ক্রিকেটপাগল শ্রোতাবন্ধু, প্রিয় ব্লগার ভাই ও বোনেরা,
আপনাদের সবাইকে সালাম, শুভেচ্ছা, অভিনন্দন, নতুন ইংরেজি বছরের হ্যাপি নিউ ইয়ার ও বাংলা বছরের শুভ নববর্ষ এবং অগ্রিম ইদ মোবারক জানিয়ে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি শ্রীলঙ্কার জগদবিখ্যাত, অদ্বিতীয়, অনুপম, নিরুপম, সাগরের কূল ঘেঁষে ঘুমিয়ে থাকা পাল্লেকেলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। সেখানে এই মুহূর্তে চলমান আছে বাংলাদেশ-শ্রীলংকার মধ্যে অনুষ্ঠেয় দুই টেস্টম্যাচ সিরিজের প্রথম ম্যাচের প্রথম দিনেরর শেষ সেশনের খেলা। বাংলাদেশ টসে জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ভালো করেছেন বলে মনে হচ্ছে। এই মুহূর্তে স্কোর - ২৭৮/২ (৮৩ ওভার)
শ্রোতাবন্ধুরা, আমার আশা, প্রত্যাশা এবং ভালোবাসা এই যে, আপনারা সবাই করোনাকে বরণ না করে মাস্ক পরে সাফল্যের সাথে ঘরে বসে গৃহবান্ধবীদের পরম আতিথেয়তায় চরম আনন্দে লকডাউন উদযাপন করছেন।
মেঘমুক্ত বাতাস, কর্দমাক্ত আকাশ, অশ্রুসিক্ত পিচের উপর উপর্যুপরি আছড়ে পড়ছে ছোট্ট একটা তক্তার বল, যাকে বিশ্ববাসী নাম দিয়েছেন ক্রিকেট বল, এখন আমরা আপনাদের দৃষ্টি নিয়ে যাব সেইখানে।
আজ কোনো গান নয়। কবিতা নয়। উপন্যাস কিংবা বকরবকর ব্লগব্লগানিও নয়। আজ আপনাদের কাছে হাজির করছি সেই পুরোনো ক্রিকেট সামগ্রী, যা আজ থেকে ঠিক কত আগে কে বা কারা সংগ্রহ করে হাজারে হাজারে শেয়ার দিয়েছিল, তা আপনার আমার কারো জানা নেই।
এগুলো হলো বাংলাদেশের সুনামধন্য ও স্বনামখ্যাত ধারাভাষ্যকার, যিনি জন্মগ্রহণ না করলে বাংলার ধারাভাষ্য হয়ে যেত নীরস পাত্থরের মতো, হয়ত কোনো ধারাভাষ্যই উৎপাদিত হতো না এই দেশে, সেই পরশমণি, সুমিষ্ট কণ্ঠস্বরের মালিক জনাব জাফরুল্লাহ শরাফতের ক্রিকেট ধারাভাষ্য থেকে সংকলিত স্মরণীয় বরণীয় চুম্বক অংশ, যা না শুনলে আজ কারো ঘুমই আসবে না। এগুলো অতীতে বহুবার পড়েছেন, শুনেছেন, আনন্দে উদবেলিত হয়ে লম্ফ দিয়েছেন। হয়ত সেগুলো অনেকে ভুলেও গেছেন। নতুন প্রজন্মের ছোট্ট বাচ্চারা হয়ত এগুলো শোনেনই নি কখনো।
আপনারা সেগুলো আরেকবার পড়ুন। ইতিহাস জানুন। ইতিহাস থেকে শিক্ষা লাভ করুন।
>>> এই মাত্র তামীম ইকবাল প্রথম হাফ সেঞ্চুরি করার যোগ্যতা অর্জন করলেন। তাকে সংগ্রামী অভিনন্দন।
>>> মেঘমুক্ত স্টেডিয়াম, কর্দমাক্ত গ্যালারি, পিচের উপর দিয়ে গুঁড়ি গুঁড়ি বাতাস বয়ে যাচ্ছে।
>>> বোলার আকরাম খান তার ট্রাউজার খুলে আম্পায়ারের হাতে দিলেন। আম্পায়ার সেই ট্রাউজার দিয়ে মাথায় পাগড়ি বাঁধলেন। উল্লেখ্য, মাঠে এখন কড়া রোদ। একটু পরই বৃষ্টি হবে।
>>> মাঠ চলে গেল বলের বাইরে, দুঃখিত দর্শকমণ্ডলি, আমি একটু আবেগে আপ্লুত হয়ে গিয়েছিলাম, বল চলে গেল সীমানার বাইরে।
>>> বাংলাদেশের আশার ফুল আশরাফুল কিন্তু এখন ক্রিজে, সারা দেশের মানুষ তার ব্যাটের দিকে তাকিয়ে আছে।
>>> বল হাতে নিয়ে ছুটে আসছেন জয়ের মূল এনামুল, বল হাতে তার মতো ভয়ানক বোলার কিন্তু আমি খুব কমই দেখেছি, আজ কিন্তু যে কোনো কিছু ঘটে যেতে পারে। আপনারা ফেইসবুকে ভাইরাল ভিডিও দেখে নিয়েন।
>>> ব্যাটসম্যান সজোরে ব্যাট চালালেন, ব্যাটসম্যান আকাশের দিকে তাকিয়ে আছেন, বল দেখা যাচ্ছে না, মনে হয় স্টেডিয়ামের অনেক উপর দিয়ে বল চলে যাচ্ছে স্টেডিয়ামের বাইরে। কিন্তু না, বোল্ড।
>>> মোহাম্মদ আশরাফুল। সুন্দর একটি শট এবং আউট।
>>> In an interview, প্রশ্নঃ বিরক্ত হন কখন? উত্তরঃ রাত ১২টায় যখন কেউ ফোন দিয়ে বলে কাল খেলা আছে। কমেন্ট্রিতে আসতে হবে। কমেন্ট্রি ছাড়া প্লেয়াররা ক্রিকেট খেলবে না। আরে ভাই একটা প্রিপ্রারেশন তো আছে, নাকি?
>>> স্কয়ার কাট করে বল পাঠিয়ে দিলেন লং অন দিয়ে সোজা সীমানার বাইরে।
>>> দৃষ্টিনন্দন মার, চোখ চেয়ে দেখার মতো শট, বল চলে গেল মাটি কামড়ে সোজা ফাইন লেগ ফিল্ডারের হাতে - একটি রান।
>>> এন'কালা - তিনি নামেও কালা, দেখতেও কালা।
>>> রফিক স্টিয়ার করলেন এবং ভেসে ভেসে চার।
>>> বোলারের ব্যাক ড্রাইভ, কভার অঞ্চল দিয়ে বল সীমানার বাইরে।
>>> চমৎকার শট, এক্সেলেন্ট লেগ গ্লান্স, বল সীমানার বাইরে। না! তিনি বোল্ড হয়ে ফিরে আসলেন, বল লেগ স্ট্যাম্পে লেগে সীমানার বাইরে চলে গিয়েছিল।
>>> আজ আমাদের সাথে উপস্থিত আছেন, দেশবরেণ্য ক্রিকেটার, এক সময়ের সাড়া জাগানো প্লেয়ার, জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক, বর্তমানের নির্বাচক বোর্ডের সদস্য, জনাব ফারুক।
>>> Conversation between Khoda Box and Chy Jafarullah Sharafat: খোদা বক্সঃ আমার মনে হয় সেলিম মালিকের ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে ক্রিকেট মিশে আছে। জাফর শরাফতঃ না খোদা ভাই, আমার মনে হয় সেলিম মালিকের লোমে লোমে ক্রিকেট মিশে আছে।
>>> এবার কিন্তু ব্যাট আর বলে হয়েছে।
>>> ব্যাটসম্যান অত্যন্ত আস্থার সাথে প্রতিটি বলের মেধা ও গুণাগুণ বিচার করে খেলছেন।
>>> আম্পায়ারকে অতিক্রম করে বোলার বল করলেন।
>>> আলফাজ চমৎকার ভাবে ২ জনকে কাটিয়ে সুন্দর ভাবে বারে কিক নিলেন, কিন্তু না, ভুল পাস।
>>> এবার কিন্তু ব্যাটসম্যান সজোরে স্টিয়ার করলেন।
>>> সুপ্রিয় দর্শকমণ্ডলি, এই মাত্র আমাদের বাংলাদেশের দামাল, কামাল, আবাল সন্তানেরা মাত্র এক ইনিংস ও ১২৯ রানে পরাজিত হওয়ার গৌরব অর্জন করলেন।
>>> উইকেটে আছেন আমাদের মারমুখী হার্ডহিটিং ব্যাটসম্যান জাভেদ ওমর। প্রচুর শট আছে তার হাতে।
>>> ব্যাটসম্যান কিন্তু ঘূর্ণি জাদুতে একেবারেই পরাস্ত হলেন।
>>> ব্যাটসম্যান দেখে শুনে না খেলে ছেড়ে দিলেন এবং বোল্ড। চমৎকার খেলা।
>>> খেলার যখন টালমাটাল অবস্থা, কে জেতে কে হারে, এই অনিশ্চয়তায় পুরা বিশ্ব যখন এক মাথা থেকে আরেক মাথায় দুলতে দুলতে গড়াগড়ি খাচ্ছে, দৃঢ়চেতা কণ্ঠে গভীর উৎকণ্ঠা নিয়ে সহ-ধারাভাষ্যকারকে : তোমার কি মনে হয় অনুপম! বুলবুল কি পারবে বাংলাদেশকে তার জয়ের কাঙ্ক্ষিত বন্দরে পৌঁছে দিতে ? (ব্লগার স্থিতধীর কমেন্ট থেকে সংযোজিত)
>>> আমাদের আজকের অতিথি এক উজ্জ্বল নক্ষত্র, জীবন্ত কিংবদন্তী, বাংলাদেশেরে ক্রিকেটের এক অবিস্মরণীয় জাজ্বল্যমান তারকা, সবার জন্যে অনুকরণীয় উদাহরণ, যার নাম শুনলে বোলাররা কাঁপতো, যার পদচারণায় এই ক্রিকেট বিশ্ব উদ্ভাসিত হত, যিনি না থাকলে আজকের ক্রিকেট স্ব্য়ংসম্পূ্র্ণ হতো না, যার অবদান বাংলাদেশের ক্রিকেটকে নিয়ে গেছে এক অসাধারণ উচ্চতায়, যার আত্মত্যাগ আমাদের কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে, যিনি আজকের ক্রিকেটারদের কাছে এক অভিভাবক, তিনি সেই জীবন্ত কিংবদন্তী, তিনি সেই দমকা হাওয়া বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য, তিনি সেই সেলিম শাহেদ, আজ আমাদের মাঝে উপস্থিত।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে এপ্রিল, ২০২১ বিকাল ৪:১৬