somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সামান্য কিছু সতর্কতা অবলম্বন করলে টুকিটাকি ব্যাথা-বালাই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।

০২ রা জুলাই, ২০১৩ রাত ১২:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের দেশের বিভিন্ন বয়সের মানুষ প্রতিনিয়ত নানা ধরনের শারীরিক ব্যাধিতে ভোগেন। শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রতঙ্গের ব্যাথা এর মধ্যে অন্যতম একটি ব্যাধি। অনেকেই এ ধরনের ব্যাথাকে সারাজীবনের জন্য মেনে নেয়ার চিন্তা ভাবনা করেন। তবে একটু খেয়াল করলে এবং সামান্য কিছু সতর্কতা অবলম্বন করলে এধরনের টুকিটাকি ব্যাথা-বালাই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
▬▬▬▬▬▬ஜ۩۞۩ஜ▬▬▬▬▬▬

কোমরে ব্যাথা
▬▬▬▬▬▬
সাধারণত বিভিন্ন বয়সী মানুষের মধ্যে কোমরে ব্যাথার প্রবণতা একটু বেশি দেখা যায়। যেকোনো বয়সে কোমরে ব্যাথা হতে পারে। তবে ২৫ থেকে ৬৫ বছরের লোকদের মধ্যে এই কোমরে ব্যাথা একটু বেশি চোখে পড়ে। নানাবিধ কারণে কোমরে ব্যাথা হতে পারে। কোমরে ব্যাথার প্রধান কারণ হচ্ছে পিএলআইডি। এ রোগে মেরুদন্ডের দু’হাড়ের মাঝে থাকা নরম হাড় বেরিয়ে এসে স্নায়ুতে চাপ দেয়। এর ফলে ব্যাথা অনুভূত হয়। এ রোগে প্রথম দিকে ব্যাথা কম অনুভূত হয়। পরবর্তীতে ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায়। এ রোগ হলে চিৎ হয়ে শুয়ে থাকলে ব্যাথা কম লাগে। তবে নাড়াচাড়া করলেই বেশি ব্যাথা লাগে। এছাড়াও যারা কলকারখানায় ভারি কাজ করেন তাদেরও কোমরে ব্যাথা হতে পারে। বেশিরভাগ এক্ষেত্রে অনেকক্ষন একনাগাড়ে দাড়িয়ে কাজ করলে বা অনেক্ষণ একইভাবে ঝুঁকে থেকে কাজ করলে কোমরে ব্যাথার সৃষ্টি হয়। এভাবেই ব্যাথা একসময় নিয়মিত হয়ে যায়। আরো অনেক কারণে কোমরের ব্যাথা হতে পারে। যেমন অতিরিক্ত ধুমপান, দুশ্চিন্তা, মেরুদন্ডে আঘাত, মেরুদন্ডের হাড়ের ক্ষয়, মেরুদন্ডের বাত, অস্টিওপোরোসিস, ইনফেকশন ইত্যাদি কারণে কোমরে ব্যাথা হতে পারে। কোমরের ব্যাথা নির্ণয়ের জন্য সাধারণত এক্স-রে এবং রক্তের রুটিন পরীক্ষাই যথেষ্ট। শতকরা ৯০ ভাগ ক্ষেত্রেই সাধারণ চিকিৎসায় কোমরের ব্যাথা ভাল হয়ে যায়। যদিও কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যায় বহুল চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। তবে কোমরের ব্যাথা এমন কোনো মারাত্মক ব্যাধি নয় যাতে ভড়কে যেতে হবে।


রোগীদের জন্য উপদেশ

০ ফোমের বিছানা বা সোফায় ঘুমাবেন না। শক্ত এবং সমতল বিছানায় ঘুমাবেন।
০ কাজ করার সময় বেল্ট ব্যবহার করবেন।
০ চেয়ারে বসার সময় ঘাড় ও পিঠ সোজা করে রাখবেন। হাতলওয়ালা চেয়ারে বসবেন।
০ দীর্ঘক্ষণ ঝুকে কোনো কাজ করবেন না।
০ উপুড় হয়ে শোবেন না।
০ মহিলাদের ক্ষেত্রে হাই হিল পরিত্যাগ করাই ভাল।
০ শরীরের ওজন লম্বা অনুপাতে রাখুন।
০ ব্যাথা অবস্থায় মালিশ করা এবং ব্যায়াম করা নিষেধ।


কাঁধে ব্যাথা
▬▬▬▬▬▬
আঘাত লাগা, পেশিতে টান লাগা, হাড় ভেঙে যাওয়া, লিগামেন্টে ইনজুরীসহ বেশ কিছু কারণে কাঁধে ব্যাথা হতে পারে। কাঁধে ব্যাথা হলে কাঁধ শক্ত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বেশির ভাগ ড়্গেত্রে ডায়াবেটিস রোগীরা এ ধরনের সমস্যায় ভোগেন। হৃদরোগ বা স্ট্রোকের কারণে কাঁধে ব্যাথা হতে পারে। এ রোগের জন্য বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা রয়েছে। প্রধানত এ রোগের চিকিৎসায় ব্যাথা উপশমকারী ও মাংসপেশী শিথিলকারী ওষুধ ব্যবহারের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রকার হিট দেয়া হয়ে থাকে। যেমন ডিপ হিট ও সুপার ফেসিয়াল হিট। বিশেষ বিশেষ ড়্গেত্রে ব্যবহার করা হয়ে থাকে ইলেক্ট্রথেরাপী। কাঁধে ব্যাথা কমাতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরমর্শ অনুযায়ী ইনজেকশন প্রয়োগ করা যেতে পারে। তবে যারা সাধারণ কাঁধে ব্যাথায় ভুগছেন তাদের জন্য বিশেষ কিছু ব্যায়ামই সবচেয়ে বেশি উপযোগী।


রোগীদের জন্য উপদেশ

০ মেরুদন্ড সোজা রেখে কাজ করবেন।
০ ভারী কাজ এড়িয়ে চলতে চেষ্টা করম্নন।
০ শোয়ার সময় ঘাড়ে নরম বালিশ ব্যবহার করবেন।
০ ডায়াবেটিস থাকলে অবশ্যই নিয়ন্ত্রণে রাখুন।


ঘাড়ে ব্যাথা
▬▬▬▬▬▬
আমাদের দেশে ঘাড়ে ব্যাথা একটি বহুল প্রচলিত ব্যাধি। ৫০ বছরের পরে যে কোনো ব্যাক্তি এ রোগে ভুগতে পারেন। আঘাত লাগা, ঘাড়ের ইনফেকশন, ওস্টিওপোরোসিস, হাড়ের টিউমার, ভিটামিন ডি ও ক্যালসিয়ামের অভাব ইত্যাদি কারণে ঘাড়ে ব্যাথা হতে পারে। তবে আরেকটি কারণ আছে তা হলো সার্ভাইকাল স্পন্ডাইলোসিস। বয়স বাড়ার সাথে সাথে সার্ভাইকাল স্পন্ডাইলোসিসে আক্রানেত্মর ঝুকি বেড়ে যায়। ফলে ঘাড়ের মাংশ পেশীতে অবশ ভাব হয় এবং ব্যাথা ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ে। ঘাড়ে ব্যাথা হলে ঘাবড়ানোর কোনো কারণ নেই। অনেক সময় সামান্য কারণেও ঘাড়ে ব্যাথা হতে পারে। যেমন উঁচু বালিশে ঘুমানো, এক নাগারে অনেক্ষণ একদিকে তাকিয়ে থাকা, ফোমের বিছানায় ঘুমানো ইত্যাদি। তাই প্রথমেই বুঝতে হবে ব্যাথাটি এসব কারণে অনুভূত হচ্ছে নাকি এটি আপনার ব্যাধি।


রোগীদের জন্য উপদেশ

০ ঘাড়ের নাড়াচাড়া কম করতে হবে।
০ ছোট নরম বালিশ ব্যবহার করুন।
০ ঘুম থেকে উঠার সময় সাবধানে উঠুন।
০ ঝুঁকে থেকে কোনো কাজ করবেন না।


দাঁতে ব্যাথা
▬▬▬▬▬▬
মানদেহে যতপ্রকার ব্যাথা অনুভূত হয় তার মধ্যে দাঁতের ব্যাথাই সবচেয়ে বেশি অসহনীয়। রোগীকে ভোগাতে দাঁতের ব্যাথা কোনো জুড়ি নেই। যেকোনো বয়সে দাঁতে ব্যাথা হতে পারে। দাঁতে ব্যাথা হলে চোখ, কান, গলা, ঘাড়, মুখমন্ডল এমন কি মাথাও ব্যাথা করে। সাধারণত যারা ঘুমাবার আগে দাঁত ব্রাশ করেন না তাদের দাঁতের ফাকে আটকে থাকা খাবার পঁচে গিয়ে এসিড তৈরি করে। এই এসিড দাঁত ক্ষয় করে ফেলে এবং সেখান থেকেই শুরু হয় ব্যাথা। এছাড়াও দনত্মমজ্জায় দীর্ঘদিন যাবত ইনফেকশন থাকলে দাঁতে ব্যাথা হয়। দাঁতের গোড়ায় বা মাড়িতে পুঁজ জমলেও দাঁতে ব্যাথা হতে পারে। দাঁতে ব্যাথা যে কারণেই হোক না কেন অতিদ্রুত ডেন্টিস্ট-এর স্মরণাপন্ন হতে হবে। এবং যথাযথ চিকিৎসা নিতে হবে।


দাঁতের ব্যাথা প্রতিরোধে পরামর্শ

১. প্রতিদিন ঘুমাতে যাবার আগে এবং ঘুম থেকে উঠে অবশ্যই ভাল করে দাঁত ব্রাশ করতে হবে। কোনো প্রকার মাজন ব্যবহার করবেন না। অনেকে মনে করেন বেশি সময় ধরে দাঁত ব্রাশ করলে বেশি উপকার পাওয়া যায়। কিন্তু একথা ভুল। সবোর্চ্চ দুই মিনিটের বেশি দাঁত ব্রাশ করা ঠিক না।
২. কোনো খাবার খাওয়ার পরে ভাল করে কুলি করবেন।
৩. পান, জর্দা বা তামাক জাতীয় দ্রব্য পরিহার করম্নন।
৪. ছোটদেরকে চকলেট বা আইসক্রিম জাতীয় খাবার খাওয়া থেকে বিরত রাখুন।


হাঁটু ব্যাথা
▬▬▬▬▬▬
সাধারণত বয়স্করা এ রোগে ভুগে থাকেন। গিটে বাত হাটু ব্যাথার অন্যতম প্রধান কারণ। এছাড়াও অস্থিসংযোগের ক্ষয়ের কারণে ব্যাথা অনুভূত হয়। আরো উল্লেখযোগ্য কয়েকটি কারণ হচ্ছে আঘাত, জীবাণুর সংক্রমণ, শরীরের ওজন বৃদ্ধি ইত্যাদি।


রোগীদের জন্য উপদেশ

০ লম্বা অনুপাতে শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ করুন।
০ সিঁড়ি দিয়ে ওঠা নামার সময় মরুদন্ড সোজা রেখে হাঁটু ভাজ না করে ধীরে ধীরে ওঠা নামা করুন।
০ একই স্থানে বেশি সময় ধরে দাড়িয়ে বা বসে থাকবেন না।
০ ভারি জিনিস বহন করবেন না।
০ ডায়াবেটিস রোগীরা হাঁটার পরিবর্তে সাঁতার কাটুন বা সাইকেল চালান।


গোড়ালি ব্যাথা
▬▬▬▬▬▬
সাধারণত গিটে বাত, অস্টিওআর্থ্রাইটিস, স্পন্ডাইলো-আর্থ্রোপ্যাথিতে গোড়ালিতে ব্যাথা হতে পারে। হাঁটলে ব্যাথা বাড়ে। তবে শক্ত জায়গায় হাঁটলে বা শক্ত সোলের জুতা ব্যবহার করলেও গোড়ালিতে ব্যাথা বাড়তে পারে। আরো বিভিন্ন কারণে গোড়ালিতে ব্যাথা হতে পারে। তবে সবচেয়ে দায়ি ক্যালকেনিয়াম স্পার বা কাঁটা। এছাড়া আঘাত পেয়ে হাড় ভেঙ্গে গেলেও ব্যাথা হতে পারে। ব্যাথা নিরাময়ে বিভিন্ন ধরনের ওষুধ কার্যকরী। তবে প্রয়োজনবোধে অপারেশনও করতে হতে পারে।


রোগীদের জন্য উপদেশ

০ নরম সোলের জুতা ব্যবহার করুন।
০ হাইহিল জুতা পরিহার করুন।
০ শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ করুন।
০ ব্যাথা থাকা অবস্থায় মালিশ করা বা ব্যায়াম করা নিষেধ।

সংগ্রহীত
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×