somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হুদায়বিয়ার সন্ধিকে আল্লাহ্‌ কেন "ফাতহুম মুবিন" বা "বড় বিজয়" বলেছেন!!

১৫ ই মার্চ, ২০১৫ সকাল ১০:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হুদায়বিয়ার সন্ধি আপাত দৃষ্টিতে মুসলিমদের জন্য এমন অপমানকর ছিল যে, অনেক সাহাবী ক্ষোভে ফেটে পড়েন। তারপরেও বদর যুদ্ধ কিংবা মক্কা বিজয়ের মত বড় বিজয়কে আল্লাহ তায়ালা “ফাতহুম মুবিন” না বলে হুদায়বিয়ার সন্ধিকে কেন "ফাতহুম মুবিন" বা "বড় বিজয়" বলেছেন??

সন্ধিপত্র লেখার জন্যে হযরত আলী (রা)-কে ডাকা হলো। সন্ধিপত্রে যখন লেখা হলো ‘এই সন্ধি আল্লাহর রাসূল মুহাম্মদ (স)-এর তরফ থেকে তখন কুরাইশ প্রতিনিধি সুহাইল প্রতিবাদ জানিয়ে বললো : ‘আল্লাহর রাসূল’ কথাটি লেখা যাবে না; এ ব্যাপারে আমাদের আপত্তি আছে। আমরা যদি মেনেই নিই আল্লাহ্‌র রাসুল তাহলে আবার যুদ্ধ কিসের? একথায় সাহাবীদের মধ্যে প্রচন্ড ক্ষোভের সৃষ্টি হলো। সন্ধিপত্র লেখক হযরত আলী (রা) কিছুতেই এটা মানতে রাযী হলেন না। তিনি বললেন আমার হাত দিয়ে আমি এটা কেটে দিতে পারবোনা। কিন্তু হযরত (স) নানাদিক বিবেচনা করে সুহাইলের দাবি মেনে নিলেন এবং নিজের পবিত্র হাতে ‘আল্লাহর রাসূল’ কথাটি কেটে দিয়ে বললেন : ‘তোমরা না মানো, তাতে কি? কিন্তু খোদার কসম, আমি তাঁর রাসূল।’ এরপর নিম্নোক্ত শর্তাবলীর ভিত্তিতে সন্ধি-চুক্তি স্বাক্ষরিত হলোঃ
১. মুসলমানরা এ বছর হজ্জ না করেই ফিরে যাবে।
২. তারা আগামী বছর আসবে এবং মাত্র তিন দিন থেকে চলে যাবে।
৩. কেউ অস্ত্রপাতি নিয়ে আসবে না। শুধু তলোয়ার সঙ্গে রাখতে পারবে: কিন্তু তাও কোষবদ্ধ থাকবে, বাইরে বের করা যাবে না।
৪. মক্কায় সে সব মুসলমান অবশিষ্ট রয়েছে, তাদের কাউকে সঙ্গে নিয়ে যেতে পারবে না। আর কোনো মুসলমান মক্কায় ফিরে আসতে চাইলে তাকেও বাধা দেয়া যাবে না।
৫. কাফির বা মুসলমানদের মধ্য থেকে কেউ মদীনায় গেলে তাকে ফেরত পাঠাতে হবে। কিন্তু কোনো মুসলমান মক্কায় গেলে তাকে ফেরত দেয়া হবে না।
৬. আরবের গোত্রগুলো মুসলমান বা কাফির যে কোনো পক্ষের সাথে সন্ধিচুক্তি সম্পাদন করতে পারবে।
৭. এ সন্ধি-চুক্তি দশ বছরকাল বহাল থাকবে।
দৃশ্যত এই শর্তাবলী ছিলো মুসলমানদের স্বার্থ বিরোধী আর মুসলমানরা যে চাপে পড়েই এ সন্ধি করেছিলো, তাও বেশ বোঝা যাচ্ছিলো।

সন্ধিপত্র যখন লিখিত হচ্ছিলো, ঠিক সেই মুহূর্তে ঘটনাচক্রে সুহাইলের পুত্র হযরত আবু জান্দাল (সা) মক্কা থেকে পালিয়ে সেখানে এসে উপস্থিত হলেন। তিনি শৃংখলিত অবস্থায় মুসলমানদের সামনে এসে হুমড়ি খেয়ে পড়লেন এবং সবাইকে নিজের দুর্গতির কথা শোনালেন। তাঁকে ইসলাম গ্রহণের অপরাধে কি কি ধরণের শাস্তি দেয়া হয়েছে, তা-ও সবিস্তারে খুলে বললেন। অবশেষে তিনি হযরত (স)-এর কাছে আবেদন জানালেন : ‘হুযুর আমাকে কাফিরদের কবল থেকেকে মুক্ত করে আপনার সঙ্গে নিয়ে চলুন ।’ একথা শুনে সুহাইল বলে উঠলো : ‘দেখুন, সন্ধির শর্ত নিয়ে যেতে পারেন না।’ এটা ছিলো বাস্তবিকই এক নাজুক সময়। কারণ, আবু জান্দাল ইসলাম গ্রহণ করে নির্যাতন ভোগ করছিলেন এবং বারবার ফরিয়াদ জানাচ্ছিলেন : ‘হে মুসলিম ভাইগণ! তোমরা কি আমাকে আবার কাফিরদের হাতে তুলে দিতে চাও?’ সমস্ত মুসলমান এই পরিস্তিতিতে অত্যন্ত অস্থির হয়ে উঠলো। হযরত উমর (রা) তো রাসূলুল্লাহ (স)-কে এ পর্যন্ত বললেন যে, ‘আপনি যখন আল্লাহর সত্য নবী, তখন আর আমরা এ অপমান কেন সইব? হযরত (স) তাকে বললেন : ‘আমি খোদার পয়গাম্বর, তাঁর হুকুমের নাফরমানী আমি করতে পারিন না। খোদা-ই আমায় সাহায্য করবেন।’
মোটকথা, সন্ধি-চুক্তি সম্পাদিত হলো। সন্ধির শর্ত মুতাবেক আবু জান্দালকে ফিরে যেতে হলো। এভাবে ইসলামের পথে জীবন উৎসর্গকারীরা রাসূলের আনুগত্যের এক কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেন। একদিকে ছিলো দৃশ্যত ইসলামের অবমাননা ও হযরত আবু জান্দালের শোচনীয় দুর্গতি আর অন্যদিকে ছিলো রাসূলুল্লাহ (স) -এর নিরংকুশ আনুগত্যের প্রশ্ন।
হযরত (স) আবু জান্দালকে বললেন : ‘আবু জান্দাল! ধৈয্য ও সংযমের সাথে কাজ করো। খোদা তোমার এবং অন্যান্য মজলুমের জন্যে কোনো রাস্তা বের করে দিবেনই। সন্ধি-চুক্তি সম্পন্ন হয়ে গেছে। কাজেই আমরা তাদের তাদের সাথে বিশ্বাসভঙ্গ করতে পারি না।’ তাই আবু জান্দালকে সেই শৃংখলিত অবস্থায়ই ফিরে যেতে হলো।

মুসলিম বাহিনীর এমন নাজুক পরিস্থিতিকেও আল্লাহতাআলা এই চুক্তিকে এক মহা বিজয় হিসাবে উল্লেখ করলেন।

আসলে হুদায়বিয়ার সন্ধির পরে হয়রত বেলাল (রাঃ) বলছিলেন – আমাদের সময় দরকার, এবার আমরা সময় পেলাম।. মক্কার জীবনে এত মার খেয়েও জবাবী হামলা করেননি তার একটা কারন ছিল এই যে দাওয়াতী কাজের প্রসার ঘটিয়ে লোক তৈরী করা । হুদায়বিয়ার সন্ধি এমন একটা পয়েন্টে এসে হয়েছিল যে তখন আরব ভুখন্ডে ইসলামের পূর্ণতা লাভের সকল লক্ষন ফুটে উঠেছিল কিন্তু তখন পর্যন্ত কিছু স্থানে দাওয়াতের হাত পৌছতে পারছিলনা কাফেরদের অব্যাহত নোংরা বিরোধীতার জন্য । হুদায়বিয়ার সন্ধি সবদিক থেকে অপমানজনক মনে হলেও এই দাওয়াত প্রসারের প্রতিবন্ধকতা সরে গিয়েছিল অনেকটাই কাফেরদের অজান্তেই । এমন পরিবেশ পেয়ে মুসলমানরা দাওয়াতী কাজের জন্য সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালালেন । ইসলামের ইতিহাসে সম্ভবত এই সময়টাতেই বেশী মুসলমান দাওয়াত গ্রহন করে অল্প সময়ে । হুদায়বিয়ার সন্ধিতে মাত্র চৌদ্দশ সাহাবী নিয়ে নবী সাঃ গিয়েছিলেন কিন্তু মাত্র দুবছরের মাথায় দশ হাজার সাহাবী নিয়ে মক্কা বিজয়ে গেলেন ! ক্যালকুলেটর দিয়েও দাওয়াত গ্রহনের হার খুজতে কষ্ট হবে ! চুড়ান্ত বিজয় বলার পেছনে এটাও একটা কারন।

ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য প্রস্তুতির প্রয়োজন আছে। নিজের শক্তি, সমর্থ প্রজ্ঞা দিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। একদিকে দাওয়াতি কাজের প্রসার ঘটানো অন্যদিকে নিজেদের শক্তি বৃদ্ধি করাই রাসুল (সাঃ) এর শিক্ষা। এর বাহিরে যেয়ে যারা কিতাল কিতাল করে তারা পরিত্যাজ্য... আল্লাহ্‌ আমাদের ইলসামকে জানার ও বোঝার তৌফিক দিন, আমীন।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×