প্রথম পর্বের লিঙ্কঃ
নবী মুহাম্মদ (সাঃ) -এর খোজে (প্রথম পর্ব)
বিনিস্ট/ধ্বংস নগরীঃ
কোরআনের বর্ণনা অনুযায়ী নবী মুহাম্মদ (সাঃ) যে জায়গায় বাস করতেন , তার আশেপাশের অনেক শহর আল্লাহ ধ্বংস করে দিয়েছিলেন।
And certainly We destroyed what surrounds you of the towns, and We have diversified the Signs, that they may return. (46:27)
এই খানে আরবী “হাওলা” শব্দটার অনুবাদ করা হয়েছে surrounds। এই শব্দ কোরআনের অনেক জায়গায় ব্যাবহার হয়েছে। যাদের সন্দেহ আছে একটু কষ্ট করে কোরআন খুলে দেখে নিতে পারেন। মক্কার আশেপাশে এই রকম কোন ধ্বংস প্রাপ্ত শহর পাওয়া যায়না।
And Aad and Thamud, and verily, (has) become clear to you from their dwellings. And made fair-seeming to them the Shaitaan their deeds and averted them from the Way, though they were endowed with insight. (২৯:৩৮)
আদ এবং তাহমুদ কোথায়? মক্কার আশেপাশে কোন শহরের নাম আদ, তাহমুদ আছে কি? মক্কা থেকে দেখা যায়?
লুতের শহরঃ
When Our Decree issued, We turned (the cities) upside down, and rained down on them brimstones hard as baked clay, spread, layer on layer,- (১১:৮২)
এইখানে আল্লাহ্ বলছেন আল্লাহ্ লুতের শহর ধ্বংস করে দিয়েছিলেন। লুতের শহর ধ্বংসের যে বর্ণনা পাওয়া যায় তা হচ্ছে আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যূৎপাত। এবং এই লুতের শহর নবী মুহাম্মদ (সাঃ) যেখানে বাস করতেন তা থেকে বেশী দূরে নয়। আল্লাহ্ নবী মুহাম্মদের আধিবাসীদের উদ্দেশ্যে বলেছেনঃ
Marked from your Lord. And not it (is) from the wrongdoers far. (১১:৮৩)
প্রশ্ন হচ্ছে মক্কার আশেপাশে লুতের শহর কোথায়? লুতের শহর নবী যেখানে বাস করতেন সেখান থেকে বেশী দূরে নয়। আল্লাহ্ নবী এবং তার এলাকার অধিবাসীদের উদ্দেশ্য করে বলেছেনঃ
And indeed, Lot was among the messengers. when We saved him and his family, all, Except his wife among those who remained। Then We destroyed the others. And indeed, you pass by them in the morning. And at night. Then will you not use reason? (৩৭:১৩৩-১৩৮)
you pass by them in the morning And at night. – অর্থাৎ, লুতের শহর নবী যেখানে বাস করতেন সেখান থেকে এমন দুরত্বে ছিল যে নবী এবং তার এলাকার লোক জন সকাল সন্ধ্যা লুতের শহরের ধ্বংসাবশেষে পার হতে পারত। এর অর্থ হচ্ছে, নবী মুহাম্মদ যেখানে বাস করতেন, সেখান থেকে লুতের শহর খুব কাছাকাছি।
যদিও অনেকে কমেন্টটর বলে থাকেন এইটা সিরিয়াতে ট্রেড জার্নির কথা বলা হয়েছে, কিন্তু এইরকম কোন ইঙ্গিত আমরা কোরআন থেকে পাইনা। এই ধরণের কথা বলার কারন হচ্ছে, জোর করে জিওগ্রাফি মিলানোর চেষ্টা।
And verily, they have come upon the town which was showered (with) a rain (of) evil. Then do not they [were] see it? Nay, they are not expecting Resurrection. And when they see you, not they take you except (in) mockery, "Is this the one whom Allah has sent (as) a Messenger? (২৫:৪০-৪১)
এই আয়াতে নবীর এলাকার লোকজনদের কথা বলা হয়েছে।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে,
১। নবী মুহাম্মদ (সাঃ) যে এলাকায় বাস করতেন তা মুলত এগ্রিকালচারাল ল্যান্ড ছিল যেখানে বিভিন্ন ফল ফলত, বিভিন্ন ফসল হত। আল্লাহ্ বলেছেন, এই ফল এবং ফসলের মধ্যে বিভিন্ন নিদর্শন আছে এবং এই ফল এবং ফসল সংগ্রহের সময় এর পাওনা পরিশোধ করে দিতে।
২। নবী মুহাম্মদ (সাঃ) যে এলাকায় বাস করতেন তার আশেপাশের অনেক শহর ছিল যা আল্লাহ্ ধ্বংস করে দিয়েছেন। সে বিনিস্ট শহর গুলির ধ্বংসাবশেষ গুলি অবিশ্বাসীদের জন্য নিদর্শন ছিল। লুতের শহর এমন এলাকায় ছিল যার দূরত্ব নবী যেখানে বাস করতেন সেখান থেকে বেশ কাছে।
এই দুইটা পয়েন্ট যদি আমরা একসাথে করে দেখি, তবে বর্তমান মক্কার সাথে এর কোন মিল পাওয়া যায় না।
মক্কা সম্পর্কে যতটুকু জানিঃ
১। মক্কার আবহাওয়া কোরআনে বর্ণিত ফল এবং ফসল জন্মানোর জন্য উপযুক্ত না।
২। ৮ম শতাব্দীর আগে পর্যন্ত কোন ইতিহাসবিদদের বর্ণনায় মক্কা নামক কোন শহরের নাম পাওয়া যায় না। লেটেস্ট ৭৪০ সালে মক্কা শব্দটা এসেছে।
৩। রোমানরা এরাবিয়ার অনেক ম্যাপ তৈরী করে রেখে গিয়েছে, সেখানে মক্কা নামক কোন শহরের অস্তিত্ব পাওয়া যায় না।
৪। মক্কার আশেপাশে কোরআনে বর্ণিত এই রকম কোন ধ্বংস প্রাপ্ত শহরের অস্তিত্ব পাওয়া যায় না।
৫। যত রকম প্রি- কোরানিক ইনস্ক্রিপশন আছে, তার কোনটাতেই মক্কা বা বক্কা বলে কোন শব্দ নেই।
৬। কোরআন অনুসারে হজ্জ্বের আহবান নবী ইব্রাহিমের সময় থেকে। কিন্তু নবী ইব্রাহিমের পরবর্তী থেকে নবী মুহাম্মদের আগের পর্যন্ত কোন নবী/রাসুল হজ্জ করার জন্য মক্কায় এসেছেন এই রকম কোন ডকুমেন্ট নাই।
৭। নবী ইব্রাহিম তার স্ত্রী এবং পুত্র কে মক্কায় রেখে আসেন নি। অর্থাৎ, নবী ইব্রাহিমের পরিবার দুইভাগে বিভক্ত, একভাগ জেরুজালেমে আর একভাগ মক্কায় – এইটা সম্পূর্ণ জালিয়াতি। এর উৎস ওল্ড টেস্টামেন্ট। আমরা উহা কপি করে আমাদের ভার্সন বানিয়েছি। এই রকম কোন প্রমান বা ইঙ্গিত কোরআনে পাওয়া যায় না।
শেষ কথাঃ
নবী মোহাম্মদ (সাঃ) এর জন্ম কত সালে বা উনি কোথায় জন্ম গ্রহণ করেছেন- এইটা মুল ধর্মীয় বিশ্বাসের কোন ভিত্তি না। এইটার সাথে পাপ-পুন্য, মুসলমানদের কর্তব্য, দ্বীনের পথে চলা, পরকাল –এইসবের সাথে সম্পর্কিত না। উনি যত সালেই জন্ম গ্রহণ করে থাকুক বা যেখানেই জন্ম গ্রহণ করে থাকুক, উনার আদর্শ কোরআন আমাদের মধ্য বিদ্যমান। এই লেখাটার উদ্দেশ্য হচ্ছে যে নবী মুহাম্মদের জন্ম সময় এবং জন্মস্থান নিয়ে প্রচলিত মতবাদ কোরআন দ্বারা সমর্থিত নয়।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৮:২৭