তখনও ওয়ান-ইলেভেনের ধাক্কা লাগেনি। গণতন্ত্রের পিঠেও চপেটাঘাত আসেনি। তবে রাজনৈতিক তন্ত্র-মন্ত্র আর সন্ত্রাসী বাহিনীকে পুঁজি করে দুটি প্রভাবশালী ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর চাবুকে ওষ্ঠাগত ছিলেন রাজধানীর খিলক্ষেত-বাড্ডা এলাকার বংশপরস্পরায় ভিটেমাটি আঁকড়ে ধরা মানুষগুলো। বসুন্ধরা ও যমুনা গ্রুপ, এ দুইয়ের দখলদারিত্বের দ্বন্দ্বে প্রায়ই কাগুজে খবর বের হতো।
বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার প্রধান সড়ক জুড়ে (আজকের যমুনা ফিউচার পার্কের দেয়াল) লাল হরফে চিকা মারায় লেখা থাকতো 'নবাবগঞ্জের বেদী ( স্থানীয় ভাষায় নৌকা) চোর বাবুলের বিচার চাই। মাদ্রাসা ছাত্রদের নিয়ে মানবন্ধন করা হতো নুরুল ইসলাম বাবুলের বিরুদ্ধে। তার পত্রিকা 'যুগান্তরে' নিয়মিত প্রকাশ পেত ২০০৬ সালের ৪ জুলাই বসুন্ধরা টেলিকমিউনিকেশসন্স নেটওয়ার্ক লিমিটেডের পরিচালক হুমায়ুন কবির সাব্বির হত্যার ঘটনায় বসুন্ধরা চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান ওরফে বাচ্চু সহ তার ছেলে সাফিয়াত সোবহান সানবীর সহ আসামিদের গ্রেপ্তার ও ফাঁসি দাবি নিয়ে।
অন্যদিকে ট্রান্সকম গ্রুপের মালিকানাধীন প্রথম আলো'র সঙ্গে বসুন্ধরা, যমুনার বৈরিতা চলছিল। এতে অনেকটা বাধ্য হয়ে 'ভোরের ডাক' পত্রিকায় বিনিয়োগ করে তাতে যমুনার বিরুদ্ধে উঠে-পড়ে লাগে বসুন্ধরা। মিডিয়া মালিক হলে কতো লাভ এটা হয়তো বুঝে যান আহমেদ আকবর সোবহান। ওয়ান-ইলেভেনের দুর্নীতির অভিযোগ আর আটক-নাটকের পর একে একে ৭টি মিডিয়ার মালিক বসুন্ধরা গ্রুপ (কালের কণ্ঠ, বাংলাদেশ প্রতিদিন, ডেইলি সান, বাংলানিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম, নিউজ২৪ টিভি, রেডিও ক্যাপিটাল এবং টি স্পোটর্স টিভি)।
এরই মধ্যে পুলিশি তদন্ত আর 'সাক্ষ্য-প্রমাণের অভাবে' সাব্বির নাটকীয়ভাবে ২০১১ সালের ডিসেম্বরে সাব্বির হত্যা মামলায় সাফিয়াত সোবহান সানবীর সহ পাঁচ আসামির সবাইকে বেকসুর খালাস দেন আদালত। আদালত বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ বস্তুনিষ্ঠ, প্রকৃত ও বাস্তব সাক্ষী উপস্থাপনে ব্যর্থ।
বসুন্ধরা গ্রুপ খালাস পেলেও ওই মামলায় এখনও জড়িয়ে আছেন বিএনপির সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যান তারেক রহমান, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফজ্জামান বাবর। ওয়ান-ইলেভেনের সময় মামলার পুলিশের অভিযোগপত্রে বলা হয়, সাব্বির হত্যা মামলা ধামাচাপা দিতে তারেক, বাবর ১০০ কোটি টাকা দাবি করেন শাহ আলমের কাছে। ৫০ কোটি টাকায় চুক্তি অনুসারে পরে ২১ কোটি টাকা লেনদেন হয়। এভাবে পুলিশের বালামে আসামির তালিকা থেকে হারিয়ে গেছে বসুন্ধরার নাম। জমি দখলের অভিযোগেও তাদের সাজা হয়নি। আর মৃত সাব্বির হত্যার বিচার হয়তো কোনদিনই হবেনা।
২০২০ সালের ২৫ অক্টোবর সন্ধ্যার পর ধানমণ্ডির কলাবাগান ক্রসিংয়ে একজন নৌবাহিনী কর্মকর্তাকে মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয় এমপি হাজী সেলিমের গাড়ি। ঘটনার সময় হাজী সেলিমের ছেলে ইরফান সেলিম ও নিরাপত্তারক্ষী ছিলেন। এরপর নৌবাহিনীর ওই কর্মকর্তা মোটরসাইকেল থামিয়ে পরিচয় দিলেও হাজী সেলিমের গাড়ি থেকে নেমে নৌবাহিনী কর্মকর্তাকে মারধর করা হয়।
একপর্যায়ে ওই কর্মকর্তা আত্মরক্ষার চেষ্টা করেন। এ সময় কর্মকর্তার স্ত্রীকেও লাঞ্ছিত করা হয়। ঘটনাস্থলে লোকজন জড়ো হয়ে গেলে সংসদ সদস্যের গাড়ি ফেলে মারধরকারীরা পালিয়ে যান। এ ঘটনায় ঘটনায় হাজী সেলিমের ছেলে ইরফান সেলিমসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলার পর ইরফানে সেলিম তার বাসা থেকে অবৈধ অস্ত্র, মদ, অবৈধ ওয়াকিটকিসহ গ্রেপ্তার হন।
তবে পুলিশি তদন্তে ইরফান সেলিম নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছেন। অস্ত্র, মদের বোতরও তার নয়। নিষ্পাপ এই এমপিপুত্র বুধবার ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে জামিন পেয়েছেন। এখন হয়তো তিনি সাময়িক বহিস্কার হওয়া কাউন্সিলর পদও ফিরে পাবেন।
গত কয়েকদিন ধরে চট্টগ্রামের এমপি ও জাতীয় সংসদের হুইপ সামশুল আলম চৌধুরী ও তার ছেলে নাজমুল করিম চৌধুরী শারুনকে নিয়ে লেখালেখি হচ্ছিল বসুন্ধরা গ্রুপের সবকটি মিডিয়াতে। যেন বাবা-ছেলেকে একঘাটে জল খাইয়ে ছাড়বে। এ অবস্থায় গুলশানের একটি ফ্লাটে মোসারাত জাহান মুনিয়ার কথিত আত্মহত্যার শিকার হয়েছেন। এ ঘটনায় শারুনের সঙ্গে মুনিয়ায় সম্পর্ক এবং বসুন্ধরাপুত্র সায়েম সোবহান আনভীরের সম্পর্ক-দ্বন্দ্ব প্রকাশ পাচ্ছে।
হুইপ সংসদ কাঁপাতে অভ্যস্ত হলেও গণমাধ্যমের বাহাদুরী নেই। টাকার পাহারে বসুন্ধরার সঙ্গে পেরে উঠবে কীনা তা নিয়েও সন্দেহ আছে। শারুন নির্দোষ সেটা বলছি না। তবে যমুনা-বসুন্ধরা-ট্রান্সকমের মধ্যে আগেকার দ্বন্দ্ব নেই। ইতোমধ্যে পরপারে চলে গেছেন নুরুল ইসলাম বাবুল। বসুন্ধরার মিডিয়া চুপসে গেলেও ইতোমধ্যে অখ্যাত গণমাধ্যমে মুনিয়ার চরিত্রহনন শুরু হয়ে গেছে আত্মহত্যা করা তরুণীটির সঙ্গে ক্যাসিনো বিরোধী অভিযানে গ্রেফতার হওয়া বহিস্কৃত যুবলীগ নেতা ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট সহ অনেকের অবৈধ সম্পর্ক ছিল এমনটা লেখা হচ্ছে। মানে তিনি উঁচুতলার পতিতা। Click This Link
প্রশ্ন হলো- সমাজ বা রাষ্ট্র স্বীকৃতি না দিলেও এ দেশে পতিতাতের সংখ্যা কম নয়। অধ্যাবধি কোন পতিতা কাউকে স্বামী বা বয়ফ্রেন্ড দাবি করেছেন এমনটা চোখে পড়ার মতো নয়। তবে সাজানো হলে সেটা ভিন্ন কথা। পতিতার তো আত্মহত্য্যা করার কথা নয়। যাক একদিন হয়তো কারিশমাটিক তদন্তে সাব্বির হত্যার আর ইরফান সেলিমের মতো একটি নিছক আত্মহত্যা প্রমাণ হবে মুনিয়ার। ইতোমধ্য আদালতে আগাম জামিন চেয়েছেন আনভীর। হয়তো পেতেও পারেন।
https://www.bd-pratidin.com/national/2020/10/15/577175?fbclid=IwAR1sN97jqf0v3i9-f5fPaZrUvUFznZaUsgwHD8hUfv4WrOA_TchDGb3iW0Y
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ১০:৪৬