somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলা সাহিত্য ও মুসলমান

২৭ শে নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বঙ্কিমচন্দ্রের সাহিত্য সাধনা যখন সাফল্যের শীর্ষে, তখন তারই সমসাময়িক একজন মুসলমান বাংলাসাহিত্য গগনে উদিত হন। তিনি হলেন মীর মশাররফ হোসেন। তাঁর সাতিত্য ছিল আলবৎ আধুনিক বাংলা সাহিত্য এবং রাজনীতি ও সাম্প্রদায়িকতার বহু ঊর্ধ্বে। বঙ্কিমচন্দ্র যখন সাহিত্যের অংগনে সাম্প্রদায়িকতার বিষ ছড়াচ্ছিলেন, তখন মশাররফ হোসনে সেদিকে ভ্রুক্ষেপ মাত্র না করে শিল্পীসুলভ মনোভাব নিয়ে মুসলমানদের প্রতি উপদেশমূলক সাহিত্য রচনায় আত্মনিয়োগ করেন। চল্লিশ বছরেরও অধিক সময় তিনি সাহিত্য সাধনা করেন এবং উপন্যাস, জীবনী, ঐতিহাসিক কাহিনী, নাটক, রম্যরচনা, কবিতা ও গান তাঁর সাহিত্য সাধনার অন্তর্ভুক্ত ছিল। তাঁর শ্রেষ্ঠতম রচনা ‘বিষাদসিন্ধু’। বিষাদসিন্ধুর চরিত্রগুলি ইতিহাস থেকে গৃহীত হলেও এটাকে কোন ঐতিহাসিক গ্রন্থ বলা যায় না। তথাপি মুসলমান সমাজে এটা ছিল সর্বাধিক পঠিত গ্রন্থ।

বর্তশান বাংলা সাহিত্যের গগনে আর একটি জ্যোতিষ্কের আবির্ভাব ঘটে এবং তা হলো বিদ্রোহী কবি নজরুল ইসলাম। বাংলা সাহিত্যের অংগনে আরও অনেক মুসলিম কবি-সাহিত্যিকের আগমন সমসাময়িককালে হয়েছে। যথা- কায়কোবাদ, ইসমাইল হোসেন সিরাজী, মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী, মুন্সী মেহেরুল্লাহ প্রমুখ। নিজেদের স্বতন্ত্র ধারায় সাহিত্য সৃষ্টি করে তাঁরা মুসলমান জাতিকে আত্মসচেতনাঁ ও স্বাতন্ত্রবোধে উদ্ধুদ্ধ করেন। নজরুলের আগেও বাংলা সাহিত্যের আসরে বহু মুসলিম কবি সাহিত্যিকের আবির্ভাব ঘটে। কিন্তু তাঁদের ও নজরুলের সাহিত্য ধারায় ছিল সুস্পষ্ট পার্থক্য। অন্যান্যগণ সাহিত্যের আসরে প্রবেশ করেছেন মনে হয় ভীরু পদক্ষেপে, মনের দুর্বলতা সহকারে। বাংলা সাহিত্যকে হিন্দুর, সংস্কৃত-তনয়া মনে করে গা বাঁচিয়ে যেন তাতে ছোঁয়া না লাগে মুসলমানের আরবী-উর্দু-ফার্সীর শব্দাবলীর, এমনকি উপমায়, অলংকারে ও রচনারীতিতে মুসলমানী নিদর্শন-আলামতকে সতর্কতার সাথে বাঁচিয়ে চলেছেন। কিন্তু বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে নজরুলের হঠাৎ আবির্ভাব যেমন সৃষ্টি করলো বিস্ময়, তেমনি সূচনা করলো এক বৈপ্লবিক যুগের। যে মুসলমানের বাংলাভাষা ও সাহিত্যকে বোধনকৃত করে বেদ-পুরাণ ও হিন্দু-জাতিত্বমুখী করা হয়েছিল, নজরুল তার গতিমুখ ফিরিয়ে করলেম মুসলমানের কেবলামুখী। মানুষের তাজা খুনে লালে-লাল করা যুদ্ধের ময়দান থেকে ফিরে এসে তীব্র গতিতে ও বীরবিক্রমে, তেমনি যুদ্ধের ময়দান থেকে ফিরে এসে তীব্র গতিতে ও বীরবিক্রমে প্রবেশ করলেন –সাহিত্যের ময়দানে। তাঁর মনে কোনদিন স্থান পায়নি দ্বিধাসংকোচ, ভীরুতা ও কাপুরুষতা। তাই তিনি তাঁর বিজয় নিশান উড়াতে পেরেছিলেন সাহিত্যের ময়দানে। তিনি তৎকালীন মুসলমান কবি সাহিত্যিকদের দ্বিধাসংকোচ ঘুঁচিয়ে দিয়ে সাহিত্য ক্ষেত্রে মুসলমানসুলভ আযাদী এনে দিয়েছিলেন। তাঁর কবিতার ছত্রে ছত্রে আরবী-ফার্সীর ঝংকার পুনরায় শুনা যেতে থাকে। তাঁর আরবী-ফার্সী শব্দাবলীর ব্যবহার পদ্ধতি এত সুনিপুণ, সুশৃংখল ও প্রাণবন্ত যে, ভাষা পেয়েছে তার স্বচ্ছন্দ গতি, ছন্দ হয়েছে সাবলিল এবং সুরের ঝংকার হয়েছে সুমধুর ও হৃদয়গ্রাহী। তিনি আধুনিক বাংলা ভাষায় আরবী-ফার্সী শব্দ আমদানী করে ভাষাকে শুধু সৌন্দর্যমন্ডিতই করেননি, বাংলা ভাষায় মুসলমানদের স্বাতন্ত্র ও নিজস্ব অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেন। বাংলা ভাষায় মুসলিম সাহিত্যসেবীদের জন্যে এক নতুন দিগন্তের উন্মোচন করে দেন তিনি। কবি নজরুল ছিলেন কাব্য সাহিত্য জগতের এক অতি বিস্ময়। তাঁর এ প্রতিভা ছিল একান্ত খোদাপ্রদত্ত। তাঁর আবির্ভাব হয় ধূমকেতুর মতো এমন এক সময়ে যখন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিশ্ব সাহিত্যের দরবারে তাঁর সম্মানজনক আসন করে নিয়েছেন। বিপ্লবী কবি নজরুল-প্রতিভার স্বীকৃতি তাঁকে দিতে হয়েছে এ আশিষের ভাষায়-

আয় চলে আয় রে ধূমকেতু

আঁধারে বাঁধ অগ্নি-সেতু

দুর্দিনের ঐ দুর্গ শিরে-

উড়িয়ে দে তোর বিজয় কেতন।

অলক্ষণের তিলক রেখা

রাতের তালে হোকনা লেখা

জাগিয়ে দেরে চমক মেরে

আছে যারা অর্ধচেতন

নজরুলের কাব্য প্রতিভা যেমন তাঁকে সুউচ্চ আসনে সমাসীন করেছে সাহিত্য জগতের, তেমনি তাঁর বিপ্লবী কবিতা সুপ্ত মুসলিম মানসকে করেছে জাগ্রত, তাদের নতুন চলার পথে দিয়েছে অদম্য প্রেরণা ও প্রাণশক্তি। এতোদিন মুসলমানরা যে সাহিত্যক্ষেত্রে ছিল আংক্তেয় তাদের সে গ্লানি গেল কেটে। তাদের জড়তা গেল ভেঙে। জীবনের সকল কর্মক্ষেত্রে তারা ঝাঁপিয়ে পড়লো নতুন উৎসাহ উদ্যমে। নজরুল সুপ্ত মুসলিমকে এই বলে ডাক দিলেন-

দিকে দিকে পুনঃ জ্বলিয়া উঠিছে দ্বীন ইসলামী লাল মশাল,

ওরে বেখবর তুইও ওঠ জেগে, তুইও তোর প্রাণপ্রদীপ জ্বাল।

তাঁর এ আহবান ব্যর্থ যায়নি। শুধু সাহিত্যক্ষেত্রেই নয়, রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও মুসলমানের নতুন কাফেলা শুরু করলো যাত্রা অবিরাম গতিতে।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সচীবদের সম্পর্কে এখন কিছুটা ধারণা পাচ্ছেন?

লিখেছেন সোনাগাজী, ২০ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৭



সামুর ব্লগারদের মাঝে ১ জন সচীব আছেন,(বর্তমানে কর্তব্যরত ) তিনি বর্তমানে লিখছেন; আধামৃত সামুতে তিনি বেশ পাঠক পচ্ছেন; উৎসাহের ব্যাপার! এরচেয়ে আরো উৎসাহের ব্যাপার যে, তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোথাও ছিলো না কেউ ....

লিখেছেন আহমেদ জী এস, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:১৯




কখনো কোথাও ছিলো না কেউ
না ছিলো উত্তরে, না দক্ষিনে
শুধু তুমি নক্ষত্র হয়ে ছিলে উর্দ্ধাকাশে।

আকাশে আর কোন নক্ষত্র ছিলো না
খাল-বিল-পুকুরে আকাশের ছবি ছিলো না
বাতাসে কারো গন্ধ ছিলোনা
ছিলোনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

নারীবাদ, ইসলাম এবং আইয়ামে জাহেলিয়া: ঐতিহাসিক ও আধুনিক প্রেক্ষাপট

লিখেছেন মি. বিকেল, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৪



আইয়ামে জাহিলিয়াত (আরবি: ‏جَاهِلِيَّة‎) একটি ইসলামিক ধারণা যা ইসলামের নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর আবির্ভাবের পূর্ববর্তী আরবের যুগকে বোঝায়। ঐতিহাসিকদের মতে, এই সময়কাল ৬ষ্ঠ থেকে ৭ম শতাব্দী পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

#প্রিয়তম কী লিখি তোমায়

লিখেছেন নীল মনি, ২১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৭:৫১


আমাদের শহর ছিল।
সে শহর ঘিরে গড়ে উঠেছিল অলৌকিক সংসার।
তুমি রোজ তাঁকে যে গল্প শোনাতে সেখানে ভিড় জমাতো বেলা বোস, বনলতা কিংবা রোদ্দুর নামের সেই মেয়েটি!
সে কেবল অভিমানে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। VF 3 Mini: মাত্র 60 মিনিটে 27 হাজার বুকিং!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২১ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:০৪



আমার ব্যাক্তিগত গাড়ি নেই কিন্তু কর্মসূত্রে বেঞ্জ , ক্যাডিলাক ইত্যাদি ব্যাবহার করার সুযোগ পেয়েছি । তাতেই আমার সুখ । আজ এই গাড়িটির ছবি দেখেই ভাল লাগলো তাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×