somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রেড ড্রাগনের উত্থান!! -মুযাম্মিল হুসেন

১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ৮:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



চীন গত ২৭শে নভেম্বর ২০১৩ তারিখ, পূর্ব চীন সাগরের অবস্হিত দিয়াজু দ্বীপপুঞ্চে একতরফাভাবে Air Defense Identification Zone (ADIZ) তৈরী করার ঘোষণা দেয়। একটি দেশ এই ADIZ প্রযুক্তি ব্যাবহার করে তার নির্দিষ্ট আকাশসীমার কাছাকাছি অঞ্চলে যে কোন ধরনের বিমান সনাক্ত করতে পারে। আর এটা চীনের কোন হঠকারী সিদ্ধান্ত না বরং চীন অনেক হিসেব নিকেশ করেই এ কাজটা করেছে। চীনের এই আক্রমনাত্মক সামরিক নীতি খুব ভালভাবেই তার দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনৈতিক শক্তির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।কারন এই মূহুর্ত্বে চীন কোন রকম রাখ ঢাক ছাড়াই Asia-Pacific অঞ্চলে তার নিজস্ব পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য আমেরিকার সাথে প্রতিযোগীতা করছে।
অথচ বেশ কয়েক বছর আগেও চীনের সামরিক শক্তি এরকম ছিল না। ১৯৯১ সালের আগে চীনের প্রতিরক্ষা ব্যাবস্হা ছিল অনেকটাই সোভিয়েত প্রতিরক্ষা নীতির অনূরূপ। যেখানে বাইরের শক্তি দ্বারা সম্ভাব্য আগ্রাসনের বিরুদ্ধে Peoples Liberation Army (PLA) মূলত অপ্রতুল ভাবে প্রশিক্ষিত ও সজ্জিত বিশাল সেনা বাহিনীর উপর নির্ভর করত। এই প্রতিরক্ষা নীতি অনুযায়ী আক্রমণকারী হানাদার বাহিনী খুব বেশি ক্ষয় ক্ষতি করার আগেই চীন তার এই বিশাল সেনা বাহিনীকে অল্প সংখ্যক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে সক্ষম ছিল। যদিও যুদ্ধে তার পক্ষে হতাহতের সংখ্যা বেশি হত কিন্তু বিশাল রিজার্ভ বাহিনী থাকায় সে সহজেই এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠে আবার আক্রমণকারী হানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ করতে ভালভাবেই সক্ষম থাকত। এক কথায় একে “Peoples war scenario” বলা যেতে পারে। কিন্তু ১৯৯১ সালে ইরাকের সাথে মার্কিন জোটের যুদ্ধের পর থেকেই চীন তার সামরিক পরিকল্পনা নিয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করে। কারন ঐ যুদ্ধে ঠিক একই ভাবে প্রশিক্ষিত এবং সোভিয়েত আমলের অস্ত্রে সজ্জিত ইরাকী বাহিনীর, এই একই সামরিক পরিকল্পনা কোন কাজেই আসে নি। বরং আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত পশ্চিমা আগ্রসণের মূখে তা খড়কূটার মত উড়ে যায়, আর অন্য দিকে পশ্চিমাদের ক্ষয় ক্ষতির পরিমান ও ছিল খুবই নগন্য।

তাই এই হুমকি মোকাবেলায় চীনা একটি অত্যন্ত উচ্চাভিলাষী সামরিক আধুনিকীকরণ পরিকল্পনা ও প্রক্রিয়ায় হাত লাগায়। এই পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা অধিকাংশ যন্ত্রপাতি দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরী করার চেষ্টা চালায়, আর যেগুলো তাদের পক্ষে তৈরী করা সম্ভব ছিল না সেগুলো সরাসরি অন্য কোন দেশ থেকে রপ্তানী করতে থাকে। যার ফলশ্রূতিতে এখন আমারা খুব পরিশীলিত, বাস্তবধর্মী, আধুনিক চীনা সশস্ত্র বাহিনী দেখতে পাচ্ছি। যা কিনা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা পশ্চিমাদের যে কোন ধরনের সামরিক আগ্রাসন প্রতিহত করতে সক্ষম। তবে এই সামরিকীকরণ প্রক্রিয়ার অন্তর্ভুক্ত সব ধরনের বিষয় নিয়ে আলোচনা বা মূল্যায়ন এই নিবন্ধটিতে করা হয়নি, শুধু মাত্র গুরুত্বপূর্ন বিষয় গুলোর উল্লখ করা হয়েছে।

Anti Ship Ballistic Missile (ASBM)



চীনই DF-21D নামক বিশ্বের প্রথম ASBM সিস্টেমটা তৈরী করে আর সফল ভাবে এর পরীক্ষাও সম্পন্ন করে। ধারনা করা হয় এই মিসাইলের রেন্জ হচ্ছে ২৭০০ কিলোমিটার। যদিও এই সিস্টেমটার সব কাজ এখনও
শেষ হয় নি আর চীন কিছু দিন পরপরই এর সাথে সম্পর্কিত satellites আর Unmanned Aerial Vehicles (UAV’s) গুলো ক্রমান্নয়ে উন্নত করছে।



এই সিস্টেমটার আসলেই প্যাসিফিক মহাসাগরের সামরিক ভারসাম্য পাল্টে দেওয়া ক্ষমতা আছে। কারন এই মুহূর্তে এ ধরনের ক্ষমতার একটি সম্পূর্ণরূপে কার্যকরী অস্ত্রের বিরুদ্ধে কোন উপযুক্ত প্রতিরক্ষা ব্যবস্হা খুব সম্ভবত আর কারও কাছে নেই। যেগুলো আছে সেগুলো হচ্ছে interceptable cruise missile। আর চাইনিসটার তুলনায় এই গুলির স্পিডও খুব কম। কারন DF-21D এর ballistic missiles গুলির স্পিড ১০+। (উইকি তে ঢু মাইরেন) যে কারনে এটাকে মোকাবেলা করা অত্যন্ত কঠিন। এই সিস্টেমটা আক্রমণ আরম্ভ করার জন্য, শত্রুকে একটি নির্দিষ্ট এলাকা ব্যবহার করতে থেকে বাধা দেয় যে কারনে তাইওয়ানে কোনো মার্কিন হস্তক্ষেপ প্রতিরোধ করার জন্য এটার কৌশলগত গুরুত্ব অপরিসিম।

তাই এই সিস্টেমটা চালুর পর থেকে আমেরিকা চীনের প্রতি তার নীতি পরিবর্তন করাতে বাধ্য হয়েছে। সে এখন সমুদ্র পথে চীন কে অবরোধ করার চিন্তা বাদ দিয়ে তার অধিকাংশ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা জাহাজ চীনের মূল ভূখন্ড থেকে যথেষ্ট দূরে মোতায়েন করে একটি আত্মরক্ষামূলক ভঙ্গি অবলম্বন করতে বাধ্য হয়েছে।

Chinese Anti Satellite (ASAT) capability

FY-1C হল Fengyun সিরিজের মেরু কক্ষপথে থাকা চীনা আবহাওয়া উপগ্রহ। চীন, 750 কেজি ওজন নিয়ে 865 কিলোমিটার (537 মাইল) উচ্চতায় থাকা অবস্হায় একে ৮ কিমি / সেকেন্ড গতিবেগ সম্পন্ন kinetic kill vehicle বা Exoatmospheric Kill Vehicle ব্যাবহার করে ধ্বংস করে।

এই ASAT প্রযুক্তির মাধ্যমে চীন মার্কিন সামরিক বাহিনীর সবচেয়ে বড় দূর্বলতায় আঘাত করার ক্ষমতা অর্জন করেছে। কারন মার্কিনিদের প্রায় প্রত্যেকটি অত্যাধুনিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ ও নির্ভূল লক্ষ্যে আঘাত হানার জন্য জিপিএস এবং উপগ্রহের উপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল। তাই এই উপগ্রহ গুলোর উপর কোনো আঘাত মার্কিন সশস্ত্র বাহিনীর ক্ষমতার উপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে। এর ফলে যুদ্ধকালীন সময়ে মার্কিন বাহিনীর জীবন ও সম্পদের ক্ষয়-ক্ষতির পরিমান বেড়ে যাবে এমনকি তারা এমনকি সামরিক পরাজয়ের সম্মুক্ষিন ও হতে পারে।

The Chengdu J-20 and the Shenyang J-31



১১ই জানুয়ারী ২০১১, চীন তার Chengdu J20 নামের stealth aircraft টি প্রদর্শন করে। বিমানটি তার প্রথম টেষ্ট ফ্লাইটে প্রায় ১৫ মিনিট ধরে উড্ডায়ন করে। আর এর মাধ্যমে চীন ৩য় দেশ হিসেবে stealth capable aircraft ক্লাবে প্রবেশ করে।



পরবর্তিতে ৩১শে অক্টবর ২০১২ Shenyang J-31 এর পরিক্ষামূলক উড্ডায়ন সম্পন্ন হয়। আর ধরনা করা হয় এই বিমানটি একটি ক্যারিয়ার ভিত্তিক পঞ্চম প্রজন্মের জঙ্গী বিমান (carrier based fifth generation fighter)। আর বর্তমানে চীন দ্বিতীয় দেশ হিসেবে একই সাথে দুটি পঞ্চম প্রজন্মের জঙ্গী বিমান তৈরীর প্রকল্প চালাচ্ছে।

এই দুটি পরিপূরক বিমান চীনের প্রতিরক্ষা ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি বহিঃবিশ্বে তার প্রভাব বৃদ্ধির কাজকে আরও ত্বরান্নিত করবে।

চীন তার সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়নের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে বা করছে, কিন্তু এখনও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চীন মধ্যে সামরিক ক্ষমতার ভারসাম্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষেই আছে। আর একারনেই এশিয়া-প্যাসেফিক অঞ্চলে এ মূহুর্ত্বে কোন উত্তেজনা দেখা দিলে, এখানে মার্কিন হস্তক্ষেপের বা মার্কিন পরিকল্পনা সফল হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। এই নতুন সামরিক ভারসাম্য চীন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে যুদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনাকে করেছ সূদূর পরাহত। চীনা সামরিক আধুনিকীকরণ মার্কিন পররাষ্ট্র নীতিকে (gunboat diplomacy) অনেক বেশী জটিল করে তুলেছে।

মূল সোর্স
Click This Link

রেফারেন্স-
Click This Link
http://en.wikipedia.org/wiki/AGM-114_Hellfire
Click This Link
Click This Link
Click This Link
Click This Link
Department of Defense Studies, 2000, p. 4.
Click This Link

9. Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ৯:০৮
৫টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×