ছবিতে - নোরা ফাতেহীর কাছ থেকে এওয়ার্ড নিচ্ছে দেশের জনপ্রিয় নায়িকা পূজা চেরী।
নোরা ফাতেহী একজন কিংবদন্তীর না্ম নাম না হলেও কাতার বিশ্বকাপে নিজের নাম লেখানোর মাধ্যমে বেশ আলোচিত বর্তমানে। রূপে এবং গুণে অনন্যা নোরা। মরোক্কান-পরিবার থেকে হলেও বেড়ে উঠেছেন কানাডায়। যদিও তিনি নিজেকে ভারতীয় বলে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করেন বলে বিভিন্ন সাক্ষাতকারে বলেছেন। জনপ্রিয় বাহুবলী, দ্য বিগিনিং ও কিক ২ তে আইটেম গানে নোরা নেচে বেশ পরিচিতি ও সুনাম অর্জন করেছিলেন। ১৯৯২ সালে জন্ম নেয়া নোরা ফাতেহী মাত্র ৩০ বছর বয়সে পুরা পৃথিবী জুড়ে সুনাম অর্জন করেছেন। তিনি একই সাথে নৃত্যশিল্পী মডেল অভিনেত্রী গায়িকা ও প্রযোজক।
সবাই জানি শুক্রবার দুপুরে উইমেন লিডারশীপ কর্পোরেশন আয়োজিত গ্লোবাল এচিভার্স অ্যাওয়ার্ড ২০২২-এ অংশ নিতে বাংলাদেশে এসেছে নোরা। দেখুন প্রোগ্রামটির নাম বলে দিচ্ছে এটি একটি এওয়ার্ড ফাংকশান। অর্থাৎ যারা এওয়ার্ডের জন্য মনোনীত হয়েছেন তাদের হাতে এওয়ার্ড তুলে দেয়ার জন্যই নোরাকে আনা হয়েছে। তিনি পারফর্ম করবেন এমন কোথাও বলা পর্যন্ত নেই। হতে পারে আয়োজকরা বিষয়টি গোপন করেছেন কিন্তু এতে নোরার দোষটা কী ? অবশ্যই আয়োজকদের আমি তীরষ্কার করবো। আমাদের শিল্পীরা ভাত পাচ্ছেন না। অনেক শিল্পীর কাজ নেই। বিশ্বের এই পরিস্থিতে অনেকে নিঃস্ব বা কোনো রকমে টিকে আছে। ৮০ % বিজনেস প্রতিষ্টানের একমাত্র চাওয়া কোনরকমে ২০২২-২০২৩ সারভাইব করা। প্রফিট বাদ। সেখানে ১৫ লক্ষ টাকা দিয়ে ৩০ মিনিটের জন্য নোরা ফাতেহী কে আনা উচিত হয়নি যেখানে আমাদের গুরু নগর বাউল জেমস ৫ থেকে ৮ লক্ষ টাকায় মঞ্চে /কনসার্তে ২ ঘণ্টা পারফর্ম করেন। দেশীয় কিছু হলে ভালো হতো। আমাদের শিল্পীদের একটু উপার্জন অন্তত হতো।
মূল কাহিনী ছিল তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় থেকে তাদের অনুমতি দেওয়ার সময়ই বলে দেওয়া হয়েছিল- শুধু তথ্যচিত্রের শুটিং হবে, কোনো পরিবেশনায় অংশ নিতে পারবেন না নোরা। প্রশাসনের পক্ষ থেকেও তাদের বলা হয়েছিল, নোরা যেন না নাচেন।এই বিষয়ে আয়োজকের প্রধান ইশরাত জাহান মারিয়া বলেন, ‘সরকারি প্রজ্ঞাপনে নোরার পারফর্ম করার পারমিশন ছিল না। আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তা ছাড়া তিনি ৭ ঘণ্টা জার্নি করে এসেছেন। অনেক ক্লান্ত ছিলেন। এ অবস্থায় আমাদেরও তাকে কিছু বলার ছিল না।’
সামাজিক যোগাযোগ এর মাধ্যমে অনেকেই লিখে থাকেন ভীনদেশী সংস্কৃতি আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতকে ধ্বংস করছে। কিন্তু একটু খেয়াল করলে দেখবেন তাদের সমস্যা আসলে সংস্কৃতি নয়, তাদের সমস্যা নারীদের স্বাধীনতা। নারী নাচলে সমস্যা, চাকরি করলে সমস্যা, গাইলে সমস্যা, বোরখা পরলেও সমস্যা, ওয়েস্টার্ন পড়লেও সমস্যা, ঘরে বসে থাকলেও অপবাদ দিচ্ছে পরকীয়ার অর্থাৎ নারী মানেই যারা সমস্যা মনে করে তারা দেখবেন বিশ্বকাপ ফুটবল খেলার উপর বিরক্ত। আর্জেন্টিনা ব্রাজিলকে সমর্থন দিলে দাজ্জালের বংশধর বানিয়ে দেয়। নোরা চুক্তি করে নাচ না করার মতো কেউ নন।কোন প্রফেশনাল শিল্পী এমন করবেন না।অথচ সুযোগ পেয়ে যারা নোরাকেই কটু কথা বলছেন তারা মূলত নারী বিদ্বেষী। আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতিকে আমরা অবশ্যই সম্মান করি কিন্তু তার মানে এই নয় উনিশত খাট্টা ইংরেজির পোশাক পড়ে আমরা অফিসে যাবো। কোরানেও বিবর্তনের কথা বলা হয়েছে। এমনকি ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক ও প্রচারকও ছিলেন এখজন সমাজ সংস্কারক ও পরিবর্তক। আমাদের দাদী নানীরা ব্লাউজ ছাড়া শাড়ি পরতেন , এখন কোন নারী সে পুরনো সংস্কৃতিকে ফিরিয়ে আনতে গেলে বলে অশ্লীল। হাত দিয়ে ভাত খেলে খ্যাত বলে। আর স্পোন আর নাইফ দিয়ে খেলে বলেন বিদেশী সংস্কৃতি।
যাই হোক আমাদের নিজস্ব কালচার পহেলা বৈশাখ পালন করলেও তো হারাম টারাম বলেন। আসলে নিজস্ব সংস্কৃতির প্রতি সবাই শ্রদ্ধাশীল তার মানে এই নয় যে কেউ বিবির্তিত ট্রেন্ডকে গ্রহণ করে সে দেশের সংস্কৃতিকে অসম্মান করছে। যুগে সাথে তাল মিলিয়ে সব কিছু পরিবর্তন হবে। ২ বছর আগে যে মোবাইল বাজারে এসেছে সেটা ২০২২ এ আপডেট হয়ে নতুন রূপে আসছে মানুষের চাহিদা অনুসারে । আধুনিক ট্রেন্ড বা স্টাইল বা ফ্যাশনকে গ্রহণ করা মানে নিজস্ব সংস্কৃতিকে অপমান করা নয়। মান্দাতা আমলের শিক্ষা ব্যবস্থা দিয়ে বর্তমানে সারভাইব করা অসম্ভব। বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলা মানে নিজস্ব সংস্কৃতিকে বর্জন করা নয়। একদিকে পতিতার সম্মানের দাবী করবেন অন্যদিকে সতী নারী চাইবেন কেমনে কি ?
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে নভেম্বর, ২০২২ রাত ১১:১৭