somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যানজটে জীবনজট-২: সম্ভাব্য সমাধান

২৬ শে আগস্ট, ২০০৯ রাত ১:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সমস্যার বিবরণ অনেকই হলো, সমাধান কি? কারণ গুলোর মাঝেই সেটা লুকিয়ে আছে। সহজ সমাধান হিসেবে আমাদের দেশে রাস্তা বাড়ানোকেই ধরা হয়, কিন্তু এ প্রসঙ্গে বুয়েটের ট্রান্সপোর্টেশন এন্ঞ্জিনিয়ারিংয়ের শ্রদ্ধেয় শিক্ষক অধ্যাপক ডঃ শামসুল হকের একটা উক্তি মনে পড়লো। আমাদের পড়াতে গিয়ে প্রায়ই বলতেন--"যদি আমরা ১টার বদলে ৩টা রাস্তা বানাই তাহলে এখন যার ১টা গাড়ি
আছে সে ৩টা গাড়ি কিনবে।" কথাটা চরম সত্যি, সেটা ঢাকার রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা দেখেই বোঝা যায়। কর্তার জন্য একটা, গিন্নির জন্য আরেকটা, রাস্তা থাকলে ছেলে-মেয়েদের জন্য আরো দু'টো কিনে ফেলা হবে, কালো টাকার এই দেশে গাড়ি কেনার লোকের অভাব নেই। মূল কথাটা হলো, আধুনিক পরিবহণ ব্যবস্থায় কোন হিসেব না করে রাস্তা বাড়ানো একটা বাজে সমাধান, ক্ষণস্থায়ীও বটে। 'সাসটেইনেবল' বা টেকসই সমাধানের জন্য ঝুঁকতে হবে মহাপরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনার দিকে। এ মুহূর্তে তাৎক্ষণিক একটা কঠিন সমাধান হচ্ছে, এখনি, এই মুহূর্তে বাড়তি প্রাইভেট কার আমদানী এবং রেজিস্ট্রেশান করা বন্ধ করে দিতে হবে। নয়তো কিছুদিন পরেই-- সেটা কিছুতেই ৫ বছরের বেশি নয়-- দেখা যাবে রাস্তায় সারি সারি গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে এবং লোকজন সেগুলোর উপর দিয়ে হেঁটে
পার হচ্ছে। আমাদের নিজেদেরও এখানে উপলব্ধির ব্যাপার আছে, একটু টাকা জমিয়েই যাতায়াতের স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য আমরা যে গাড়িটা কিনে ফেলি, সেটা আসলে ঢাকার যানজটে আরেকটু রসদ যোগানো ছাড়া কোন সুবিধা দিচ্ছে না। এক্ষেত্রে হংকং বা সিঙ্গাপুরের মডেল অনুসরণ করা যেতে পারে, ঢাকার চেয়ে অনেক ছোট শহরে,এবং অনেক বেশি জনসংখ্যা ঘনত্ব নিয়েও শুধুমাত্র প্রাইভেট কার নিয়ন্ত্রণ করেই যানজট অনেকাংশে কমানো গেছে। প্রথমত, গাড়ির মূল্যের উপর উচ্চ কর তো আছেই, লাইসেন্সের জন্য গাড়ির দামের কয়েকগুণ অর্থব্যয়, সাথে প্রতি বছর সীমিত সংখ্যক গাড়ির লাইসেন্স দেয়ার পদ্ধতিটা তাদের জন্য বেশ কার্যকর হয়েছে। অনেকটা 'আগে আসলে আগে পাবেন' ভিত্তিতে লাইসেন্স দেয়া হবে, এবং প্রতি বছর জরিপ করে নির্দিষ্ট সংখ্যক গাড়িকেই সেটা দেয়া হবে, প্রয়োজনে কাউকেই দেয়া হবে না। কথা হলো, আমাদের দেশে বেড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে, বিশেষ করে সেই বেড়াল যদি নিজের ভালো নিজেই না বোঝে?

এক্ষেত্রে, অবশ্যই গাড়িওয়ালা থেকে গরিব জনতা সবার জন্য ভালো বিকল্প দিতে হবে। পাতালরেল জিনিসটা ঢাকার মত একটা "বিল্ট আপ" বা গড়ে ওঠা শহরে খুব বেশি কার্যকর নয়, কারণ জালের মত ছড়িয়ে থাকা নাগরিক সেবাদানের পাইপ নেটওয়ার্ক এড়িয়ে পাতাল রেলের টানেল বানাতেই যে পরিমাণ অর্থব্যয় আর সময় যাবে, ততদিনে ঢাকা বসবাসের অযোগ্য হয়ে যাবে। একই সাথে,
যারা এক্ষেত্রে ভর্তুকি দিতে বলেন, তাদের জন্য জ্ঞাতব্য, এমনকি ভর্তুকিদিয়ে বানালেও মোটামুটি এটার নির্মাণ ব্যয় উঠিয়ে আনতেও মতিঝিল থেকে উত্তরা জনপ্রতি ভাড়া ধার্য করতে হবে কয়েকশো টাকা, আনুমানিক। একই ভাবে একটার পর একটা অপরিকল্পিত ফ্লাইওভার বানানোটাও নয়, কারণ বর্তমান অবস্থার খানিক উন্নতি না করে এরকম বিশাল নির্মাণে হাত দিলে সেটা ঢাকার জীবনযাত্রা মোটামুটি থামিয়ে দেবে বলা যায়। বিশাল এবং দীর্ঘমেয়াদী নির্মাণব্যয় তো আছেই। আবার এ শহরে অপরিকল্পিত ফ্লাইওভারের ফলাফলও এরমাঝেই মহাখালী ফ্লাইওভারে দেখা গেছে, সেটা না হয়েছে ফ্লাইওভার না ওভারপাস, যে যানজট তাই থেকে গেছে। রাজউকের আরেকটা পরিকল্পনা দেখার দুর্ভাগ্য হয়েছিল একবার, যেখানে তাদের দরকার মনে হয়েছে সেখানেই একটা করে ফ্লাইওভার (যদিও ফ্লাইওভারের সংজ্ঞায় সেগুলো পড়ে না, বড়জোর ইন্টারচেন্ঞ্জ বলা যায়) বসিয়ে দেয়ার চিন্তাভাবনা তাদের, তাতে কাজের কাজ যা হবে, পুরা ঢাকা দেখতে হবে ঢেউখেলানো কোন পাহাড়ের মত, কাজের কাজ কিছুই হবে না। ফ্লাইওভার বা এমন কিছু বানাতে হলে পুরো ঢাকাকে নিয়ে একটা সমন্বিত পরিকল্পনা দরকার,সেরকম কিছু কারো মাথায় আছে বলে মনে হয় না।

কু-পরিকল্পনার আরেকটা উদাহরণ হলো নির্মাণাধীন গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ি ফ্লাইওভার, যেটার নির্মাণকাজ পরিকল্পনা ত্রুটির জন্য বিশেষজ্ঞদের প্রবল আপত্তির মুখে স্থগিত হয়ে গিয়েছিল। গবেষণায় দেখা গেছে, অপরিকল্পিত টোল প্লাজা স্থাপন, কোম্পানির সুবিধামত টোল আদায়ের জন্য আশপাশের যতগুলো বিকল্প রাস্তা দিয়ে ঢাকা শহরে প্রবেশ করা যেত সেগুলো বন্ধ করে দেয়া, রাস্তাগুলো বন্ধ করে দেয়া, ফ্লাইওভারের নিচ দিয়ে খুবই কম "ক্লিয়ার হাইট" রাখা, এমনকি ফ্লাইওভারের পাশ দিয়েও যাবার জন্য একটা সিএনজি'র সমান জায়গাও না রাখা ইত্যাদি নানা কারণে এই ফ্লাইওভার নির্মিত হলে অন্তত ৩টা ন্যাশনাল হাইওয়ে পঙ্গু হয়ে যেত। এদিকে ফ্লাইওভারটার রুট অনুসরণ করলে দেখা যায়, আগে যেখানে গুলিস্তানে ঢাকার ইনকামিং ট্রাফিকের ৫% যেত, এই ফ্লাইওভার নির্মিত হলে সেখানে ৯৫% ট্রাফিক ওদিক দিয়ে যেতে হবে। ফলাফল নিশ্চয়ই কাউকে বলে দিতে হবে না। এখানে দেখা যায়, ওভাবে ফ্লাইওভারনির্মিত হলে কোম্পানি খুব উঁচু হারে টোল আদায় করে দ্রুত তাদের নির্মাণ ব্যয় তুলে নিয়ে
লাভের দিকে যেতে পারে, যেহেতু টারা বিকল্প কোন রাস্তা ব্যবহারের সুযোগই রাখছে না, কিন্তু মূল যে উদ্দেশ্য অর্থাৎ ঢাকার ইনকামিং ট্রাফিকের জন্য যানজট কমানো এবং সময় বাঁচানো, সেটার কিছুই হবে না, বরং আরো বেশি যানজটের সম্ভাবনা তৈরি হয়।আজব দেশে সবই চলে, কাজেই সরকার বদলের সাথে সাথেই এই ফ্লাইওভার সামান্য নকশা বদলে একই প্রতিষ্ঠান আবার অনুমোদন পেয়ে গেছে।

তাহলে, ভাল বিকল্প কি? ভাল বিকল্প হতে পারে "পাবলিক ট্রান্সপোর্ট" বা গণপরিবহণ, সোজা কথায় বাস, ডাবলডেকার ইত্যাদির পরিকল্পিত সেবা। তার আগে দেখা যাক বর্তমান গণপরিবহণের সমস্যাটা কোথায়। এক জরিপে দেখা গেছে, আমাদের এখানে যেসব বাস চলে তার প্রায় ১০০ ভাগই ব্যক্তিগত বা ছোট কোন কোম্পানি দ্বারা পরিচালিত, যার মাঝে মোটামুটি ৫৭% হলো ব্যক্তিগত। এগুলোর না আছে কোন সমন্বিত ব্যবস্থাপনা, না আছে কোন স্থায়ী কর্মচারী, প্রায় সবই চলে দৈনিক মজুরী বা চুক্তির ভিত্তিতে। যার ফলে যাত্রী ওঠানোর জন্য বাসগুলো প্রতিযোগীতা প্রায় অসুস্থ পর্যায়ের। ওভারটেকিং, রাস্তায় "কিউ" তে না দাঁড়িয়ে পাশাপাশি অবস্থা নিয়ে রাস্তা আটকে যাত্রী ওঠানো, সর্বোপরি কোন "টাইম শিডিউল" না থাকা এসব গণপরিবহণকে নিরুপায়ের পরিবহণে
পরিণত করেছে, একটু সামর্থ্য থাকলেই এসব বাসে কেউ উঠতে চান না। এমনকি "সিটি সার্ভিস" নামে যেসব কাউন্টার বাস চালু করা হয়েছে সেগুলোতেও একই সমস্যা বিদ্যমান। এখানে উল্লেখ্য যে বিআরটিসি'র যে বাসগুলো চালু ছিল সেগুলোও বেসরকারী বাস মালিকদের বাধার মুখে এখন বন্ধপ্রায়। আবার এসব বাসের ৮৩% এই মাত্র একটা দরজা, ১৭% এ আছে ২ দরজা। আবার এসব বাসে
ওঠা লাগে ২ ধাপের সিঁড়ি বেয়ে, যেগুলোর গড় উচ্চতা ২ ধাপ মিলিয়ে ১৭ ইন্ঞ্চির মত। এই উচ্চতা পার হয়ে উঠতে গড়ে একজন যাত্রীর সময় লাগে ১২ সেকেন্ড। হিসেব করে দেখা গেছে, একতলা সাধারণ বাসগুলোর স্টপেজ টাইম গড়ে ৩ মিনিট ৫৩ সেকেন্ড, আর দোতলা বাসগুলোর জন্য ৫ মিনিট ৫৮ সেকেন্ড। পুরো সময়টাই রাস্তাটা আটকে থাকছে, যাতায়াতের বিলম্বের সাথে এটাও মাথায় রাখতে
হবে।

এখানে আমাদের দেশে সম্পূর্ণ নতুন একটি ধারণার কথা বুয়েটের বিশেষজ্ঞরা প্রস্তাব করেছেন, সেটা হলো বিআরটি বা বাস রেপিড ট্রানজিট। এক কথায় এটা বোঝানো মুশকিল, এটাকে বলা যায় পাবলিক ট্রান্সপোর্ট বা বাসের জন্য সম্পূর্ণ "এক্সক্লুসিভ" বা স্বতন্ত্র লেন, যেখানে কোন রকম সিগন্যালে না পড়েই বাস সোজাসুজি চলে যাবে, এবং প্রাইভেট ট্রান্সপোর্টগুলো সবরকম সিগন্যালের মুখোমুখি হবে। উদ্দেশ্য? একসাথে অনেক বেশি লোক পরিবহণ করা, অনেক লোককে একজায়গায় নিয়ে আসা, এবং সেটা করতে গেলে অবশ্যই ব্যক্তিগত পরিবহণকে নিরুৎসাহিত করতে হবে, সেজন্যই এই সিগন্যালে ফেলে দেয়া বা চারজনের কম আরোহী থাকলেই প্রাইভেট গাড়ি থেকে উচ্চহারে টোল আদায় করা, এবারে বাসে না উঠে যাবে কোথায়? এই পদ্ধতি কার্যকর করার জন্য বাসগুলোরও কিছু বৈশিষ্ট্য থাকতে হবে। এর মাঝে আছে বাসের উঁচু প্ল্যাটফর্ম, স্বয়ংক্রিয় টিকিট ব্যবস্থা, চওড়া এবং স্বয়ংক্রিয় দরজার বাস, যাতে ভার্টিক্যাল কিউয়ের বদলে সমান্তরাল কিউতে দাঁড়িয়ে দ্রুত ওঠা যায়, একই সাথে বাসগুলো নিচু ধাপের হতে হবে। বাস আসবে নির্দিষ্ট সময়, হতে পারে ৫ মিনিট পর পর। এটা নিশ্চিত করতে বাসগুলোকে একই প্রতিষ্ঠানের আওতায় নিয়ে আসা জরুরী, যাতে একটা আরেকটার সাথে প্রতিযোগীতা না করে অথবা কোন বাসটা আগে আসবে সেটার টিকেট কাটার জন্য যাত্রীরা উদ্বিগ্ন হয়ে দাঁড়িয়ে না থাকে। এই ব্যবস্থা চালু করলে বাস টার্মিনালেরও প্রয়োজন হবে না, কারণ একই কোম্পানির বাস ৫ মিনিট পরে পরে আসতে থাকলে তো কোথাও গিয়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করারই প্রয়োজন পড়বে না। এখানে দেখা যায়, বর্তমান ব্যবস্থায় উত্তরা থেকে রামপুরা হয়ে মতিঝিল যেতে লাগে ২ ঘণ্টা ১০ মিনিটের মত, গড়ে ঘণ্টায় ১০ কিমি যাওয়া যায়, এটা ২০০৮ সালের প্রথম দিকের হিসাবে। সেখানে শুধুমাত্র যাত্রী ওঠানামা এবং সিগন্যালগুলো এড়াতে পারলে এবং সেই সাথে "স্বতন্ত্র" লেনে বাস
চালাতে পারলে এটা নেমে আসে ৫২ মিনিটে, আগের চেয়ে আড়াই গুণ সময় বাঁচানো সম্ভব। বাংলাদেশে অবশ্য আলাদা লেন করে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট চালু করা এই মুহূর্তে একটু মুশকিল, তবে অবশ্যই একই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বা সিন্ডিকেট করে হলেও পর্যাপ্ত পরিমাণে এবং সবাই উঠতে পারে সেরকম বাস নামানো খুবই সম্ভব, প্রয়োজন শুধু একটু সদিচ্ছা এবং আন্তরিক উদ্যোগ। তবে এখানেও একই কথা চলে আসে, এই পদ্ধতি চালু করতে হলেও আগে প্রাইভেট গাড়ি কমানোর বিকল্প নেই, সেটা করতে যাবে কে?

এবার আসা যাক কমিউটার ট্রাফিক, বা সোজা কথায় অফিসগামী ট্রাফিকের কথায়। ঢাকার বিকেন্দ্রীকরণের যে প্রস্তাবনা, সেটার জন্যও এই ব্যবস্থার উন্নতি খুব বেশি জরুরী। ঢাকার অফিসগামী জনতা কেন ঢাকাতেই বসত গেড়ে বসেছে, কেন বাইরে যাচ্ছে না, তার কারণ হলো ঢাকার আশপাশ থেকে যাতায়াতের ভাল কোন ব্যবস্থা নেই। কমিউটার বাস অথবা ট্রেন সার্ভিসের সংখ্যা বাড়ানো একটা ভাল সমাধান। যেহেতু বাস বাড়ানো আবার সেই যানজট সমস্যা বাড়াচ্ছে, সেক্ষেত্রে কমিউটার ট্রেইন সার্ভিস বিকল্প হতে পারে। বর্তমানে ঢাকা-টঙ্গী লাইনে "তুরাগ" এবং ঢাকা-নারায়নগন্ঞ্জ লাইনে "নারায়নগন্ঞ্জ লোকাল" নামে ২টি কমিউটার সার্ভিস চালু আছে। তুরাগের পরিচালনায় আছে বাংলাদেশ রেলওয়ে, আর নারায়নগন্ঞ্জ লোকাল চালাচ্ছে বান্না এন্টারপ্রাইজ, যারা বাংলাদেশ রেলওয়ের কাছ থেকেই ট্রেইন ভাড়া নিয়ে দিনে ১০টা আপ এবং ১০টা ডাউন সার্ভিস দিচ্ছে এবং লাভের মুখ দেখছে। এক্ষেত্রে, বিকেন্দ্রীকরণের প্রথম ধাপ হিসেবে "সাব-আর্বান" রেসিডেনশিয়াল জোন গড়ে তুলে তার সাথে ঢাকার বাণিজ্যিক এলাকাগুলোর কমিউটার সার্ভিস চালু করতে হবে, যেখানে অল্প সময় পর পর ট্রেন যাবে। তবে এখানেও সমস্যা আছে, লেভেল ক্রসিং ঢাকাতে বড়সড় আছে ২৮টা, সেখানে
কমিউটার ট্রেনের ঘন ঘন যাতায়াতে ট্রাফিক জ্যাম বাড়বেই, কাজেই এক্ষেত্রে ওভারপাস করা হবে নাকি আন্ডারগ্রাউন্ড রেলওয়ে, সেটা নিয়ে বিতর্ক আছে।

এগুলো তাৎক্ষণিক উদ্যোগ, সফলতা পেলে দীর্ঘমেয়াদী উদ্যোগে যাওয়া যায়। তারমাঝে আছে ঢেউয়ের মত যেখানে-সেখানে ফ্লাইওভার তোলার উচ্চাভিলাষী স্বপ্ন না দেখে পুরো শহরটাকে একটা মহাপরিকল্পনার আওতায় এনে ঠিক কোথায় ফ্লাইওভার বা ইনটারচেন্ঞ্জ লাগতে পারে সেটা চূড়ান্ত করা এবং বর্তমানে থাকা ইন্টারসেকশন এবং গোলচত্বরগুলোর ট্রাফিক ব্যবস্থার সংস্কার করা, বিশেষ করে সিগন্যাল ব্যবস্থার। তার সাথে সাথেই কমাতে না পারলেও অন্তত ঢাকামুখী জনস্রোত নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, ব্যবসা-বাণিজ্যকে বিকেন্দ্রীকরণ করে বন্দরমুখী করে। অবশ্যই গার্মেন্টসগুলো সরাতে হবে ঢাকার বাইরে, একই সাথে বিশাল বিশাল শপিং কম্প্লেক্সের ফুটানি বন্ধ করে এগুলোকে অনুমোদন দেয়া বন্ধ করতে হবে, কারণ ঢাকায় এত পার্কিংয়ের জায়গা নেই। যা আছে সেগুলোরও অনেকগুলো বন্ধ করতে পারলে ভাল হতো, তবে সেটা অসম্ভব বলেই ধরে নেয়া যায়। সবার উপরে, শুধুমাত্র সরকার বাহাদুরের উপরে দায় ছেড়ে না দিয়ে আমরা, যারা আমজনতা, তারাও নিজেদের মত করে খানিক অভ্যাস বদলাতে হবে। গাড়ি ছেড়ে একটু হাঁটার অভ্যাস ধরলে কি খুব ক্ষতি? অথবা ১০ মিনিটের রাস্তার জন্য রিকশা না নিলেই বা কি? রাস্তা পার হতে কষ্ট করে একটু ওভারব্রিজে উঠুন না, ব্যায়াম হোক, আইনও বাঁচুক, রাস্তাটাও পরিষ্কার থাকুক। আপনার গাড়িটা পার্ক করতে গিয়ে দখল হয়ে গেছে ব্যস্ততম রাস্তার অর্ধেকটা, আপনার চেয়েও যাদের দরকার বেশি তাদের জন্য না হয় গাড়িটা একটু কমই ব্যবহার করি। প্রিয় ঢাকা
শহরকে বাঁচাতে এই সামান্য ছাড় দেয়ার দাবীটা কি বেশি হয়ে যায়?

তথ্যসূত্র:

১। Matiur, R.(2008) ; Prospects of Introducing Bus Rapid Transit (BRT) System in Dhaka Metropolitan City; Bachelor thesis conducted at the Department of Civil Engineering, BUET.

২। Munshi, S.(2008); Study on Commuter Rail of Dhaka City; Bachelor thesis conducted at the Department of Civil Engineering, BUET.

[লেখা বেশি বড় হয়ে যাচ্ছিল বলে আরো অনেক কিছু বাকি রয়ে গেল, সমস্যাগুলো এতই বহুমুখী যে এই পরিসরে লিখে শেষ করা মুশকিল। ভবিষ্যতে বিআরটি এবং কমিউটার রেল সার্ভিস নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার ইচ্ছা রইলো। এখানে আরেকটা কথা বলে রাখা ভাল, লেখার অনেকটাই ব্যক্তিগত ধারণা, আন্ডারগ্র্যাডের পড়াশোনা এবং কিছু আন্ডারগ্র্যাড থিসিসের উপর ভিত্তি করে লেখা, কাজেই এটাকে কোন বিস্তৃত জরিপের অংশ বা গুরুত্বপূর্ণ কোন থিসিস ধরে নেবার কোন কারণ নেই, শুধু সমস্যা এবং সমাধানের কিছু উপায় নিয়ে আলোচনার উদ্দেশ্যেই এটা লেখা, সেভাবেই নিলে এবং আলোচনার মাধ্যমে কিছু যোগ করলে কৃতজ্ঞ থাকবো।]
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে আগস্ট, ২০০৯ ভোর ৪:৩৪
৭৬টি মন্তব্য ৭৬টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×