‘’বন্ধু মানে তোমার হাতে পড়ে থাকা
ভুলে থাকা মনযাতনার অলস সে হাত
বন্ধু মানে মনের কথা, আমার ভীষণ অন্ধকারে
পাশে বসা ছায়াটাকে বলতে পারা-
বন্ধু মানে দু:সময়ে একফালি রোদ,
শক্ত বাটের শরীফ ছাতা-
বন্ধু মানে ঝুম বৃষ্টি, কাঠ বাদামের মস্ত নেশা
বন্ধু হলো দীর্ঘসময় চুপটি করে আবার বলা:
কেমন আছিস!’’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার অনেক স্মৃতি।
আমার চোখ খুলে দেবার অধ্যায় এ পাঠপর্ব; সুদীর্ঘ পথচলায় এক একটা পরাতে কিছু বিস্ময়, অনেক আনন্দ, ক্ষীর্ণ বিষাদ, বন্ধুত্বের থই থই সারি আর অসীম প্রেরণা একজন আমার প্রান্তিক প্রাপ্তি হয়ে আছে- আমার তৃপ্তির খাতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দিয়েছিল আবার ভাজ করেও দিয়েছে। আমি ভাজ করে দিয়েছি বলছি এজন্যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের দিনগুলির পর ব্যক্তিগতভাবে আমার আর কিছু পাওয়ার ছিল না।
হয়ত আমার সাথে আমার সহপাঠিরা একমত হবেন।
সেই ক্যাম্পাস, টি এস সি, কার্জন হল, ফুলার রোড, মল চত্বর, রেজিস্টার বিল্ডিং কিংবা বাস ডিপো- চোখ বুজলেই ভালোবাসার টুকরো-টাকরা।
প্রথম প্রেম, প্রথম রাত জাগা, প্রথম বয়স্ক হবার পাঠ- পরিচিত মানুষের গন্ডি পেরিয়ে অপরিচিতদের আপন করার সময়- এসবের সাথে প্রাপ্তি লেপ্টে আছে জমজ আনন্দে।
বন্ধু যে আত্মার সাথে সম্পর্কিত হয়, ঘাষ যে এতটা সবুজ হতে পারে, রাত যে এতটা মুখর হয়ে উঠে বিশ্ববিদ্যালয়ে না আসলে আমি কি তা জানতাম!
তরঙ্গে বাসে ফেরার সেই স্বর্ণালী বিকেল অথবা চারুকলার পদ্মপুকুরে কাটানো সারারাত আর রাতকে ঘিরে থাকা বাউলীয়ানা, পলাশীর মোড়ের চিতই পিঠা শুটকির ভর্তা কিংবা নীলক্ষেতের জালাল মামার হোটেল আর কোথায় পাবো বলো!
নাজিমুদ্দিন রোডের নিরব আজ একেবারে নিরব হয়ে গিয়েছে নাকি, বাজমে কাদেরিয়ের পাশের হোটেলটার গরুর গোশত এখনও অত ঝাল কিনা, শাহবাগের কোহিনূরে সিঙ্গারা এখন পাওয়া যায় কি - এসব কিন্তু ভাবনায় ঘুরাঘুরি করে আজও-নিয়ত;
অনেকবছর পর এখন এই প্রবাসে যখন কোন বন্ধুকে পাই, কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কিত কিছু তখন সবকিছু উতরে সেটাই মুখ্য হয়ে উঠে আজও...
(ক্রমশ)
ফুটনোট: শুরুতে ব্যবহৃত কবিতাটি আমার লেখা। আমার দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থে প্রকাশিত।
আর পুরো লেখাটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধু সংগঠন ডুফার রিইউনিয়ান উপলক্ষে আমার লেখা, সংক্ষেপিত।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জানুয়ারি, ২০২০ দুপুর ২:১৬