
রাস্তার পাশে জটলা জমে গেছে জনা দশেক মানুষের। তারা সবাই খুব আগ্রহ নিয়ে কিছু একটা দেখছে। কয়েকজন মানুষ আবার মোবাইল ফোনে ভিডিও করছে। দু’এক জন পথচারী হেঁটে যাবার সময় থমকে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। উৎসাহিরা জটলায় যোগ দিচ্ছে, অনুৎসাহিরা যে যার মতো চলে যাচ্ছে। প্রশ্ন হলো তারা আসলে কি দেখছে? না, কোনো সাপুড়ে সাপের খেলা দেখাচ্ছে না, কিংবা কোনো হকার লাউড স্পীকার নিয়ে কোম্পানীর প্রচারের জন্য সত্তর শতাংশ ডিসটাউন্টে কোনো পণ্য বিক্রিও করছে না। তারা মূলতঃ দু’পক্ষের ফ্রি-হ্যান্ড মারামারি দেখছে। একপক্ষে পাঁচজন যুবক, আর অন্যপক্ষে মাত্র একজন যুবক। তারা কে এবং কেন মারামারি করছে জটলার মানুষগুলো সেসব কিছুই জানে না। টেলিভিশনের রেসলিং দেখার দর্শকের মতোই তারা এখানে কেবলি দর্শক। রাস্তার মোড়ে পাঁচজন যুবক মিলেমিশে সমবায়ের মাধ্যমে অপেক্ষাকৃত লম্বা ও শীর্ণকায় একজন যুবককে কেন মারছে তা নিয়ে দর্শকদের জন্য তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। এখানে উল্লেখ্য যে, লম্বা-শীর্ণকায় যুবকটির সঙ্গে পাঁচজনের দলটি খুব একটা সুবিধা করতে পারছে না। লম্বা-শীর্ণকায় যুবকটি সম্ভবত মার্শাল আর্ট প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। পাঁচজনের সবাইকে সে কমবেশি মেরেই চলেছে, যদিও এইমাত্র পেট মোটা জাম্বু এক যুবকের বেকায়দা লাথিতে সে মাটিতে আঁছড়ে পড়লো। সঙ্গে সঙ্গে বাকী চার জন এসে ক্রমাগত লাথি মারতে থাকলো জুতো পরা পায়ে। ফলাফল হলো, সে ধীরে ধীরে দুর্বল হতে থাকলো এবং উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করতে পারলো না। খানিকবাদে লাথির গতি ও পরিমাণ কমে এলো। লম্বা-শীর্ণকায় যুবকটি ততক্ষণে নিস্তেজ হয়ে পড়লো। চারজনের মধ্যে থেকে দু’জন তাকে টেনে দাঁড় করালো, আর বাকী দু’জন দু’পাশে ব্যাকআপ সৈনিকের মতো দাঁড়াল। জটলার মানুষগুলোর দৃষ্টি এবার পঞ্চম ব্যক্তির উপর পড়লো। যদিও এতক্ষণ ফ্রি-হ্যান্ড মারামারি চলছিল, হঠাৎই এবার তার হাতে একটি ধাঁরালো চাকু দেখা গেল। কোথা থেকে কিংবা কিভাবে তার হাতে ধাঁরালো একটা চাকু এলো তা দর্শকরা বুঝতে পারলো না। যাই হোক, সে চাকু ডান হাত থেকে বাম হাতে, আবার বাম হাত থেকে ডান হাতে চালান করতে করতে লম্বা-শীর্ণকায় যুবকটির দিকে এগোতে থাকলো। যুবকটি অনেক কষ্ট করে চোখ মেলে তাকানোর চেষ্টা করছে। পুরোপুরি চোখ মেলতে পারলো কি না বোঝা গেল না। পেট মোটা জাম্বু যুবকটি দাঁত বের করে নিঃশব্দে হাসলো একবার। দর্শকদের মধ্যে কেউ কেউ হয়তো আশা করেছিল যে, যুবকটির দাঁত নোংরা ও হলুদ হবে। কিন্তু নিয়মিত ব্রাশ করা সাদা দাঁত চকচক করে উঠেছিল মুহূর্তেই। তারপর পেট মোটা জাম্বু যুবকটি ডান হাতে ধরা চাকুটি সজোরে চালিয়ে দিল লম্বা-শীর্ণকায় যুবকটির পেট বরাবর এবং প্রবল গতিতে চাকুটা চামড়া ভেদ করে ইঞ্চি চারেক ঢুকে গেল ভেতরে। একটানে চাকুটিকে বের করে আনলো পেট মোটা জাম্বু যুবকটি। তারপর দর্শকদের কারো দিকে না তাকিয়ে ওরা পাঁচজন দু’টো মোটর সাইকেলে চড়ে রওয়ানা দিল। কোথায় গেল তা দর্শকদের জানার কথা নয়। অন্যদিকে লম্বা-শীর্ণকায় যুবকটি পড়ে রইলো রাস্তার ধারে। তার পেট থেকে গলগল করে রক্ত বেরিয়ে চলেছে আর সে দুর্বল হাতে রক্ত থামানোর ব্যর্থ চেষ্টা চালাচ্ছে। জটলা ততক্ষণে হালকা হতে শুরু করেছে। তাদের প্রত্যেকেরই কিছু না কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে। যেহেতু মানুষ হিসেবে জন্মেছে, সেহেতু পেট চালানোর জন্য হলেও গুরুত্বপূর্ণ কাজ তো তাদের থাকবেই। আর যাদের কাজ অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ, তারা কেউ কেউ লম্বা-শীর্ণকায় যুবকটি কাছে গেল এবং মোবাইল ক্যামেরা বের করে ছবি তুললো কয়েকটি। তারপর নিজেদের কর্মক্ষেত্রের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিল। আর যুবকটি রক্তে মাখামাখি হয়ে পড়ে রইলো একাকি যতক্ষণ পর্যন্ত না অনেক দূর হতে সাইরেনের শব্দ ভেসে এলো। সাইরেন বাজিয়ে পুলিশও আসতে পারে, আবার এ্যাম্বুলেন্সও আসতে পারে। যুবকটি জানে না যে, সাইরেন বাজিয়ে আসা মানুষগুলো তাকে হাসপাতাল পর্যন্ত পৌঁছে দেবে কি না, কারণ তাদেরও তো গুরুত্বপূর্ণ কাজ থাকতে পারে।
ছবি: গুগল।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১:১৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



