somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফুল আঁকা আমার টিনের বাক্স

০২ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আমার বয়স যখন পাঁচ-
তখন আমার এক খেলার মেয়ে সাথী
আমাকে দিয়েছিলো
একটি পা ভাঙা মাটির পুতুল।
পা ভাঙা পুতুল দেখলেই তখন তার প্রচন্ড রাগ হতো ।

আমার দশ বছর বয়সে এক বালিকা দিয়েছিলো একটি হলুদ ঘুড়ি।
যেটি তাদের উঠোনে উড়ে এসে পড়েছিলে সুতো কেটে।
ঘুড়িটা উঠোনের ভিজা মাটিতে পড়ে একটু ছিঁড়ে গিয়েছিলো
তাই সে ঘুড়িটা আমাকে দিয়েছিলো।

বয়স যখন আঠারো
তখন এক কিশোরী ভুল করে একটি নীল খাম দিয়েছিলো।
চিঠি লিখতে গিয়ে সে তখন কাগজ
খুঁজে পায়নি।
তাই শুধু খামের উপর আমার নাম লিখে দিয়েছিলো।

আমার আটাশে একজন নারী
- আমাকে তার চুলের নষ্ট ক্লিপ দিয়েছিলো ঠিক করে দিতে।
আমি অনেক চেষ্টা করেও ঠিক করে দিতে পারিনি সেটা,
তাই সেই ক্লিপ সে ফিরিয়ে নেয়নি।

তারপর আমার চল্লিশে একজন নারী দিলো
তার বারান্দায় পড়ে থাকা কিছু স্যাঁতসেঁতে দীর্ঘশ্বাস-
কড়কড়ে রোদে শুকোতে।
তখন থেকে অনেকদিন আর সূর্য উঠেনি,
তাই সেই স্যাঁতসেঁতে দীর্ঘশ্বাস কখনো ফিরিয়ে দেওয়া হয়নি।

হঠাৎ পাঁচচল্লিশে একজন নারী দিলো তার কিশোরী বয়সের কিছু
সাদা কালো ছবি-
তাকে রঙিন করে দিতে।
ভালো কারিগরের অভাবে ছবিগুলো আর রঙিন করা হয়নি কখনোই।

এই সবকিছুই আমি সারাজীবন জমিয়েছিলাম
একটি লাল আর হলুদ ফুল আঁকা টিনের বাক্সে।

ইদানিং হয়েছে এক যন্ত্রনা-
রাত হলেই টিনের বাক্স থেকে জল গড়িয়ে পড়ে আমার শোবার ঘরে।
পুরো ঘর কোমর জলে ডুবে যায়।
সারারাতই এই জলে সাঁতরাতে সাঁতরাতে আমি এক সময় অবসাদগ্রস্থ হয়ে যাই।

তাই একদিন সাতচল্লিশে এসে খুব ভোর বেলায় সেই টিনের বাক্স নিয়ে বেরিয়ে পড়েছি।
সবার ঠিকানা খুঁজে ফিরিয়ে দিতে হবে তাদের সব কিছু।
আমার একটি করে কবিতা সারাজীবন ধরে তাদের কাছে বন্ধক ছিলো,
সেই কবিতাগুলো আমাকে ফিরিয়ে নিতেই হবে।
তা না হলে আমি আর কখনোই কবি হতে পারবোনা।
——————————
কাব্যগ্রন্থ- একটি আউলা-ঝাউলা জীবনের প্রার্থনা

রশিদ হারুন
২৭/১২/২০১৯
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:০৬
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাসনাতের বয়ানে সেনাবাহিনীর প্রস্তাব নিয়ে উত্তপ্ত রাজনীতি, সেনা সদরের অস্বীকার

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৪ শে মার্চ, ২০২৫ দুপুর ১:০১

হাসনাতের বয়ানে সেনাবাহিনীর প্রস্তাব নিয়ে উত্তপ্ত রাজনীতি, সেনা সদরের অস্বীকার

ছবি: অন্তর্জাল থেকে সংগৃহিত।

জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহ সম্প্রতি দাবি করেছেন যে, সেনাবাহিনী আওয়ামী লীগের একটি 'সংশোধিত' অংশকে রাজনৈতিকভাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তবু তো ফাল্গুন রাতে এ গানের বেদনাতে আঁখি তব ছলছলো....আমার দুঃখভোলা গানগুলিরে ......

লিখেছেন ইন্দ্রনীলা, ২৪ শে মার্চ, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫



মাঝে মাঝে আমার বুকের গহীনে এক ব্যথার নদী উথলে ওঠে। উথাল পাথাল ঢেউগুলো পাড়ে এসে আছড়ে পড়ে। উত্তাল বেগে ধেয়ে এসে ভেঙ্গে খান খান হয়ে পড়ে বুকের মাঝে... ...বাকিটুকু পড়ুন

"বিস্মৃতি"

লিখেছেন দি এমপেরর, ২৪ শে মার্চ, ২০২৫ বিকাল ৪:৫৫


সে যে আজ কোথা হারিয়ে গিয়েছে, আঁধার ছেয়েছে ঘনঘোর কালো;
চাঁদ নেই তারকারাজিও উধাও, নেই জ্বলে কোথা টিমটিমে আলো!
সে যে জানে শত হৃদয়ের কথা, মায়াজালে ঘেরা হাজার স্মৃতি!
কত... ...বাকিটুকু পড়ুন

মাথা হালকা পোষ্ট!

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৪ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ৮:০৭

অবিশ্বাস্য হলেও লেকটির অবস্থান খোদ ঢাকায়; কেউ কি এর লোকেশন বলতে পারেন?



কাটা তরমুজের ছবিটা দেবার বিশেষ মাজেজা আছে;
উটিউবে একজন কামেল বুজুর্গান পাকা সূমিষ্ট তরমুজ কেনার... ...বাকিটুকু পড়ুন

এলার্ট : শেখ হাসিনা আজ রাতে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে যাচ্ছেন !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৪ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ৮:৪৭


বাংলাদেশের মানুষ কল্পনা করতে খুব ভালোবাসে। গুজব ও অপতথ্য শেয়ারে বাংলাদেশের মানুষ প্রথমদিকে থাকবে বলে অনেকের বিশ্বাস । দেশের মানুষের পাঠ্যবই ছাড়া অন্য কোনো বইয়ের প্রতি আগ্রহ নেই। আত্নউন্নয়ন মূলক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×