somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সিলেট ট্যুর (তৃতীয় পর্ব ) [ মিশন রাতারগুল ]

০৯ ই নভেম্বর, ২০১৭ দুপুর ২:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



চলার পথ ছিল বন্ধুর। বেশির ভাগ রাস্তা ই এবার থেবড়ো। সারারাতের জার্নি আর দুপুরের পেট পূর্তি খাবার এ দুয়ের অসাধারণ সংমিশ্রনে চোখের পাতা ভারী হয়ে আসতে লাগলো। সি এন জি'র চরম ঝাকুনি সত্ত্বেও ঝিমুচ্ছিলাম। পথে একজায়গায় গাড়ি নষ্ট হয়ে যায় , ফলে প্রায় ২০ /২৫ মিনিট রাস্তা ধরেই হাটা হাটি করে নিলাম, চা খেলাম, কিছু ছবিও তুলেছিলাম। আঁকা বাঁকা পিচঢালা রাস্তাকে ঘিরে রেখেছে দুপাশের লম্বা গাছের সারি। পড়ন্ত দুপুরের নিস্তব্ধতা অন্যরকম প্রশান্তি ঢেলে দিচ্ছিলো।


এক বিশাল প্রান্তরের মধ্য দিয়ে আঁকা বাঁকা মেঠো পথ ধরে বেশ কিছুক্ষন চলে একটা ছোটোখাটো ছাউনি সহ সামান্য লোকসমাগমপূর্ণ একটা স্থানে এসে থামলো আমাদের সি এন জি। দুপুরের খাঁ খাঁ রোদে গাছপালাহীন কর্দমাক্ত এক পরিবেশ দেখে মনের মাঝে অপ্রত্যাশিত ভাবে একটা ধাক্কাই খেয়ে ফেললাম। কাঁদার মধ্যে সারিবদ্ধ কিছু নৌকা দাঁড় করানো দেখলাম। মনের মধ্যে রাতারগুলের শান্ত শীতল ও সবুজ এক ছবি ধারণ করে এসে এমন কর্দমাক্ত পরিবেশ দেখতে পাওয়া পুরোপুরি ই অনাকাঙ্খিত ছিল, সাথে যোগ হলো মাঝি সিন্ডিকেট সদস্যদের আকাশছোঁয়া ভাড়া। একবার ভাবলাম চলেই যাই, আবার ভাবলাম - এসেছি যখন দেখেই যাই। অনেক দর কষাকষি করে একটা ছোট নৌকা নিয়ে কাঁদার ভেতর দিয়েই রাতারগুল যাত্রা শুরু করলাম।


প্রথম কিছুক্ষন কাঁদা পানির উপরেই নৌকাটাকে ঠেলে নিয়ে গেলো মাঝি। এক ঝাঁক ব্যাঙের পোনা কাঁদা পানিতে লাফালাফি করছিলো। কিন্তু যতই ভেতরে যাচ্ছিলাম ভালো লাগা কাজ করছিলো। যদিও পানি ছিল ঘোলা তথাপি হিজল আর তমাল গাছের ফাঁক গলিয়ে যখন আমাদের নৌকাটা এগোচ্ছিল অন্যরকম এক ভালোলাগা কাজ করছিলো। বর্ষা শেষ হয়ে যাওয়াতে পানি ঘোলা, তা না হলে বর্ষায় এখানকার পানি থাকে আয়নার মতো স্বচ্ছ। মাঝির কাছ থেকে আরো যা জানতে পারলাম - বর্ষা মৌসুম ছাড়া এখানে কৃত্রিম ভাবেই বাঁধ দিয়ে পানি সংরক্ষণ করা হয়। গুইসাপ, ব্যাঙ, বিভিন্ন প্রজাতির সাপ, পাখি এবং বানরের অবাধ বিচরণ ক্ষেত্র এই বন টি।


কিছুদূর এগিয়ে দেখতে পেলাম প্রায় ছয় তলার উচ্চতা সম্পন্ন একটা ওয়াচ টাওয়ার। নৌকা ভিড়িয়ে উঠে পড়লাম একদম চূড়ায়। পুরো বন এখানথেকে দেখা যায়। এক পাশে দেখতে পেলাম চিল টাইপের পাখিদের জটলা, আবার আরেক পাশে দেখলাম কয়েকটা বানর শোরগোল করছে। ওয়াচ টাওয়ারের উপর থেকে রাতারগুলের পুরো ভিউটা মন ভালো করে দেবার জন্য যথেষ্ট।


আরেকটি বিষয় হচ্ছে - বিছানাকান্দির টুরিস্ট গ্রুপের সাথে এখানেও আবারো দেখা হয়ে গিয়েছিলো। ওয়াচ টাওয়ারের ওখানেই ওদের সাথে পুনরায় সাক্ষাৎ। দুটি পাশাপাশি নৌকায় ঘুরে বাকি পথটুকু ঘুরে রাতারগুল পাঠ চুকিয়ে পুনরায় শাহবাজ মিয়ার সি এন জি তে চড়ে বসলাম। এবার হোটেলে ফেরার পালা।


চলতে চলতে চোখে পড়ছিলো উঁচু নিচু টিলা, চা বাগান, গ্রাম্য হাট আর ডুবন্ত সূর্য। একটা হাটে নেমে চা আর বিস্কিট খেলাম। পথে একটা চা বাগানে নেমে ছবি তোলার ব্যর্থ চেষ্টা চালালাম যদিও তখন মাগরিবের আজান পড়ছিলো।

হোটেলে এসে ফ্রেশ হয়ে শহরের মধ্যেই কিছুক্ষন ঘুরাঘুরি করেই রাতের খাবার সেরে ফেললাম। তারপর গেলাম হযরত শাহজালাল (র:) এর দরগায়। ঘুরলাম, জিয়ারত করলাম। বাইরে থেকে কিছু কদমা, তিলের নাড়ু কিনে নিলাম। চোখে রাজ্যের ক্লান্তি নিয়ে ঘুমোতে গেলাম। পরদিন ভোরেই যে রওয়ানা দিতে হবে জাফলং এর উদ্দেশ্যে। ........................চলবে।


[বি: দ্র: ট্যুরের এ পর্বের খরচাপাতি :
** রাতারগুলে নৌকা ভাড়া ১০০০/১৫০০ টাকা চাইলেও অনেক দরদাম করে ৬৫০ টাকায় ঠিক করা হয়েছিল।]
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই নভেম্বর, ২০১৭ দুপুর ২:৪৪
৫টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×