গত সপ্তাহে, ভারতের ঝাড়খন্ডে এক মুসলিম তরুণকে পিটিয়ে ভয়ংকরভাবে আহত করেছিল কিছু সাধারণ মানুষ; আহত হওয়ার ৪ দিন পর তার মৃত্যু হয়েছে; তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, সে মটর সাইকেল চুরি করার চেষ্টা করেছিলো! বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ভারতে চোর ধরা পড়লে, বেআইনীভাবে সাধারণ মানুষ তাকে পিটায়, এবং বেশীর ভাগ সময় হত্যা করে, কিংবা পংগু করে দেয়; এটা ভয়ানক অপরাধ।
ঝাড়খন্ডের ঘটনাটা এর থেকে বেশী; মনে হচ্ছে, সম্ভাব্য চুরির অপরাধ ছাড়াও তরুণটি মুসলিম হওয়ায়, তার উপর অতিরিক্ত অত্যাচার করা হয়েছে, এটা পরিস্কারভাবে ধর্মীয় মনোভাবের বহির্প্রকাশ; এই যুবকের উপর অত্যাচার চলাকালে, তাকে "জয় রাম, জয় হনুমান" বলতে বাধ্য করা হয়; এতে যদি তার প্রাণ বাঁচতো, রাম ও হনুমানকে কিছুটা ধন্যবাদ দেয়া যেতো; কিন্তু "জয় রাম, জয় হনুমান" বলার পরও এই তরুণটিকে হত্যা করা হয়েছে; রাম,লক্ষণ, হনুমান, কেহ তাকে রক্ষা করতে পারেনি; লজিক্যালী ভাবলে, এটা পরিস্কার যে, আক্রমণকারীরা রাম ও হনুমানকে আসলে ভগবান হিসেবে মনে স্হান দেয়নি; আক্রমণকারীরা যদি রাম ও হনুমানকে নিজেদের ভগবান হিসেবে বিশ্বাস করতো, যে তরুণ তাদের ভয়ে রাম ও হনুমানকে ভগবান ডেকেছে, তাকে তারা হত্যা করতো না; নিজেরা নরহত্যার ভয়ে থাকতো; এসব ধার্মিকেরা এসব রাম, হনুমানদের রূপকথার চরিত্র হিসেবেই নিয়েছে।
এই যুগে, ধর্ম মানুষকে রক্ষা করতে পারছে না: রাম, শাম, হনুমানরা আজ অসহায়; বরং ধর্ম মানুষের জন্য বিপদজনক হয়ে গেছে; ভারতের ১২০ কোটী মানুষের মাঝে যদি ১ জন মানুষ কিছু পরিমাণ সাধারণ মানুষের বেআইনী অত্যাচারের শিকার হয়ে প্রাণ হারায়, ও শুধুমাত্র ১ জন তরুণী বিধবা হয়ে অনিশ্চিত জীবনে প্রবেশ করে, এটা জনমনে বিশেষভাবে দাগ কাটবে না; কিন্তু যদি সংবিধানের দিক থেকে দেখা হয়, সংবিধানের আওতার বাহিরে থাকা ধর্মীয় মনোভাব ও অনুভুতি যদি 'মাত্র ১ জন নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার হরণ করে, তা'হলে ধর্ম ও ধর্মীয়দের বিরুদ্ধে ব্যবস্হা নেয়ার দরকার আছে'।
বিশ্বের সব অন্চলে ধর্মকে রিপাবলিকের সাংবিধানিক কন্ট্রোলের আওতায় আনা দরকার; বিশেষ করে ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশে। আজকের আধুনিক মানুষ যেখানে নিজের লব্ধজ্ঞানের আলোকে শক্তিশালী মানবিক সংবিধান ও আইন প্রনয়ন করে মানুষের নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, ধর্ম সেখানে একটা অলিখিত নিয়মের প্রভাব বিস্তার করে রেখেছে বহুদেশে, এবং মানুষের সুসম নাগরিক জীবনের উপর অপ্রয়োজনীয় প্রভাব রাখছে, যা সমাজকে কোনভাবে সাহায্য করার ক্ষমতা রাখে না।
সামন্তবাদ ও রাজতন্ত্রের যাঁতাকল থেকে মানসিক মুক্তির জন্য মানুষ এক সময় ধর্ম আবিস্কার করেছিলো, তখন স্হায়ী সামাজিক পরিবেশ ও সামাজিক বন্ধনের উপায় ছিলো না বলে, মানুষ পরস্পরের সাথে বন্ধনের জন্য ধর্মকে ব্যবহার করেছিলো; এখন, রিপাবলিক গঠনের ফলে, মানুষের মাঝে স্হায়ী জাতীয়তা ও জাতীয় সংস্কৃতির বন্ধন গড়ে উঠেছে; ফলে, লজিকহীন বন্ধনের মুল্য হ্রাস পেয়েছে। সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে ধর্মের প্রভাব কমিয়ে উহাকে ব্যক্তির চয়েসের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া দরকার।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুন, ২০১৯ সকাল ৯:১০