ছোটোবেলায় মায়ের মুখে আমিনুদ্দিন এ গানটা শুনেছিল
শুনতে শুনতে সুর-লয়সহ টানা মুখস্থ হয়ে যায় গানটা
গুনগুন করে এ গানটা গাইত সে; শুয়ে শুয়ে গাইত,
দল্লুই গাছে দোলনা বেঁধে ঝুলতে ঝুলতে গাইত,
গোসলের পথে, স্কুলে, বাজারে যেতে যেতে,
ফিরতে ফিরতে, আমিনুদ্দিন গানটা গাইত।
গানটায় কী জাদু আছে সে জানে না; শুধু সে জানে তার
বুকের ভেতরে এ গানটা জীবন্ত মুক্তোর মতো গেঁথে আছে
নিজের গান পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুরেলা গান। আমিনুদ্দিন আপন প্রতিভায়
মুগ্ধ বিমোহিত তন্ময় হতো। কখনো বিষণ্ণ দুপুরে
একলা গাছটার গোড়ায় বসে বাতাসে গলা ছেড়ে দিত আমিনুদ্দিন
হয়ত সে সুর বহুদূর ভেসে ভেসে
কোনো এক প্রেমাকাঙ্ক্ষী বালিকার বুকে আলতো ধাক্কা খেয়ে
নিজের কাছেই আসতো ফিরে। আমিনুদ্দিন কত কী ভেবে শিহরিত হতো।
একদিন নৌকো বাইতে বাইতে আমিনুদ্দিন খুব মন দিয়ে
গানটা গাইছিল। খালপাড়ের এক গাছে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়েছিল রাহিমা।
‘আল্লা রে, তোমার গলা কত্ত সুন্দর’ বলে যখন রাহিমা কলকলিয়ে
উঠেছিল, আমিনুদ্দিন লজ্জায় রাঙা হয়ে গান থামিয়ে মাথা নীচু করেছিল।
কখনো গলা ছেড়ে, কখনো গুনগুনিয়ে, আড়ালে আবডালে
গাইতেই তার ভালো লাগে। কেউ শুনে ফেললে
তার খুব লজ্জা হয়। তার চোখের দিকে
তাকাতে পারে না, ইচ্ছে করে নিজেকে কোথাও লুকিয়ে ফেলতে।
যেদিন বহুদিন পর প্রাণপ্রিয় পুরোনো বন্ধুরা মিলিত হলো,
দিনভর তুমুল আড্ডা আর মাতামাতি শেষে বিকেলে
জমজমাট গানের আসর বসলো, হঠাৎ কী ভাবলো আমিনুদ্দিন-
আজ সে গাইবে মায়ের কাছে শোনা পরমাত্মিক গানটা
গান শুরু হলো। মজনু, শাকিলা, শাহজাহান গাইল। একে একে
ডাকা হলো রেহানা, সুজাতা আর নূরুলের নাম। ওরা গাইল, নাচলো।
মীর পলাশ কবিতা পড়লো। ডাকা হলো বাচ্চু ও বাবুলের নাম।
আমিনুদ্দিন ভাবে- এই বুঝি ওর নামও ডাকা হবে। ডাকা হলো
জাভেদ, করিম, আকলিমাকে। সবাই সুর করে ডাকছে
একে অপরের নাম। এখনই কেউ একজন বলবে-
ওরে, আমাদের আমিনুদ্দিন কই রে? আজ কোনো ছাড়াছাড়ি নাই,
কিছু একটা করতেই হবে তোকে।
এরপর ডাক পড়লো রোশানের। রোশানের পর সোহানা।
সমস্বরে উচ্চারিত হচ্ছে প্রিয়সব নামগুলো – সুলতানা! সায়ন্তনী!
কাউকে না কাউকে তো হতেই হবে ‘শেষনাম’। বেজায় উত্তেজিত
আমিনুদ্দিন ছটফট করছে, এই তো শেষ ব্যক্তি হিসাবে তার নাম
ডাকা হবে এখনই। আর তখনই উপস্থাপক সমাপ্তি ঘোষণা করলো
অনুষ্ঠানের।
কারো কারো নাম কখনো প্রিয়তালিকায় ওঠে না, অথবা চিরকাল
অজানাই থেকে যায়। এ কারণে, আমাদের জানা হলো না,
আমিনুদ্দিন ওর মায়ের কাছ থেকে কোন গানটা শিখেছিল।
০৬ মার্চ ২০২০
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মার্চ, ২০২০ বিকাল ৫:৩১