somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার আছে একটা গল্প পুরোনো

২৫ শে মার্চ, ২০১২ রাত ১১:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার সাথে ওর পরিচয় হয় এক ব্লগ সাইটে । ঐখানে তার সাথে কেন জানি আমার কথাবার্তা তেমন হতোনা, দু একটি মেসেজ ইনবক্সে দিতো, রিপ্লাই দিতাম মাঝে মাঝে । মাইক্রোব্লগ লেখার জন্য মেম্বারদের কাছে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়ে গেলাম ঐ সময়টায় । আমাদের কথাবার্তা কেমন আছো ভালো আছি এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল, ও আমাকে যে প্রশ্ন করতো আমি উত্তর দিতাম কিন্তু ওর প্রতি কোন কৌতূহল দেখাতাম না ফলে ওর সম্পর্কে কিছু জানতাম ও না ।

আমি ধরেই নিয়েছিলাম ও আমার চে ১৫বছরের বড়, ২ বছরে এভাবেই কেটে গেলো আমাদের । ও আচ্ছা তার নামটাই তো বলা হলোনা, আরম্ভ হলে আর শেষ হতেই চায়না যখন তার আসল নাম আমার গল্পে থাকে না । তার নাম অনন্ত ।

ধীরে ধীরে আমাদের সম্পর্কটা বদলাতে লাগলো,আমরা একটু আধটু করে নিজেদের কথাগুলো শেয়ার করা শুরু করলাম তবে স্পেসিফিক কিছুই আমি ওর কাছে জানতে চাইতাম না যেমন কোথায় পড়ে কি করে এসব ।

সম্পর্কটার মোড় একদম ঘুরে গেলো যখন আমাদের দেখা হলো। হঠাত্‍ করে এক পহেলা বৈশাখে, অনেকগুলো ব্লগারের মাঝে ওকে সেই প্রথম দেখা । আর ও তো আমাকে আগেই দেখে বসে আছে ফেসবুকে ।

অনন্তকে দেখার পর আমি গভীর বিস্ময়ে লক্ষ্য করলাম, ছেলেটা মোটেও আমার চে ১৫বছরের বড় নয় । এতটা শান্তশিষ্ট, চুপচাপ, নিষ্পাপ চেহারার ছেলেটা আমার সাথে চ্যাটিং এ এত কথা বলে ভাবতেই হাসি পাচ্ছিলো । ও সারাটাক্ষণ চুপচাপ মাথা নিচু করে রইলো, আর চঞ্চল আমি হৈ হুল্লোড় করে কাটিয়ে দিলাম পুরোটা দিন ।

চলে আসার পর ব্যাপারটা বদলে গেলো, আমরা প্রচুর কথা বলা শুরু করলাম নেটে,আগের দুবছর যে কথাগুলো বলিনি সেগুলো পুষিয়ে নেয়া আরকি । অনলাইনে চ্যাটিং আর কেউ কাউকে না পেলে ইনবক্সে বিশাল বড় মেসেজ ।

একটা সময় আমি লক্ষ্য করতে লাগলাম ওর জন্য অনলাইনে অপেক্ষা করতে ভালোলাগছে, ওকে ভালো লাগছে, ওর ছোট ছোট চ্যাট মেসেজগুলো পড়তে ভালো লাগছে পুরোটাই ভালো লাগাময় ব্যাপার ।

পহেলা বৈশাখে দেখা হওয়ার ঠিক ১০দিন পর আমাদের দেখা হলো । একদম হুট করে ফোরামের ৫জন বন্ধু মিলে দেখা বসুন্ধরা সিটিতে । অনন্ত একটা ব্ল্যাক টিশার্ট পড়ে এসেছিল, আমরা ফুডকোর্টে খাওয়া শেষ করে স্মোকিং জোনের অর্থাত্‍ বাইরের দিকটায় বসলাম আমরা যদিও আমাদের মাঝে কোন স্মোকার নেই । গল্পগুজবের মাঝে হঠাত্‍ করেই অনন্তর ফোনের মেসেজ টোন বেজে উঠলো,ওর গার্লফ্রেন্ডের মেসেজ ও চেক করছিলো তো আমরা ক্ষেপাতে লাগলাম এইটা নিয়ে । আমার পাশের ছেলেটা একটার পর একটা সিগারেট টানছে আর সেই নিকোটিনের ধোয়াগুলোর মাঝে আমি খেয়াল করলাম আমার মনটা অদ্ভুত বিষন্ন হয়ে গেছে ।

আরো কিছুক্ষণ গল্প করে যখন ফিরে আসবো, অনন্তর দিকে তাকালাম । তাকানোর পর এক অদ্ভুত অনুভূতি হলো এবং সবকিছু তোলপাড় করে আমার মনে হলো আমি এই ব্ল্যাক টিশার্ট পড়া শান্তশিষ্ট, ইনোসেন্ট ছেলেটাকে অসম্ভব পরিমাণে ভালোবেসে ফেলেছি ।
এই ভাবনাটা মাথায় আসার পর আমি নিজেই অবাক হয়ে গেলাম । ও সামনে গল্প করতে করতে হাটছে আর আমি পুরোই বিধ্বস্ত, আমার চিন্তাগুলো এলোমেলো হয়ে গেছে ।

বাস আসলো আমরা উঠে পড়লাম,ওর দিকে বিদায়ের ভঙ্গিতে হাত নাড়লাম । ওর দিকে তাকানোর সাহস আমি তখন পুরোপুরি হারিয়ে ফেলেছি, ভয় করছিলো অনন্তর তীক্ষ্ন দৃষ্টির কাছে না জেনো ধরা পড়ে যাই,চোখে পানি জমছিলো ।বাস ছেড়ে দেওয়ার পর মনে হলো আমি কি যেনো ফেলে আসছি,গাল ভিজিয়ে দিয়ে গেলো কয়েকফোটা চোখের জল উদ্দেশ্যহীন ভালোবাসার জন্য ।সেদিন ফিরে আসার পর প্রচন্ড কান্না, নিজেকে খুব বেশি অসহায় লাগছিলো তারপরেও ওর সাথে খুব স্বাভাবিকভাবে কথা বলতে লাগলাম ।

একদিন অনন্তর কাছ থেকে কথায় কথায় ওর গার্লফ্রেন্ডের কথা জানতে চাওয়াতে জানালো ওরা শুধুই বন্ধু, ওদের বন্ধুত্বটা খুব বেশি ভালো দেখে সবাই এটাকে ভুল বোঝে । আগে ভুল ভাঙ্গাতো এখন আর না, যে যা খুশি ভাবুক ।
টুকটাক কথায় আমাদের তিনটা দিন পার হয়ে গেলো, আর আমার ভেতরের কষ্টগুলো গুমরে মরছিলো, কাঁদাচ্ছিলো ওকে বলতে না পারার যন্ত্রণা । কিভাবে জানি দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করছিলাম সবকিছু ।

চতুর্থদিনে, সন্ধ্যাবেলা এপ্রিলে কালবোশেখী ঝড়, এরপরেই ঝুম বৃষ্টি । আমার মাঝের সমস্ত অনুভূতি আমাকে নিমিষেই এলোমেলো করে দিলো । অনন্তকে দেখলাম অনলাইন, চ্যাটিং করার সময় আমার প্রতিটা রিপ্লাইয়ে চরম বিষন্নতার সুর ও বুঝে ফেললো । বারবার গোয়ারের মত জানতে চাইছিলো হয়েছেটা কি আমার ।
আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম, গান শুনবে?

ও আমাকে একটা হাসির ইমোকটিন পাঠিয়ে বললো, হ্যা শুনতে চাই ।
চ্যাটস্ক্রিনে ভেসে উঠলো আমার পাঠানো এক গানের লিরিক্স,


"যদি ডেকে বলি,
এসো হাত ধরো চলো ভিজি আজ বৃষ্টিতে
এসো গান করি মেঘমল্লরে করুণাধারার দৃষ্টিতে।
আসবেনা তুমি, জানি আমি জানি
অকারণে তবু কেন কাছে ডাকি?
কেন মরে যাই তৃষ্ণাতে. . . . ."

ও এবার খুব শক্ত হয়ে জানতে চাইলো কি হয়েছে আমার,
আমি কিছুক্ষণ চুপ তারপর নিতান্ত খেলাচ্ছলেই বলে দিলাম, আমি যাকে ভালোবাসি উনিই সেই মহাপুরুষ ।
সবচে আশ্চর্যের ব্যাপার হলো ও এটা আরো আগেই বুঝতে পেরেছিলো !

এরপর শুরু হলো অভিনয়ের পালা,দুজনের কথা হয় দেখা হয় কিন্তু আমরা ভুলেও পুরান কথা তুলিনা উল্টো দেখা হলে ভাব দেখাই কিছুই যেন হয়নি ।
আমাদের প্রায়ই দেখা হতে লাগলো, অনেক মানুষের মাঝে দেখা হয়, আমি আমার সব অনুভূতি চেপে রেখে হাসিমুখে ওর সাথে কথা বলি । কিন্তু ও যদি দেখতো আমার চোখে ওর জন্য কি পরিমাণ ভালোবাসা. . .

হঠাত্‍ করেই বিছিন্নতা, যোগাযোগ নেই আমাদের । সবকিছু বন্ধ করে দিয়ে আমি অনন্তর আড়ালে চলে গেলাম ।
জানিনা কিভাবে তবে প্রতিটা দিন খুব বেশি দীর্ঘ আর কষ্টকর ছিলো ওকে ছাড়া ।

১৫দিন পর যখন ফোন অন করি, প্রথম মেসেজটাই ওর,আমাকে খুঁজে না পেয়ে তার মন খারাপ হয়ে আছে ।

ইনসমনিয়াক এই আমি নিঃসঙ্গ রাত জেগে রইলাম ।ঘড়ির কাটায় ৪টা বেজে ৯মিনিট । হঠাত্‍ করেই ফোনটা হাতে তুলে নিলাম এবং কল. . . .

ঘুমকাতুরে ছেলেটা এখনো জেগে রয়েছে ভেবে অবাক হয়ে গেলাম যখন সে আমার ফোন ধরে বললো, হ্যালো !

পাগলামি ভর করেছিলো সন্দেহ নেই,শুধু বললাম,

"এই আমাকে বিয়ে করবে?"

এরপরেই নিরবতা,শুধু বুকের ভেতরের এক কম্পন । সেই কম্পন থামিয়ে দিয়ে সে বললো,

"হুম করবো. . . .চলো এখুনি বিয়ে করে ফেলি"

সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জুলাই, ২০১২ দুপুর ১:০০
৬২টি মন্তব্য ৫৩টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×