.
আজও তাই করল। ডাবুর কর্কট রাশি। আজকের ভবিষ্যদবাণী হল 'স্বপ্ন হবে সত্যি।'
ডাবু নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারল না। দুবার কচলে নিয়ে আবার দেখে কনফার্ম হল। আর তারপরেই আনন্দে লাফাতে লাগল।
মা অবাক হয়ে বলল,"কিরে প্যান্টে আরশোলা ঢুকে গেছে নাকি? লাফাচ্ছিস কেন?"
শালা একটু আনন্দ করারও জো নেই!
.
ডাবুর কাছে ছিল সাকুল্যে দুশো সত্তর টাকা। সারা সকালটা সেই টাকাগুলোর দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে বসে রইল। চোখ টনটন করছে, তাও চোখ সরালো না। আর বিড়বিড় করে 'টাকা টাকা' বলে যেতে লাগল। কারণ ও শুনেছে যা দেখা হয় বা ভাবা হয়, ঘুমলে তারই নাকি স্বপ্ন দেখে মানুষে।
টাকা দেখতে দেখতে খাওয়া ভুলে গেল ডাবু। তারপর মায়ের ধ্যাতানিতে খেল। হুটোপুটি করে মুখে কিছু দিয়েই আবার টাকার সামনে চোখ খুলে ধ্যানে বসে গেল। টাকার স্বপ্ন আজ দেখতেই হবে।
.
দুপুরে চান করে ভাত খেয়ে শুয়ে পড়ল ডাবু। আজ দুপুরে টাকার স্বপ্ন দেখবে সে। এটা গ্যারান্টি। কোনও ফাঁক রাখেনি। ক'ঘন্টা ধরে শুধু টাকাই দেখেছে আর কিচ্ছু নয়। শুধু টাকার কথাই ভেবেছে মাথায় আর কিচ্ছু ঢুকতে দেয়নি। পাশের বাড়ির নতুন ভাড়াটিয়ার মেয়েটা তাকে শুনিয়ে ছাদে জোরে জোরে গেয়েছে, "কিচ্ছু চাইনি আমি আজীবন ভালবাসা ছাড়া..." তাও ছাদে ঝাড়ি মারতে যায়নি সে। তাড়াতাড়ি ঘরের জানলা বন্ধ করে দিয়ে টাকায় বিভোর হয়ে থেকেছে।
আর টাকার স্বপ্ন দেখলেই কেল্লা ফতে। স্বপ্ন সত্যি হবে। তার মানে লটারিটা লাগবেই। টিকিট কাটা আছে তার। আজই খেলা। প্রথম পুরস্কার এক কোটি এগারো লাখ টাকা।
শোওয়ার আগে মাকে বলল,"আমার কাল রাত্তিরে একটুও ঘুম হয়নি। দুপুরে ঘুমাবো, তুমি মোটেও হাবিজাবি কারণে ডাকাডাকি করবে না।"
.
দুপুরে সত্যিই স্বপ্ন দেখল ডাবু।
.
স্বপ্নটা এইরকম। নড়বড়ে একটা টেবিল। তারওপর একটা স্টিলের বাক্স। নোট আর কিছু কয়েন বাক্সে ছড়ানো। একটা হাড়গিল্লে টাইপের লোক টেবিলের পাশে টুলে বসে আছে।
হাড়গিল্লে হাত বাড়িয়ে ডাবুকে বলল,"পিস্যাব তো? দু টাকা দ্যান।"
লোকটার পেছনে বড় বড় করে লেখা আছে "সুলভ শৌচালয়।"
ডাবুর খুব পেয়ে গেছে। আর চাপতে পারছে না।
লোকটা হাত দেখিয়ে বলল,"বাঁয়ে চলে যান।"
দৌড়ে গিয়ে ডাবু ব্লাডার খালি করে দিল।
উফ্ শান্তি শান্তি!
.
আর তারপরেই ঘুমটা ভেঙে গেল। ডাবু দেখল বিছানা ভিজে জবজবে হয়ে গেছে।
ছি ছি ছি, শেষমেষ বিছানাতেই কিনা...
এতদিন পরে রাশিফল যদিও-বা মিলল তাও শালা এই ভাবে!!!
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জুলাই, ২০২০ দুপুর ১:৫৫