কয়েকদিন আগে সকালে বাবার স্যার বাবাকে তাড়াতাড়ি অফিসে আসতে বললেন । বাবা একটা ফাইল খুজতে লাগলেন । তাই আমাকে বললেন শার্ট ইস্ত্রি করে দিতে । আমি ইস্ত্রিটা লাইনে ঢুকিয়ে শার্টটা বিছানায় মেলিয়ে রাখলাম ।
অবাক হয়ে গেলাম এটা দেখে যে বাবা প্রায় চার বছর থেকে একই শার্ট ব্যবহার করছেন । শার্টের কলারের কাপড় পাতলা হয়ে গেছে ।
বাবা অফিসে যাওয়ার পর আলমারী খুলে বাবার কাপড় খুজতে লাগলাম । সবই পুরনো । শার্ট মোটে ৩ টা আর প্যান্ট ২ টা । আমার কাপড় হিসেব করে দেখলাম শার্ট ৫ টা আর প্যান্ট তিনটা । আমার সবচেয়ে পুরনো কাপড়ের বয়স আট মাস আর বাবার সবচেয়ে পুরনো কাপড়ের বয়স সাড়ে ৫ বছর । তখন এতটা ঘৃণা আসতে থাকলো যে গায়ের এগারশত টাকা দামি শার্টটা পাপের বোঝা মনে হতে লাগলো ।
আমি সামান্য প্রাইভেটে যেতেই নতুন শার্ট প্যান্ট পড়ি আর বাবা সেই পুরনো শার্ট ! এস.এস.সি পরীক্ষায় গোল্ডেন এ প্লাস পাওয়ার পর অনেকেই বলেছিল বাপের বেটা । কিন্তু সেদিন নিজেকে বাপের বেটা ভাবতে লজ্জা লাগতেছিল ।
ইন্টার পরীক্ষার সুবাদে অনেকেই টাকা দিচ্ছিল । বড় মামা শার্ট কেনার জন্য ২ হাজার টাকা দিলেন । আমি জানি বাবাকে শার্ট কেনার কথা বললে তিনি কখনোই নিবেন না । তাই দোকানে গিয়ে ইচ্ছে করেই সাইজে বড় শার্ট কিনলাম । বাসায় এসে পড়ার ভান করলাম । বাবা দেখলেন সাইজে বড় । বললেন ফেরত দিয়ে অন্য কাপড় আনতে । ভাগ্যিস ওটা FIXED PRICE এর দোকান ছিল । বললাম ফেরত নিবে না । বলেই শার্টটা বাবার পিঠে ফেলে মাপতে লাগলাম । তারপর মাকে বলে অনেকটা জোর করেই পড়ালাম ।
আজ সকালে ঐ শার্ট পড়ে বাবা অফিসে গিয়েছেন । আমার বাবা একজন ইঞ্জিনিয়ার । এত টাকা থাকার পরেও তিনি অফিসে পায়ে হেটে যান । বাইরে কখনো কিছু খান না । বাসায় এনে সবাই মিলে খান । এতে যদি তার ভাগে কমও জোটে তবুও তা হাসিমুখে নিয়ে নেন । এরকম একটা মানুষের ছেলে হতে পেরে আমি সত্যিই অনেক ভাগ্যবান । আল্লাহকে অশেষ ধন্যবাদ যে তিনি আমাকে এরকম একটা মানুষের ছেলে হবার সুযোগ দিয়েছেন ।