somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রম্য : লকডাউনে আমার শ্বশুরের ফুচকা খাওয়া !!!

২০ শে অক্টোবর, ২০২০ রাত ১১:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কলিং বেল শুনে দরজা খুলে দেখি শ্বশুরমশাই। মুখে ফেস-শিল্ড আর এন নাইন্টি-ফাইভ মাস্ক। মাথায় সার্জিকাল টুপি হাতে গ্লাভস।
আমি বললাম, "শুধু রেনকোট পরাই বাকি রয়ে গেল!"
শ্বশুরমশাই ঝাঁঝিয়ে উঠলেন, "বাজে বোকো না। কী অবস্থা জানো? সবারই সাবধানে থাকা উচিত। তোমার তো কোনো সিরিয়াসনেসই নেই।"
লকডাউনের সময় থেকেই এখনও শ্বশুরমশাই ঘরের ভেতরে ঢোকেন না, বাইরের ঘরেই বসেন।
বাবার গলার আওয়াজ পেয়ে বউও এসে গেছে।
গর্বের সঙ্গে বউ বলল, "সত্যি, একজন দায়িত্বশীল নাগরিকের যা যা করা উচিত বাবা তাই করছে। দেখে শেখা উচিত তোমার।"
যদিও আমি মাস্ক ছাড়া বাইরে বেরোই না, ঘনঘন স্যানিটাইজার ব্যবহার করি, তাও এখন চুপ করে থাকাই শ্রেয় মনে করলাম। কারণ শ্বশুরমশাই সত্যিই এই আনলক পর্বের গাইডলাইন খুব কঠোর ভাবে মেনে চলেছেন।
.
বিকেল বেলায় বউ বলল, "পায়েস করেছি, বাবা ভালবাসেন, দিয়ে এসো তো।"
শ্বশুরমশাইদের পাড়ায় বংশী বলে এক ফুচকাওয়ালার বিশাল নাম। বিকেল থেকে রাত অবধি তার স্টলে খদ্দেরের ভিড় উপচে পড়ে।
কিন্তু এই আনলক পর্বে তার দোকানেও ক্রেতা নেই। দূর থেকে দেখলাম শুধু একজন খদ্দের মাথা ঝুঁকিয়ে খাচ্ছে।
ভাল করে দেখে চমকে উঠলাম, যিনি খাচ্ছেন তিনি আর কেউ নয় আমার শ্বশুরমশাই!
যে মানুষ এত সচেতন এত দায়িত্বশীল সেই মানুষই কিনা মাস্ক-টাস্ক খুলে এই রাস্তায় দাঁড়িয়ে ফুচকা খাচ্ছে!
তাঁকে রেড হ্যান্ডেড ধরব বলে এগোতেই তিনি মুহূর্তে হাওয়া হয়ে গেলেন। আগেই দাম দেওয়া ছিল বোধহয়।
আমি শাশুড়ির হাতে পায়েসের কৌটো দিয়ে চলে এলাম।
.
বউকে বলতে বউ বলল, "তুমি ক্ষেপেছ নাকি? বাবা রাস্তায় দাঁড়িয়ে ফুচকা খাচ্ছে? এ হতেই পারে না। তুমি সিওর ভুল দেখেছ।"
আমি বললাম, "আমি ঠিকই দেখেছি। একজনই খাচ্ছিল আর সেটা শ্বশুরমশাই।"
বউ ফোনের লাউডস্পিকার অন করে শ্বশুরমশাইকে বলতে শ্বশুরমশাইও আকাশ থেকে পড়ে বললেন, "ওর চশমার পাওয়ার নির্ঘাত বেড়েছে। তুই চোখের ডাক্তার দেখা। এই সময়, চারিদিকে এত করোনা হচ্ছে আর আমি রাস্তায় দাঁড়িয়ে ফুচকা খাব?"
শুনে আমার প্রচণ্ড রাগ হল। আচ্ছা দাঁড়াও...
.
দুদিন পরে সকাল বেলায় বউ বলল, "বাবা একটু পরে আসবে, চা-পাতা শেষ হয়ে গেছে, এনে দাও তো।"
আমি চা কেনার জন্য বাইরে বেরিয়ে দেখলাম ভজহরিদা আর বুন্টা খুব উত্তেজিত হয়ে আইপিএল নিয়ে আলোচনা করছে।
.
অনেকক্ষণ পরে শ্বশুরমশাই এলেন। দেখে মনে হল ওঁর ওপর দিয়ে অনেক ঝড় বয়ে গেছে।
এসে আর বসলেন না। বউকে বললেন, "আমি এক্ষুনি চলে যাব। একটা খুব খারাপ খবর শুনলাম।"
বউ বলল, "এক্ষুনি চলে যাবে কেন? একটু বোসো, চা খাও, তারপর যাবে। আর কী খারাপ খবর শুনলে?"
শ্বশুরমশাই ধরা ধরা গলায় বললেন, "না না আমি বসব না। আমার এখানে এখন থাকাটা উচিত হবে না। আমি চলে গেলেই তুই ঘরটা ভাল করে ডিসইনফেক্ট করবি। জানিস, আমাদের পাড়ার ফুচকাওয়ালা বংশীর করোনা হয়েছে। শুধু ভজহরি বললে বিশ্বাস করতাম না, ও যত বাজে খবর দেয়, তারপর আরও একজন এসে বলল, ওই বুন্টা, জামাইয়ের বন্ধু।"
বউ অবাক হয়ে বলল, "তা ফুচকাওয়ালার করোনা হয়েছে বলে তোমার এত ভেঙে পড়ার কী আছে? কতজনেরই তো হচ্ছে।"
শ্বশুরমশাইয়ের গলা দিয়ে আওয়াজ বেরোচ্ছে না। ভাঙা ভাঙা গলায় বললেন, "আমাকেও টেস্ট করাতে হবে। আচ্ছা, করোনা টেস্ট প্রাইভেট ডায়গনিস্টিক সেন্টারে করালে কত করে পড়ছে?"
তারপর একটু থেমে গলা ঝেড়ে বললেন, "শোন, আমি তোদের মিথ্যে বলেছিলাম। পরশু দিন আমি বংশীর কাছে ফুচকা খেয়েছিলাম। খুব খেতে ইচ্ছে করছিল। লোভ সামলাতে পারিনি রে। "
বউ চেঁচিয়ে উঠল, "বাবা তুমি?"
শ্বশুরমশাই কেঁদে ফেলবেন মনে হল, বললেন, "হ্যাঁ রে আমি...মস্তো বড় ভুল করে ফেলেছি..."
বিধ্বস্ত শ্বশুরমশাইকে দেখে খুব খারাপ লাগল।
.
.
নাহ্ এবার সত্যিটা বলে দেওয়া দরকার। বললাম,"ভজহরিদা আর বুন্টা আমার শেখানো কথা বলেছে। আপনার ভয় পাওয়ার দরকার নেই, বংশী ফুচকাওয়ালার কিছু হয়নি। বসুন, চা খেয়ে যান। আর ভবিষ্যতে ঢপ দিতে গেলে ভাল করে ভেবেচিন্তে দেবেন, বুঝলেন?"
শ্বশুরমশাই আর তাঁর মেয়ে হাঁ করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি মাস্কটা মুখে এঁটে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়লাম....
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে অক্টোবর, ২০২০ রাত ১১:৫৯
৯টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×