somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাজারে আমি যাই না

২৪ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এই এলাকায় এসেছি বছর তিনেক। সপ্তাহে চার পাঁচ দিন হাঁটতে বের হই। বেরোতে বেরোতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। স্থানীয়দের সাথে তেমন যোগাযোগ হয় নি। এই হাতে গোনা কিছু দোকানদারদের সাথে চেনা জানা হয়েছে। কেনাকাটা, খাওয়া দাওয়ার খাতিরে আর কি। কাঁচা বাজার আমার জীবনের এক অজানা অধ্যায়। তোমরা হয়তো কেউ খেয়াল করো নি আমি কখনো বাজার করা নিয়ে স্ট্যাটাস দেই না। বাজারে আমার সেভাবে কখনো যাওয়া লাগেনি। বাড়িতে আব্বা নিজেই বাজারে যান। বাড়িতে ফ্রিজ আসার আগেও যেমন এখনও তেমন। তিনি ফ্রিজে মাছের লাশ রেখে খেতে রাজি নন। ব্যাগ হাতে বাজারে ঘুরবেন। লাফানো ঝাঁপানো নদীর মাছ কিনবেন। মেস লাইফে মনে হয় টাকা মারার সুবর্ণ সুযোগ ছিলো। কারণ আমি দেখেছি সবাই মহা উৎসাহে বাজারে যায়। আমি যে যেতে চাই না তা নিয়ে কোন প্রতিবাদ সমাবেশ, মিছিল কিছুই হতে দেখিনি। হাতে গোনা কয়েক দিন গেছি বাজারে অন্যের সাথে। সেও ঐ ব্যাগ ধরা পর্যন্ত। এরপর তো চাকরি পেলাম মেঘনা পাড়ের এই বাজারে। এখানকার একটা সুবিধা হলো থাকা, খাওয়ার ব্যবস্থা সবই কোম্পানী করেছে। খাওয়ার জন্য মাস শেষে টাকা দিলেই চলে। কষ্টের মধ্যে এটুকু করতে হয় টেবিলে বসে প্লেট আর গ্লাসখানাকে পানি দিয়ে একটু ধুয়ে নিতে হয়। এখানে রুম সার্ভিসও ফ্রি। সপ্তাহে একবার রুম ঝাড়ু দিয়ে মুছে যায় এক মহিলা। টয়লেট সাফ করে যায় একজন। প্রতি পনেরো দিনে বালিশের ওয়ার, বিছানার চাদর বদলে দিয়ে যায়। জীবনটা মোটামুটি নিরিবিলি চলে যাচ্ছে আর কি।

ওহ একটা সময়ে আমাকে কিছুদিন বাজারে যেতে হতো। সপ্তাহে একদিন। প্রতি বুধবার আমাদের এলাকায় সাপ্তাহিক হাট বসতো। আব্বা সরকারী চাকরি করেন। তাকে উত্তরবঙ্গে বদলি করে দেয়া হলো। রংপুরেরও ওপাশে। সৈয়দপুরে। তখন ডেমার, ডুমলা, নীলফামারী কত্ত নতুন নতুন জায়গার নাম জানা হয়ে গেলো। বছরের মাঝামাঝি সময়। ক্লাস নাইনে পড়ি। স্কুলের রেজাল্ট ভালো। ফার্স্ট হই। আম্মা আমাদের পড়াশোনার জন্য এলাকায় রয়ে গেলেন। ভাড়া বাড়িতে আম্মা এবং আমরা দুই ভাই থাকি। তখন তো আর মোবাইলের যুগ না। আমাদের দুটি ভাইকে নিয়ে ভাড়া বাড়িতে থাকতে আমার মহা ভীতু আম্মা যে কিনা সামান্য কল্পিত কারণেও টেনশানে পড়ে যায়, কি পরিমান সাহসের পরিচয় দিয়েছেন তা তখন না বুঝলে এখন বুঝি। সন্তানের জন্য মায়েরা, বাবারা যে কি পরিমান ছাড় দেন তা আমাদের বুঝতে অনেক সময় লেগে যায়। সেই সময়টাতে আমাকে সপ্তাহে একদিন বাজারে যেতে হতো। আম্মার বানানো কাপড়ের ব্যাগ নিয়ে বাজারে যেতাম। একশো দুইশো টাকার বাজারে ব্যাগ ভরে যেত। ২০০০ সাল। বাড়ি থেকে বাজারের দূরত্ব মাইল খানের হবে। ভারী ব্যাগ নিয়ে বাড়ীর পথ ধরতাম। হাতে দাগ বসে যেতো। হাঁটের অনেক দোকানদারের সাথে সখ্যতা গড়ে ওঠে। এক দোকানদারের চেহারা মনে পড়ে না। কিন্তু তার কথা মনে পড়ে। কত তার বয়স। ত্রিশ পঁয়ত্রিশের মত ছিলো। আমার সাথে খুব ভালো ব্যবহার করতো। অন্যদের থেকে কম দামে জিনিস পেতাম। বলতো আমাকে সে খুব পছন্দ করে। আমাকে তাদের বাড়িতে বেড়াতে নিয়ে যাবে। নতুন জায়গা বেড়াতে যাওয়ার আগ্রহ আমার মধ্যে জেগে ওঠে। আম্মাকে বলি। আম্মা রাগ করেন। বলেন ছেলে ধরা হবে। খবরদার যেন কোনদিন তার সাথে না যাই। ক্লাস নাইনে পড়া ছেলেকে ছেলে ধরার ভয় দেখানো কতটা যুক্তিসংগত ছিলো বলাই বাহুল্য। কিন্তু আমি কখনো আম্মার কথা ফেলতে পারি না। আবার কখনো ফেলিনি এমনও নয়। আম্মা কাঁদতে শুরু করলেন। আমার আর সেই লোকটার বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া হলো না।

০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×