আসুন খুব সাধারণ ভাবে একটু খৃস্টানদের চার্চের ইতিহাসের দিকে তাকাই। সাধারণভাবে বললে বলতে হয় খৃষ্টানরা চার্চ সৃস্টি করার মাধ্যমে ধর্মকে যাজকরা তাদের নিজেদের মধ্যে করায়ত্ত করে। চার্চ এবং সিংহাসন এর কার্যবিধিকে আলাদা করা হয়। চার্চের দায়িত্ব হচ্ছে ধর্ম কেন্দ্রিক যার প্রতিনিধিত্ব করে পুরহিতেরা এবং সিংহসনেরা দায়িত্বে থাকে রাজা যার দায়িত্ব দেশ পরিচালনা করা। এই রাজা আবার চার্চের সমর্থন ছাড়া নির্বাচিত হতে পারেন না আবার দেশ চালনাও করতে পারেন না, কারন একটা বিষয় সাধারণ জনগণের মধ্যে প্রথম থেকেই সূক্ষ্ম ভাবে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে যে চার্চের বিপক্ষে যাওয়া মানে হচ্ছে ধর্মের বিপক্ষে যাওয়া আর ধর্মের বিপক্ষে যাওয়া মানে হচ্ছে ঈশ্বরের বিপক্ষে যাওয়া। সুতরাং কোন রাজা চার্চ, ধর্ম বা ঈশ্বরের বিপক্ষে গিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবেন না। আবার এই রাজার দেওয়া অনুদানেই চার্চ চলে- অর্থাৎ পুরোহিতদের আয়ের মুল উৎসই ছিল রাষ্ট্রীয় অনুদান। এর ফলে চার্চ বিশাল ক্ষমতার উৎস বিন্দুতে পরিণত হয়। একদিকে যেমন ধর্মের ক্ষেত্রে চার্চ হচ্ছে ফাইনাল অথরিটি অন্য দিকে রাজা নির্বাচন থেকে শুরু করে দেশ পরিচালনাতেও ছিল চার্চের পরোক্ষ বিশাল প্রভাব। রাজাকে তার ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য এই চার্চের তথা চার্চের পুরোহিতদের মন যুগিয়ে চলতে হয়। আর এই প্রভাবের কারনেই চার্চ তথা পুরোহিত তন্ত্র একটি লাভজনক এবং ক্ষমতাশীল প্রতিষ্ঠান হিসাবে গড়ে উঠে। আমাদের উপমহাদেশে হিন্দু ধর্মের দিকে তাকালেও আমরা একি জিনিশ দেখতে পাব
তাহলে মুসলমানদের ক্ষেত্রে কি হয়েছে? চার খলিফার শাসনামলের পরে খিলাফত রাজতন্ত্রে পরিণত হয়। খিলাফত ছিল আল্লাহর বিধান আর রাজতন্ত্র হচ্ছে মানুষের বিধান। রাজতন্ত্র কোনভাবেই আল্লাহর বিধান দ্বারা জায়েজ করা যায় না। সুতরাং রাজতন্ত্র টিকিয়ে রাখতে হলে মোল্লাদের সমর্থন লাগবে। এর সমর্থনে বিধান লাগবে। সুতরাং সেই একই মডেল ইসলামের মধ্যে আমদানী করা হয়েছে। মোল্লারা সমর্থন দিয়েছে, আব্বাসীয় খলিফাদের জন্য নতুন নতুন বিধান তৈরী করেছে- কেউ স্বচ্ছায় কেউ অনিচ্ছায়। ইচ্ছাকৃত ভাবে কোরআনের অর্থ বিকৃত করেছে, নতুন বিধান বানিয়েছে, নবীর নামে মিথ্যা হাদিস সৃস্টি করেছে শুধুমাত্র তৎকালীন শাষক গোস্টিকে খুশি রাখার জন্য। এখন যেমন ওলামা লীগ, ওলামা দল আছে, আগেও এইরকম ছিল। ইনফ্যাক্ট এখনও অনেক মুসলিম দেশ তার সমর্থনে এই রকম মোল্লাদের দল পালেন। এর প্রচুর প্রমান সবখানেই বিদ্যমান।যার ফলে ইসলাম দ্বীন থেকে ধর্মে রূপান্তরিত হল এবং এই মোল্লারা হল সেই ধর্মের সোল এজেন্ট। যারা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন বিধান রচনা করে শাসকদের খুশি করার জন্য তাদের সমর্থনে নবীর নামে চালিয়ে দেয়। যার ফলে কেউ এর বিরুদ্ধে কথ বললে বলা হয় নবীর বিরুদ্ধে কথা বলা হয়েছে এবং শেষপর্যন্ত তাকে ধর্মের গণ্ডী থেকে বের করে দেওয়া হয় এবং এর জন্য একটা টার্ম আবিস্কার করেছে যার নাম “মুরতাদ” এবং এর শাস্তির বিধান বানিয়েছে হত্যা। সুতরাং প্রতিবাদ করার পথ এইভাবেই (শুধু একটা বলেছি, আরও অনেক আছে) বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আর এভাবেই ইসলামের মধ্যেও শাসনতন্ত্র এবং ধর্ম দুইটি আলাদা প্রাতিষ্ঠানিক রুপ নেয়, এবং এই ধর্মকে কেন্দ্র করে মোল্লা তন্ত্র (আমি এটাকে এই নামেই ডাকছি, আপনি যে কোন নাম দিতে পারেন) একটা প্রভাবশালী পেশা হিসাবে গড়ে উঠে যারা কিনা আল্লাহর প্রতিনিধিত্ব করে বলে দাবি করে এবং স্বর্গ এবং নরকের টিকেটের সোল এজেন্ট হিসাবে পৃথিবীতে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে।যত ছোট করে বলছি, কাহিনী তার চেয় অনেক অনেক বড়। এটা একদিনে হয়নি, ধীরে ধীরে হয়েছে এবং হয়েছে এটাই সত্য।
কেউ এই ব্যাপারে প্রশ্ন করে না কারন সাধারণ মানুষকে ইচ্ছাকৃত ভাবে সত্য থেকে দূরে রাখা হয়েছে।মানুষকে বুঝানো হয়েছে সাধারণ মানুষ কোরআন পড়ে এর অর্থ বুঝতে পারবে না। এর ফলে সাধারণ মানুষ কোন কিছু জানতে বা ধর্মীয় বিধান পালন করতে মোল্লাদের কাছে যায় এবং মোল্লারা তার সময়ের বিনিময়ে মানুষের কাছ থেকে অর্থ পেয়ে থাকে যা দ্বারা সে তার জীবিকা নির্বাহ করে। এটা প্রচলিত অর্থে একটা ফেয়ার ডিল। সাধারণ মানুষ চিন্তা করে একজন মানুষকে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হতে অনেক বছর প্রচুর সাধনা করতে হয় ঐ ব্যাপারে এক্সপার্ট হতে। এর পরে তারা তাদের সেবার বিনিময়ে মানুষের কাছ থেকে টাকা নেয়। সুতরাং যেহেতু মোল্লারাও অনেক বছর হাদিস কোরআন পড়ে, এবং সাধারণ মানুষ নিজে কোরআন পড়ে কিছু বুঝতে পারবে না সেহেতু ধর্মীয় বিধানের ক্ষেত্রে তারাই একমাত্র এক্সপার্ট। সুতরাং আর অন্য দশটা পেশার মতই তাদের সেবার বিনিময়ে টাকা নেওয়া বৈধ। যার ফলে এই মোল্লারা নামাযের ইমামতি করতে টাকা নেয়, আযান দিতে টাকা নেয়, জানাজা পড়াতে টাকা নেয়, ওয়াজ করতে টাকা নেয়, কোরআন পড়াতে টাকা নেয়, কিসে টাকা নেয় না?
কিন্তু এটা হচ্ছে একটা এভিল প্র্যাকটিস যা প্রায় ১২০০ বছর ধরে আমাদের মধ্যে চলে আসছে। এই ১২০০ বছরে মোল্লাতন্ত্র শক্তভাবে ভিত্তি গেড়েছে। এখন আমরা কোরআনের বিধানের দিকে ফিরে যাব। আমরা এখানে দেখব এই মোল্লাতন্ত্র কে কোরআন সমর্থন করে কি না।
প্রশ্ন করা যায় যেহেতু তারা আল্লাহর দ্বীন কে রক্ষা করে এবং মুসলিম উম্মাহ কে এই দ্বীনের সেবা দিয়ে থাকে, সেহেতু তারা তাদের সময় কাদের কাছে বিক্রি করছে? তারা কি তাদের সময় আল্লাহর কাছে বিক্রি করছে? সত্যিকার অর্থে তারা দ্বীনের নামে মানুষকে কোরআন থেকে দূরে সরিয়ে রেখে তাদের নিজস্ব দলের (শিয়া, সুন্নী, কাদিয়ানী, ওহাবী ইত্যাদি) মতবাদ প্রচার এবং প্রসার করছে যাতে তাদের এই পেশা আরও মজবুত হয়। এই সম্পর্কে আল্লাহ বলেছেনঃ
“And believe in what I have revealed, verifying that which is with you, and be not the first to deny it, neither take a mean price in exchange for My communications (verses); and Me, Me alone should you fear” [02:41]
“They have taken a small price for the communications of Allah, so they turn away from His way; surely evil is it that they do” [09:09]
“Surely those who conceal any part of the Book that Allah has revealed and take for it a small price, they eat nothing but fire into their bellies, and Allah will not speak to them on the day of resurrection, nor will He purify them, and they shall have a painful chastisement.” [02:174]
মোল্লাতন্ত্র কি একটি বৈধ পেশা?
মুল বক্তব্য হচ্ছে ধর্মীয় বিধানের সাথে ব্যবহারিক প্রয়োগ সম্পূর্ণ বিপরীত। এই ব্যাপারে যাওয়ার আগে চলুন গুগল সার্চ দিয়ে দেখি পেশা বা প্রফেশনের সংজ্ঞা কি।
A paid occupation, especially one that involves prolonged training and a formal qualification.
অর্থাৎ পেশা বা প্রফেশন হচ্ছে আয়ের মাধ্যম যা দ্বারা মানুষ জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। যদি কোন ব্যাক্তির কোন কাজ তার আয়ের মাধ্যম হিসাবে বিবেচিত না হয় তবে সেটা তার পেশা না।
অনুসরণ কর তাদের, যারা তোমাদের কাছে কোন বিনিময় কামনা করে না, অথচ তারা সুপথ প্রাপ্ত। (৩৬:২১)
কোরআনে “ইমাম” শব্দটা যেখানে এসেছে সেটা কোন দল, গোত্র, জাতি-এর নেতা হিসাবে ব্যবহার হয়েছে। কোথাও আজকে আমরা যে ইমাম দেখি বা মসজিদে যে ইমাম নিয়গ দেওয়া হয় সেই অর্থে ব্যবহার হয়নি। ইমাম শব্দটা নেতা অথবা লিডার হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে এবং এটা কোন ভাবেই পারিশ্রমিকের বিনিময়ে নিয়োগপ্রাপ্ত অথবা বেতনভুক্ত কোন পেশার মানুষকে বোঝায়নি, এবং সেই ধরনের পেশার বিরুদ্ধেই কোরআনের অবস্থান যা ৩৬:২১ এ বর্ণনা করা হয়েছে।
এটা পরিষ্কার যে ধর্মীয় রীতি বা শিক্ষার জন্য কোন বিনিময় নেওয়া যাবে না। যদি তাই হয় তবে এই সম্পর্কিত কোন পেশা থাকার কথা নয়, যেহেতু পেশা টাকা উপার্জনের মাধ্যম। কিন্তু আমরা এখন ধর্মীয় রীতি নীতি পালন এবং বিধানের জন্য এই রকম পেশার বিভিন্ন মানুষ দেখি। ইনফ্যাক্ট শিয়া, সুন্নী, কাদিয়ানী, ওহাবী সব দলই এই বিনিময় প্রথা সমর্থন করে, যা কোরআনের শিক্ষার সম্পূর্ণ বিপরীত।