সাভার ট্র্যাজেডিতে মানুষ নিহত হওয়ার পরিস্থিতিকে ‘শ্রম দাস’ প্রথা আখ্যা দিয়ে এর নিন্দা জানিয়েছে রোমান ক্যাথলিক চার্চের সর্বোচ্চ ধর্মীয় গুরু পোপ ফ্রান্সিস। খবর
পোপ সাহেব!!! বাংলাদেশে ‘শ্রম দাস প্রথা’র জন্য তো আপনারাই দায়ী। সাভারের রানা প্লাজায় যেসব গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি ছিল সেগুলোতো তো আপনাদেরই (যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, কানাডাসহ পশ্চিমা দেশগুলোর কোম্পানি) পোষাক বানাতো।
যুক্তরাষ্ট্রের চিলডেন’স প্লেস, বেনেটন, ক্যাটো ফ্যাশনস, ম্যাঙ্গো, ব্রিটেনের প্রাইমার্ক, কানাডার লোব্ল মত কোম্পানি রয়েছে। রয়েছে কুখ্যাত মার্কিন প্রতিষ্ঠান ওয়াল-মার্টের নামও।
যে তাজরিনে হাজার হাজার শ্রমিকে হত্যা করেও সামান্য কটা ক্ষতিপূরণ দিতে নির্লজ্জ অস্বীকৃতি জানিয়েছে । আপনারা টাকা বাচাঁতে এই দেশে আসেন শুষে খান এদেশের শ্রমিকের রক্ত।
দেখুন! আপনাদের পত্রিকায় সাভার ট্রাজেডি সম্পর্কে কি বলা হয়েছে:
সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “বাংলাদেশে কারখানায় ধস : আমাদের এত সস্তা পোশাকের মূল্য আসলে কারা দিচ্ছে? পশ্চিমা দেশগুলোর ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে অল্প সময়ের মধ্যে গড়ে উঠেছে শত শত কারখানা। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কারখানা তৈরির নিয়মনীতি মানা হচ্ছে না।”
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “পশ্চিমের বেশির ভাগ পোশাক কোম্পানি এশিয়ার সরবরাহকারীদের চাপ দিয়ে কম দামে পোশাক আমদানি করছে। এতে তারা কারখানার নিরাপত্তার বিষয়টিতে নজর দিচ্ছে না। ফলে বাংলাদেশে বারবার বিপর্যয়কর ঘটনা ঘটছে।”
পোপ সাহেব! কত নিম্ন টাকায় কাজ করা যায় সেই ধান্ধায় থাকেন আপনারা। সেই ধান্ধা মিটাতে বাংলাদেশের গার্মেন্টস মালিকদের চাপ দেন আপনারা। আর মালিকরা চাপ দেয় শ্রমিকদের, কাটছাঁট করে নিরাপত্তায়। কিন্তু কয় টাকা লাভ হয় মালিকদের? ১০ ভাগ লাভ যদি হয় গার্মেন্টস মালিকের, তবে ৯০ ভাগ লাভ হয় আপনাদের। কিন্তু দুর্ঘটনা ঘটে গেলে সেই মালিকদের হয় সব দোষ। তাদের উপর নেমে আসে খড়ক, নেয়া হয় রিমান্ডে। কিন্তু আপনার তখন পল্টি মারেন। দিতে চান না কোন ক্ষতিপূরণ, মুখ ফিরিয়ে নেন, আর দুষ্টুর মত বলতে থাকেন, “আমরা কিন্তু আমাদের অর্ডার আর বাংলাদেশকে দেব না!! চুক্তি বাতিল করব !”
ধিক আপনাদের মানসিকতাকে!! ধিক আপনারদের মানবতাকে!! ধিক আপনাদের কুচিন্তাকে!! কারণ কখনই আপনারা বাংলাদেশ থেকে অর্ডার ফেরাবেন না। বাংলাদেশ থেকে যেই টাকা দিয়ে আপনারা শার্ট-প্যান্ট বানান, পৃথিবীর অন্য কোন দেশে তা বানাতে পারবেন না। অন্যকোথাও বানাতে খরচ পড়বে কয়েকগুণ। তাই প্রয়োজন আপনাদের বেশি, আমাদের নয়।
আর আপনাদের দেশের শ্রমিকদেরই-বা আপনার কতটুকু অধিকার দেন। আমেরিকায় প্রতিদিন অকুপাই ওয়ালস্ট্রিট আন্দোলন হচ্ছে। ৯৯ শতাংশ সম্পদ চলে গেছে মালিক শ্রেণীর হাতে যারা জনসংখ্যার মাত্র ১ শতাংশ। অথচ ১ শতাংশ সম্পদের মালিক হচ্ছে শ্রমিক শ্রেণী যাদের জনসংখ্যা ৯৯ শতাংশ। আর ইউরোপের এমন কোন দেশ দেখাতে পারবেন, যেখানে অধিকার আদায়ে শ্রমিকরা আন্দোলন করছে না?
চলতি ২০১৩ সালের এপ্রিল মাসেই গ্রিসে ৬ মাসের বকেয়া বেতন চাইতে গিয়ে ২শ’ শ্রমিকের উপর ব্রাশ ফায়ার করে মালিক। এর মধ্যে ৩৩ জন আমার দেশের লোকও রয়েছে।
আর আপনার দেশ খোদ আর্জেন্টিনায়? সেখানে তো আরো খারাপ অবস্থা।
চরম দারিদ্রে জ্বলে পুড়ে মরছে আর্জেন্টিনা। ৯০ শতাংশ সম্পদের মালিক ধনিক ও বিদেশী কোম্পানিগুলো। প্রতিনিয়ত দাবি আদায়ে নামে চলছে ধর্মঘট আন্দোলন। এ খবরগুলো আমরা কিছুটা হলেও এ দেশে থেকে জানতে পারি।
----------------------------------------
শেষে বলছি:
১লা মে আপনাদের সৃষ্টি। সমাজে বৈষম্য তৈরী করতেই আপনারা স¤্রাজ্যবাদীরাই তৈরী করেছেন এই দিন। সমাজকে দুইভাগে বিভক্ত করে ফেলেছেন এই দিন দিয়ে: মালিক ও শ্রমিক। আর আমরা বেকুবের মত গ্রহণ করেছি কথিত শ্রমিক দিবস। ভাবছি খুব শ্রমিকের অধিকার আদায় করছি। না আমরা মুসলমানরা কোন শ্রমিক-মালিক ভাগাভাগি করেনি। আমরা কেমন অধিকার দিয়েছি, তা কাজী নজরুল ইসলামের ‘উমর ফারুক’ নামক কবিতায় আছে, আশাকরি শিখে নিবেন, তারপর নিজের দেশে নসিহত করবেন।
“ কিছুদূর যেতে উট হতে নামি কহিলে ভৃত্যে, ‘ভাই
পেরেশান বড় হয়েছ চলিয়া! এইবার আমি যাই
উষ্ট্রের রশি ধরিয়া অগ্রে, তুমি উঠে বস উটে,
তপ্ত বালুতে চলি যে চরণে রক্ত উঠেছে ফুটে।'
...ভৃত্য দস্ত চুমি
কাঁদিয়া কহিল, ‘উমর! কেমনে এ আদেশ কর তুমি?
উষ্ট্রের পিঠে আরাম করিয়া গোলাম রহিবে বসি
আর হেঁটে যাবে খলিফা উমর ধরি সে উটের রশি?'
খলিফা হাসিয়া বলে,
‘তুমি জিতে গিয়ে বড় হতে চাও, ভাই রে, এমনি ছলে।
রোজ-কিয়ামতে আল্লাহ যে দিন কহিবে, 'উমর! ওরে
করেনি খলিফা, মুসলিম-জাঁহা তোর সুখ তরে তোরে।'
কি দিব জওয়াব, কি করিয়া মুখ দেখাব রসুলে ভাই।
আমি তোমাদের প্রতিনিধি শুধু, মোর অধিকার নাই।
আরাম সুখের, -মানুষ হইয়া নিতে মানুষের সেবা।
ইসলাম বলে, সকলে সমান, কে বড় ক্ষুদ্র কেবা।’
----------------------------------------
আমাদের ভুল হচ্ছে, আজ আমরা ইসলাম ভুলে আপনারদের নিয়মনীতিগ্রহণ করেছি তাই আমাদের এই অধৎপতন। এই পরিণতি।
-------------------
প্রতিবাদ জানাচ্ছি ইহুদীবাদী পোপের এই বক্তব্যের। আপনরারও জানান।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মে, ২০১৩ রাত ১১:৪২