somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কবরের দার্শনিক ভিত্তি

২৫ শে অক্টোবর, ২০১০ রাত ৯:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মুফতী আতাউল্লাহ
কবরের পরিচয়ঃ কবর মানে সমাধি বা গোর। শব্দটি এ অর্থেই পরিচিতি লাভ করেছে বেশি। শব্দটি যখনই কর্ণগোচর হয় তখনই বাড়ির অদূরে মসজিদের পার্শ্বে দীঘির পাড়ে সেই ঝোঁপ-ঝাড় বিশিষ্ট সমাধিস্থল মানসপটে ভেসে উঠে। কবর দেখলে বা তার পার্শ্ব দিয়ে অতিক্রম করলে হৃদয়ে ভীতির সঞ্চার হয় কিসের ভয়? কেমন যেন উজ্জ্বল ধবধবে শ্বেত-শুভ্রের ভয়। যে ভয়টি কালো নয়। সাদা কাপড়ে মোড়ানো লম্বা একটি লাশের ভয়। যেন তা এখনি মাটি ভেদ করে উঠবে, খপ করে ধরবে। কিছু একটা জিজ্ঞেস করবে। কিছু দূর এগিয়ে গেলে মনে হয়, যেন সে পেছন থেকে ধাওয়া করছে। চতুর্দিক হতে ঘিরে ফেলছে। ঝিঁ ঝিঁ পোকার একটানা সরব চিৎকারে, আবছা আলোয়, গাঢ় আঁধারে পিনপতন নিরবতায়, একটানা বুকের ধুকপুকানী শব্দে আরো যে কত কল্পনা হৃদয় জগতে ভেসে উঠে তার ইয়ত্তা নেই। সব মিলিয়ে মানুষ কবরকে ভয় করে। আর এ ভয় তার জীবন চলার পথে কোন পরিবর্তন ঘটাতে পারে না। চিন্তা-চেতনায় এর তেমন কোন প্রভাব পড়ে না। জ্বিন-ভূত, সাপ-বিচ্ছু আর পাগলা কুকুরের ভয়ের মত এটি একটি সাময়িক ভয় মাত্র।
কবরের দ্বিতীয় আরেকটি অর্থ রয়েছে। যার চিন্তা ও ভয় মানব জীবনে আমূল সংস্কার সাধন করতে পারে, পাল্টে দিতে পারে তার রূপ। দান করতে পারে একজন পথভ্রষ্ট ও বিপথগামী লোককে সঠিক পথের দিশা। অর্থাৎ “আ-লামে বরযখ” তথা কবর জগত। যা কোন স্থান বা সমাধির নাম নয়। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সময়টিকে যেমন “আ-লামে দুনিয়া” বা দুনিয়ার জগত বলা হয়, অনুরূপ মৃত্যু থেকে হাশর পর্যন্ত কালটিকে বলা হয় “আ-লামে বরযখ” অর্থাৎ কবর জগত, হাশরের পর থেকে আরম্ভ হবে “আ-লামে আখিরাত” তথা পর জগত।
কবর জগতের প্রতি বিশ্বাস ঃ কবর জগতে এক ধরণের আযাব কিংবা নেয়ামত প্রদান করা হয় যা কুরআন-হাদীসের অসংখ্য দলীল দ্বারা প্রমানিত। কবর জগত নিয়ে মানব মনে অনেক সংশয় সন্দেহ উঁকি-ঝুঁকি মারে। আযাব-নাজাত ঘিরে এক স্তুপ সংশয়। তবে তা প্রকৃত ঈমানদারের বিশ্বাসে কোন ধরণের সংশয় সৃষ্টি করতে পারে না। জগতটির কথা আল্লাহ বলেছেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বুঝিয়েছেন, সাহাবাগণ তা বিশ্বাস করেছেন। একজন মুমিনকে তা অকপটে বিশ্বাস করতে হবে। ঈমান কিন্তু মেধা দিয়ে বোধগম্য করার বিষয় নয়। তা আন্তরিক বিশ্বাসের একটি ব্যাপার। বোধগম্য না হলেও তা বিশ্বাস করতে হবে। পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখতে হবে। এটি আল্লাহর নির্দেশ, অদৃশ্য সত্য, মহা সত্য। তাওহীদ রেসালতের ন্যায় একটি আকীদা। সমস্ত নবী-রাসূলের শিক্ষার পথ ধরে এসব ক্ষেত্রে বিশ্বাসের ভেলায় চড়ে সংশয় সাগর পাড়ি দিতে পারলেই ঈমান বৃক্ষের শিকড়ে পানির কাজ দিবে। আর এটি হচ্ছে জীবনের সঠিক উন্নতি ও অগ্রগতির অন্যতম উপায়।
কবর চিন্তার অনুপস্থিতি মানুষকে বেসামাল করে দেয়ঃ বিশ্বের সিংহভাগ লোক ভোগ-বিলাসকেই জীবরে চরম লক্ষ্য বলে মনে করে। জীবন যাত্রার পথে যে তিক্ত পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়, সে তিক্ততাকেই সর্বাপেক্ষা কষ্ট বলে মনে করে। কবরের জীবন, সেখানের শান্তি ও পুরস্কার সম্পর্কে তাদের এতটুকুও আস্থা নেই। এমতাবস্থায় এ সকল লোককে যে কোন দুষ্কর্ম থেকে বিরত রাখার মত আর কোন প্রতিবন্ধকতাই অবশিষ্ট থাকে না। যা কিছু অন্যায়, অসুন্দর বা সামাজিক জীবনের শান্তি-শৃংখলার পক্ষে ক্ষতিকর সেসব কার্যকরী ভাবে উৎখাত করার শক্তি কোন পার্থিব আইনের নেই। এ কথাটি পরিক্ষিত সত্য যে, আইন প্রয়োগের মাধ্যমে কোন দূরাচারের চরিত্র শুদ্ধি ঘটানো সম্ভব হয় না। আপরাধ যাদের অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায় আইনের শাস্তি সাধারণত: তাদের ধাত-সওয়া হয়ে পড়ে। শেষ পর্যন্ত তাদের শাস্তিকে ভয় করার মত অনুভূতিও থাকে না। অপর পক্ষে আইনের শাস্তিকে যারা ভয় করে তাদের সে ভয়ের আওতাও শুধুমাত্র ততটুকুতেই সীমাবদ্ধ থাকে, যতটুকুতে ধরা পড়ার ভয় বিদ্যমান। কিন্তু গোপনে লোকচক্ষুর অন্তরালে যে কোন গর্হিত কাজে লিপ্ত হওয়ার পথে কোন বাধাই থাকে না।
যেভাবে কবর চিন্তা মানুষকে নীতিবান করে গড়ে তুলেঃ প্রকারান্তরে কবর জগতের প্রতি ঈমানই এমন এক কার্যকর নিয়ন্ত্রক বিধি যা মানুষকে প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সর্বত্রই যেকোন গর্হিত আচরণ থেকে অত্যন্ত কার্যকর ভাবে বিরত রাখে। তার অন্তরে এমন এক প্রত্যয়ের অম্লান শিখা অবিরাম সমুজ্জ্বল করে দেয় যে, আমি প্রকাশ্যেই থাকি আর গভীর নির্জনেই থাকি, রাজপথে থাকি কিংবা কোন বদ্ধঘরে লুকিয়েই থাকি, মুখে বা ভাব-ভঙ্গিকে প্রকাশ করি আর না-ই করি আমার সকল আচরণ, আমার সকল অভিব্যক্তি এমনকি অন্তরে লুকায়িত প্রতিটি আকাংখা পর্যন্ত সর্বত্র বিরাজমান এক মহান সত্ত্বার সামনে রয়েছে।
দৃশ্য জগত কবর জগতের এক বাস্তব নমুনাঃ দুনিয়ার তুলনায় আখিরাতের দৃষ্টান্ত একমাত্র মায়ের উদরের জগতকেই সুন্দর মানায়। ষাট-সত্তর বছর দীর্ঘ হায়াতের জগতটির কল্পনা করা কি আদৌ সম্ভব হয়েছে আট-দশ মাসের গর্ভ জগতে। মৃত্যুর এপারে বসে আখিরাতের অনন্তকালের জীবনটি তেমনি। মায়ের পেটে বসে, সুবিশাল পরিধির এ দুনিয়া এবং তার যাবতীয় অত্যাধুনিকতা কি কল্পনার পাতায় ঠাঁই পেয়েছিল? তেমনিই, পরকাল যখন সামনে উপস্থিত হবে, তখনই বুঝে আসবে যে দুনিয়ার হায়াতটি দশ-বার মাসের উদরের জগত বৈ কিছুই ছিল না। আরো উপলব্ধি হবে যে, মায়ের পেটে যেমন আমাদের জীবন অবচেতনতায় কেটে ছিল, দু’দিনের খেলাঘর দুনিয়াটি আরো মহা অচেতনায় গুজরে ছিল।
মৃত্যু কবর জগতের সদর দরজাঃ মৃত্যু যখন মানবের দুয়ারে হাজির হয় বা মানুষ যখন মুত্যুর কোলে ঢলে পড়ার সন্নিকবর্তী হয়, তখনই তার শিয়রে উপস্থিত হয় একদল ফেরেশতা, যাদের হাতে থাকে আগামী জীবনের শান্তি-অশান্তির খোলা বার্তা, কর্ম অনুপাতে তাকে আস্বাদন করতে হয় শান্তি বা দুর্দশার মৃত্যু সূধা। তখনই সে অনেকটা আন্দাজ করতে পারবে কবর জগতের অবিশষ্ট পরিণতির কথা। অবশ্য মৃত্যু কারো কাছে আদৃত হয়, আবার কারো কাছে হয় আনাদৃত। এভাবেই সমাপ্তি ঘটে প্রত্যেকটি লোকের সুব্যাপ্ত আ-লমে দুনিয়া বা ইহজগত। আর সূচনা হয় আরেকটি অধ্যায় আ-লমে বরযখ তথা কবর জগতের। মানুষ মাটির গভীরে প্রোথিত বাসভবন গড়ে তুলুক আর মহাশূন্যে বিচরণ করুক কিংবা সমুদ্রের তলদেশে থাকুক মৃত্যু পর্যন্ত পুরোটাই তার দুনিয়ার জগত তথা ইহকাল। কবর জগতও এর ব্যতিক্রম নয়। মানব আত্মা ইল্লিয়্যিনে থাকুক আর সিজ্জিনে বন্দি থাকুক, মৃত দেহ জমিনের বুকে অক্ষত থাকুক আর জমিনের পেটে দাফনকৃত থাকুক কিংবা কোন জীব-জন্তুর রক্ত-মাংসে পরিণত হোক অথবা মহাসমুদ্রের উর্মিমালায় মিলিয়ে যাক সেখানেই তার কবর জগত।
তিন জগতের সুখ-শান্তি অভিন্ন, কেবল প্রয়োগ প্রক্রিয়া ভিন্নঃ মানব বলতেই তাকে তিনটি জগতে আবর্তিত হতে হবে; ইহকাল, কবরকাল ও পরকাল। এ তিন জগতের সাথেই সুখ-শান্তি ও দুঃখ কষ্টের সম্পৃক্ততা রয়েছে। তবে তা উপভোগ করার ক্ষেত্রে তিন জগতের মাঝে বিশাল তফাত রয়েছে। আখিরাতের যে কোন উপভোগ দুনিয়া ও কবরের তুলনায় সর্বাধিক ও পর্যাপ্ত পরিমাণে হবে। ইহাকালীন প্রশান্তি ও অশান্তি মূলত: প্রত্যক্ষ আকারে ভোগ করে থাকে মানব দেহ। অত:পর দেহের মাধমে পরোক্ষভাবে তা উপলব্ধি করে তার আত্মা, কাউকে কোন শারীরিক যন্ত্রণা দেয়া হলে, তার কষ্ট প্রথমে শরীর অনুভব করে। তেমনিভাবে কোন ভর্ৎসনামুলক কথা কিংবা কোন কুশ্রী দৃশ্য প্রথমে তা কর্ণ ও চক্ষু অবলোকন ও প্রত্যক্ষ করে এবং ব্যথিত হয়, যার ফলে অন্তরও সাথে সাথে আহত, দুঃখিত ও ব্যথিত হয়। দুনিয়ার সব বিষয় এমনই। আগে দেহ দুঃখিত বা আনন্দিত হয়, এরপর আত্মা। কবর জগতের ক্ষেত্রে তা সম্পূর্ণ বিপরীত। সেখানে আযাব-গজব ও শান্তি নেয়ামতের প্রত্যক্ষ সম্পর্ক হবে আত্মার সাথে, আত্মা ও দেহের মাঝে বিরাজ করবে এক সুগভীর সম্পর্ক। যেমন টিভি আর রিমোট এর সম্পর্ক। মূলত শান্তি-অশান্তি প্রদান করা হবে আত্মাকে। আত্মা হয়ত সর্বোচ্চ সম্মানের আসীন ইল্লিয়্যিেিন থাকবে অথবা থাকবে সর্ব ভয়ংকর অন্ধকার কারা প্রকোষ্ঠ সিজ্জিনে। অবশ্য আল্লাহর একান্ত বান্দাদের রুহ মহানন্দে জান্নাতে বিচরণ করবে। বিরাজমান সম্পর্কের উপায়ে মানব দেহ ও তার স্বস্থান থেকে শান্তি-অশান্তি উপভোগ করবে। দেহকে প্রত্যক্ষ শাস্তি প্রদান করাতে ও বিচিত্র কিছু নেই।
কবরের শাস্তি ভোগ করার যৌক্তিক উদাহরণঃ কবর জগতের উপভোগ কেন্দ্রিক বিষয়াদি অনেকটা স্বপ্ন উপভোগের সদৃশ। গভীর নিদ্রায় স্বপ্নের ঘোরে, সে যখন দেখে বৃহদাকারের এক বিষাক্ত সর্প অমনি ফনা তুলে দৌড়াচ্ছে। আর সে অসহায়, গভীর ভয়ে বিকট চিৎকার করে দৌড়ে পালাচ্ছে, এক পর্যায়ে সাপটি তাকে দংশন করেই বসল। তখন কি যে এক অসহ্য যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়, তা ভাবতেও গা শিউরে উঠে। এটি এমন একটি ব্যাপার যা ঘুম ভাঙ্গলে নি:শেষ হয়ে যায়। অবশেষে তার একটি প্রভাব শরীরেও রয়ে যায়। এ যন্ত্রণা আগে আত্মাকেই ভোগ করতে হলো, এর পর শরীরকে। স্বপ্নের এ বিষয়টি কবরের শান্তি-অশান্তির প্রতিচ্ছবি। এ অধ্যায়টি যেন কবর জগতকে নিয়ে ভাবার জন্যই প্রদান করা হয়েছে।
আখেরাতের শান্তি-অশান্তি উভয়টি আত্মা ও দেহ সমান ভাবে উপভোগ করবে। ঈমানদারগণ রুহ ও দেহের সম্মিলিত প্রত্যক্ষ উপভোগে সে দিন কী যে প্রশান্তি অনুভব করবে, তা কেবল তখনই বোধগম্য হবে। আর কাফির মুশরিক স্বীয় জীবনের খেসারত স্বরূপ কি এক নিদারূন যন্ত্রণা ও অন্তহীন দুর্ভোগ যে পোহাবে, তা আজ কল্পনা করাও অসম্ভব। যে বেদনায় দেহ ও আত্মা এক যোগে বেদনাহত হবে।
জাগতিক দেহঃ মোদ্দা কথা, এ তিন জগতের মাঝে আত্মার কোন পরিবর্তন ঘটে না। পরিবর্তন ঘটে কেবল দেহের। দেহ বা শরীর দু'ফোটা নাপাক পানি দ্বারা সৃষ্ট, যতদিন তাতে আত্মার সঞ্চার থাকে, ততদিন তার মূল্যায়ন করা হয়ে থাকে এবং স্বযত্নে হেফাযত করে। মানুষ দুনিয়াতে যা কিছু করে এর ৫০% ই দেহের জন্য করে। যেদিন প্রাণ পাখিটি দেহ-পিঞ্জিরা হতে বিদায় নিয়ে যাবে, সে দিন পর্যন্ত এটি জাগতিক দেহ।
বরযখি দেহঃ মৃত্যুর পর স্বাভাবিকরূপে এ দেহকে আর অক্ষত রাখা সম্ভব হয় না। কিছু দেহ মাটির সাথে বিলিন হয়ে মাটিতে পরিণত হয়ে যায়, আবার কোন দেহ অতল সাগরের ঢেউয়ে নিজেকে উৎসর্গ করে দিয়ে পানি হয়ে যায়। জীবজন্তু অনেক দেহ ভক্ষণ করে হযম করে ফেলে, ফলে জীব-জন্তুর মল-মূত্র ও রক্ত-মাংসে পরিণত হয় মানব দেহ। হিন্দু শাস্ত্রে মৃত দেহকে পুড়িয়ে ভস্ম করে ফেলা হয়; এতে মানব দেহ ছাই কিংবা ধোঁয়া হয়ে আকাশে উড়ে। অবশ্য আম্বিয়ায়ে কিরাম, উম্মতের বীর শহীদান এবং আল্লাহর একান্ত বান্দাদের জড় দেহ সম্পূর্ণ অক্ষত অবস্থায়ই থাকে। মোট কথা মৃত্যুর পর মানব দেহ হয় অক্ষত থাকে না হয় অন্য কোন পদার্থে পরিণত হয়। যাই হোক, আপন হালতে থেকেই আত্মার সাথে তার এক গভীর সম্পর্ক থাকে, এটিই তার বরযখী দেহ। কবর জগতে আর নতুন কোন দেহ হবে না। এ দেহ রূহের মাধ্যমে আরাম ও আযাব ভোগ করবে। দুনিয়ার মানব সমাজ তা কোন মতেই টের পাবে না। তেমনি ভাবে অনেক জাগ্রত লোক পার্শ্বে বসে কল্পনার জগতে চলে যায়। বিভিন্ন কল্পনা করে আনন্দ ও দু:খ অনুভব করে অথচ পার্শ্বের স্বজন তার থেকে একদম বেখবর। কবর জগত এর ব্যতিক্রম নয়।
বিলীয়মান দেহে শাস্তি বিরূপে হয়ঃ প্রশ্ন হতে পারে যে, কোন প্রাণীর উদরে হজম হয়ে যাওয়া মানব দেহে সত্যিই কি শাস্তি হয়? তো প্রাণী তা অনুভব করে না কেন? দেখুন! মানুষ কিংবা কোন কিছুর শরীরে রোগ হয়। এ রোগের মাঝে অনেক সময় শরীরে জীবানুর সৃষ্টি হয়, রোগ মুক্তির নিমিত্তে জীবানু নাষক ঔষধ সেবন করলে তা অবদমিত হয়। ঔষধ সেবনে জীবানুগুলো খুব কষ্ট অনুভব করে। এক পর্যায়ে মারা যায়। আর ঔষধ সেবন না করা হলে এ জীবানু বা কীটগুলো আনন্দ ও শান্তি অনুভব করে। নিজ শরীরে বিদ্যমান জীবানুর শান্তি-অশান্তি কিছুই মানুষ টের পায় না। কবরের আযাব ও শান্তি এর ব্যতিক্রম নয়। মাটি, পানি ও জন্তুর গোস্তে পরিণত হওয়া দেহ ই শান্তি-অশান্তি অনুভব করে এতে আমরা মোটেই টের পাই না। অবশ্য অন্যান্য প্রাণী তার অনুমান করতে পারে।
জনৈক অগ্নিপূজকের ঘটনাঃ জনৈক অগ্নিপূজক অর্ধজাহানের বাদশাহ হযরত ওমর রাযি. এর দরবারে উপস্থিত হয়ে প্রশ্ন করল, “প্রকৃতির ধর্ম ইসলামের বিধানগ্রন্থ আল-কুরআন কতটুকু সত্য?
হযরত ওমর রাযিঃ “আল-কুরআন সত্য, বিন্দু মাত্রও এতে কোন সন্দেহ নেই।
অগ্নিপূজক তিলাওয়াত করলঃ যার অর্থ “সকালে ও সন্ধ্যায় তাদেরকে আগুনের সামনে পেশ করা হয়।”
অত:পর তার জাম্বিল হতে দুটি মৃত কংকালের খুলি বের করে বলতে লাগল। জাহাপনা! খুলি দুটি দুই অগ্নিপূজকের, একজন আমার পিতা, অপরজন আমার ভ্রাতা। ধরে দেখুন! একেবারেই ঠাণ্ডা। কুরআন সত্য হয়ে থাকলে খুলি দুটি ঠাণ্ডা কেন? আগুনই বা কোথায়?
খলিফাতুল মুসলিমীন ওমর রাযি. হযরত আলী রাযি. কে তার দরবারে ডেকে পাঠালেন। হযরত আলী রাযি. দরবারে উপস্থিত হলেন।
খলিফাঃ হে আলী! অগ্নিপূজকের প্রশ্ন শুনেছ? তুমি তার জবাব দিয়ে দাও।
হযরত আলীঃ খলীফাতুল মুসলিমীন! একটি হাতুড়ি ও এক টুকরো লোহা সংগ্রহ করা হোক। হাতুড়ি ও লোহার টুকরো সংগ্রহ করা হলো।
হযরত আলীঃ (অগ্নিপূজককে লক্ষ করে) এর উপর হাত রাখ।
হযরত আলীঃ কি মনে হচ্ছে?
অগ্নিপূজকঃ একেবারেই ঠাণ্ডা।
অত:পর তিনি প্রচন্ড বেগে হাতুড়ি দ্বারা লোহায় আঘাত করলেন, যদ্দরূন লোহা থেকে অগ্নি চমকাল।
হযরত আলীঃ (অগ্নিপূজককে লক্ষ করে) লোহায় হাত রাখ। হাত রাখলে ফের তাকে বললেন, এবার কেমন মনে হচ্ছে?
অগ্নিপূজকঃ খুব গরম, এত গরম যেন হাত পুড়ে যাচ্ছে।
হযরত আলীঃ এতো ঠাণ্ডা লৌহ, এতে আগুন আসল কোত্থেকে? আবার গরমও হল!
অগ্নিপূজক নির্বাক চাহনী মেলে তাকিয়েই থাকল। তার মুখ ফুটে আর কোন কথা বেরুল না।
হযরত আলীঃ বুঝলে তো? যে আল্লাহ লৌহ পদার্থে অগ্নি লুকিয়ে রাখতে পারেন আমাদের অজান্তে, তিনি এ খুলিদ্বয়ের মাঝেও অগ্নি প্রজ্জ্বলিত করে রাখতে পারেন আমাদের অগোচরে। এটাই হল ঈমান, যা না দেখেও বিশ্বাস করতে হয়।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে অক্টোবর, ২০১০ রাত ১২:০৮
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি ভালো আছি

লিখেছেন জানা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯



প্রিয় ব্লগার,

আপনাদের সবাইকে জানাই অশেষ কৃতঞ্গতা, শুভেচ্ছা এবং আন্তরিক ভালোবাসা। আপনাদের সবার দোয়া, সহমর্মিতা এবং ভালোবাসা সবসময়ই আমাকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে শক্তি এবং সাহস যুগিয়েছে। আমি সবসময়ই অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আমার ড্রোন ছবি।

লিখেছেন হাশেম, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩

বৃহত্তর প্যারিস তুষারপাত।

ফ্রান্সের তুলুজ শহরে বাংলাদেশের প্রথম স্থায়ী শহীদ মিনার।

হ্যাসল্ট, বেলজিয়াম।

ভূমধ্যসাগর তীরবর্তী ফ্রান্সের ফ্রিওল আইল্যান্ড।


রোডেসিয়াম এম রেইন, জার্মানি।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতার সুফল কতটুকু পাচ্ছে সাধারণ মানুষ

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:২৮

(১) আমলা /সরকারের কর্মকর্তা, কর্মচারীর সন্তানদের জন্য আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার প্রস্তাব হতাশাজনক। মুক্তিযুদ্ধের ১৯৭১ সালের রক্ত দেওয়া দেশের এমন কিছু কখনো আশা কি করছে? বঙ্গবন্ধু এমন কিছু কি আশা... ...বাকিটুকু পড়ুন

এলজিবিটি নিয়ে আমার অবস্থান কী!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১০ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:১৫

অনেকেই আমাকে ট্রান্স জেন্ডার ইস্যু নিয়ে কথা বলতে অনুরোধ করেছেন। এ বিষয়ে একজন সাধারণ মানুষের ভূমিকা কী হওয়া উচিত- সে বিষয়ে মতামত চেয়েছেন। কারণ আমি মধ্যপন্থার মতামত দিয়ে থাকি। এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলমানদের বিভিন্ন রকম ফতোয়া দিতেছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩


আপন খালাতো, মামাতো, চাচাতো, ফুফাতো বোনের বা ছেলের, মেয়েকে বিবাহ করা যায়, এ সম্পর্কে আমি জানতে ইউটিউবে সার্চ দিলাম, দেখলাম শায়খ আব্দুল্লাহ, তারপর এই মামুনুল হক ( জেল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×