somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গ্রন্থ সমালোচনঃ মুক্তি কেন আসে নি

০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ রাত ৯:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বাঙ্গালী উভয় বাংলায়-ই ইতিহাস সৃষ্টি করেছে৷ এ কথাটি যেমন সত্য তেমনি এটা-ও সত্য যে, বাঙ্গালী বরাবরই ইতিহাসে বন্দি রয়েছে৷ অবশ্য এ বন্দিদশার কারণ গোটা বাঙ্গালী জাতি নয়৷ এর পেছনে যে মূল ভূমিকা সেটি সব সময় রয়েছে বাঙ্গালী মধ্যবিত্ত শ্রেণীর হাতে৷ ভারতবর্ষের ইতিহাসও এই বাস্তবতারই সা্য বহন করে৷ সেই ১৯০৫ সালে যখন বাংলাকে দু'ভাগে বিভক্ত করা হয় তখন মধ্যবিত্ত বাঙ্গালী শ্রেণীই সেই বিভক্তিকরণের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে৷ হোক না সে বাঙ্গালী হিন্দু_অথবা হিন্দু বাঙ্গালী৷ পূর্ববঙ্গ ও আসামকে নিয়ে নতুন প্রদেশ সৃষ্টি হচ্ছিল তা মধ্যবিত্ত শ্রেণীর অর্থণৈতিক স্বার্থে আঘাত করেছিল৷ সেেেত্র বাধাটা যে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর কাছ থেকে আসবে সেটাই স্বাভাবিক৷
মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মৌলিক সমস্যা সর্বকাল ধরে ঐ রকমেরই_হঁ্যা, পরিবর্তন খুব-ই প্রয়োজনীয়, তবে পরিবর্তন কতটা হবে, কি পরিমাণে হবে সেটা নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত জরুরি৷ ১৯০৫ সালে বাঙ্গালী হিন্দু সমাজের কাছে পরিবর্তনটা হয়ে উঠেছিল প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি৷ অবশ্য তাঁদের মধ্যে থেকে আবার এই আওয়াজও উঠেছে যে, বাংলার অখণ্ড ঐতিহ্য মহাবিপদের সম্মুখীন, কারণ হচ্ছে ঐ যে এক বাংলাকে দুই-এ পরিণত করা হলো সেটি৷ আবার অন্যদিকে পূর্ববাংলায় অন্য এক মধ্যবিত্ত শ্রেণী ঐ বিভক্তির সিদ্ধান্তকে একটা যুগান্তকারী পদপে হিসেবে গণ্য করেছে৷ এই ব্যাপারটাও খুবই স্বাভাবিক৷ আধুনিক যুগে এই প্রথম বারের মত বাঙ্গালী মুসলমান তার নিজের জন্য একটি রাজনৈতিক ও সামাজিক স্থান তৈরি করে নিয়েছে৷ ফলে মুসলমান পূর্বের ন্যায় আর হিন্দুর শোষণের শিকার হবে না৷ এক কথায়, ইতিহাস তার ছাপ অবশেষে বাঙ্গালী মুসলমানের জীবনে রেখেছে৷ মনে হচ্ছিল ভবিষ্যত্শুধু আলোয় আলোকিত৷
ধারণাটি ছিল ভুল৷ আর একটু এগিয়ে বলতে হয় যে, পূর্ব বাংলাকে সমগ্র বঙ্গ থেকে পৃথক করণের ভেতর দিয়ে সমাজের একটি অংশের জন্য নতুন ধরনের সুযোগ সন্ধানের অবকাশ করে দেওয়া হলো৷ পূর্ব বাংলার নবাব পরিবার, বাঙ্গালী মুসলমানদের মাঝে মুষ্টিমেয় শিতি মানুষ যাদের কখনোই সাধারণ জনতার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল না, তারাই বাংলার বিভক্তিকরণে আনন্দ পেয়েছে৷ সে আনন্দের ব্যাপ্তি অবশ্য খুবই স্বল্প পরিসরের৷ ১৯০৬ সালে যখন মুসলিম লীগ-এর সৃষ্টি হয়_এবং সে ঘটনাটি ঘটে পূর্ব বাংলার রাজধানী ঢাকায়_তখনই এই সত্যটি ফুটে উঠে যে, যে-পরিবর্তন সাধিত হয়েছে তার ফলাফল সমাজের বিভিন্ন, বিশেষ করে নিম্নস্তরের মানুষের কাছে পৌঁছবে না৷ অতএব ১৯১১ সালে যখন বঙ্গভঙ্গ রদ করা হয় তখন সাধারণ জনগণের মাঝে তেমন কোন প্রতিক্রিয়ার সঞ্চার হয় নি৷ পুরো ব্যাপারটি ছিল মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মাঝে সীমাবদ্ধ৷ দ্বন্দ্ব ছিল এবং রয়ে গেল, হিন্দু ও মুসলমান মধ্যবিত্তদের ভেতর_যার পরিণাম ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে অনতিদূর ভবিষ্যতে৷
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বাংলার মধ্যবিত্ত শ্রেণীকে ইতিহাসের আলোকে অবলোকন করছেন৷ তাঁর বক্তব্য স্পষ্ট_বাঙ্গালীর আধুনিক কালের ইতিহাসে বরাবরই মধ্যবিত্ত শ্রেণী সামাজিক তথা রাজনৈতিক বিপবের পথে একটি অন্তরায় হয়ে রয়েছে৷ তবে কি মধ্যবিত্ত শ্রেণী পরিবর্তন কখনো চায় নি? হঁ্যা, চেয়েছে৷ কিন্তু সে-চাওয়ার মধ্যেও এক ধরনের সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে৷ যেন নীতিটি ছিল কিছু দূর যাওয়া এবং তারপর হয় থেমে যাওয়া, না হয় পেছনের দিকে ফিরে আসা৷ এই যুক্তির প েযে ঐতিহাসিক উদাহরণ চৌধুরী উপস্থাপন করছেন তা হলো ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রাম৷ সে-বছর বাঙ্গালী, পূর্ব বাংলার বাঙ্গালী, স্বাধীন জাতি হিসেবে তার উপস্থিতি বিশ্বের দরবারের ঘোষণা করেছে, জোর গলায়৷ কিন্তু তাই বলে মানুষের মুক্তি কি অর্জিত হয়েছে? যে রাজনৈতিক শ্রেণী চরিত্র আওয়ামী লীগ বহন করেছে সে চরিত্রে বৈপবিক কিছু সাধন করা স্বাভাবিক কারণেই সম্ভব ছিল না৷ হঁ্যা, তাজউদ্দিন আহমদ হয়তো অন্য একটা কিছু করতে পারতেন, নতুন একটি ধারা সৃষ্টি করতে পারতেন৷ তাঁর সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও তিনি অনেকটা এগিয়ে গিয়েছিলেন৷ চিন্তাধারায় তিনি ছিলেন বামপন্থী অথচ তাঁকে বসবাস করতে হয়েছে বুর্জোয়া শ্রেণীর মাঝে৷ তাজউদ্দিন স্বাধীনতা সংগ্রাম পরিচালনা করেন, কিন্তু তিনি এটা স্পষ্টতই অাঁচ করতে পেরেছিলেন যে, তাঁর ল্য ও তাঁর দলের ল্য এক ও অভিন্ন নয়৷ মধ্যবিত্ত আওয়ামী লীগ রাজনীতিবিদ ও শেখ ফজলুল হক মনি-র তৈরি করা মুজিব বাহিনী ১৯৭১-এর মুক্তি সংগ্রামের পথে একটি বড় রকমের বাধা হয়ে দাঁড়ায়৷ সমস্যা ঐ এক এবং পুরাতন : মধ্যবিত্ত বাঙ্গালী তার নিজ স্বার্থের স্বাধীন হতে চেয়েছে, তাই গোটা সমাজকে পরিবর্তন করতে হবে এমন কোন অঙ্গীকার সে করে নি৷ অতএব পথের মাঝে এসে যখন এই বাঙ্গালী অনুধাবন করেছে যে, তার প্রয়োজন মিটেছে, তখন সে সংগ্রামের সমাপ্তি টেনেছে৷ আর বাকি সমাজ? সেটা পূর্বে যেই স্তরে ছিল সেই স্থানেই রয়ে গেল৷ নতুন যা চোখের সামনে ভেসে এলো তা হলো পাকিস্তান রাষ্ট্রের বিদায়, অর্থাত্অবাঙালি মধ্যবিত্ত শ্রেণী ও সামন্তবাদের বিদায়, এবং তার স্থলে বাঙ্গালী মধ্যবিত্তের উদয়৷
তবে কি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম সঠিক পথে পরিচালিত হয় নি? নাকি মাঝ পথেই বিপবের একটি বিরাট সম্ভাবনাকে হত্যা করা হয়? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর যেমন কঠিন তেমনই দুঃখজনক৷ কারণ এই যে, যে-মুক্তি সংগ্রাম আরো দীর্ঘ কাল পরিচালিত হতে পারতো এবং হওয়া দরকার ছিল সেটা দ্রুত এক জায়গায় এসে থেমে গেছে৷ অন্য কথায় বলতে গেলে থামিয়ে দেয়া হয়৷ এবং তার মূল কারণ ছিল ভয়_মধ্যবিত্ত শ্রেণীর ভয় যে, যদি সংগ্রাম তার হাতের বাইরে চলে যায় তাহলেই তো স্বাধীনতার ব্যাপারটা বামপন্থীদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাবে৷ নয় মাসের সশস্ত্র সংগ্রামের ফল দাঁড়ায় এই যে, আপামর জনগণ যে ধরনের সামাজিক তথা বৈপবিক পরিবর্তন আশা করেছিল তার কিছুই ঘটে নি৷ পাকিস্তানি শোষক শ্রেণীর বদলে বাঙ্গালী শোষক শ্রেণী দেশের সর্বময় মতার অধিকারী হয়ে দাঁড়াল৷ রাষ্ট্র পরিচালনার েেত্র ঐ পাকিস্তানি আমলাতান্ত্রিক ও সামরিক শিায় শিতি ও প্রশিণপ্রাপ্ত বাঙ্গালী প্রাধান্য পেল৷ গ্রামের দরিদ্র কৃষকের মুক্তিযোদ্ধা সন্তানকে ফিরে যেতে হলো তার পূর্বেকার দারিদ্র্যে৷ আবার অন্য দিকে মধ্যবিত্ত থেকে উঠে-আসা একদল মানুষ হয়ে উঠেছে মুক্তিযুদ্ধের সব চাইতে বেশি লাভবানকারী অংশ৷ রাজনীতি তার পুরাতন ধারায় চলতে থাকে৷ রাজনৈতিক দল ফিরে যায় সেই বুর্জোয়া পন্থার রাজনীতিতে৷ এমনকি যে জাতীয়তাবাদ ও ধর্মনিরপেতার আদর্শের উপর নির্ভর করে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয় সেই আদর্শই হুমকির মুখোমুখি হয়৷ যে বাঙ্গালী মধ্যবিত্ত ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে তার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য পুনরুদ্ধার কাজে পথ বেছে নেয়, যে-পথ ১৯৬৬-এর ছয় দফা সংগ্রামের ফলে প্রশস্ত হয় এবং পরবতর্ীতে স্বাধীনতা যুদ্ধে পূর্ণতা লাভ করে, সেই একই বাঙ্গালী ১৯৭৪ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান-এর লাহোরে অনুষ্ঠিত ইসলামী সম্মেলনে যোগদানকে একটি বলিষ্ঠ পদপে বলে গণ্য করে৷ মধ্যবিত্ত শ্রেণী নিজকে স্বাধীন মনে করেছে ঠিকই, তবে সে এটাও বুঝলো যে মতার কেন্দ্রস্থলে থাকতে হলে তাকে কিছুটা হলেও আপোস করতে হবে৷ এবং আপোস সে স্বেচ্ছায় করলো৷ যার কারণে ১৯৭৫-এর পরবতর্ী সময়ে যখন জেনারেল জিয়া বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ-এর পাশাপাশি বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদকে দাঁড় করিয়েছিলেন তখন প্রতিবাদকারী ১৯৫২ অথবা ১৯৬৬ অথবা ১৯৭১-এর বাঙ্গালীকে আর খুঁজে পাওয়া গেল না৷
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর চিন্তার সঙ্গে অনেকেই একমত হবেন না, এবং সেটা খুবই স্বাভাবিক৷ তারপরও তাঁর বিশেষণ খণ্ডন করা একটি দুরূহ ব্যাপারে দাঁড়িয়ে যায়৷ সহজ কথাটি হচ্ছে যে বাঙ্গালী_এবং এর মাঝে হিন্দু ও মুসলমান উভয় সমাজের বাঙ্গালীকেই বোঝানো হচ্ছে_সব সময়-ই নির্যাতিত হয়ে এসেছে৷ তার উপর রয়েছে আবার তার ধমর্ীয় চিন্তাধারা৷ এর পাশাপাশি এসেছে শ্রেণী ভেদাভেদ৷ যে বাঙ্গালী, নেতৃস্থানীয় বাঙ্গালী, এই জাতিকে ভারতবর্ষে একটি আলাদা ও নিজস্ব সত্তা দিতে পারতেন তিনি হলেন চিত্তরঞ্জন দাশ৷ কিন্তু ১৯২৫ সালে তাঁর অকাল মৃতু্য সে-সম্ভাবনাকে নাকচ করে দেয়৷ পরবতর্ীকালে সুভাষচন্দ্র বসু মহাত্মা গান্ধী-র হাতে নাজেহাল হয়েছেন৷ কংগ্রেস সভাপতি নির্বাচনে সুভাষের বিজয় ও সিতারামাইয়ার পরাজয়কে গান্ধী মানসিক ও রাজনৈতিকভাবে মেনে নিতে পারেন নি৷ ইতিহাস তখন বড় একটা মোড় নেয়৷ তারপর যে সম্ভাবনাটি ছিল সেটি হলেন এ. কে. ফজলুল হক৷ লেখক আেেপর সুরে বলছেন_এবং সেই আপে আরো অনেক বাঙ্গালীর_যে যে-মুহূর্তে ফজলুল হক সর্বভারতীয় মুসলিম লীগ-এ যোগ দিলেন সেই মুহূর্তে উপমহাদেশে বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ মারাত্মকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়৷ পাকিস্তান সৃষ্টির পর যে বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ ধাপে ধাপে অগ্রসর হয় এবং যার নেতৃত্ব ১৯৬০-এর দশকে শেখ মুজিবুর রহমান-এর হাতে বর্তায় সেটাও স্বাধীন বাংলাদেশে ধীর ধীরে বিলুপ্ত হতে থাকে৷
অথচ এমনটি তো হবার কথা ছিল না৷ মুক্তিযুদ্ধের শেষের ভাগে তাজউদ্দিন আহমদ তাঁর এক সরকারী কর্মকর্তাকে গভীর ভারাক্রান্ত ভাষায় বলেছিলেন যে, বাংলাদেশ তো স্বাধীন হবে অবশ্যই_তবে ঐ সঙ্গে তিনি এও জিজ্ঞাসা করেছিলেন, কিছুটা আত্মজিজ্ঞাসার ধাঁচে, যে সে স্বাধীন রাষ্ট্র আদৌ বাঙ্গালীর বাসযোগ্য হবে কি না৷ আমাদের দুঃখটা এখানেই যে, এই স্বাধীন বাংলাদেশেই স্বাধীন মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সহকমর্ীরা প্রাণ দিয়েছেন৷ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা শেখ মুজিবুর রহমান স্বয়ং নিহত হলেন৷
এ সবই মধ্যবিত্ত শ্রেণীর ভুল ও ভয়-এর কারণে ঘটেছে৷ ভুল ছিল স্বাধীনতা স্বল্প সময়ে চাওয়া এবং পেয়ে যাওয়া৷ আর এই শ্রেণীর ভয় ছিল যে, মুক্তিসংগ্রাম দীর্ঘায়িত হলে জনগণ ইতিহাসকে এগিয়ে নিয়ে গিয়ে বামপন্থী রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় কাঠামোর দিকে অগ্রসর হবে৷ ভয় ছিল যে, বাংলাদেশের সংগ্রাম যত বেশি সময় নেবে তত বেশি ভিয়েতনামের সংগ্রামের আকার ধারণ করবে৷ আর তাই যদি হতো এবং হতে দেওয়া হতো তাহলে তো এই দেশে বুর্জোয়া রাজনীতিকে তার ইতি টানতে হতো৷ বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের স্বাভাবিক গতিকে দুই ভাবে বাধাপ্রাপ্ত হতে হয়৷ প্রথমত, আওয়ামী লীগ কখনোই চায়নি যুদ্ধ বেশি সময় ধরে চলুক, কেননা তার ফলে একটা জনগণতান্ত্রিক আন্দোলন পূর্ণ আকার ধারণ করার সম্ভাবনা ছিল প্রকট৷ দ্বিতীয়ত, ভারত সরকার ও তার সামরিক বাহিনী কখনো এটা মেনে নেয়ার জন্য প্রস্তুত ছিল না যে, তাদের দুয়ার পার হলেই একটি সমাজতান্ত্রিক দেশের অবকাঠামো ল করা যাবে৷
বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত শ্রেণী ঐতিহাসিকভাবে বিভিন্ন ধরনের সীমাবদ্ধতায় আবদ্ধ৷ এই স্বাধীন দেশেও সেই সীমাবদ্ধতাগুলো রয়ে গেছে৷ এক দিকে যেমন দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বেড়ে চলেছে_এবং এই বাড়তি সংখ্যা নতুন ভয়ের সঞ্চার করছে_তেমনি অন্য দিকে বেড়েছে বাংলাদেশের নব্য ধনী গোষ্ঠীর উদীয়মান প্রতাপ৷ এই গোষ্ঠীর মধ্যে রয়েছে দুনর্ীতি, এর সদস্যরা হচ্ছে ঋণখেলাপি, আবার এদের পেছনেই রয়েছে বৃহত্রাজনৈতিক দলের পৃষ্ঠপোষকতা৷ এই দুয়ের মাঝে মধ্যবিত্ত শ্রেণী আবার বাঁধা পড়েছে৷ একদিকে আশঙ্কা রয়েছে যে, দারিদ্র্য যতই বৃদ্ধি পাবে ততই সামাজিক অস্থিরতা বাড়বে এবং এই বেড়ে যাওয়ার ফলে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর আকাঙ্া পূরণে আরো ব্যাঘাত ঘটবে৷ আবার নব্যধনী শ্রেণী যত বেশি তার প্রসার ছড়াবে তত বেশি মধ্যবিত্ত শ্রেণী তার, নিজের মতাহরণ ল করবে৷
বাঙ্গালী মধ্যবিত্ত শ্রেণীর সংগ্রাম সেই উনবিংশ শতাব্দী থেকে চলে এসেছে, এবং আজও সে সংগ্রাম শেষ হয় নি৷ কিন্তু সেটা আদৌ কি সংগ্রাম? নাকি গা-বাঁচিয়ে চলার একটি অন্তহীন প্রয়াস? এই শ্রেণীর সামনে রাজনৈতিক কর্মপন্থা বা এজেন্ডা বলতে যা বুঝায় তা সাধারণত কখনোই ছিল না৷ মধ্যবিত্ত শ্রেণী যুগের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছে, যার ফলে জনগণের রাজনৈতিক ও সামাজিক আশা-আকাঙ্া পূরণের ব্যাপারে প্রায় প্রতিবারই বাধা পড়েছে৷ এই ধরনের মনোভাবের কারণেই যে-সামাজিক বিপব আশা করা গিয়েছিল সে-বিপব আর সংগঠিত হয় নি৷
সামাজিক বিপব প্রস্তুতির েেত্র যে-পরিকল্পনার প্রয়োজন সে-পরিকল্পনা অসমাপ্ত রয়ে গেছে৷ হঁ্যা, মধ্যবিত্ত শ্রেণী অবশ্যই বিভিন্ন েেত্র উন্নতি সাধন করেছে, যেমন শিা, সাহিত্য এবং সংস্কৃতিতে৷ তা সত্ত্বেও মধ্যবিত্ত শ্রেণী এসব কিছুকে সামাজিক পরিবর্তনের েেত্র ব্যবহার করতে সম হয় নি৷
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর অভিযোগ আসলে সমগ্র জাতির অভিযোগ৷ প্রশ্ন থেকে যায় অভিযোগটির মুখোমুখি আমাদের মধ্যবিত্ত শ্রেণী আদৌ হতে পারবে কি? যদি পারে, তাহলে তার ফলশ্রুতি কি হবে?

২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি ভালো আছি

লিখেছেন জানা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯



প্রিয় ব্লগার,

আপনাদের সবাইকে জানাই অশেষ কৃতঞ্গতা, শুভেচ্ছা এবং আন্তরিক ভালোবাসা। আপনাদের সবার দোয়া, সহমর্মিতা এবং ভালোবাসা সবসময়ই আমাকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে শক্তি এবং সাহস যুগিয়েছে। আমি সবসময়ই অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আমার ড্রোন ছবি।

লিখেছেন হাশেম, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩

বৃহত্তর প্যারিস তুষারপাত।

ফ্রান্সের তুলুজ শহরে বাংলাদেশের প্রথম স্থায়ী শহীদ মিনার।

হ্যাসল্ট, বেলজিয়াম।

ভূমধ্যসাগর তীরবর্তী ফ্রান্সের ফ্রিওল আইল্যান্ড।


রোডেসিয়াম এম রেইন, জার্মানি।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতার সুফল কতটুকু পাচ্ছে সাধারণ মানুষ

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:২৮

(১) আমলা /সরকারের কর্মকর্তা, কর্মচারীর সন্তানদের জন্য আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার প্রস্তাব হতাশাজনক। মুক্তিযুদ্ধের ১৯৭১ সালের রক্ত দেওয়া দেশের এমন কিছু কখনো আশা কি করছে? বঙ্গবন্ধু এমন কিছু কি আশা... ...বাকিটুকু পড়ুন

এলজিবিটি নিয়ে আমার অবস্থান কী!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১০ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:১৫

অনেকেই আমাকে ট্রান্স জেন্ডার ইস্যু নিয়ে কথা বলতে অনুরোধ করেছেন। এ বিষয়ে একজন সাধারণ মানুষের ভূমিকা কী হওয়া উচিত- সে বিষয়ে মতামত চেয়েছেন। কারণ আমি মধ্যপন্থার মতামত দিয়ে থাকি। এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলমানদের বিভিন্ন রকম ফতোয়া দিতেছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩


আপন খালাতো, মামাতো, চাচাতো, ফুফাতো বোনের বা ছেলের, মেয়েকে বিবাহ করা যায়, এ সম্পর্কে আমি জানতে ইউটিউবে সার্চ দিলাম, দেখলাম শায়খ আব্দুল্লাহ, তারপর এই মামুনুল হক ( জেল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×