somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভ্যালেন্টাইন ডে, হারামের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি ও রেইপ রেশিও – সমান তালে চলমান -ইউসুফ সুলতান

১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রকাশিত “Report on Violence against women (VAW) Survey 2011″ বা নারীর ওপর নিপীড়ন বিষয়ক জরিপের রিপোর্ট ২০১১ -এর একটি তথ্যমতে বাংলাদেশের ২৫-২৯ বছর বয়সী পুরুষেরা ৩৪.৭৩% অবিবাহিত; এবং ৩০-৩৪ বছর বয়সী পুরুষদের ১১.১৪% অবিবাহিত। আর নারী ১৫-১৯ বছর বয়সে অবিবাহিত ৭০.৫১%, ২০-২৪ -এ ২২.১৩%, ২৫-২৯ -এ ৬.৩৯%, এবং ক্রমান্বয়ে হ্রাসের দিকে। [টেবিল ৩.১৪]

ওদিকে একজন নারী জীবনে প্রথমবার জোরপূর্বক যৌন হামলার শিকার হয়েছে: ১০-১৪ বছর বয়সে ৪১.৮২%, ১৫-১৯ বছর বয়সে ৩৪.৩২%, ২০-২৪ বছর বয়সে ৯.৮৫%, এবং ক্রমান্বয়ে হ্রাসের দিকে। [টেবিল ৫.১০]

এ দুটো ডাটাকে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ২৫-৩৪ বছর বয়সী পুরুষদেরকে অবিবাহিত রাখার ফলে সমাজে বিবাহবহির্ভূত যৌন হামলা সংঘটিত হচ্ছে। আর এসব হামলার শিকার হচ্ছে ১০-১৯ বছর বয়সী নারীরা। ২০ এর পর তা কমে যাচ্ছে কারণ তারা বিবাহিত হয়ে যাচ্ছে। লক্ষ্য করুন, ১৫-১৯ -এ যেখানে হামলার শিকার হওয়ার হার ৩৪.৩২%, ২০-২৪ -এ তা ৯.৮৫%; কারণ ২০-২৪ -এ প্রায় ৮০% নারী বিবাহিত হয়ে যাচ্ছে।

নারী-পুরুষের বিবাহের চাহিদার বয়স হওয়া সত্ত্বেও বিবাহের ব্যবস্থা না করায় এক পক্ষ হামলাকারী হিংস্র পশুতে পরিণত হচ্ছে, আর আরেক পক্ষ তাদের হিংস্রতার শিকার হচ্ছে।

জাতিসংঘের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান কর্তৃক একাধিক দেশের ওপর পরিচালিত জরিপ “WHY DO SOME MEN USE VIOLENCE AGAINST WOMEN AND HOW CAN WE PREVENT IT?” – কেন কিছু পুরুষ নারীর ওপর নিপীড়ন করে এবং কীভাবে আমরা তার প্রতিকার করতে পারি? – শিরোনামে প্রকাশিত হয়।

জরিপটিতে বাংলাদেশ সম্পর্কে ভয়াবহ তথ্য উঠে আসে। এতে দেখা যায়, গ্রাম ও শহরের (১৪.১% ও ৯.৫%) গড়ে ১০% পুরুষ জীবনে কোনো না কোনো সময় রেইপ করেছে। এদের মধ্যে ৪৭.৪% একাধিকবার এ জঘন্য কাজটি করে। [টেবিল ৪.২] এদের (শহুরে/ urban) ৯৫.১% কোনো আইনি পদক্ষেপের সম্মুখীন হয় নি। [টেবিল ৪.৩] ৮৯.২% পুরুষ এ বক্তব্যের প্রতি সম্মতি প্রকাশ করেন যে, নারী যদি প্রতিবাদ না করে, তাহলে এটা কোনো রেইপ নয়। অথচ ৯৩.৮% পুরুষ জানান যে, তারা জানেন যে, দেশে নারীর ওপর কৃত নিপীড়নের বিরুদ্ধে আইন রয়েছে। [টেবিল ৫.২]

জরিপে তথ্য সংগ্রহের সময়ের বিগত চার সপ্তাহে হতাশায় ভুগেছেন এমন পুরুষ ১৭%, আর অতিরিক্ত হতাশায় ভুগেছেন এমন পুরুষ ২৩%। [টেবিল ৫.৭]

জরিপে রেইপের ক্ষেত্রে যেসব কারণ পাওয়া গেছে সেগুলোর তালিকায় বলা হয়:

১. জীবনে একাধিক সেক্স পার্টনার থাকা।
২. পুরুষ নিজেই বাল্য বয়সে কারো দ্বারা এবিউজ হওয়া।
৩. যেসব পুরুষ ঘরের বাইরে নানা ভায়োলেন্সের সাথে জড়িত – যেমন, অস্ত্র-মাদক – তাদের সম্ভাবনা বেশি।

এবং সবশেষে ফিগার ৮.২ -এ সব কারণকে একসঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছে। তন্মধ্যে সবচেয়ে বড় কারণ হিসেবে পূর্বোক্ত প্রথম কারণ – একাধিক সেক্স পার্টনার থাকা – উল্লেখ করা হয়েছে।

এ কারণটিকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যের সাথে মেলালে বুঝা যায়, বাংলাদেশের ২৫-৩৪ বছর বয়সী যে বিরাট সংখ্যক অবিবাহিত পুরুষ রয়ে গেছে, তারাই নানা স্ট্রেসে ভুগে ১০-১৯ বছর বয়সী অবিবাহিত নারীদের ওপর এ হামলা চালায়। এবং বিবাহপূর্ব এ হামলায় অভ্যস্ত হওয়ায় বৈবাহিক জীবনে পরবর্তীতে সে হালালের স্বাদ পায় না। ফলে আবার হারামে ফিরে যেতে চায় এবং বিবাহবহির্ভূত যৌনতাকে বেছে নেয়।

অপরদিকে সঠিক সময়ে বিবাহ করে ও হালাল সম্পর্কের মাধ্যমে সন্তান গ্রহণ করে স্ট্রেসও কমিয়ে আনা যায়, তখন স্ট্রেস আর অবৈধ যৌনতার মোটিভেশন হিসেবে কাজ করে না। উল্লেখ্য, জাতিসংঘের জরিপে রেইপের মোটিভেশন হিসেবে ৬৬% পুরুষ বোরিংনেসকে (ক্লান্তিবোধ) উল্লেখ করেন। [ফিগার ৪.৩] অথচ স্ত্রী-সন্তানের হালাল সংসার সেসব বোরিংনেস দূর করে দেয় নিমিষেই। সন্তানের হাসি যে কোনো পুরুষের বছরের পর বছরের ক্লান্তি দূর করতে সক্ষম।

রেইপ ও নারীর ওপর সংঘটিত অন্যান্য ভায়োলেন্স দূরীকরণের জন্য উপযুক্ত পদক্ষেপ হলো নারী-পুরুষকে তাদের উপযুক্ত বয়সে বিবাহের ব্যবস্থা করা। এটা একই সাথে পুরুষের হিংস্রতার কারণ উপশম, এবং নারীর নিরাপত্তা। এটা না করে, হালালের প্রতি অনীহা সৃষ্টি করে হারামের প্রতি আগ্রহী করতে আজ ভ্যালেন্টাইনস ডে -সহ নানা দিবসের উপদ্রব। এসব দিবস এমন ভালবাসার কথা শেখায় যা প্রাকৃতিক নয়। প্রাকৃতিক বা স্বভাবজাত হলে তাকে আলাদা ভালবাসা-দিবস নামে আইডেন্টিফাই করার প্রয়োজন হত না।

এটা সেই হারাম ভালবাসা, যাকে আমরা যিনা নামে জানি। এটাই একটি পুরুষকে এক বা একাধিক সঙ্গীর সাথে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়াতে উদ্বুদ্ধ করে। যা রেইপ রেশিও বাড়ার অন্যতম প্রধান কারণ। তার মানে, যতদিন এটা চলবে, রেইপ রেশিও বাড়বে সমান তালে, কমবে না।

যিনাকে সরাসরি যিনা বলা হলে মানুষ গ্রহণ করবে না। তাই তা ভালবাসা-দিবস। আর স্লোগানে থাকছে, এ ভালবাসা সবার জন্য, পিতা-মাতা-স্বামী-স্ত্রী-পুত্র-কণ্যা, সবার। যে ভালবাসা প্রাকৃতিক, তার জন্য দিবস কেন লাগবে?

আর যদি স্বামী-স্ত্রীর হালাল ভালবাসাই হবে, তাহলে কেন ভালবাসা-দিবস, কেন বিবাহ-দিবস নয়? কেন এমন কোনো দিবস নেই, যে দিবস স্বামী-স্ত্রীকে একে-অপরের ভালবাসা স্মরণ করিয়ে দিবে, একে-অপরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ বাড়াবে; অবিবাহিতদের বিবাহে উদ্বুদ্ধ করবে, বিবাহের পরামর্শ দিবে; বর-কনের ম্যাচিং করে দিবে। কেন মিছিল হয় প্রেমিকাহীন পুরুষদের, প্রেমিকার দাবীতে; কেন মিছিল হয় না সময় মতো বিবাহ বঞ্চিতদের, পিতা-মাতা-সমাজের কাছে সময় মতো বিবাহের দাবীতে? কেন বাল্যবিবাহ নিষিদ্ধ, টিন-এজ প্রেম সিদ্ধ? কেন তিরিশের আগে বিবাহে মানা, তবে গার্লফ্রেন্ডে নেই বাধা?

হালাল সুস্পষ্ট, হারামও সুস্পষ্ট। [হাদীস] আফসোস! আমরা হারামের নাম-স্লোগান পরিবর্তন হলেই আর হারামকে চিনতে পারি না। মদ যদি সুইট ড্রিংক হয়ে যায়, তাহলে যেমন হালাল পানীয় মনে করে নেই, তেমনি যিনা যখন ভালবাসা হয়ে যায়, তখনও তা আনমনে গ্রহণ করে নেই।

আল্লাহ আমাদেরকে হালাল-হারাম চেনার ও সতর্ক হওয়ার তাওফীক দান করুন। আমীন।

সূত্র:

১. বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রকাশিত “Report on Violence against women (VAW) Survey 2011″: click to download

২. WHY DO SOME MEN USE VIOLENCE AGAINST WOMEN AND HOW CAN WE PREVENT IT? - click to download
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১১:৩৩
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা সকলের দায়িত্ব।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩৮



এগুলো আমার একান্ত মতামত। এই ব্লগ কাউকে ছোট করার জন্য লেখি নাই। শুধু আমার মনে জমে থাকা দুঃখ প্রকাশ করলাম। এতে আপনারা কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি দায়ী না। এখনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেতনার সময় জামায়াত বদ্ধ ইসলামী আন্দোলন ফরজ নয়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৮



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৩। তোমরা একত্রে আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধর! আর বিচ্ছিন্ন হবে না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর।যখন তোমরা শত্রু ছিলে তখন তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×