মারিয়া নোওয়াক একজন পোলিশ ক্ষুদ্র ঋন উদ্যাক্তা। ড.মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে সাক্ষাত বদলে দেয় এই নারীর জীবন!
লন্ডন স্কুল অব ইকোনোমিক্স থেকে এমএ করা মারিয়া ১৯৮৬ সালে দক্ষিন আফ্রিকার এক ক্যাফেতে বসেছিলেন, তখন তার সাথে পরিচয় হয় মুসা নামের এক তরুনের সাথে। মুসা পেশায় একজন মুচি। মারিয়া তাকে তার আয় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে সে জানায় প্রতিদিন সে ১ ডলারের কম আয় করে, যার অর্ধেক সে খাবার কিনতে ব্যায় করে, আর বাকী অর্ধেক সে তার মালিককে দেয় যে এই সব সরঞ্জামের মালিক।
মারিয়ার মনে পড়লো গত বছর ড. ইউনূসের সাথে সাক্ষাতের কথা। যার গ্রামীন ব্যাংক বাংলাদেশে মাইক্রো ক্রেডিটের উদ্ভাবক - প্রয়োজনীয় অল্প কিছু টাকার ঋন, যে সব দরিদ্র উদ্যাক্তারা ব্যাংক থেকে পেতে অপারগ, তাদের জন্য সহজ শর্ত ঋন দেয় তার ব্যাংক। তিনি চিন্তা করলেন মুসা যদি ঋন পেতো তাহলে সে দ্বিগুন অর্থ উপার্জন করতে পারতো। কারন তার মালিককে অর্ধেক অংশ দিতে হতো না।
ড. ইউনূসের পরিকল্পনা কাজে লাগায় ও অনুপ্রানিত হয়ে মারিয়া তার প্রজেক্ট প্রথমে গিনিতে শুরু করেন।যেখানে কিছু দিনের মধ্যেই "মাইক্রো ফিনান্স" প্রাথমিক ঋন ব্যাবস্থা হিসাবে বিস্তার লাভ করে। পরবর্তীতে তিনি আলবেনীয়াতেও গ্রামীন ব্যাংকের এই পদ্ধতি কাজে লাগান এবং সফল ও হন। এর ফলে এই পদ্ধতিতে সেখানকার কৃষকরা তাদের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সহজেই কিনতে সক্ষম হন।
( সূত্রঃ রিডারস ডাইজেষ্ট)
বিভিন্ন বইতে ডঃ মুহাম্মদ ইউনুসের যে হাসিটা দেখা যায় সেটাকে আমি বলি সফলতার হাসি। ১৯৭৬ সালে যখন গ্রামীন প্রজেক্টের চলা শুরু হয়, তখন উদ্যাক্তা (Entrepreneur) শব্দটি বাংলাদেশে একটা মোটামুটি অচেনা শব্দ, মাইক্রো ক্রেডিট একটা ধারনা মাত্র, আর ঋনের মাধ্যমে গরীবের স্বনির্ভরতা একটা পাগলামি প্রস্তাবনা! কিন্তু সেই সময়ে চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ডঃ মুহাম্মদ ইউনুস সেই আকাশ কুসুম পরিকল্পনা নিয়ে যাত্রা শুরু করেন, ধীরে ধীরে গড়ে উঠে আজকের গ্রামীন ব্যাংক। সেই সময়ে জোবরা গ্রামে ৪২ টি পরিবারকে নিয়ে ড.মুহাম্মদ ইউনূসে নিজের পকেট থেকে ৮৫৬ টাকা ঋন দিয়ে শুরু করা গ্রামীন প্রজেক্টের আজ সর্বোমোট সম্পদ প্রায় ১২৫,৩৯৬,৯৫৭,৯৭২ টাকা মাত্র! সেই ব্যাক্তি সফলতার হাসি দিবে না তো কে দিবে?
ডঃ মুহাম্মদ ইউনুসের ধারনাকে কাজে লাগিয়ে আজ বহু দেশ দারিদ্র্যতা জয় করে, উন্নতি করছে। ব্রাজিল, ইকুয়েডর, ঘানা, এমন কি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতও এ কাজে পিছিয়ে নাই। উপরের ঘটনাটি তার এক উদাহরন। সেখানে আমরা প্রতিনিয়ত এর উদ্ভাবককের সমালোচনা করে যাচ্ছি। আমার একটা কথা পারলে তার মত একটি ধারনা উদ্ভাবন করুন, তারপর সমালোচনা করুন। ডঃ ইউনুসের উদ্ভাবিত সোস্যাল বিজনেসের ধারনাটি এখন আইবিএম এর মত কোম্পানিরাও সমীহের চোখে দেখছে। রাস্তার পাশের চায়ের দোকানে মাইক্রো ক্রেডিট নিয়ে জ্ঞানগর্ভ মন্তব্য (?) দেবার আগে, সেইটার সমকক্ষ কিছু বের করুন, যা অন্য দেশ অনুসরন করবে। আর না পারলে তাকে নিয়ে সমালোচনা করা বন্ধ করুন।