"মণি" কিংবা মনি যখন যেটা লিখতে ভালো লেগেছে- সেটাই লিখেছি, পরে ধারাবাহিকতার জন্য নামটা একই বানানে লেখার ইচ্ছে হলোনা, হয়তো পাঠকের চোখে দৃষ্টিকটু লাগতে পারে, অতটুকু ক্ষমা পাঠকরা করেন বলেই আমার বিশ্বাস।
উৎসর্গঃ বাপী হাসান- প্রিয় ব্লগার, প্রিয় মানুষ ।
এবং হাসান মাহবুব- যার লেখনীর প্রতি যুগপৎ ভালো লাগা এবং ঈর্ষা।
খলিলুর রহমানের বিরক্তি চরমে উঠে । তার সিল্কের পাঞ্জাবী ঘেমে লেপ্টে আছে শরীরে। কিন্তু পার্টির এই তরুণ তুর্কীর কথা তাকে শুনতেই হচ্ছে ।
একটু নড়েচড়ে বসতে গিয়ে তিনি অনুভব করলেন তার জলবিয়োগ জরুরী । বছরখানেক হল তার ডায়াবেটিক ধরা পড়েছে, তার তলপেটের চিনচিনে ব্যথা তার গোলগাল সাদা মুখে একটু লাল রং ছড়ায়। অবশেষে কপালে কয়েকটা ভাঁজ ফেলে। তিনি কিছু বলবেন বলে প্রস্তুতি নেন, কিন্তু তার আগেই পার্টির জেলা সম্পাদকের গলা শোনা গেল, “আরে শাহাদাৎ, করো কি, সভাপতিরে একাই আটকায় রাখলে চলে, আমাদেরও তো লিডারের সাথে কথা আছে ”। সভাপতি খলিলুর রহমান সেক্রেটারী নাজমুল হোসেনের প্রতি কৃতজ্ঞতাবোধ করেন । বলতে গেলে নাজমুল হোসেন নামের বিশালদেহী এই লোকটা আছে বলেই খলিলুর রহমানের রাজনীতি করাটা একটু সহজ হয়েছে।
খলিলুর রহমানের পরিবার এই শহরে বেশ প্রভাবশালী । দুঁদে উকিল ছিলেন তার বাবা। বিভিন্ন রাজনৈতিক রথি-মহারথিদের সেই কিশোর বয়স থেকেই তাদের বাড়িতে আসতে দেখেছেন, থাকতে দেখেছেন। তবে তিনি তার প্রথম চল্লিশে রাজনীতির সাথে মোটেই সম্পৃক্ত ছিলেন না, তার বাবার মৃত্যুর পর এক-দশক তাদের পরিবারে কোনরকম রাজনৈতিক আকাংখা তৈরী হবার মত বাস্তবতা থাকেনা । পাঁচভাই তিন বোনের মধ্য , বোন তিনজনেই দেশের বাইরে, দুই ভাইও। দেশে থাকা অন্য দুইভাইয়ের একজন আর্মিতে ব্রিগেডিয়ার, সামনে আরো প্রমোশন অপেক্ষা করছে, আর এক ভাই বেশ বড় কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি বাগিয়ে ফেলেছে। খলিলুর রহমান বাবার রেখে যাওয়া ব্যবসা দেখাশোনা করতেন, সরকারী ঠিকাদার হিসেবে নিজেও তার ব্যবসা-বুদ্ধির ভালো প্রমাণ রেখেছেন । হটাৎ করে তার বড় বোন শাহনাজ বিদেশ থেকে কোন এক ছুটিতে সপরিবারে দেশে আসে।আর তার প্রাপ্তবয়স্ক ছোট ভাইটাকে রাজনীতিতে ভর্তি করায়।
শাহনাজের খলিলুর রহমানের প্রতি অন্য অনুজদের চেয়ে বেশী মনোযোগ লক্ষ্য করা যায়, সেই ছেলেবেলা থেকেই। এটার কারণ হয়তো খলিলুর রহমান আর সব ভাইবোনদের থেকে অনেক শান্ত, তাই একটু অনুজ্জ্বলও মনে হয়। তাদের পরিবারের অন্য সন্তানেরা খুব অনায়াসে পারিবারিক প্রতিপত্তির ব্যবহার করা শিখে গিয়েছিল। শাহনাজের কিশোরীকালে, রাস্তায় ধূলো উড়িয়ে তাদের ফিয়াট গাড়ীটা চালিয়ে নিয়ে যেত, লোকজনের চোখে থাকতো সম্ভ্রম। তখন থেকেই শাহনাজ আবিষ্কার করে সেই সময়কার শিশু খলিলুর রহমান তাদের রক্তের তুলনায় বাড়াবাড়ি রকম শান্ত, মুখচোরা। শাহনাজ তার প্রবাসবাসের কারনেই হয়তো সেই ছুটিতে স্মৃতিকাতর হয়, তাদের পারিবারিক রাজনৈতিক ইতিহাসের কথা ভেবে আপ্লুত হন , তার মুখের বয়সের দাগগুলো আরো বিমর্ষ হয়। খলিলুর রহমানকে তিনি অনেক কিছু বলার পর খুব আলগোছে বলে “বাবু, তুই এবার চেয়ারম্যানিতে দাঁড়া, সামনেরবার সংসদ ইলেকশনের টিকেট পাবি ” । বড়বোনের এই আদুরে আব্দার প্রত্যাখ্যান করার কোন কারণ থাকেনা । একমেয়াদের চেয়ারম্যানি শেষ করে তিনি এখন একটু দৌড়ঝাঁপ করছেন সংসদ ইলেকশনের টিকেটের জন্য। কিন্তু ডায়বেটিক আক্রান্ত হয়ে তিনি এইসব দায়িত্ব পালনে একটু ক্লান্তবোধ করেন। নাজমুল বেশ সামলে নেয়, নাজমুলের সাংগঠনিক দক্ষতা অসাধারণ, আর লোকটার ভেতরে কেমন যেন একটা সহজ-সরল আনুগত্য আছে । আগের সভাপতি মারা যাবার পর জেলা সভাপতির পদটা নাজমুল হোসেন পেতে পারতো, অন্তত শাহনাজের প্রভাব না খাটলে তো অবশ্যই সে সভাপতি হতে পারতো। কিন্তু খলিলুর রহমানকে নাজমুল হোসেন বেশ “লিডার” বলেই মেনে নিয়েছেন , যেমন মেনে নিয়েছিলেন তার আগেরজনকে ।
খলিলুর রহমান তার অফিসের বাথরুম খোলামাত্র একটা গরমের হলকা অনুভব করলেন। শেষ ফোঁটাগুলো ঝরাতে তাকে একটু চাপ দিতে হয়। তারপরও তিনি দু-চার সেকেন্ড অপেক্ষা করেন। এবং খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু মনে পড়েছে এমন ভঙ্গীতে আনুসাঙ্গিক কাজগুলো দ্রুত শেষ করেন ।
”নাজমুল ভাই, অফিসটারে একটু ভালো মত সাজাই, গরমে তো অফিসে বসা যায়না, টিনগুলো সরায় ছাদ দেই ”
নাজমুল হোসেন হাসেন, বলেন “লিডার পার্টি অফিস এমনই থাকা উচিৎ, এতেই যা অবস্থা, যে ছাত্রনেতা উঠতে বসতে নেতা-নেত্রীর নামে হাজারটা বিশেষণ বসায়, দুইদিন অফিসের চাবি পেলে রাতে অফিসে মেয়ে ঢোকায়, আজকে অফিসে ঢুকে তিনচারটা কনডমের প্যাকেট পাইছি, আর অফিসে যদি আর একটু আরাম-আয়েশ পায় তাহলে অফিসে আর ঢোকা যাবেনা ”। ঘটনাটা ব্যক্ত করতে পেয়ে যেন নাজমুল হোসেনের শারীরিক স্বস্তিবোধ হয়। নাজমুল হোসেনের কাছে পার্টি-অফিসের প্রতি একটা পবিত্র অনুভব আছে, নাজমুল হোসেন উঠে দাঁড়ান, দেয়ালে টানানো নেতা-নেত্রীর ছবি পকেটের রুমাল বের করে মোছেন, নেত্রীর চোখের কাছে মনে হয় একটু বেশীই মোছেন, যেন তরুণ নেতার বেলাল্লাপনা নেত্রীর চোখে লেগে ছিল। নাজমুল হোসেনের এই কর্মকাণ্ডগুলো মোটেই আরোপিত নয়, লোকটার জন্মই যেন আন্তরিক আনুগত্যের জন্য। জেলা সভাপতি আবার জল-বিয়োগের দরকার বোধ করেন, কিন্তু চেপে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। নাজমুল হোসেনের সঙ্গ তিনি উপভোগ করেন ।
নাজমুল হোসেন এবার তার সভাপতির দিকে তাকান বলেন “লিডার, পার্টি ক্ষমতায় থাকলে এই মাকাল ফলগুলোর টাউটামি বাড়ে, পার্টি ক্ষমতা থেকে নামুক,একটারো দেখা পাবেন না ”
খলিলুর রহমান খানিকটা বিব্রতবোধ করেন, যদিও তিনি জানেন, নাজমুল হোসেনের তার প্রতি শ্রদ্ধা ভক্তি কোনটাই কম নয়, তাও তার নিজেকে ঐ সুযোগসন্ধানীদের দলভুক্ত মনে হয়। তিনি আবার চাপ অনুভব করেন। উঠবেন বলে চেয়ারের একটা হাতলে ভর দেন।
সেসময় একটা ত্রিশ অথবা সতের বছরের মেয়ে দরজায় উঁকি দেয়। খলিলুর রহমান ব্যাপারটা আগে দেখলেও নাজমুল হোসেনকে কথা বলতে শোনা যায় “আরে মনি না ? আসো”। খলিলুর রহমান শূন্য চোখে শাড়ী পরা ছিপছিপে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে থাকেন । তখন মেয়েটি, যার বয়স ত্রিশও হতে পারে, আবার সতেরও হতে পারে, সে খলিলুর রহমানকে বলে “খলিল ভাই, আমাকে চেনেন নাই, আমি বস্ত্রহরণ মনি বেগম ”। তার বলার ভেতরে খুব সরল একটা কৌতুক ছিল, খলিলুর রহমান হেসে ফেলেন। পার্টি যখন বিরোধী দলে ছিল, কোন এক হরতালে পুলিশের সাথে ধস্তাধস্তি করতে গিয়ে শাড়ীর আঁচল সরে গেলে, সেটা বেশ বড় একটা ইস্যু হয়ে ওঠে। কোন এক পত্রিকায় ছবি সমেত খবর হয় “মনি বেগমের বস্ত্রহরণ”। খলিলুর রহমান আবার চাপটাকে অস্বীকার করবার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি লক্ষ্য করেন তার বোন শাহনাজের সাথে মনি বেগমের কোথাও একটা দারুণ মিল ।
গল্পের ঠিক এই মুহুর্তে আমাদের মনি বেগম আর খলিলুর রহমানের উপর আর একটু আলোকসম্পাতের প্রয়োজন দেখা দেয়, যেহেতু গল্পটা মনি বেগমের কিংবা খলিলুর রহমানের, অথবা দুজনেরই, হয়তো কখনো মনি বেগম কিংবা খলিলুর রহমান নিজেদের ভেতরে তাদের নিজেদের দাম্পত্য নিয়ে হতাশা, পাওয়া না পাওয়ার গল্প বলে থাকতে পারে। কিন্তু তা আমাদের জানার দরকার হয়না, কিংবা এই সাক্ষাতের পরবর্তী তিন বছর, মণি বেগম কিংবা খলিলুর রহমানকে জড়িয়ে যে একদম কোন কানাঘুষা হয় না- তা নয়, এবং তা নিয়ে বিশেষত খলিলুর রহমানের পরিবার খুব নিরুদ্বেগ থাকে বলেও মনে হয়না । খলিলুর রহমানের স্ত্রী নাজমা কোন একদিন মনি বেগমের হাত জড়িয়ে ধরে বলেন “তুই আমার ছোট বোনের মত- বোন হয়ে বোনের সংসার ভাঙ্গিস না”- মনি বেগম যেহেতু খুব ভালোবাসাহীনতার শিকার, তার চোখও আদ্র হয়ে উঠে, সে কথা দেয়- সে খলিলুর রহমানকে ভাইজান সম্বোধনে ডেকে কিছুটা “অযৌনতা” আরোপ করে ।
মণি বেগম আর খলিলুর রহমান পরবর্তী তিনটি বছর, খলিলুর রহমানের মৃত্যু (৫২ বছর বয়সে, হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান- তার শুভাকাঙ্ক্ষীরা আত্নার রুহের মাগফেরাত কামনা করতে পত্রিকায় “অকাল” মৃত্যুই ব্যবহার করেন )। ঠিক বয়সের কারনে নয়- তার সাংসদ নির্বাচিত হবার দুই একদিন পর মৃত্যু “অকাল”ই -তা বলার অপেক্ষা রাখেনা । এই মৃত্যু নিয়ে আমাদের পরে আলোচনা করার যথেষ্ট প্রাসঙ্গকিতা থাকায় আমরা মণি বেগমকে লক্ষ্য করবো এখনকার জন্য ।
খলিলুর রহমানের দাম্পত্যে যেরকম নিস্তরঙ্গ স্বাভাবিকতা দেখা যায়, মনি বেগমের ব্যাপারটা তার থেকে আর একটু জটিল।
ঐ মফস্বল শহরে মনি বেগম বস্ত্র-হরিত হবার আগেও আলোচিত হয়েছিল, সম্ভবত বিএ পরীক্ষায় নকল করতে গিয়ে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ধরা পড়লে, বইয়ের পাতাগুলো অন্তর্বাসের ভেতর ঢুকিয়ে ফেলে, ম্যাজিস্ট্রেটের চোখে চোখ রেখে বলেছিল “গায়ে হাত দিলে, স্যান্ডেলের মার খাবেন”- ঐ ছোট্ট শহরে ছিপছিপে মণি বেগম, ভীষণ চপল যার পদক্ষেপ, চোখে তীব্র হাসি যার, তাকে পরিচিত করে এক ভীষণ আবেদনময়ী নারী হিসেবে, কিছুটা সহজলভ্যও হয়তো । তাই মনি বেগম বিভিন্ন রকম প্রস্তাব পায়, কিছুদিন তার কদর বেড়ে যায়, কিন্তু মণি বেগমকে দেখা যায় নিঃস্পৃহ, খুব সহজ ইঙ্গিতেও যেন মণি বেগম বুঝতে পারেনা, প্রবীন/সম্ভাবনাময় নবীনেরা হাল ছেড়ে দেন, কারো কারো কাছে মণি বেগমের এই উদাসীনতা ব্যক্তিগত পরাজয় হিসেবে মনে হয়ে থাকতে পারে, যার কারনে রাজনৈতিক সামাজিক আড্ডায় “নারী কোটায়” মণি বেগমের যে অবাধ যাতায়াত তা বিঘ্নিত হয়, এবং বর্ণিত দিনের আগে মণি বেগমকে কোনরকম রাজনৈতিক-সামাজিক সভা সমাবেশে সেভাবে দেখা যায়না ।
মণি বেগমের মাঝে একটা ক্ষণস্থায়ী সংসার হয় এক দেড় বছর মত দৈর্ঘের, এক পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি সাংবাদিক সেই পুরুষও মণি বেগমকে প্রত্যাশা করে ভীষণ কুশলী কাম-দেবী হিসেবে, যার হাতে অসংখ্য কৌশল । কিছুটা ভয় থেকেই হয়তো বাসর ঘরে ঢোকার আগে “কস্তূরী” কিংবা অন্য নামের কিছু সেক্স টেবলেট সেবন করে, এবং সেই সাংবাদিকের চোখে মণি বেগমের আশানুরূপ উত্তেজনা ধরা দেয়না, সাংবাদিক প্রতারিতবোধ করে, সে ভাবে, মণি বেগম উপেক্ষা করছে- তাই বিয়ের প্রথম স্বাভাবিক গভীর রাত্রি জেগে থাকা সময়গুলো জেলা প্রতিনিধি কখনো আবির্ভূত হয়, বস্ত্রহরনকারী পুলিশ, কিংবা ঐ ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে। কিন্তু খুব সাধারণ গৃহিণী হতে যাওয়া মণি বেগম পতির এরকম আচরণে কোন এক রাতে, তার পা জড়িয়ে ধরে ডুকরে কেঁদে উঠেন, আর জেলা প্রতিনিধির সমস্ত বিনিয়োগ, আকাংখা যেন চুরমার হয়ে যায়, সকালে নিয়মমত নাস্তা পাওয়া, জ্বরে ভুগলে একটু সেবার প্রতিশ্রুতির থেকেও আরো বেশী কিছু দরকার ছিল হয়তো- তাই গরম ভাত, আলুভাজি, কিংবা সুবিন্যস্ত ঘর বিছানা, সেই জেলা প্রতিনিধিকে স্বস্তি দেয়না, এবং মণি বেগমকে ডিভোর্স দেয় ।
খুব চপল দুরন্ত মণি বেগম খুব সহজে মেনে নেন- তার স্বাভাবিক যে বিদ্রোহ সেটাও দেখা যায় না । কোন একটা বেসরকারী সংস্থায় কাজ জুটিয়ে মণি বেগম মোটামুটি গুছিয়ে নেন । এক্ষেত্রে মণি বেগমের ভেতরে কোন রকম ক্ষোভও দেখা যায়না, খুব দুঃখ ভারাক্রান্ত কোন দীর্ঘশ্বাস কিংবা অসুখী রেখা তার মুখে রেখা হয়ে বসেনা, বরং তার সংযত আচরণ আর লঘু কথার ঢং তাকে বেশ ব্যক্তিত্ব দেয় ।
খলিলুর রহমানের বোন শাহনাজের কানেও যায় মণি বেগমের সাথে তার ভাই খলিলুর রহমানের সখ্যতার কথা, শাহনাজ চিন্তিত হয়ে আজীবন সম্পাদক নাজমুল হোসেনকে ফোন দেন । নাজমুল হোসেন আশ্বস্ত করেন শাহনাজকে।
নাজমুল হোসেন মণি বেগমের সাথে লিডার খলিলুর রহমানের সম্পর্ককে খুব পবিত্র হিসেবেই দেখেন, মণি বেগমের প্রতি নাজমুল হোসেনের একটা সচেতন প্রশ্রয়ও থাকে বোধকরি ।
মণি বেগমের সহচর্যে খলিলুর রহমানের রাজনৈতিক আত্নবিশ্বাস একটু বাড়ে, জনসংযোগে তাকে আগের থেকে বেশ সাবলীল দেখা যায় । এবং বাস্তবে অনেক অনুসন্ধান করেও তাদের ভেতর কোন পদস্থলনের নিশানা না পাওয়ায়, মণি বেগম এবং সভাপতি খলিলুর রহমান বরং রাজনৈতিক সহকর্মী হিসেবেই পরিচিত হন । এবং নির্বাচনের দৌড়ঝাঁপে মণি বেগমের সাংগঠনিক প্রতিভা প্রকাশিত হয় ।
মণি বেগমের পাতানো বোন, খলিলুর রহমানের স্ত্রী নাজমাও, মনিবেগমকে বিশ্বস্ত ভাবেন । এটা কিছুটা ভাণ হবার সুযোগ থাকে যদিও, যেহেতু নাজমার সেই মুহুর্তে “আপস” ছাড়া আর কোন লাভজনক সুযোগ থাকবার কথাও নয়, তবে তার জন্য সবথেকে বড় আশ্বাসের তার স্বামী খলিলুর রহমানের তার প্রতি মনোযোগের কোনমত হেরফের ঘটেনা।
খলিলুর রহমান যে রাতে অসুস্থ্য হয়ে পড়েন, সেদিন তার বাড়িতে অনেক মানুষ, ইলেকশনে জেতার অভিনন্দন, পুষ্পমাল্য আর হৈচৈয়ের ভেতরে একটা চেয়ারে বসে ঘামতে থাকেন খলিলুর রহমান, তার গোলগাল সাদা মুখে রক্ত জমে উঠে, চোখে শূন্য দৃষ্টি, খলিল ভাই খলিল ভাই বলে ঝাঁকুনি দিচ্ছে কেউ কেউ, সম্ভবত তার একবার চোখ ঘুরে ঘুরে জটলাটায় কিছু খোঁজে, অস্ফুটে স্বরে বলে “আপা কই”- তারপর আবার ঘোলা চোখ, কাউকে চিনতে পারছেন না, মনিবেগম খুব তীক্ষ্ণ কণ্ঠে বলে উঠে “ভাইজান- আমাকে চিনছেন”
খুব যন্ত্রণা কাতর খলিলুর রহমানের ঠোঁট খুব কোমল হাসিতে একটু প্রসারিত হয়
খুব ক্ষীণ কণ্ঠে বলে “তুমি বস্ত্রহরণ মনিবেগম”
===============================================
নাজমুল হোসেন মনিবেগমকে খলিলুর রহমানের জায়গায় বসানোর জন্য অনেক চেষ্টা করেন এবং সফলও হন, মনিবেগমের হাঁটা চলা কন্ঠে দারুণ ব্যক্তিত্ব, খুব সাধাসিধে সাজ পোশাক আর সাবলীল রাজনীতিজ্ঞানে, ঐ মফস্বল শহরে মনিবেগমের বেশ একটা প্রভাব তৈরি হয়, বিভিন্ন সুস্থ্য অসুস্থ্য রাজনৈতিক আলোচনা, ভাগ বাটোয়ারা ইত্যাদি শেষ করে যখন মনিবেগম বাড়ি ফিরবেন, তখন তিনি তার মত করে সাজানো অফিস ঘরের দলীয় নেতা নেত্রী এবং খলিলুর রহমানের ছবির কাছে গিয়ে দাঁড়ান, শাড়ীর আঁচলটা আপনা আপনি খানিকটা আলুথালু হয়ে উঠে । মরহুম খলিলুর রহমানের ঠোঁট হেসে উঠে বলে “তুমি বস্ত্রহরণ মনিবেগম”- মনিবেগমের গা এক অজানা আনন্দে শিরশির করে উঠে ।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জুন, ২০১৩ সকাল ১০:২৭