গাহি সাম্যের গান-
মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহিয়ান্ ।
নাই দেশ-কাল-পাত্রের ভেদ, অভেদ ধর্মজাতি,
সব দেশে সব কালে ঘরে-ঘরে তিনি মানুষের জ্ঞাতি।-"
"গাহি সাম্যের গান" গেয়ে জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সবাইকে এক কাতারে রেখে যে বিদ্রোহী বাংলার আকাশে বাতাসে এক হাতে বাকাঁ বাঁশের বাঁশরী আর হাতে রণ তুর্য নিয়ে একধারে বাংগালী জাতিকে দ্রোহের পথ দেখিয়ে গিয়েছেন, তিনি আর কেউ নন , তিনি বাংলার বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম! তিনি লিখেছেন-
"অসহায় জাতি মরিছে ডুবিয়া, জানে না সন্তরণ-
কান্ডারী, আজি দেখিব তোমার মাতৃ-মুক্তি-পণ।
হিন্দু না ওরা মুসলিম-ওই জিজ্ঞাসে কোন্ জন,
কান্ডারী, বল, ডুবিছে মানুষ সন্তান মোর মা’র।"
ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতাকে দূরে ঠেলে, তিনি মানবতাকে সবার আগে স্থান দিয়েছিলেন। আমাদের এই অগ্নিস্ফুলিঙ্গ জাতীয় কবি কারার লৌহ কপাট ভেঙে জাতিকে মুক্তির পথ দেখিয়েছেন বারংবার! কবি নজরুলের ২২টি কাব্য গ্রন্থ পর্যলোচনা করে দেখলে দেখা যায় একদিকে রয়েছে- প্রমত্ত বিদ্রোহ ও পরাধীনতার শৃঙ্খল মুক্তি অগ্নি স্ফুলিঙ্গ তেমনি রয়েছে মানবতাবাদ, জাতীয়তাবোধ, সাম্যবাদ, অসাম্প্রায়িকতা। তিনিই বুঝেছিলেন ইংরাজ এর বিভেদ এবং শোষনের সফলতার মূলে আছে উগ্র সাম্প্রায়িকতা এবং ধর্মন্ধতা। বিভেদ নয় বরং মিলনই তাঁর কবিতায় বার বার এসেছে। হিন্দু-মুসলমান কবিতায় তিনি লিখেছেন-
"মোরা একই বৃন্তে দুটি কুসুম , হিন্দু মুসলমান। মুসলিম তার নয়ন মনি , হিন্দু তাহার প্রান"
সেই অসাম্প্রদায়িক চেতনাধারী, বাংলার বিদ্রোহী কবির আজ জন্মবার্ষিকী। শুভ জন্মদিবস হে কবি!
তার কবিতায় আজ তাঁকে স্মরণ করি -
"আমি চির-বিদ্রোহী বীর -
আমি বিশ্ব ছাড়ায়ে উঠিয়াছি একা চির-উন্নত শির!"