প্রায় প্রায় বাসে চড়তে হয়, বিশেষ করে মেয়েকে যখন স্কুলে দিয়ে একা ফিরি, তখন অফিস টাইম। সব বাসেই ভীড় থাকে। এই ভীড়ের বাসে উঠে যে অভিজ্ঞতা হয় তা হলো পুরুষ বর্জিত জীবনে আলাদা করে পুরুষের দরকার হয় না। আর যে সব মেয়েদের নির্দিষ্ট পুরুষ আছে তারা সম্ভবত বাড়তি বোনাস হিসেবে মেনেই নেয়। সেই জ্ঞানী বচনের মতো-ধর্ষন যদি এসেই যায় তাহলে তা এনজয় করাই শ্রেয়। আমরা মেয়েরাও এনজয় করতে শিখে গেছি। আর পীঠে ঘাড়ে বাস হেল্পারের হাতের সচেতন স্পর্শ ছাড়া কি চাকুরীজীবী বাস যাত্রী নারীদের দিনের শুরুয়াত হয়? হয় না। তবে সবচেয়ে পীড়াদায়ক যেটা সেটা হলো প্রায় বাসে উঠে কানে আসে ড্রাইভার চীৎকার করে হেল্পারকে বলছে
-ঐ মহিলা তুলিস না, তরে না কইলাম মহিলা তুলবি না। দাঁড়িয়ে ছিলাম সেদিন ড্রাইভারের পেছনেই।
-মহিলা তুলবে না কেনো? মহিলারা কি হেঁটে অফিসে যাবে?
-হে হে হে... ড্রাইভার বিচ্ছিরি হাসে, আপনাগো ভালার লাইগাইতো কই? সীট নাইতো
-আমি কি সীটে বসেছি? আরো কত মহিলাই তো দাঁড়িয়ে যাচ্ছে, আপনারা পুরুষ কিছু কম তোলেন না কেনো?
-কি করুম আপা? মহিলাগো নয়টা সীটতো দেয়াই হইছে। আরেক জন মহিলা কথা বলে উঠেন
-নয়টা সীটে হয়, অর্ধেক সীট মহিলাদের দেয়া উচিত। এখন তো প্রায় সব মহিলাই অফিস করেন।
একজন পুরুষের এইটা সহ্য হইলো না তিনি চিৎকার করে উঠলেন
-ও বইতে দিলে হুইতে চায়, মহিলাগো আসলে পেট ভরে না
আমি থমকে যাই, কি প্রসঙ্গের কি প্রতিবাদ! আশা করতে থাকি বাসের অন্য পুরুষরাই কেউ হয়তো তাকে প্রতিবাদ করবে, অনেক সজ্জন পুরুষ তখন বাসে, স্ত্রী করা শার্ট পরে তারা যাচ্ছেন অফিসে, তাদের কারো কন্যা হয়তো কলেজ ইউনিভার্সিটিতে পড়ে যাতায়াত করে এই বাসেই, কারো বোন হয়তো অন্য রুটে বাসে চড়ে অফিসে যায় হায় কেউ টু শব্দটি করে না, আগের মহিলার সাথে পুরুষটি তার পৌরুষের তুবড়ি বজায় রাখতে রাখতে আমার গন্তব্য এসে যায়
আজও এই অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে বাড়ি ফিরেছি। ফিরতে ফিরতে দেখেছি, নারী দিবস উদযাপন হচ্ছে, নারী দিবসের গর্বিত নারী পরেছে গর্বিত বেগুনী বা ভায়োলেট শাড়ি বা সালোয়ার কামিজ। যথারীতি তাদের কারো কারো নিতম্ব পীঠ লেহন করছে পেছনের পুরুষ পথচারীর লোভাতুর চোখ।
আমার হাসি বেঁকে যায় নারী দিবসে নারীর আদিখ্যেতা দেখে। আমার নিজের শরীরে তখন অজানা অচেনা পুরুষের গায়ের গন্ধ, ঘর্ষণের অস্বস্তিকর অবাঞ্চিত স্পর্শ। বাড়ি ফিরে দাঁড়াবো শাওয়ারের নীচে আমি মনে মনে আলমিরার শাড়ির ভাঁজে বেগুনি জামদানীটা খুঁজতে থাকি, বিকেলে পরবো আজ তো নারী দিবস, এই দিবস প্রাপ্তির পর পেরিয়ে গেছে দুইশ বছর এই দুইশ বছরে পাবলিক বাসে অর্ধেক সীট না পেয়েছিতো কি হয়েছে? আমাদের নারী নেত্রীরা যাদের পাবলিক বাসে চড়তে হয় না তারা পেয়েছে একটা রঙ, এই রং বেগুনিই আমার এই দিবসের অর্জন! একে আমি হেলায় যেতে দিতে পারি না।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মার্চ, ২০১৬ সকাল ১১:০০