যেদিন প্রথম পেটে সাদা দাগটা দেখেছিল, ভেবেছিল ছুলি-টুলি হবে, দ্রুত দাগটা বাড়তে থাকল। রিমি বুঝল এ ছুলি নয় শ্বেতি।বাবা মাকে বলতেই তাঁদের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল।মধ্যবিত্ত ঘরের কুমারী মেয়ের শ্বেতি?? বিয়ে হবে কেমন করে? বহু স্কিন স্পেশালিস্টকে দেখানো হলো। কিন্তু শ্বেতি ক্রমশ বাড়তেই থাকল। তবে সবই ঢাকা জায়গায়। শেষমেষ ডাক্তাররা জানালেন,এ শ্বেতি সারবে না। আস্তে আস্তে সারা শরীরে ছড়িয়ে পরবে।
রিমির জীবন থেকে সব আলো হারিয়ে গেল। এ এক অদ্ভুত রোগ। যন্ত্রণা নেই, কষ্ট নেই কিন্তু এ রোগ হওয়া মানে সমাজে একঘরে হয়ে যাওয়া, বাতিল হয়ে যাওয়া। বাকি জীবনটা তাকে বাঁচতে হবে ঘৃণার পাত্রী হয়ে। সে এভাবে বাঁচতে পারবে না। শেষ করে দেবে জীবন।
সুমনকে বলেনি তার এই রোগের কথা।তাদের অনেকদিনের প্রেম। বললে কি হবে সে জানে। কে শ্বেতি হওয়া মেয়ের সংগে প্রেম করবে, বিয়ে তো অনেক দূরের কথা। এখন সে এড়িয়েই চলে সুমনকে। কিন্তু না, আর নয়, আজই সম্পর্কটা শেষ করে দেবে, সুমনকে মুক্তি দেবে। তাই বিকেলে তাদের পূর্বতন প্রিয় রেস্টুরেন্টে ডেকেছে সুমনকে।
যথা সময়ে রেস্টুরেন্টে ঢুকে রিমি দেখল সুমন সেই কোণের টেবিলে বসে আছে। যে টেবিল তাদের বহু সোনালি সময়ের সাক্ষী।
বসেই কোনো ভণিতা না করেই রিমি বলল, দেখো একটা জরুরি কথা বলতে তোমায় ডেকেছি, তোমার খারাপ লাগবে জানি তাও বলতে বাধ্য হচ্ছি যে আমি অন্য একজনের প্রেমে পড়েছি, তাই তোমার সংগে আর সম্পর্ক রাখতে পারছি না, তুমি আমায় ভুলে যাও।
সুমন উচ্চকন্ঠে বলল, প্রেমে পড়েছ না ছাই, আমার এই গলায় শ্বেতির দাগটা দেখে তুমি আমায় ছেড়ে যাচ্ছ, আমি বুঝতে পারিনি ভেবেছ?
রিমি বিস্ময়াবিষ্ট হয়ে সুমনের গলার সাদা দাগটার দিকে চেয়ে রইল। এর আগে লক্ষ করেনিতো সে, হ্যাঁ শ্বেতিই তো। অপলকে দাগটার দিকে তাকিয়ে রইল রিমি।
আর সাদা দাগটা বাড়তে বাড়তে আলো ছড়াতে ছড়াতে সুতীব্র হ্যালোজেন লাইট হয়ে রিমির জীবনের সব অন্ধকার, সব কালো সরিয়ে দিতে লাগল।
.........
সুমনের হাতটা শক্ত করে ধরল রিমি।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১:২০