আমার ভৌতিক অভিজ্ঞতা-২ (গোরস্তানের আতংক)
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
নতুন চাকরী পেলাম, তাও ঢাকার বাইরে, মন কিছুটা খারাপ। বাবা-মায়ের সান্নিধ্য ছেড়ে যেতে হবে। অচেনা শহর, অচেনা মানুষ, অচেনা পরিবেশ, সবকিছু মিলেই কেমন যেন লাগছিল। তবে ভয় পাচ্ছিলাম না। কারন ঘুড়াঘুড়ি করতে আমার ভালই লাগে, আবার তার উপরে চট্টগ্রাম। চট্টগ্রাম হচ্ছে আমার সেকেন্ড হোম। এই শহরকে আমি ভালোবাসি, রূপবতী শহর, রুপ সজ্জ্যার উপকরন হচ্ছে পাহাড়, সাগর, বৃক্ষরাজি আর অফুরন্ত বাতাস। লিখতে যেও আমি আমার ফেলে আশা অতীতের সৃতিতে রোমাঞ্চিত হচ্ছি।
চট্টগ্রামে থাকতাম হালিশহরে, কর্মস্থল ছিল নিউমার্কেট এলাকায়। বাসা থেকে অফিসের দূরত্ব প্রায় ৫ কিলোমিটার হবে। সকালে বাসে করেই যেতাম, ভিড়-বাট্টা বেশি থাকতনা। ৭ নাম্বর বাসে করে যেতাম, আসার সময় হত যত হ্যাপা। সেজন্য রিক্সাই ব্যবহার করতাম, প্রায় পোনে এক ঘণ্টা লাগত বাসায় পৌঁছাতে।
রিক্সা রুটের পথিমধ্যে পড়তো চট্টগ্রামের অন্যতম বড় কবরস্থানের পেছন দিকের অংশ। ঘড়ি ধরে দেখেছি, রিক্সায় প্রায় ৫ মিনিট লাগতো জায়গাটা পার হতে। যখন ফিরতাম তখন প্রায়ই রাত হয়ে যেত। প্রতিদিন রাত ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে সেই জায়গাটা ক্রস করতাম। ঐ জায়গায় দোকানের সংখ্যা ছিল হাতেগোনা কয়েকটা মাত্র আর বাসাবাড়িও খুব বেশি একটা ছিলনা। গোরস্থানের বিপরীতেই পাহাড় থাকায় খুব বেশি কিছু গড়ে উঠতে পারেনি।
রাস্তার দুই পাশেই ছিল প্রচুর গাছ, দিনের বেলা বেশ ভাল লাগতো কিন্তু রাতের পরিবেশ ছিল গা ছম-ছম করা। যারা চট্টগ্রামে থেকেছেন তারা ভাল করেই জানেন যে, সেখানের ইলেকট্রিসিটির কি পরিমাণ বেহাল দশা। প্রায় রাতেই ঐ জায়গা দিয়ে যাবার সময় ইলেকট্রিসিটি থাকতনা।
নিয়মিত যাওয়া আসা করছি, কোন সমস্যা নেই, হঠাৎ একদিন গোরস্থানের পাশ দিয়ে যাবার সময় দেখলাম সাদা রঙ্গের কি যেন একটা নড়াচড়া করছে। রিক্সা দ্রুত চলে গেলো, আমিও ঘাড় ফিরিয়ে বারবার দেখতে চাচ্ছিলাম কিন্তু গাছের কারনে ঠিক দেখতে পেলাম না। পরের দিন খুব ভাল করে লক্ষ্য করতে লাগলাম, নাহ কিছুই তো নেই। ধরেই নিলাম চোখের ভ্রম ছিল, সারাদিন অফিসে খাটাখাটি করে ক্লান্ত মন উল্টাপাল্টা কিছু একটা দেখিয়েছে বলে মনকে প্রবোধ দিলাম।
পরের দিন ফিরছি, ইলেকট্রিসিটি নেই, আবার সেই সাদা কাপড়ের নড়াচড়া দেখলাম, কেমন করে যেন মোড়াচ্ছে আর মাটিতে গড়াগড়ি করছে, এই দৃশ্য দেখে পেটের ভিতরে কেমন যেন অদ্ভুত অনুভূতি হতে লাগলো, লক্ষ্য করলাম ঘেমে উঠেছি, রিক্সাওয়ালাকে বললাম, দেখতো ওইটা কি দেখা যায়। রিক্সাওয়ালা বলল কৈ,কি, কিছুইতো দেখিনা। আমার ভয় আর বেড়ে গেলো, তাহলে কি শুধু আমি একাই দেখলাম, এর মানে কি ?! বাসায় এসে খাওয়া দাওয়া করলাম, মেস মেম্বারদের সাথে কোন কথা না বলেই ঘুমাতে গেলাম। কিন্তু না, ঘুমতো আসে না, এপাশ ওপাশ করে রাত কাটিয়ে দিলাম।
তার পরের দিন, আবার সেই পথ, আবার সেই দৃশ্য দেখতে হবে, অজানা আতংকে অস্থিরতা বেড়ে গেল। চিন্তা করলাম আজকে যাই হোক না কেন,রিক্সা থামিয়ে সেখানে যাব । এভাবে আতংক নিয়ে থাকা যাবে না। রিক্সা এগুচ্ছে আর আমার হার্ট বিট বেড়েই চলেছে, একটা সময় মনে হল হৃৎপিণ্ডটা ফেটে বের হয়ে যাবে। ঠিক ঐ জায়গায় এসে দেখলাম গোরস্থানে মানুষের বেশ বড় একটা জটলা। রিক্সা থামিয়ে ত্রস্ত পায়ে সেখানে গেলাম, এখন ভয় লাগছেনা কারন অনেক মানুষের আনাগোনা এখন সেখানে, দোয়া পড়তে পড়তে ভিতরে গেলাম। সবাই খুব চেঁচামেচি করছে, ভাবলাম লাশ দাফন করতে এসেছে হয়তো। কিন্তু না, মানুষের মখে যে ঘটনা শুনলাম তাতে আমার ভয় কেটে গেলো, পাশাপাশি খুব কষ্টও পেলাম।
আসলে, আমার দৃষ্টি ভ্রম ছিলনা, সেই সাদা কাপড়ের নাড়াচাড়া, অদ্ভুত মোচড়া-মুচড়ি টা ছিল কুকুরের কাজ। বৃষ্টিতে মাটি সরে যাওয়ায়, কোন এক সদ্য দাফন করা হতভাগ্যের লাশ নিয়ে টানা হেঁচড়া শুরু করেছিল ককুরের দল, আর সেটাই আমি দেখেছিলাম, সাদা কাফনের নড়াচড়া।
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
তোমাকে লিখলাম প্রিয়
আবার ফিরে আসি তোমাতে
আমার প্রকৃতি তুমি,
যার ভাঁজে আমার বসবাস,
প্রতিটি খাঁজে আমার নিশ্বাস,
আমার কবিতা তুমি,
যাকে বারবার পড়ি,
বারবার লিখি,
বারবার সাজাই নতুন ছন্দে,
অমিল গদ্যে, হাজার... ...বাকিটুকু পড়ুন
ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ মিসড কল
নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন
হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়
সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।
হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন
আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই
সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন
যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ
গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।
... ...বাকিটুকু পড়ুন