বিয়ের প্রথম দিকে অনেক অনেক জায়গায় ঘুরতে যাওয়া হতো, পোলাপান হয় নাই তখনও, ফট কইরা দুইতিনদিনের জন্য হাওয়া হইয়া যাইতাম মিয়া-বিবি। দশ বছর আগে এরকম ঘুরতে ঘুরতে গেলাম লেক পাৎজকুয়ারো, মিচোয়াকান স্টেট এর মধ্যে একটা বিশাল লেক, সেই লেকের মাঝখানে বিশাল একটা পাহাড়ের মতো দ্বীপ, সেটার নাম হানিতসিও Janitzio । যুগ যুগ ধইরা এখানে মেক্সিকোর আদিবাসী ইন্ডিয়ানরা মাছ ধরে আর বংশবিস্তার করে, মাছ ধরার জালগুলা আবার স্পেশাল টাইপের, দুই দিকে প্রজাপতির পাখার মতো। এক একটা বিশাল জাল দিয়া লেকের মাছ ধরা হয়, এখন অবশ্য মাছ ধরার লোকজন কমে গেছে।
লেক পাৎজকুয়ারো আর হানিতসিওর স্পেশাল আকর্ষন হইলো ওদের "দিয়া দে লস মুয়ের্তো উৎসব" , প্রতি বছর অক্টোবরের শেষ দুইদিনটাতে ওরা খুব কইরা নিজেদের মৃত পূর্বপুরুষদের মনে করে, কবরে বাতি জ্বালায়, মেক্সিকোর বাকি সব শহরের চাইতে এইখানে "দিয়া দে মুয়ের্তো সেলিব্রেশন" জোরেসোরে হয়। প্রথম দিনটা থাকে শিশু বয়সে যারা মারা গেছে, এদেরকে বলা হয় আনহেলিতোস(ফেরেশতা), নিষ্পাপ শিশু তাই ফেরেশতা নাম, দ্বিতীয় দিন বরাদ্দ থাকে বুড়া বা জোয়ান বয়সে যারা মারা গেছে তাদের স্মরন করার জন্য। পাৎজকুয়ারোর লেকের মাঝের হানিতসিও পাহাড়ের পুরোটাতে মোমবাতি জ্বালায়ে মৃত বাপ মা নানা নানী দাদা দাদীর কবরের পাশে বসে তাদের কথা আলোচনা করে লোকজন। অনেকটা বাংলাদেশের শবে বরাতে রাতে কবর জিয়ারতের মত অবস্থা।
লেকের মধ্যে জেলেনৌকাগুলোতেও পিদিম জ্বলে, বিশাল হ্রদের কোলজুড়ে ভাসমান ডিঙি নৌকা আর সেম্পাসুচিল ফুলের গন্ধ অশরীরি আত্মীয়দের পথ দেখায় দেয় পুরানা বাট ও ঘাটের দিকে, যেখানে তাদের জীবিত স্বজনরা জেগে আছে সারা রাত
মিচোয়াকান এর অবস্থা আর আগের মত নাই, নানা ধরনের খুনাখুনির ঘটনা শুনে আর ঐদিকে পা দেই না। মেক্সিকোতে গত দশ বছর আগে শান্তির যে ভাবটা ছিল, সেটা এখন নাই, অবস্থা ঠান্ডা হলে আবার পাৎজকুয়ারো যাইতে হবে।
রিপোস্ট: পাৎজকুয়ারো
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ৩:০৭