করোনা পরবর্তী ও রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধে দেশের অর্থনীতি ও বাণিজ্য মুখ তুবড়ে পড়েছে ছোট মাঝারি বড় কোম্পানি ও সকল শিল্প প্রতিষ্ঠানের অবস্থা কতো খারাপ তা নতুন করে বলার কিছু নেই। ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড নিঃসন্দেহে দেশের সর্বাধিক মুনাফা অর্জন কারী ব্যাংক। বিশেষ করে ফরেন এক্সচ্যাঞ্জে ও রেমিটেন্সে এবং ডিপিএস এ ইসলামী ব্যাংক এগিয়ে ছিল। রেপুটেশনের করণে দেশের আপামর জনগণের নির্ভরযোগ্য ব্যাংক হলো ইসলামী ব্যাংক। যদিও ইসলামের নাম বিক্রি করে সুদকে মুনাফা নামকরণ করে ইসলামী বয়াংক দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষের যে আই ওয়াশ করছে আমি তার তুমুল বিরোধী। তবুও আমি যখন জেনেছি এস আলম গ্রুপকে ইসলামী ব্যাংক লোন দিয়েছে ৩০ হাজার কোটি টাকা তখন অবাক এবং চিন্তিত দুইটাই হয়েছি।
একটি লোনের প্রসেস শুরু করছি ৭ মাস আগে। সমস্ত ডকুমেন্ট ঠিকঠাক দেয়ার পরও , ব্যাংকের সকল চাহিদা ফুলফিল করার পরও লোন প্রসেস সম্পন্ন হতে ডিসেম্বর লাগছে। সেখানে “মেডিগ্রীন” কে ৯০০ কোটি টাকা লোন দিয়েছে এই ব্যাংক! " ইসলামী ব্যাংক এর কতো পার্সেন্ট শেয়ার এস আলম গ্রুপের? এই ব্যাংকটি নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের ১ নাম্বার ও দেশের সবচেয়ে বড় প্রাইভেট ব্যাংক। হাজার হাজার এমপ্লয়ী ইসলামি ব্যাংকে চাকুরী করে। এস আলম গ্রুপ একার এতো গুলো ব্যাংক কিসের জন্য দরকার। শুধু মাত্র পটিয়া বাড়ি হলেই এস আলম গ্রুপ অত্যন্ত কম বেতনে অদক্ষ কর্মী নিয়োগ দিচ্ছে। বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশী ওয়ান্টেড জব ব্যাংকের জব। অন্যান্য ব্যাংকে এস আলম কর্তৃক নিয়োগকৃত ব্যাংক কর্মকর্তারা কোনদিন জব পাবে না এই ব্যাপারে কার কার সন্দেহ আছে?যাক সেসব কথা। যার গরু সে যেদিক দিয়ে ইচ্ছা জবাই করুক।
কিন্তু একটা ঠিকানাহীন প্রতিষ্ঠান “মেডিগ্রীন” কে ৯০০ কোটি টাকা লোন দিয়েছে এই ব্যাংক! । যে কোম্পানির মালিকের ভোটার আই ডি কার্ড পর্যন্ত জমা নেয়নি।কোম্পানির মালিকের বয়স ২৪ বছর। শিক্ষাগত যোগ্যতা এইস এস সি। কোম্পানিটির এম ডি ‘আব্দুল্লাহ আল রাকিব’ মেডগ্রীন নামক যে কোম্পানিটির নাম দেখিয়েছে সে কোম্পানির এড্রেস ভুয়া। ভাবা যায়? এগুলো তো সব একাউন্ট হোল্ডারদের টাকা!
গত ১০ বছরে একের পর এক ব্যাংক লুটের খবর আমরা পত্রিকায় পড়েছি। দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ী ও ব্যাংকের মালিকশ্রেণি সাধারণ মানুষের টাকা ঋণের নামে হাতিয়ে নিয়েছে। সর্বশেষ ইসলামী ব্যাংকসহ তিনটি ব্যাংক থেকে ঋণের নামে ৯ হাজার কোটি টাকা লোপাট হাওয়ার সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। শুধু ইসলামী ব্যাংক থেকে নিয়েছে ৭ হাজার কোটি টাকা।পদ্মা সেতুর রেল প্রকল্পের মোট খরচ হয়েছিল - ৪০ হাজার কোটির টাকার মতো। পত্রিকায় পড়লাম শুধু ইসলামী ব্যাংক থেকে লোপাট হয়েছে ৪০ হাজার কোটি। একজন ব্যবসায়ীকে ৫ লক্ষ টাকার একটা ক্রেডিট কার্ড নিয়ে ৭ দিনের জন্য একাউন্টে ৪৫ লক্ষ টাকা রাখতে হচ্ছে। তারপরও কতো নিয়ম কানুন পেপার হেন তেন। সেখানে অস্তিত্বই নেই এমন কোম্পানিও শত শত কোটি টাকা লোন নিচ্ছে।লোন প্রাপ্ত অনেক প্রতিষ্ঠানের ঠিকানায় আবাসিক ভবন পাওয়া গিয়েছে। এসব ভবনে মানুষজন পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করছেন। কোনও প্রতিষ্ঠান নেই। এই হচ্ছে ব্যাংক খাতের অবস্থা। কে কাকে ঋণ দিচ্ছে, তার কোনও জবাবদিহি নেই। ৪০-৫০টি পরিবারের হাতে দেশের ব্যাংক খাত কুক্ষিগত। এর মধ্যে এক পরিবারের হাতেই আছে সাতটি ব্যাংক ও একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান।
শেয়ারবাজারের পাশাপাশি লুটেরাদের নজর এখন ব্যাংকগুলোর দিকে এটা বুঝতে আর কারও বাকি নেই।
তথ্যসূত্র- প্রথম আলো, বাংলাদেশ প্রতিদিন। দ্যা নিজনেস স্ট্যান্ডার্ড। ছবিঃ গুগল সার্স করে ডাউনলোড।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা ডিসেম্বর, ২০২২ দুপুর ২:৩১