somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যে মেয়েটির সাথে জ্বীন ছিলো

২৩ শে মার্চ, ২০১৯ বিকাল ৫:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



*** কেহ ১ জন আমার পোষ্টটিকে রিফ্রেশ করছেন; নিজকে সন্মান করুন, অপ্রয়োজনীয় কাজ করবেন না ***

তখন আমি ১০ম শ্রেণীতে; এক সকালে যখন স্কুলের দিকে পা বাড়াবো, সেই সময় মা বললেন, ঘরে সরিষার তেল নেই; দৌড়ে গ্রামের শেষ প্রান্তে অবস্হিত আমু ভাইয়ের দোকানে গেলাম; আমু ভাইয়ের দোকানের একাংশ মুদি দোকান, অন্যাংশ চা দোকান। দোকানের সামনে পশ্চিম পাড়ার ১১/১২ বছরের মেয়ে, বেছু দাঁড়ায়ে মালামল দেখছে। আমি তেলের অর্ডার দেয়ার আগেই বেছু আমাকে বলে,
-কাকু, তোমার কাছে পয়সা থাকলে, আমাকে একটা লজেন্চ কিনে দিও।
আমু ভাইকে বললাম,
-আমু ভাই, বেছুকে ৪টা লজেন্চ দেন।
আমু ভাই বললো,
-ছোট ভাই, তোমার মাথায় গন্ডগোল শুরু হচ্ছে, মনে হয়! এই মেয়ের উপর এমনিতে জ্বীনের আছর আছে, এখন তুমিও উহাতে যোগ দিচ্ছ?
-আমু ভাই, আপনি দুনিয়ার আজগুবি সব খবর রাখেন। বেছুকে এককাপ চা ও একটা বেলা-বিস্কুটও দেন; আমি বিকেলে এসে পয়সা দিয়ে যাবো।
বেছু চা দোকানের সামনের বেন্চে বসে গেলো; আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো; ওর দু'চোখ খুশীতে নাচছে।
বেছু এর আগে কখনো কিছু চাহেনি কোনদিন।
আমুভাই এবার বললেন,
-ছোটভাই, খবর কিন্তু চাচীর (আমার আম্মা) কাছে চলে যাবে এক সময়।
-আম্মা এতে অখুশী হবেন না।

বেছুর আসল নাম রিজিয়া বেগম; গ্রাম্য ভাই সম্পর্কের দরিদ্র দিনমুজুরের মেয়ে। বেছুর মা আমার দেখা সবচেয়ে সুন্দরী মহিলা; দারিদ্রতা ও অপুষ্টি বেছুর সৌন্দয্য কমাতে পারেনি, মায়ের থেকেও সুন্দরী। আমাদের পুর্ব দিকের ২য় বাড়ীটি বেছুর ফুফুর বাড়ী; সকাল বিকেল বেছু আসে যায়, আসতে যেতে দেখা হয়, হাসে।

বেছু হয়তো খেয়াল রাখতো, প্রতি সপ্তাহে বেছুর সাথে দোকানের আশেপাশে দেখা হতো; সে আর কোনদিন লজেন্চ চায়নি, আমি নিজেই কিনে দিতাম; লোকজন না থাকলে সে বেন্চে বসতো, আমি ওর জন্য চায়ের অর্ডার দিয়ে চলে যেতাম। আমু ভাই সব সময় বেছুকে চা দিতো, কিন্ত প্রতিবারই আমার জন্য আফসোাস করতেন, আমার মাথায় ভুত চেপেছে।

সেই বছর, শীতের পড়ন্ত এক বিকেলে আমি স্কুল থেকে এসে, খেয়ে খামারের দিকে যাচ্ছি, দুর থেকেই দেখছি বেছু খামার বাড়ীতে প্রবেশ করছে, কোলে একটা বাচ্চা, ওর ফুফাতো বোন; সে কলাগাছের আড়ালে চলে গেলো; আমি খামারে প্রবেশ করে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখি সে কোথায়ও নেই; আমি ডাকলাম, কোন সাড়া নেই! আমার সন্দেহ হলো, এই মেয়ের আসলেই কিছুটা মানসিক সমস্যা আছে , সবাই বলে, ওর সাথে জ্বীন আছে!

আমি গরুগুলোকে দেখতে গরু ঘরের ভেতর গেলাম, দেখি বেছু গরুঘরের পেছনে; আমি বললাম,
-বেছু, তুই ওখানে কেন, ঘরের সামনে আয়।
-তুমি আমাকে দেখছ? আমার সাথে জ্বীন আছে, আমি চাইলে তুমি কিন্তু আমাকে দেখতে পাবে না।
-জ্বীন মীন থাক, এইদিকে চলে আয়, ঐদিকে গুইসাপ আছে।
সে একদৌড়ে চলে এলো।

বেছু বললো,
-কাকু, আমাকে পুকুর থেকে সিংগারা ( কাঁটাযুক্ত এক ধরণের জলজ লতার ফল) তুলে দাও!
-এই শীতকালে, বেলা ঢুবার আগে তুই আমাকে পানিতে নামাতে চাস?
-তোমার শীত লাগলে কোন অসুবিধা নেই, আমি নামবো, তুমি ফুফাতো বোনটাকে কোলে রাখ; ঘাটের দিকে আসিও না।
-পানি ঠান্ডা, তুই মারা যাবি।
-তুমি তো নামতে চাচ্ছ না।

আমি নেমে কয়েকটা সিংগারা ফল নিয়ে আসলাম; কাঁটার জন্য বেশী নেয়া সম্ভব হয়নি, পানিও অনেক ঠান্ডা। বেছু খুশীতে টগবগ, দৌড়ে গিয়ে খামার ঘর থেকে আমার লুংগি নিয়ে এসেছে। বাচ্চাটাকে আমাকে দিয়ে ষে সিংগারা খেতে লাগলো। আমি বললাম,
-বেছু, সবাই তোকে নিয়ে জ্বীনের ক্থা বলে, ব্যাপারটা কি?

কাকু, তোমাকে বলি, জ্বীন টিন কিছু না; তোমাকে তো সব কথা বলতে পারবো: গতবার জামের দিনে, দুপুরবেলা আমি ফুফুর ছাগলটাকে মাঠে দিয়ে, বড় পুকুরের কবরস্হানের জংগলের জামগাছটা থেকে জাম পাড়তে গেলাম; জাম পেকে কালো হয়ে আছে! আমি জংগলে ঢুকে, গাছের নীচে গিয়ে দেখি, উত্তর বাড়ীর আকবর ভাই গাছের ডালে বসে জাম খাচ্ছে! সে আমাকে দেখে কয়েকটা ডাল নেড়ে দিলো; জাম পড়ে গাছতলা ভরে গেছে, আমি খেয়ে কুল পাচ্ছি না। আকবর ভাই গাছ থেকে নেমে, আদর করে আমার গায়ে হাত বুলিয়ে দিলো; একটু পরে, আমাকে জড়িয়ে ধরলো; ভয়ে আমার নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম! আমি জোরে জোরে ফুফু ফুফু করে ডাক দিলাম; আকবর ভাই ভয়ে জংগলের ভেতর দিয়ে দৌড়ে উত্তর দিকে চলে গেলো; আমার হাত-পাগুলো কেমন অবশ হয়ে গেলো, আমি কোন প্রকারে জংগল থেকে বের হয়ে পুকুরে পাড় থেকে জমিতে নামার পর, আর হাঁটতে পারছিলাম না, পড়ে গেছি! দক্ষিণ বাড়ীর হাদী কাকু গরু নিয়ে ফিরছিলেন, উনি দৌড়ে এলেন; আমাকে ধরে বসালেন; তারপর কোলে করে ফুফুর ঘরে নিয়ে গেলেন। সবাই আমার থেকে জানতে চেয়েছে, কি হয়েছিলো! আমি বললাম, আমি জাম কুড়াতে জামগাছের নীচে গিয়ে ছিলাম, কালো এক লোক গাছে বসেছিলো, সে লম্বা হাত দিয়ে টেনে আমাকে গাছের ডালে তুলে ফেলে, আমি চীৎকার দেয়ার পর, সে আমাকে নীচে রেখে দেয়।

-তুই আকবরের কথা কাউকে বলিসনি?
-কাকু তোমার মাথা খারাপ! এই কথা বললে কি হবে, তুমি বুঝ না?
-এখন আমাকে যে বললি!
-তোমাকে আমি সব সময় বিশ্বাস করি।

সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মার্চ, ২০১৯ রাত ২:২৪
৩৩টি মন্তব্য ৩১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×