somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বলিউডি ফেভিকল এবং ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ

৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ২:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তৃণমূলের বিভিন্ন রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে অশালীন নৃত্য সম্পর্কে বলতে গিয়ে কলকাতার কুলীন পত্রিকা আনন্দবাজার-এর ব্লগ সংস্করণে জনৈক রংগন চক্রবর্তী তার “না নেচে কি বাঁচা যায়?” শিরোনামের লেখায় লিখেছেন,
“সুন্দর স্বাস্থ্যের কিছু মেয়ে সুন্দর খোলামেলা নাচছে সেটা অশ্লীল কেন হতে যাবে? আসল অশ্লীল যেটা, তা হল সেটা দেখে টাকা ছোঁড়া। অর্থাৎ যা দেখে একটা সম আনন্দের বিনিময় হতে পারত, সেটাকে পণ্যে পরিণত করা। তবে সেটা নিয়েও আবার বিরাট চেঁচামিচি করবেন কিনা ভেবে দেখবেন, কারণ শাস্ত্রীয় সংগীতের শিল্পীরাও কিন্তু অর্থের বিনিময় গেয়ে থাকেন। অর্থাৎ আমরা কেবল যৌনতারই পণ্যায়ন করি ব্যাপারটা কিন্তু তা নয়। সব শিল্পীই জীবনধারণের জন্য পয়সা রোজগার করেন। যৌন নাচ দেখিয়ে পয়সা রোজগারে তাই সব শেষ হয়ে গেল এই হাহাকার তোলার মতো একটা সংকট বা বিকৃতি কিনা সেটা ভেবে দেখবেন। খুন করে বা ট্রাম বাস পুড়িয়ে নষ্ট করে রাগ দেখানো কিন্তু তার চেয়ে অনেক বেশি ভয়ঙ্কর।”
খুন করে বা ট্রাম বাস পুড়িয়ে(যে রকমটা আমাদের এই শহরেও প্রায় প্রতিদিনই হচ্ছে) রাগ দেখানো ভয়ঙ্কর কাজ তাতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু তার মানে এই না যে ঘটা করে হাজার লোকের সমাবেশে অর্ধনগ্ন নাচগান খুব সিদ্ধ ব্যাপার। বরং অনেক ক্ষেত্রে গাড়ি ভাঙা বা খুনের চেয়েও বেশি ক্ষতিকর। ভদ্রলোক যে তথাকথিত উদারপন্থী সে না বললেও বোঝা যায়। সমস্যা হল অতি উদার হতে গিয়ে সোনা আর সোনার মত দেখতে ইমিটেশনের মধ্যে যে খানিক তফাৎ আছে এই ব্যপারটা তিনি ভুলে গেছেন। আর এ কারণেই শাস্ত্রীয় সংগীত আর অর্ধনগ্ন নৃত্যকে মাপছেন একই পাল্লায়।
তা কলকাতার কোন দাদাবাবু কি লিখেছে তা নিয়ে এত মাথা ঘামানোর প্রয়োজন হল কেন? প্রয়োজন হল কারণ, ভয়ানক ব্যপারটা হচ্ছে দাদাদের এইসব অতিউদারতা ভারতীয় চ্যানেলগুলোর কল্যাণে আমাদের এই স্বপ্নের দেশটাতেও পৌছে গেছে। খুলেই বলি তাহলে। আমার এক ফেসবুক বান্ধবী তার ৮-৯ বছর বয়সী বোনের একটা ভিডিও আপলোড করেছিল দুদিন আগে। যাত্রাপালার নায়িকাদের মত পোষাক পরে Fevicol Se গানের তালে তালে কারিনা কাপুরের ঢংয়ে অশ্লীল নাচ। অবাক হয়ে দেখলাম, আমার সেই বান্ধবীসহ তার পরিচিতজনেরা এমনকি মেয়েটির টিচার(ইনিও একজন মেয়ে) সবাই বাচ্চাটির অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি(তাদের ভাষায় নাচ!) দেখে অত্যন্ত গর্ববোধ করছে। তো বোনকে ফেভিকলের মত অশ্লীল নাচ নাচতে দেখে খুশি হওয়ার যে কিছু নেই আমি তা বোঝাবার চেষ্টা করলাম। আমার সেই বান্ধবী উল্টা বুঝিয়ে দিতে চাইল ভিডিওটা একটা পারিবারিক অনুষ্ঠানে করা। সবাই পরিচিতজন ছিল। আর এখানে অশ্লীল কিছুই নেই কারণ নৃত্যশিল্পী বাচ্চা। কি আর করা তাকে আবার বোঝাতে চাইলাম যে এরা বাচ্চা আর এ কারণেই ওদেরকে এসব থেকে দূরে রাখা উচিত। কারণ ভালমন্দ বোঝার ক্ষমতা শিশুদের থাকে না। আমাদেরই উচিত তাদেরকে খারাপ ব্যপারগুলো থেকে দূরে রাখা।
কে শুনে কার কথা, বান্ধবী ছোট্ট করে বলে দিল, “বুঝবা না তুমি”
ভাবলাম অফ যাই, উলুবনে মুক্তা ছড়িয়ে তো লাভ নেই। যার বোঝার ক্ষমতা নেই হাজার চেষ্টা করলেও আমি তাকে বোঝাতে পারবনা। আর তখনই আবির্ভাব ঘটল আরেক অতি আধুনিকার। তার সরাসরি প্রশ্ন, “এই গানটার মধ্যে অশ্লীল কি দেখলেন?” তারপর সেইসব অতিচর্চিত কথাবার্তা, নিজের মন ঠিক করেন। ছেলেরা যদি মেয়েদেরকে বোনের মত ভাবে তাহলে পৃথিবীতে কোন অশ্লীলতা থাকবেনা ইত্যাদি ইত্যাদি।
কিছুক্ষণ পর লেজ নাড়াতে নাড়াতে উদয় হলেন আরেক শ্রীমান। তিনি মোটামুটি প্রমাণ করে দিলেন আমি আসলে গাধা টাইপের কিছু একটা। আত্মসম্মানবোধ, মূল্যবোধ আর বাঙালি সংস্কৃতির কথা বলা মানে শুধু শুধু কি বোর্ড ফাটানো।
এইসব জ্ঞানপাপীদের বোঝানোর ক্ষমতা আমার নাই। কিন্তু কথা হল যে এই যদি চলতে থাকে, এই যদি শিখতে থাকে আমাদের কিশোরী বোনেরা তাহলে সামনের দিনগুলোতে আমাদের পরিচয়টা আসলে কি হবে?
বছর সাত আগে যখন প্রথমবার ঢাকায় এসেছিলাম তখন মৌচাক মার্কেটের লিফটে এক দম্পতিকে দেখেছিলাম তার ৭-৮ বছর বয়সী ছেলেকে হিন্দি বলতে দেখে আনন্দে আত্মহারা হতে। আজ এই সংখ্যাটা নিশ্চই বহুগুণ বেড়ে গেছে। অন্য ভাষা শেখা, অন্য সংস্কৃতি সম্পর্কে জানা খারাপ কিছু না। খারাপ হল সেই ভাষাটাকে মাতৃভাষার চেয়েও প্রাধান্য দেয়া। অন্য কোন সংস্কৃতিকে প্রাধান্য দিয়ে স্বকীয়তা বিকিয়ে দেয়া। অথচ আজকাল আমাদের এখানে তাই হচ্ছে। নববর্ষের মঞ্চে বাজে হিন্দি গান। হিন্দি নাচ গান ছাড়া কোন অনুষ্ঠান উৎসবই জমে না। হিন্দি বলতে না পারলে মনে হয় অশিক্ষিত।
যে বয়সে একটা শিশুকে পরিচিয় করিয়ে দেওয়া উচিত পৃথিবীর আশ্চর্য সব রহস্যের সাথে, পরিচয় করিয়ে দেওয়া উচিত জগতের সব ভালোর সাথে, যে বয়সে শিশুর মনে বপন করা উচিত আলোর বীজ সে বয়সেই আমরা তাকে দেখাচ্ছি শিলা, মুন্নি আর ফেভিকল। শেখাচ্ছি কিভাবে কোমর দোলাতে হয়। কিভাবে হতে হয় রাখি সাওয়ান্ত, ক্যাটরিনা, কারিনা। এরা যখন বড় হবে তখন কি দিবে আমাদের এত প্রিয় মাতৃভূমিকে?


৮টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২৬

বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থীদের দম আছে বলতে হয়! নির্বাচন ঠেকানোর প্রকল্পের গতি কিছুটা পিছিয়ে পড়তেই নতুন টার্গেট শনাক্ত করতে দেরি করেনি তারা। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ঘিরে নতুন কর্মসূচি সাজাতে শুরু করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×