। তো আমরা একেকটা স্টল এর সামনে দাড়াই, আর আমার সেই সাহিত্যমনা বন্ধু একেকটা বই দেখিয়ে আমাকে জিজ্ঞেশ করে, পরেছি কিনা! অত্যন্ত লজ্জার সহিত অনেক ক্ষেত্রেই আমাকে উত্তর দিতে হচ্ছিল না! (নির্ঘাত সে মনে মনে চরম বিরক্ত হচ্ছিল!! হাহ হাহ ) যাই হোক, বইগুলো দেখে মনে হচ্ছিল, আমাদের সাহিত্য এত সমৃদ্ধ, এত এত সুন্দর বই আমাদের আছে, অথচ আমি কিনা কতকিছুই পড়িনি! আর আমি যাও বা পরেছি, আমাদের এখনকার ডিজিটাল নতুন জেনারেশন তার কতটুকু পরছে?? বই এমন একটা জিনিস, যা মানুষের ভেতরের অনুভুতি কে সবচেয়ে বেশি নাড়া দেয়! একটা ভাল বই যে কিভাবে একটা মানুষের মানসিকতা কে সুন্দর করে, কল্পনা করা যায়না! ছোটবেলা থেকেই যখন কাউকে কিছু গিফট করার ব্যাপার আসতো, তখন বই ছাড়া অন্য কোন গিফট এর কথা আমার মাথায় আসতই না! বই এর মত এতো সুন্দর উপহার বোধহয় আসলে আর কিছু হয়না! যাই হোক, মেলায় ঘোরার এক পর্যায়ে আমি কফি খাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করাতে আমার সেই সাহিত্যিমনা বন্ধু বলল “বইমেলায় কফি খেতে হয়না, কফির দাম এখানে বেশি, কফি খেলে বই এর অপমান হয়!” কথাটা অনেক ভাল লাগল, বই এর প্রতি তার ভালোবাসা দেখে ভালো লাগলো ! অবশ্য শেষপর্যন্ত আমরা বই ও কিনেছি, কফিও খেয়েছি! এরপর মেলা থেকে বের হয়ার পর ব্লাড ডোনেট করলাম! অনেক আগে থেকেই এই ব্যাপারটা খুব ভাল লাগে। প্রতিবার রক্ত দেয়ার সময় মনে হয়, আমার এই রক্তে হয়ত একজন মানুষ বেচে থাকবে! এটা এত অসাধারণ একটা অনুভুতি, যারা কখনো রক্ত দেয়নি, তারা সেটা বুঝবেনা! আমার মামাতো ভাইটা আমার দেখে প্রথম অইদিন রক্ত দিল!

লেখার শিরোনামে 'এলোমেলো' শব্দ টা ছিল, কাজেই গোছানো কথাবার্তা বলবনা। এলমেলো কিছু প্রসঙ্গ নিয়ে বলব। গতকাল একটা অনলাইন রেডিও তে ব্লগারদের একটা আড্ডা হচ্ছিল। পুরোটা যদিও শুনতে পারিনাই, শেষ অর্ধেকাংশ শুনলাম। শুধুই আড্ডাই হচ্ছিল না, বেশ কিছু বিষয় নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনাও চলছিলো। যেমন এই যে আমাদের দেশে এখন বিদেশি সংস্কৃতির আগ্রাসন চলছে। ব্লগারদের মধ্যে আমার ভার্সিটির এক বড় ভাই সুদীপ্ত ভাই ছিলেন, উনি এই ব্যাপারে বললেন, “দেখা যায় একটা শিশু কান্না করছে, তার কান্না থামানোর জন্য তার মা টিভি তে 'শিলা কি জাওয়ানি' গান ছেড়ে দিল। ব্যাপারটা খুব এ হতাশাজনক।“ আমিও পুরাপুরি একমত। আমিও নিজেও বেশ অনেকবার এই ব্যাপারটা খেয়াল করেছি। আমি আমার বংশে সবচেয়ে বড় হওয়ায় আমার অনেক পিচ্চি পিচ্চি ভাই-বোন আছে। এদের ক্ষেত্রেও দেখি, হিন্দি শ্লিল-অশ্লিল গান ছেড়ে দিয়ে তাদের খায়ানো হচ্ছে, ঘুম পাড়ানো হচ্ছে!! কেননা এই অভিভাবকরাও যে আবার হিন্দি সিরিয়াল এ আসক্ত !! একবারও এই অভিভাবকরা চিন্তা করছেনা এর প্রভাব টা কেমন হতে পারে! ছোটবেলা থেকেই যদি তাদের হিন্দি, ইংলিশ, আর বাংলার এক প্রকার মিশ্র সংস্কৃতি তে বড় করা হয়, তাহলে আমাদের দেশিও সংস্কৃতি রক্ষায় তাদের কি অবদান ই বা আমরা আশা করতে পারি??? শিশুরা হচ্ছে আমাদের মূল, যখন মুলেই অপসংস্কৃতি ঢুকে যাচ্ছে, তখন বড় মানুষদের সংস্কৃতি সংস্কৃতি বলে গলা ফাটিয়ে ফেলে কি লাভ??

আমার নিজের চোখে দেখা কিছু অভিভাবক আছে, যারা অত্যন্ত গর্বিত বোধ করেন তাদের বাচ্চাদের ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল এ ভর্তি করাতে পেরে। ভাল কথা। ইংলিশ আন্তর্জাতিক ভাষা, সেটা তো অবশ্যই শিখতে হবে। কিন্তু, একবার শুনলাম, এইসব স্কুল এর কিছু ছেলেমেয়ে আছে, যারা বাংলায় নিজের নাম পর্যন্ত নাকি ঠিকমতো লিখতে পারেনা!! আমি শুনে হতবাক হয়ে গেলাম! তারপর কিছু ছেলেমেয়েদের সাথে কথা বলে দেখলাম, কথা আসলেই সত্যি! তাদের বাংলা উচ্চারণ রীতিমতো হতাশ করার মত। তারা বেশ ভাল ইংলিশ বলতে পারে, কিন্তু বাংলা ভাল বলতে পারেনা! এমনকি বাংলায় কথা বলতে তারা স্বাচ্ছন্দ্য ও বোধ করেনা! একজন বাঙালি যদি ভাল বাংলা উচ্চারণ করতে না পারে, বাংলায় স্বাচ্ছন্দ্য বোধ না করে, তাহলে সে কিভাবে তার বুকে এই দেশটার জন্য ভালবাসা অনুভব করবে?? কিভাবে?? সে কিভাবে অনুভব করবে, কি বিশাল ত্যাগের মাধ্যমে আমরা আমাদের ভাষা কে অর্জন করেছি?? শুধু ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল এ অনেক টাকা খরচ করে পরালেই একজন শিশু মানুষ হয়না, একজন ভাল মানুষ হয়ার জন্য আরও অনেক কিছু প্রয়োজন। আর এই ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল কলেজ গুলাতে নৈতিকতার অবক্ষয় বিশেসভাবে উল্লেখে করা যায়, হবে না কেন?? তাদের তো দেশিও সংস্কৃতি চর্চা করানো হয়না, পাশ্চাত্তের অনুকরনে তাদের সর্বদা ব্যস্ত রাখা হয়েছে। শিশুদের তো যেটা দেয়া হবে, তারা সেটাই গ্রহন করবে, তাহলে অপসংস্কৃতির আগ্রাসনে এই শিশুরা যখন মাতৃভাষা, সংস্কৃতির প্রতি সত্যিকার অর্থে কোন ভালবাসা ছাড়াই বড় হবে, তখন দোষ টা আসলে কার, তাদের?? নাকি আমাদের, যারা তাদের কে ধীরে ধীরে তাদের সেভাবে বড় করে তুলছি???

আর একটা জিনিস দেখি, এখন ছোটবেলা থেকে এখন একজন শিশুর হাতে বই এর বদলে ভিডিও গেমস তুলে দেয়া হচ্ছে। যেই বয়সে তাদের মাঠে ছুটোছুটি করে খেলার কথা, অনেক সুন্দর সুন্দর বই পরার কথা, সেখানে এরা এখন প্রচণ্ড ভাওলেন্স সমৃদ্ধ ভিডিও গেমস খেলছে, ইন্টারনেট এ সময় কাটাচ্ছে। হুম, আমরা ডিজিটাল হচ্ছি, ডিজিটাল আমাদের হতে হবে অবশ্যই। কিন্তু, সবকিছুর একটা সময় থাকে, একটা বয়স থাকে । একটা ছোট বাচ্চা অবশ্যই কম্পিউটার এ কাজ করবে, ইন্টারনেট এ সময় দেবে, তবে সেটাই যদি তার একমাত্র বিনোদন হয়ে যায়, তাহলে বিপদ! তখন এই বাচ্চাগুলোর মধ্যে আবেগ, অনুভুতি, ভালবাসা তৈরি ই হবেনা। এরা বড় হবে রোবট এর মত। তখন কি আমরা এদের মধ্যে সাংস্কৃতিক মনের বিকাশ আশা করতে পারি?? আর ভিডিও গেমস এর ব্যাপারে আমার একটা জিনিস মনে হয়, সেটা হল, ভাওলেন্স এ পূর্ণ গেমস গুলো কখনো একটা শিশুর মানসিকতার বিকাশ ঘটায় না, বরং তাকে হিংস্র, অনুভূতিহীন, অমানবিক করে তোলে! আমি জানিনা, অন্যরা এ ব্যাপারে আমার সাথে একমত হবে কিনা, কিন্তু, আমার মনে হয়, শিশুদের কখনো এ ধরনের গেমস খেলতে না দিয়ে বরং ম্যাথমেটিকাল পাজল, সুডোকু টাইপ এর অনেক গেমস আছে, এগুলা দেয়া উচিত, এগুলো বুদ্ধিবৃত্তির বিকাশ ঘটায়। আর অবশ্যই তাদের হাতে সুন্দর সুন্দর সাহিত্য মান সম্পন্ন বই তুলে দেয়া উচিত। এতে ছোট থেকেই তাদের মধ্যে মৌলিকতা, মানবিকতার বিকাশ ঘটবে। সুন্দর চিন্তা চেতনার বিকাশ ঘটার জন্য বই এর থেকে সুন্দর জিনিস আর কি হতে পারে???

ব্লগারদের অই আড্ডায় আরও অনেকেই অনেক কিছু বললেন। একজন বললেন, “আমাদের দেশ কোন দিক থেকে পিছিয়ে আছে, সংস্কৃতির সব শাখায় আমরা এগিয়ে যাচ্ছি, তাহলে কেন আমাদের বিদেশি সংস্কৃতি গ্রহন করতে হবে??” আমারও সেটাই কথা। আমাদের সাহিত্য কত সমৃদ্ধ, কত বিখ্যাত উপন্যাস আছে আমাদের। কত ভাল ভাল গান হচ্ছে, সেসব বাদ দিয়ে হিন্দি গান শোনার কোন প্রয়োজন আছে কি?? অনেক ভাল ভাল ফিল্ম হচ্ছে, যেমন “রানওয়ে, মনের মানুষ, থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার, জয়জাত্রা, গেরিলা......” কি দরকার আমাদের হিন্দি ফিল্ম দেখার?? এমন তো না, যে আমাদের এখানে ভাল কিছু নাই! হাঁ, ভাল জিনিস সবসময় দেখা উচিত, গ্রহন করা উচিত, হিন্দি, ইংলিশ যাই হোক, কিন্তু সেটা অবশ্যই বাংলা কে বর্জন করে নয়, তাই না?? আমাদের দেশের সিনেমা হল এ মাঝে মাঝে হিন্দি ফিল্ম দেখান হচ্ছে, এটা কি আমাদের নিজেদের কে একধরনের অপমান করা নয়?? হতে পারে, আমাদের এখানে ভাল জিনিস হলেও তার পরিমান হয়ত কম, ভাল ফিল্ম এর সংখ্যা বাইরের দেশের থেকে হয়ত কম। হুম, হতে পারে, কিন্তু সেজন্য তো আমাদের নিজেদের চেষ্টা করতে হবে! ভাল যেসব কাজ হচ্ছে, সেগুলাকে উৎসাহিত করতে হবে। ভাল ফিল্ম হলে দেখতে হবে, ভাল গান হলে শুনতে হবে। কারন ভাল যে কাজ গুলো হচ্ছে, সেগুলো যদি উৎসাহের অভাবে হারিয়ে যায়, তাহলে কিভাবে আরও বেশি ভাল কাজ হবে?? একজন নির্মাতা ভালো একটি ফিল্ম বানালো, কিন্তু সেটা মানুষ দেখলোনা, তাহলে ঐ নির্মাতা পরবর্তীতে কীভাবে সাহস করবে আরেকটা ফীল্ম বানানোর?? আমাদের মধ্যে অনেকেই আছে, যারা অনেক সম্ভাবনাময়, তাদের কাজ করার সুযোগ করে দেয়ার ব্যাবস্থা করতে হবে, আমাদের ই কোন বন্ধু হয়ত অনেক ভাল গান গায় অথবা ভাল ছবি আঁকে, তাকে সবাই মিলে যদি উৎসাহ দেয়া যায়, সে হয়ত একদিন তার সৃষ্টিশীল কাজ দিয়ে আমাদের কে অনেক ভাল কিছু উপহার দিতে পারবে, এভাবেই তো ভাল কাজ হবে, আর এভাবেই একসময় আমরা অনেক এগিয়ে যাব, তখন অন্য কারো দিকে আমাদের তাকাতে হবেনা!

মেধার মূল্যায়ন জিনিসটা অনেক বেশি প্রয়োজন। যার যেই কাজটা করতে ভাল লাগে, তাকে সেই কাজটা করতে দিতে হয়। কারো উপর কিছু চাপিয়ে দিয়ে কখনো তাকে দিয়ে ভাল কিছু আশা করা যায়না। কিন্তু আমাদের দেশে বোধ করি এখনো মেধার মূল্যায়ন অনেক কম। অভিভাবকদের মধ্যে এই চাপিয়ে দেয়ার মনভাবটা বেশি! কেউ ডাক্তার হতে চাইলে সে তাই হবে, কারো যদি সঙ্গীতশিল্পী হয়ার ইচ্ছা থাকে, তাকে তাই হতে দিতে হবে। তাহলেই সে তার ভেতরের পুরো প্রতিভা আর শ্রম টুকু দিতে পারবে। আর একটা জাতির জন্য ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, সঙ্গীতশিল্পী, কবি, সাহিত্যিক সব কিছুর ই তো প্রয়োজন আছে, তাই নয় কি??

যাই হোক, ২১ ফেব্রুয়ারি সকালে ভার্সিটির শহীদ মিনার এ গেলাম। নিঃসন্দেহে আমাদের ভার্সিটির সবচেয়ে সুন্দর জায়গাগুলির মধ্যে একটি হচ্ছে এই শহীদ মিনার। আমাদের শহীদ মিনার টার কিছু ব্যতিক্রমধর্মী বৈশিষ্ট্য আছে। মিনারটা একটা টিলার উপরে। প্রায় ১০০ সিঁড়ি ডিঙ্গিয়ে মিনার এ উঠতে হয়! এটা মূলত করা হয়েছে তাদের প্রতি শ্রদ্ধা দেখানোর জন্য, শহীদদের স্থান যে আসলেই অনেক উপরে, তাই তাদের সন্মান দেখাতে হলে আমাদের ও উপরে উঠতে হবে – ব্যাপারটা অনেক টা এরকম। যখন ই এই সিঁড়ি গুলো ডিঙ্গিয়ে উপরে উঠি, তখন কেমন যেন একটা অনুভুতি হয়, কেমন ঠিক বলতে পারবনা, তবে অনেক সুন্দর! মিনার এ যেয়ে দেখলাম, অনেকেই ফুল দিচ্ছে, সাথে সাথে নিজেদের ছবি তুলছে। যাই হোক, শ্রদ্ধার ব্যাপারটা আসলে মনে, এটা দেখালেও যা, না দেখালেও তা। কাজেই শহীদ মিনার এ গিয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি মনের ভেতরে শ্রদ্ধা পোষণ করলে, ছবি তুলি আর যাই করি, শ্রদ্ধা শ্রদ্ধাই। আর যদি মনের ভেতরে শ্রদ্ধাটাই না থাকে, তাহলে হাজারো ছবি তুলে ফেইসবুক এ আপলোড করে আসলে কোন লাভ নাই! তবে একটা কথা বলি, কিছু ভ্রাতা-ভগিনি গণ দের মাঝে মাঝে দেখা যায়, শহীদ মিনার, ভাস্কর্য এর সামনে, আশেপাশে তাদের অশোভন প্রেমলীলায় ব্যস্ত! ভাইরে, আপুরে, এইটা শহীদ মিনার, এইটা জিয়া উদ্যান না, এটা অনেক সন্মানের জায়গা, প্রেম করার জায়গা না, প্লিজ...!!

অনেকেই হয়তো আমাকে বলবেন, “নাহ, তুমি এখনো কনজারভেটিভ, মুক্তমনা হতে পারলেনা...”
ভাইরে, মুক্তমনা হওয়ার জন্য নিজের সন্মান আর সংস্কৃতি কে বিক্রি করে দিতে হয়না...!!

আমি কিছুদিন একটা টিউশনি করাতাম, দুইটা বাচ্চা, একটা ক্লাস টু তে, একটা ক্লাস ফোর এ। মাঝে মাঝে পড়ার ফাঁকে ফাঁকে এ আমি তাদের বাইরের কিছু জিনিস সম্পরকে বলতাম। আমাদের দেশ নিয়েও বলার চেষ্টা করতাম। আমি দেখেছি, আমি যখন তাদের দেশ নিয়ে বলেছি, আমাদের স্বাধীনতা নিয়ে বলেছি, তারা তন্ময় হয়ে সেটা শুনতো। ছোট এই বয়সে তারা হয়ত সব কিছু বুঝতে পারতোনা, তবু কি আগ্রহ নিয়ে তারা শুনতো! একদিন ছোট বাচ্চাটাকে আমাদের ভাষা আন্দলনের কথা বলছিলাম। আমি বললাম, আমরা যদি পাকিস্তানিদের সাথে হেরে যেতাম, তাহলে আজকে হয়ত আমাদের উর্দু ভাষায় কথা বলতে হত। তখন সে বলল, “ ওরা তো হেরে গেছে, তাহলে ওরা এখন বাংলায় কথা বলে না কেন????” আমি তখন ঠিক কি বলব, বুঝতে পারছিলাম না! যাই হোক, এই বাচ্চাগুলি যখন আমাদের সত্যিকার ত্যাগের ইতিহাস গুলি জানবে, বুঝবে, অনুভব করতে শিখবে, তখন তাদের মধ্যে এই দেশটার জন্য কি অপরিসীম ভালবাসা জন্মাবে, চিন্তা করতেও ভালো লাগে!

২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এ গুগোল তাদের লোগো তে কোন পরিবর্তন আনলোনা! প্রথমে খুব মন খারাপ হল! বিভিন্ন বিখ্যাত ব্যক্তিদের জন্মদিন এ তারা লোগো পরিবর্তন করতে পারে, কিন্তু এতো বড় একটা দিবসে তারা সেটা করতে পারেনা! যাই হোক, এটা তাদের ব্যাপার, তারা লোগো পরিবর্তন করুক আর নাই করুক, গোটা পৃথিবী ব্যাপী আমাদের মাতৃভাষা দিবসের যে স্বীকৃতি, যে তাৎপর্য, সেটা কখনো কমে যাবেনা...!!

আমি আশাবাদী মানুষ। অনেক বেশি আশা করি। অনেক অনেক স্বপ্ন আমার মাথায় প্রতিনিয়ত ঘুরপাক খায়। কিন্তু প্রায় ই নৈরাশ্য আমাকে গ্রাস করে ফেলে, যখন দেখি, সেই স্বপ্নগুলি বাস্তবায়ন করতে পারছিনা। মনে হয়, অনেক কথাই বললাম, কিন্তু কি লাভ এইসব বলে, যদি কিছু করতেই না পারলাম?? আমার খুব ইচ্ছে করে, আমার এই দুঃখী দেশটার জন্য কিছু করি, অনেক কিছু চিন্তাও করি, কিন্তু কেন জানি শেষ পর্যন্ত কিছু করা হয়না। যাই হোক, সবাই দোয়া করবেন এবং চেষ্টা করবেন যেন, আমরা অন্ততপক্ষে নিজের অবস্থান, নিজের পেশা থেকে হলেও এই দেশটার জন্য যেন ভাল কিছু করতে পারি। সবাই নিজেরা নিজেদের কাজটুকু সুন্দরভাবে, সৎভাবে করলেই এই দেশটা আমাদের মনের মতো সুন্দর হয়ে উঠবে...।।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ দুপুর ১:৩১
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

কওমী মাদ্রাসায় আলেম তৈরী হয় না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৬২ জুমুআ, ২ নং আয়াতের অনুবাদ।
২। তিনিই উম্মীদের মধ্যে একজন রাসুল পাঠিয়েছেন তাদের মধ্য হতে, যে তাদের নিকট আবৃত করে তাঁর আয়াত সমূহ; তাদেরকে পবিত্র করে এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

'জুলাই যোদ্ধারা' কার বিপক্ষে যুদ্ধ করলো, হ্তাহতের পরিমাণ কত?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৫১



সর্বশেষ আমেরিকান ক্যু'কে অনেক ব্লগার "জুলাই বিপ্লব" ও তাতে যারা যুদ্ধ করেছে, তাদেরকে "জুলাই যোদ্ধা" ডাকছে; জুলাই যোদ্ধাদের প্রতিপক্ষ ছিলো পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, ছাত্রলীগ; জুলাই বিপ্লবে টোটেল হতাহতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×