somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

চোরাবালি-
পোষাক তৈরীর কারখানায় মাসিক বেতনে কামলা দেয় মাস শেষে মাইনের আশায়, যে মাইনে দিয়ে চলবে নিজের পরিবার ও সমাজের জন্য কিছু একটা করার প্রচেষ্টা মাত্র। নিতান্তই সাদামাঠা গ্রাম থেকে আসা স্বল্প শিক্ষিত মানুষ।

পথ শিশু-

২১ শে জানুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ২:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পেশা হিসেবে কুমিল্লা শহরে বেশ যাতায়ত। সাধারণ মানুষ হিসেবে পায়ে হাঁটায় আমার কোন অলসতা নেই এবং আমার বেশ পচ্ছন্দেরও। অন্যান্য শহরের মত এ শহরেও আছে পথ শিশু ময়লা পোষাকে ঘুরেফেরে শহরের অলিগলিতে, কাধে সেই চিরাচারিত বস্তা যার মধ্যে প্লাষ্টিকের বোতল ও আমাদের পরিত্যাক্ত বা ফেলে দেয়া প্লাষ্টিক সামগ্রী, মোটা কাগজ, বিষ্কিটের প্যাকেট, ফেলে দেয়া কার্টন ইত্যাদি গুছিয়ে জড়ো করে ভাংড়ির দোকানে বিক্রির জন্য। যা দিয়ে তারা কখনও পরিবারের জন্য সামান্য খাবার, নিজের পচ্ছন্দের রাস্তার পাশের সস্তা খাবার অথবা কমদামি পরিধেয় পোষাক কিনে নিজেকে ফিটফাট করার চেষ্টা।

এদেশে হাজারও এনজিও কর্মী আছে এদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় তারা কাজ করে। তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করতে গিয়ে এনজিও মালিকেরা উচ্চ বিল্ডিংএর মালিক হলেও তাদের সামান্য উচু করার জন্য পায়ের নিয়ে এক জোড়া স্যান্ডেলও জোটে না। বাসস্থান, চিকিৎসা তো অনেক দুরের ব্যাপার। এদের পরিবারের ভাইবোন থাকে বেশ কয়েকজন, সারিবন্ধভাবে বছরের এ মথায় - ও মাথায়, বাবা মায়ের ৫বছরে বিবাহিত জীবনে ৫ভাই/বোন। সন্তান জন্মদানে কোন অনিহা নেই এদের আবার মৃত্যু দূতও এসব মায়েদের খুব একটা কেয়ার করতে দেখা যায় না যেমনটি চাকচিক্যের পরিবারে তাদের উপস্থিতি থাকে। হাজারও জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি থাকলেও তাদের যেন কোন কিছুতেই আটকাতে পারে না। পরিবার পরিকল্পনার আপা'রা মধ্যবৃত্ত বা উচ্চবৃত্ত পরিবারে যেভাবে হানা দিয়ে সচেতন করে থাকে সেরকম তো দুরে থাক মাসে দু'একবার গিয়েও খোজ খবর নেন না। নিবেই বা কেন! তাদের বসবাস নোংড়া ঘরে, নোংড়া পরিবেশে, পোষাক বাঁচাতে সবাই চায় ঝকঝকে চক চকে পরিবশে।

আমার সঙ্গে ২বার দেখা হয়েছে একটি শিশুর যার বয়স ১২/১৩। সর্বদা একই ধরনের পোষাক, সম্ভবত ছেলেটা সহজ সরল টাইপেরও। প্রথম দিন দেখা কান্দিরপার মসজিদের নিচে, ছেলেটা কান্না করছে, চোখের জ্বলে শার্টের অংশও ভিজে গেছে। হয়তো একটু বেশি সময় ধরেই কান্না করছে তাই। নামাজ শেষে জুতা পরতে গিয়ে নজরে আসল। শতমানুষ ধাক্কা দিয়ে ঠেলে মসজিদ থেকে বেরিয়ে গেলেও কেও জিঙ্গেস করছে না কেন কান্না করছে। জুতা পরা শেষে, হাত ধরে পাশে নিয়ে জিঙ্গেস করলাম কান্না করার হেতু কি? কান্না জড়িত কন্ঠেই বলল, এখানকার পুলাপান মেরেছে, সে টাকা নিয়ে এসেছিল মসজিদের দান বক্সে ফেলার জন্য, তারা তার থেকে টাকা কেড়ে নিয়ে মেরেছে। কোথায় তারা জিঙ্গেস করতেই দেখিয়ে দিল ওদেরই মত কিছু ছেলেকে। তাদেরকে ডাক দিতেই দৌড়ে পালালো। বললাম টাকা কেন ফেলতে হবে- বলল সবাই ফেলে তাই সেও ফেলবে। আমি পকেট থেকে ৫০টাকা দিয়ে বললাম তোমার ফেলার দরকার নাই, তুমি খাবার কিনে খেয়ো। সেছলেটি টাকা নিয়ে এদিক সেদিক চাওয়া চাওয়ি করতে থাকলাম, ভাবলাম হয়তো নিয়ে যাবে। কিন্তু না, সে টাকা না নিয়ে গিয়ে আমি সরতেই মসজিদের দান বক্সে ফেলে দিয়ে হাসি মুখে হাঁটা শুরু করল।

কয়েকদিন আগে চকবাজার মোড়ের ফুটপাত দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি। কান্নার শব্দে ফিরে আসতে হল। শীতের জীর্ণ পোষােকে ছেলেটি কান্না করছে, কাছে গিয়ে দেখি সেই ছেলেটা। কয়েকজন তাকিয়ে দেখছে। জিঙ্গেস করলাম কিরে কান্না করস ক্যান, উত্তরে বলল- পাশের বিরানির দোকানি ছেলেটার কাছে একটু বিরানি চেয়েছেল তারা পানি দিয়ে তাকে ভিজিয়ে দিয়েছে, ঠান্ডায় কাপছে আর কান্না করছে। দোকানদারকে জিঙ্গেস করলাম এমন করলেন কেন? লোকটি নিরুত্তর। বুঝলাম সে লজ্জিত এবং তারই দোকেনর ছোট্ট ছেলেটির দিকে তাকিয়ে থাকল। আমি সেই ছেলেকে বললাম, তুমিও তো ওর বয়সই, তুমি হয়তো এখানে কাজ করছো কিন্তু আজ যদি তোমাকে কাজ না দিত তা হলে ওর মতই কি অবস্থা হতো না? ছোট মানুষের যুক্তির স্বভাবে সেও পানি দেয়ার পেছটে যুক্তি দিতে চাইল।

দোকানদারকে বললাম একপ্যাকেট বিরানি দিতে। ইতমধ্যে হাজির হলেন এক বয়ষ্ক মহিলা, তিনি নিজে দাড়িয়ে থেকে দোকানদার থেকে বিরানি নিয়ে ছেলেকে বিরানির প্যাকেট ধরিয়ে দিলেন, এবং আমি টাকা দেয়ার আগেই তিনি টাকা দিয়ে দিলেন। দোকানদারকে সুন্দরভাবে বোঝালেন যেন এমনটা না করেন এবং সামান্য কিছু খাবার তাদের জন্যও বরাদ্দ রাখতে। দোকানদার বললেন- আন্টি ক'জনকে দিব, একজনকে দিলে আসতেই থাকে। তার কথায় যুক্ত আছে বটে।

বাসায় ফিরব বলে ব্যাটির অটোতে উঠলাম। মাথার মধ্যে চক্কর দিতে লাগল, হাজারও শীতাতপ নিয়ন্ত্রতিত মসজিদের শহের পথশিশুরা থাকে অনহারে। যে শহরে প্রতিটি মসজিদ ব্যায় বহুল ও দেখার মত সে শহরে কত মানুষ না খেয়ে রাস্তার পাশে। অথচ ইসলামি দৃষ্টিতে কেও যদি কোন দিন মসজিদ তৈরী না করে তাকে প্রশ্ন করা হবে না কিন্তু কেও যদি না খেয়ে থাকে তা হলে প্রথমে প্রশ্নের সম্মুখিন হবেন তার প্রতিবেশী, তারপর সে এলাকার শাসক সর্বপরি দেশের শাসক। এদেশেই মসজিদের দাব বক্সে মিলে কোটি টাকা অথচ তারই পাশে শুয়ে থাকে পথ শিশুরা। তাদের জন্য স্থায়ী কোন সমাধান নেই, কখনও কখনও কেও কিছু তাদের জন্য দান করলে চলে ক্যামেরায় ফটোশুটের বাহার। যে দান হয় দু'/একবেলা আহার মাত্র। অথচ ইসলাম তাকে দিয়েছে ধনি লোকের সম্পদের অধিকার। মানুষের বছর শেষে যাকাতের সময় ঋণ থাকে আবার বছর ঘুরতেই নতুন বাড়ি ওঠে আলোঝলমলে আতোষ বাজিতে। হাজার টাকার বাজি ফোটানো হয় প্রতিবেশিকে অনাহারে রেখে।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জানুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ২:৩৮
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×