দিন দিন নিজেকে হারিয়ে অন্য মানুষে পরিনত হচ্ছি, পরিচিত বন্ধুমহল,চেনা মুখ, আর অসম্ভব প্রিয় মানুষগুলোকে সময়ের আবর্তে হারাচ্ছি ক্ষণে ক্ষণে। পড়াশুনার প্রয়োজনে স্বাভাবিক শৈশব আর কৈশোর কাটিয়েছি হোস্টেলের চার দেয়ালে ঠাস বুনেটে। মানুষ অভ্যাসের দাস বলে সেটাও মেনে নিয়েছিলাম, মানিয়ে নিয়েছিলাম চার দেয়ালের আমার মত শৈশব হারানো মানুষগুলোর সাথেও। প্রয়োজনে আর অপ্রয়োজনে তাদের সাথে কাটিয়েছি অনেকগুলো সময়।ভাল-মন্দ,লাভ-ক্ষতি, স্বার্থ এবং সু্যোগের চিন্তার নিউরনকে নিস্তেজ রেখে বন্ধুদের সাথে মিশেছি বিনা অজুহাতে।
সোনালী সেই সময়ের কথা চিন্তা করতেই মেরুদণ্ডের শিরঃদাড়া বেয়ে একটা হিমশীতল অনুভূতির জন্ম হয়। স্মৃতি কাতরতায় আড়ষ্ট হই, মুগ্ধতায় বিভোর হই। স্কুলের পাট চুকেবুকে যাবার পর চার দেয়ালের হারানো বন্ধুদের দীর্ঘদিন একসাথে থাকার মায়া পড়ে যাওয়া অনুভূতি থেকে কিছুটা দিন ফোনালাপের যোগাযোগ থাকলেও সূর্য মামার আহ্নিক ঘূর্ণনে সেটাও একসময় বন্ধ হয় কোন রকম কারন ও জিজ্ঞাসা ছাড়াই।
সময়ের স্রোতধারায় কলেজে বছর দু'য়েক একসাথে থেকে যেসব বন্ধুদের সাথে সম্পর্কের প্রেমে নিজেকে জড়িয়েছিলাম তারাও জীবনের কাছে জবাবদিহিতার প্রয়োজনে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। খুব চিন্তা করে দেখেছি এই সুন্দর সম্পর্কগুলো কোন রকম ঝামেলা ও বাক-বিতান্ডতা ছাড়াই শেষ হয়।কোন রকম লাভ-লোকসানের হিসেব নিকাশ ব্যতিরেকে সোজা ফুলস্টপ হয়ে নিঃশেষ হয় একসময়ের প্রানের সত্তাগুলোর ধার -দেনা।
সবাই নিজেদের নিয়ে খুব ব্যাস্ত হয়ে পড়ি, কালে ভদ্রে কোন বন্ধু-বান্ধবীকে কোন দরকারে ফোন দেয়া হলেও দুজনের কথায় বন্ধুত্বের সেই প্রানোচ্ছলতা আর ছন্দময়তা থাকে না। তারপরের University লেভেলের বন্ধুদের সাথে নিয়ে আরো কিছুটা দিন বন্ধুত্বের উৎসবে মেতে থাকার বৃথা চেষ্টা। স্কুল ও কলেজ লাইফের বন্ধুদের হৃদ্যতা, ছন্দময়তা ও ভালবাসা বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুদের মাঝে না পেয়ে অনুমিতভাবেই সেই সম্পর্কগুলো খুব হৃদয় নিংড়ানোও হয়ে উঠে না।
ব্যাস্ততা আর জীবনের টানা পোড়নে যখন আপন সত্তা ভবিষ্যৎ চিন্তায় হাপিত্যেস, তখন আসলে নিজেও কিছুটা স্বার্থপরতার পরিচয় দেই।ফোনে সেভড এই সব মানুষগুলো নাম্বারে কখনো ইচ্ছে করে ফোন দেয়া হয় না, আবার তাদের ফোন থেকে কখনো ভুল করে একটা কল আমার ফোনের স্ক্রিনে কলিং হয়ে ভেসে উঠতে দেখি না মাঝে মধ্যেই মনে হয় এই নিস্ক্রিয় নাম্বারগুলোকে ফোন থেকে কেটে দিব, সেটাও করা হয় না ফুসফুস থেকে প্রচন্ড জোরে প্রবাহিত হয়ে নাসিকা ভেদ করে বের হয়ে আসা একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাসের কারনে।
প্রযুক্তির কল্যানে অনেক বন্ধুদের ফেসবুক,টুইটার ও অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খুঁজে পেলেও অনলাইনের নীল বাতি দেখেও অনেকের সাথে শুধু কি নিয়ে কথা বলবো এটা চিন্তা করেই চ্যাঁট করা হয় না। যদিওবা কালে-ভদ্রে তাদের সাথে সামান্য চ্যাটিং, লাইক ও কমেন্টসে ভাললাগা-মন্দলাগা ভাগাভাগি করা হয় তবুও সেই সম্পর্ক একটা জায়গা পর্যন্ত স্থিতিশীল। কোন ভাবেই কেউও নিজেকে প্রানবন্ত করে তুলতে পারি না ওপাশের বন্ধুটির কাছে।
সব হিসেব শেষেও যখন কোন এক রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ইচ্ছে হয় স্কুলের সবচেয়ে কাছের বন্ধুটির কাছে ফোন দিয়ে কিছুক্ষণ সুখ-দুঃখের আলাপ করবো, তখন আবার ভাবী কি দরকার সম্পর্কের বেড়াজাল থেকে অনেকদুরে থাকা ''অন্য মানুষটিকে’’ রাতদুপুরে ডিস্টার্ব করার কোন মানে থাকতে পারে না।
আর এভাবেই সোনালী অতীতের সুন্দর ও মায়ার বন্ধনে জড়িয়ে থাকা সম্পর্কগুলো অযত্নে হারায় সময়ের কাছে খুব নির্মম ভাবে............ নিদারুন বাস্তবতায়