somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইসলামে নেতৃত্ব জিনিসটা একেবারে ভিন্ন...

০৮ ই মার্চ, ২০১৫ দুপুর ২:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইসলামে নেতৃত্ব জিনিসটা একেবারে ভিন্ন। একজন সৎ, নামাযী, ইসলাম মান্যকারী ব্যাক্তি হলেই যে তিনি নেতৃত্ব দেওয়ার যোগ্য হবেন এটা ঠিক না। নেতা হতে হলে আপনাকে সমষ্টির বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে, পারসপেক্টিভ এবং কনটেক্সটকে বিবেচনায় আনতে হবে, চিন্তা গবেষণা করে ডিসিশন নিতে হবে, মধ্যপন্থা অবলম্বন করতে হবে।এবং অবশ্যই সেটা শরীয়তের বৈধ সীমার মধ্যেই হতে হবে।

আবু যার গিফারী (রা) অত্যন্ত উচ্চমানের প্রথম সারীর একজন সাহাবী ছিলেন, রাসুল (সা) তাঁর সম্পর্কে মন্তব্য করেছিলেন 'আসমানের নিচে জমীনের উপরে আবু জরের মত সত্যবাদী কেউ নাই'

অথচ এই সাহাবীকে রাসুল (সাঃ) উপদেশ দিয়েছিলেন তিনি যেন কোন দিন নেতৃত্ব গ্রহন না করেন। রাসুল (সাঃ) বলেছিলেন, "আল্লাহ আবু যারের ওপর রহম করুন। সে একাকী চলে, একাকীই মরবে, কিয়ামাতের দিন একাই উঠবে। তিনি আরও বলেছিলেন, হে আবু যার তুমি কখনও নেতৃত্ব গ্রহন করোনা, কারন তুমি এবিষয়ে খুব দুর্বল...

তিনি মোট আটাশটি হাদিস বর্ণনা করেন। তন্মধ্যেবারোটি হাদীস মুত্তাফাক আলাইহি অর্থাৎ বুখারী ও মুসলিম উভয়ে বর্ণনা করেছে। দু’টি বুখারী ও সাতটি মুসলিম এককভাবে বর্ণনাকরেছেন।অনেক সাহাবী তাঁর কাছ থেকে হাদিসের জ্ঞান নিয়েছেন।
তারপরেও রাসুল সাঃ তাঁকে নেতৃত্ব নিতে নিষেধ করেছিলেন। কারও মনে হতে পারে হয়ত আবু যারের (রা) মধ্যে কোন প্রকার ক্ষমতার লোভ বা ঈমানের ঘাটতি ছিল, ওয়াল্লাহী, আবু যারের (রা) মধ্যে এই ধরণের কোন দুর্বলতা ছিলনা, তিনি ছিলেন একজন অতি উচ্চ মানের সাহাবী।
একদিন এক ব্যক্তি আবু যারের নিকট এলো। সে তাঁরঘরের চারদিকে চোখ ঘুরিয়ে দেখলো। গৃহস্থালীর কোন সামগ্রী দেখতে না পেয়ে জিজ্ঞেসকরলো,
- ‘আবু যার, আপনার সামান-পত্র কোথায়? আবু যার (রা) বললেন,
- ‘আখিরাতে আমার একটি বাড়ী আছে। আমার সব উৎকৃষ্টসামগ্রী সেখানেই পাঠিয়ে দিই।’

হযরত আলীকে রা. আবু যারের জ্ঞানের পরিধি সম্পর্কে ‍জিজ্ঞেস করা হয়েছিল। তিনি বললেন, ‘এমন জ্ঞান তিনি লাভ করেছেন যা মানুষ অর্জন করতে অক্ষম।তারপর সে জ্ঞান আগুনে সেক দিয়ে পরীক্ষা করা হয়েছে কিন্ত তা থেকে কোন খাদ বের হয়নি।’

আসলে কেন এরকম বলেছিলেন, সেটা আল্লাহ এবং তাঁর রাসুল (সা) ই ভালো জানেন, তবে আমরা যেটা অনুমান করতে পারি সেটা হল,
সামাজিক,রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ব্যাপারে আবু যর (রা)খুব স্ট্রিকট কিছু নীতি ফলো করতেন, যা অন্য অনেক সাহাবীর সাথে মিলতো না।
যেমন উনি অর্থ সঞ্চয় করাকে বৈধ মনে করতেন না,এমনকি পরের দিনের জন্য ও না, তাঁর মতে আজকে আমার যা উদ্বৃত্ত আছে সব ই আল্লাহ্‌র পথে দানকরে দিতে হবে।

যারা অর্থ কড়ি জমা করে তাঁদেরকে তিনি নিম্নোক্তআয়াতে উল্লিখিত আলোকে ভাবতেন, ‘আর যারা স্বর্ণ ও রৌপ্যপুঞ্জিভূত করে এবং তা আল্লাহর পথে ব্যয় করেনা তাদের মর্মন্তুদ শাস্তির সংবাদ দাও।’ (আত্‌ তাওবাহঃ ৩৪)
এভাবে তাঁর সাথে কয়েকজন সাহাবীর সাথে মতবিরোধহয়। এখানে শিক্ষনীয় বিষয় হচ্ছে, কোন স্ট্রীক্টনেস একজন ব্যক্তি তাঁর জন্য কবুলকরে নিতে পারে, কিন্তু পুরো সমাজের উপর তিনি তা চাপিয়ে দিতে পারেন না। যেমন কেউ চাইলে নফল নামাযে এক রাকাতে দুই চারপারা করে কোরান পড়তে পারবে কোন সমস্যা নাই, যেমনটি রাসুল (সা) পড়েছেন, কিন্তু ঈমামতি করার সময় অবশ্যই তিনি এমনটি করতে পারবেন না, ঐ সময় তাঁকে তাঁর পিছনের দুর্বল, বৃদ্ধ, অসুস্থ, ব্যস্ত, ক্ষুদার্থ এরকম অসংখ্য লোকের কথা মাথায় রাখতেহবে, এবং সংক্ষিপ্ত নামায আদায় করতে হবে।
উমার (রা) এর খেলাফত কালে যখন একটা অঞ্চলে ফেমাইন দেখা দিল, তখন তিনি বললেন যে, ফেমাইন দূর হওয়ার আগ পর্যন্ত এই নির্দিষ্ট এলাকার কেউ যদি এখন চুরির অপরাধে ধরা পড়ে তাহলে এদের হাত কাটবে না। এভাবেই শরীয়তকে মানুষের কল্যাণের জন্য ব্যবহার করেছিলেন খোলাফায়ে রাশেদুন।

রাসুল(সা) বলেছেন আমি সবসময় দ্বীনের ব্যাপারে দুটি বিষয়ের মধ্যে সহজটিকে গ্রহণ করার চেষ্টা করি, তবে সেটি যদি হারাম হয়,তাহলে আমি তাঁর থেকে সবচেয়ে বেশি দূরে থাকি।

অর্থাৎ সহজ বিষয় তো গ্রহণ করা যাবে, ফ্লেক্সিবল হওয়া যাবে, এরমানে এই নয় যে শরীয়তের সীমা অতিক্রম করা যাবে, বা শরীয়ত যেগুলোকে হারাম বলেছে সেগুলোকেও গ্রহণ করা যাবে।

আল্লাহ্‌ আমাদের ইসলাম বোঝার তাওফিক দিন।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×