somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দ্রুতই বদলে যাচ্ছে আর্থিক খাতের চালচিত্র

১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ১২:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সরকার চালাতেই হিমশিম খেতে যাচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সরকারের রাজস্ব আয়ে মোট ঘাটতি ছিল ৭২ হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে এই ঘাটতি দাঁড়ায় ৫৬ হাজার কোটি। তা সত্ত্বেও পরবর্তী বাজেটে অনুদান বাদেই ১ লাখ ৪৫ হাজার ৩৮০ কোটি টাকার ঘাটতি ধরে প্রায় সোয়া ৫ লাখ কোটি টাকার একটা সুবিশাল ব্যয় পরিকল্পনা করে বসে সরকার। এর মধ্যে উন্নয়ন ব্যয় ২ লাখ ১১ হাজার ৬৮৩ কোটি টাকা, বাকিটা সরকারের পরিচালন ব্যয়। আয় ও ব্যয়ের মধ্যে পার্থক্য প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা। এনবিআরের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ৩ লাখ ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। প্রথম ছয় মাস বা জুলাই-ডিসেম্বরে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি ৩১ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা। অথচ এনবিআরকে গতবারের নিট আদায়ের চেয়ে এবার ৪৫ শতাংশের বেশি রাজস্ব আদায় করতে বলা হয়েছিল। বাস্তবতা হচ্ছে, ছয় মাসে রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ৭ দশমিক ৩৯ শতাংশ যা গত বছরের রাজস্ব প্রবৃদ্ধির মতোই গতানুগতিক।

কিন্তু সবাইকে অবাক করে নতুন বছরে ব্যয় বাড়ানো হয়েছে প্রায় ১৮%। ফলে পরিচালনার খরচ বড্ড বেড়েছে। বাড়ানো হয়েছে সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতা। বাজেট ঘাটতি মেটাতে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে বিপুল পরিমাণ ঋণ নেওয়ায় সুদ পরিশোধ ব্যয়সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। আকার বাড়ছে উন্নয়ন ব্যয়ের। বাস্তবায়নে অতি দীর্ঘসূত্রতা থাকলেও বড় প্রকল্প তৈরিতে সরকারের রয়েছে বিপুল আগ্রহ। এদিকে অর্থবছরে ৭০০ কোটি ডলারের বৈদেশিক ঋণের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও প্রথম ৫ মাসে ছাড় হয়েছে মাত্র ১৬২ কোটি ডলার। সব মিলে সরকারের আয়ের উৎস একেবারেই সীমিত হয়ে গেছে।

ব্যয় বাড়ালেও আয় কমে যাওয়ায় সরকার এক দশকে সর্বোচ্চ ধার করেছে এ অর্থবছরেই। চলতি অর্থবছরের জন্য ব্যাংকব্যবস্থা থেকে সরকার ৪৭ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা ঋণ নেবে বলে ঠিক করেছিল। অথচ অর্থবছর শুরু অর্থাৎ ২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে গত ২১ জানুয়ারি পর্যন্ত ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকার ঋণ নিয়ে ফেলেছে ৪৯ হাজার ১০৯ কোটি টাকা। বিদায়ী ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১২ মাসে ঋণ নেওয়া হয়েছিল আরও অনেক কম: ৩০ হাজার ৮৯৫ কোটি টাকা। সরকারের ঋণ নেওয়ার এই ধারা অব্যাহত থাকলে অর্থবছর শেষে তা এক লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।

আয়ের তুলনায় ব্যয় যত বাড়ছে, সরকারও তত বেশি ঋণের ফাঁদে পড়ছে। গত অর্থবছরে বাজেট ঘাটতি মেটাতে সরকারের অর্থায়নের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ১১ হাজার ৯০ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরেও তা ছিল সাড়ে ৮৭ হাজার কোটি টাকা। সরকারের নেওয়া মোট অভ্যন্তরীণ ঋণ এখন জিডিপির প্রায় ১৭ শতাংশ। গত ১০ বছরে সরকার সবচেয়ে বেশি বাড়িয়েছে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতার খাতে। এতে দুর্নীতি না কমলেও ব্যয় বেড়েছে বিপুল। মোট বাজেটের ২৮ শতাংশই খরচ হয় বেতন, ভাতা ও পেনশন খাতে। আরেকটি বড় খাত হচ্ছে ঋণের সুদ পরিশোধ, প্রায় সাড়ে ১৮ শতাংশ।

এদিকে যারা ঋণ শোধ করতে না পারার ‘যৌক্তিক’ কারণ ব্যাখ্যা করতে পারবেন, তাদের মোট ঋণের ২ শতাংশ এককালীন নগদ পরিশোধ করলে বাকি টাকা ৭ শতাংশ সুদে ১২ বছরে পরিশোধের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এরপরে দেখা গেছে, যারা ঋণখেলাপি ছিলেন না তারাও ইচ্ছাকৃতভাবে খেলাপি হয়েছে। বর্তমানে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ লক্ষ ১৬ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা। কিন্তু আইএমএফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রকৃত খেলাপি ঋণের পরিমাণ হিসাবের চেয়ে দ্বিগুণ, ২ লাখ ৪০ হাজার ১৬৭ কোটি টাকা যা মোট ঋণের প্রায় ২৬ শতাংশ। এর সঙ্গে বাড়ছে অর্থ পাচার।

অর্থবছরের প্রথমার্ধে বৈদেশিক রপ্তানি ৫,২১% কমেছে, আমদানিও কমেছে ৫,২৬%। পুঁজিবাজারে আবারও বড় ধরনের ধস নেমেছে। সূচক সাড়ে চার বছরে সর্বনিম্নে এসে দাঁড়িয়েছে। গত এক দশকে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি দ্রুত বাড়লেও কর্মসংস্থানে দেখা দিয়েছে নেতিবাচকতা। ২০১০ সালের পর কর্মসংস্থানের প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৩২ শতাংশ থেকে কমে নেমেছে ১ দশমিক ৩৩ শতাংশে।

অর্থনীতির সার্বিক অবস্থা যখন এমন, তখন ৬ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেডের (বিডিবিএল) ‘ব্রাঞ্চ ম্যানেজারদের বার্ষিক কার্যক্রম প্রণয়ন সম্মেলন ২০২০’ এ প্রথমবারের মতো অর্থমন্ত্রী বৈশ্বিক মন্দাভাবের উল্লেখ করে মন্তব্য করে বসেন, 'দেশের অর্থনীতি এখন খারাপ অবস্থায় রয়েছে'। এই স্বীকৃত খারাপ সময়ে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক খুব দ্রুত একের পর এক সিদ্ধান্ত পাল্টাচ্ছে। টাকার মান অবনমন করার কথা বলেও পরে বাদ দেওয়া হয়েছে। সুদের হারে সীমা বসানো হচ্ছে (ঋণ ও আমানতের সুদহার যথাক্রমে ৯ ও ৬ শতাংশে নির্ধারিত)।ঘোষণা ছাড়া বৈদেশিক মুদ্রা আনা-নেওয়ার পরিমাণ ৫ হাজার ডলার থেকে দ্বিগুণ করে দশ হাজার ডলার করা হয়েছে। ব্যাংক আমানত সুরক্ষা আইন করা হচ্ছে। ঋণ করে ঘি খাচ্ছে উন্নয়ন। সরকারি ঋণ আশঙ্কাজনক স্তরে উঠে যাচ্ছে। স্বশাসিত সংস্থাগুলোর উদ্বৃত্ত অর্থ রাষ্ট্রের কোষাগারে নিতে আইন করা হচ্ছে। অর্থনীতিবিদদের অনেকেই আশঙ্কা করছেন, টাকার খোঁজে দিশেহারা সরকার দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে সম্ভবত কিছু ভুল করে বসেছে।

দ্রুতই বদলে যাচ্ছে আর্থিক খাতের চালচিত্র ১১ জানুয়ারি ২০২০, দৈনিক প্রথম আলো অনলাইনে প্রকাশিত!
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ১২:২৩
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×