somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এ ভার্সিটি ডায়েরী (ওরিয়েন্টেশন)

০৯ ই জুলাই, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১.

সকালের ঘুমের মত আরামের জিনিস মনে হয় দুনিয়াতে আর কিছু নেই ।এরকম সময় কেউ যদি এসে নিঃশব্দে গালে থাপ্পর মারে তবুও মনটা বলে –ভাই তুই থাপ্পর মেরে চলে যা তবুও ঘুম থেকে ডাকিস না । কিন্তু শালার ভাগ্যটা এত খারাপ, এত সকালেও কোন হারামজাদা যেন বেসিনের কল ছেড়ে দিয়ে ঘুমাচ্ছে ।নাহ,ঘুমাচ্ছে কই । রান্না ঘর থেকেও কি যেন ভাজার শব্দ হচ্ছে ।মোবাইলটা অন করে দেখলাম মাত্র আটটা বাজে ।মানুষের কি বিবেক বুদ্ধি দিন দিন কমে যাচ্ছে নাকি?এত সকালে তো পাগলও খাওয়ার জন্য উঠবেনা। হঠাৎ মনে পড়ল আজ আমার ভার্সিটিতে প্রথম ক্লাস ।অরিয়েন্টেশন ক্লাস ।স্কুল নয় , কলেজ নয় , এটা ভার্সিটি ।লাফ দিয়ে উঠলাম আমি ।তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে দেখি মামী নাস্তা রেডি করেছে । মনে মনে একটা থ্যাংকস দিলাম ।নাস্তা করে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম । রাস্তায় প্রচন্ড জ্যাম ।ভার্সিটির অরিয়েন্টেশন ক্লাস । সবাই নিশ্চয়ই অনেক আগেই এসেছে ।আর গাধার বাচ্চা আমি পড়েছি জ্যামে ।এত সকালে কি এই মানুষ গুলার কি ঘুম নেই । আকাশে ভাল করে দেখলে মনে হয় দু একটা তারা দেখা যাবে ।আর শালারা গাড়ি নিয়ে বের হয়েছে ।অনেক কষ্টে ডিপার্টমেন্টে পৌছে দেখি ক্লাস শুরু হয়ে গেছে আর বাইরে একটা ছেলে চোরের মত উঁকি মেরে দেখছে ভিতরে কি হচ্ছে ।আমাকে দেখেই ছেলেটা জিজ্ঞেস করলো-

-ভাইয়া আপনি কি 1st Year এ?

-হ্যা ।

-Orientation class তো শুরু হয়ে গেছে । এখন কি করি বলতো ?

-চল বাইরে যাই । হঠাৎ করে ঢুকলে কি বলে ঠিক নেই ।

আমার ভুলও হতে পারে কিন্তু আমার মনে হল ছেলেটা জীবনের সবচেয়ে ভয়ংকর কথাটি এইমাত্র আমার মুখ থেকে শুনল ।সে মোটামুটি আতংকিত হয়ে আমাকে বলল,

-তুমি পাগল হইছ !!!জানো...এইসব টিচারের বক্তব্য তোমার জীবনের বেজ গড়ে দিবে । ইউনিভার্সিটির টিচারের একটা কথা হীরার চেয়েও মূল্যবান ।

হীরার চেয়েও মূল্যবান জিনিসের লোভেই হোক আর সাহস দেখানোর জন্যই হোক আমি ক্লাসে ঢুকে পড়লাম ।নাহ কেউ কিছুই বলল না । বুঝলাম,এখানে আসলে সবাই খুব ব্যস্ত ।এক সেকেন্ড সময় নষ্ট করার মত কারও সময় নেই ।কোরিয়ানদের মত দেখতে এক বয়স্ক টিচার কি যেন বলছে ।আমি তার কথা স্পষ্ট না বুঝলেও এতটুকু বুঝলাম যে কোরিয়ান চেহারার এই ভদ্রলোকের না সেকুল আহমেদ এবং তিনি একজন জ্ঞানী টিচার । তিনি অনেক বেশী জানেন এবং ক্লাসে আমরা তার কথা বুঝবনা যদিও কথাগুলো হবে অনেক বেশী জ্ঞানগর্ভ ও মূল্যবান ।উনি মূল্যবান বক্তব্য শেষ করার পর আমি অনেক আগ্রহ নিয়ে বসে আছি এখন কে বক্তব্য দিবে এবং তিনি কেমন টিচার ।ডঃ আনিস আহমেদ যিনি উপস্থাপনা করছেন কি যেন দেখানোর জন্য নিলয় নামের এক সিনিয়র ভাইকে ডাক দিলেন ।খাম্বার মত লম্বা চশমা পড়া নিলয় নামের ছেলেটা আর স্যার মিলে অপটিক্যাল ফাইবারের মধ্য দিয়ে কিভাবে আলোক সংকেত পাঠানো হয় তা দেখানোর চেষ্টা করলেন । যদিও তিনি অনেক চেষ্টা করেও পারলেন না কিন্তু আমার দেহ যেন শিহরন দিয়ে উঠল ।সেই রকম একটা Dept. এ ভর্তি হয়েছি ! কত কি যে করব...।আমি মনে মনে ঠিক করে রাখলাম যে আমাকেও নিলয় ভাইয়ের মত হতেই হবে ।নেক্সট ইয়ারে নিলয় ভাইয়ের জায়গায় নিশ্চয়ই আমি থাকব ।নিশ্চয়ই । এসব চিন্তা করতে করতে একটু অন্যমনস্ক হয়ে গেছিলাম ।হঠাৎ শুনি ,

-আমি ফার্স্ট ইয়ারে ক্লাস নেইনা ।কিন্তু তোমাদের উৎসাহিত করার জন্য এবার কম্পিউটার সাব্জেক্টা নিব ।

আমি এতক্ষনে নিশ্চিত হলাম যে ইনি ই হচ্ছে সবচেয়ে বস টিচার । নামের শুরুটাও কেমন জানি অদ্ভুত, আড়াই শরীফ(R. I. Sharif)। দয়া করে আমাদের ক্লাস নিবেন এজন্য লোকটার প্রতি কৃতজ্ঞতায় আমার চোখ বন্ধ হয়ে আসল । আমাদের ব্যাচের কত সৌভাগ্য !এরপর আরও কিছু কম গুরুত্বপূর্ণ টিচার বক্তব্য দিলেন । একজন তো আমাকে রীতিমত অবাক করে দিয়ে বলল,‘বাবারা, তোমরা তো সাত আট বছর থাকবে । ধীরে , সুস্থে পড়াশুনা কর ,খেলাধুলা কর ।এখানে এত চাপ নেয়ার কিছু নেই ......।’লোকটা পাগল নাকি?ধীরে চলার কোন সুযোগ আছে । আনিস স্যারের মতে তো দম ফেলারও সময় হবেনা ।আর অ্যাপ্লাইড ফিজিক্সের পোলাপানের খেলাধুলা করার সময় হবে?ঐগুলা তো আর্টস, কমার্সের পোলাপানেরা করবে । ক্লাস শেষে বাসায় ফেরার জ্যামেও আমার কিছুই হলনা।বুঝলাম,আমার একটা শক্ত বেজ তৈরী হয়েছে।কোন কিছুতেই এ বেজ ভাঙ্গার নয়।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জুলাই, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৩৮
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×