সাভার ট্রাজেডির পর গত ২৫ শে এপ্রিল রাতে আমি ফেসবুকে লিখেছিলাম "আমাদের সমস্যা হচ্ছে আমরা খুব তাড়াতাড়িই ভুলে যাই।" এ কথা বাস্তবতা প্রমান করে দিলো একটি সংবাদ! আজ প্রথম আলোতে প্রকাশিত একটি সংবাদে শিরোনাম হলো - " সাভারে ভবনধসঃ ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের দাবিতে বিক্ষোভ"।
সাভারে ভবনধস
গত ২৪ শে এপ্রিল ধসে পড়া এ ভবনে আহত হয় ১১০০ এর অধিক শ্রমিক। বিশ্বে ২য় সর্বোবৃহৎ শিল্প দূর্ঘটনার আখ্যা পাওয়া এ ঘটনায় উদ্ধারকার্য চলে পক্ষকালেরও অধিক। আমরা সবাই কোন না কোন ভাবে এর সাথে জড়িয়ে পড়ি। কিন্তু মাসাধিকাল অতিক্রমের পর মনে হচ্ছে আমদের এই উৎসাহে, সহোৎসাহে ভাটা পড়েছে! এর মধ্যেই এই দূর্ঘটনার স্থলে জায়গা করে নিয়ে মীরাক্কেল কান্ড, আশিকি ২, ফিক্সিং আর অন্যান্য সামাজিক সমস্যা। তা হতেই পারে। কিন্তু দূর্ঘটনার তৎপরবর্তী সময়ে যে ফান্ড তোলা হয়েছে, এবং যে সব হঠাৎ গজিয়ে উঠা সংস্থার কোন বিশেষ কার্যক্রম সেগুলো কিছু চোখে পড়ছিলো না। আশংকা হচ্ছিল অন্য কিছুর, তার প্রমান এই সংবাদ। আমার জানা মতে সেনাবাহিনী থেকে প্রায় সাত কোটি টাকা, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অনুদান বাবদ মোট ৭ কোটি ৬১ লক্ষ টাকা, সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের এক দিনের বেতন, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও সংস্থার ১ দিনের বেতন প্রধানমন্ত্রীর তহবিলে জমা পড়ার কথা। এর সাথে,প্রথম আলো-মেরিল থেকে ৫৬ লাখ টাকা, বিজিএমই এর ৩৫০০ সদস্যদের নূন্যতম ২৫ হাজার টাকা দেবার কথা তো আছেই। এর সাথে যুক্ত করা যায় বিদেশ থেকে আসা বিপুল পরিমান সাহায্য। সংবাদ অনুসারে শুধু ইউকে গনজাগরনমঞ্চ থেকেই উঠেছে প্রায় ৭ লাখ টাকা।এর বাইরে আছে সাধারন মানুষে সাহায্য তারপরও ক্ষতিগ্রস্থদের পূনর্বাসনের দাবী কেনো উঠবে এবং সাহায্যের জন্য বিক্ষোভ হবে তা বোধগম্য নয়! এত টাকাও কি খাদিজাকে সামান্য সাহায্য দেবার জন্য কি যথেষ্ট না? দূর্ঘটনা পরবর্তী ফান্ড কি তাহলে শুধু শো অফ?
আমি ক্রমেই হতাশ হয়ে পড়ছি আমদের জবাবদিহিতার অনভ্যাসের কারনে। আমাদের দেশে কারো কোন কিছুতেই জবাবদিহিতা আসছে না। এই দেশ যেনো মগের মুল্লুক। প্রথমেই প্রশ্ন আসে তিনটি গার্মেন্টসে শ্রমিক থাকার কথা ৩০০০ বিজিএমইএ র হিসাবে। সেখানে জীবিত, মৃত এবং নিখোঁজ ব্যাক্তি মিলায়ে ৪১০০ লোক হয় কি করে? এই সব শ্রমিকদের কি নুন্যতম রেকর্ডও কি রাখা হয় নাই? এর পরে আসে সেই গার্মেন্টসে জোর করে শ্রমিক ঢুকানোর কথা! আমার সূত্রমতে রানার পার পেয়ে যাওয়া বা নূন্যতম শাস্তি হওয়া এখন সময়ের ব্যাপার। কারন তদন্তে বলা হচ্ছে সেইদিন মালিকদের ইচ্ছাতেই নাকি শ্রমিকদের সেখানে কাজ করতে ঢুকানো হয়।
কষ্টের সাথে বলতে হচ্ছে শ্রমিকদের নিরাপত্তার জন্য কোন মালিক সংগঠনের কার্যক্রমও চোখে পড়ছে না। পরবর্তীতে যে এমন ঘটনা আরো হবে না তার আশ্বাস কে দিবে? মাঝে দিয়ে কি মালিকদের পকেটই ভারী হবে শুধু?! বাংলাদেশে যদি এমন একটি দূর্ঘটনার রেশ এত দ্রুত স্তিমিত হয়ে পড়ে, তাহলে তা মঙ্গলজনক কোন বার্তা নিয়ে আসবে না। ক্রমাগত এ ধরনের ঘটনা বিশাল শ্রমিক অসন্তোষের জন্ম দিবে, তা থেকে দাঙ্গা হাঙ্গামা বেধে যাওয়া কোন ব্যাপার না। যথাযথ কর্তৃপক্ষের উচিত এইবার সঠিক সিদ্ধান্ত নেবার। জনগনের টাকা তসরুপ করার আগে দেশের কথাটা একটু ভাবুন!
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জুন, ২০১৩ রাত ২:৩১