আগে স্কুলে যেতাম আসতাম ভ্যানে করে। ভ্যানে করে বললে ভুল হবে, ভ্যন ঠেলতে ঠেলতে যেতাম আসতাম। স্কুল ভ্যানগুলার মধ্যে প্রতিযোগিতা চলতো কে আগে যেতে পারে তাই ভ্যান থেকে নেমে ঠেলাঠেলি তখন আমাদের কাছে ছিলো একটা জনপ্রিয় খেলা।
টিফিনের জন্য বাসা থেকে প্রতিদিন ১০ টাকা দেয়া হতো।দিন শেষ হয়ে যেতো তবে এই ১০ টাকা আমি শেষ করতে পারতাম না।
টিফিন টাইমে স্কুলের আসে পাশের সব দোকান/কনফেকশনারী/হোটেল ৫ মিনিটের মধ্যেই খালি হয়ে যেতো। তাই টিফিনের ঘন্টা পরার সাথে সাথেই শুরু হতো ভৌ দৌড়। ছোট্ট একটা গেট দিয়ে বের হয়ে হুমড়ি খেয়ে পরতাম স্কুলের পাশের হোটেলে।
তখন বড় বড় পুরি পাওয়া যেতো ৩ টাকা করে। ২ পিসেই আমাদের পেট ফুলে যেতো। ৬ টাকা বিল দেয়ার পরে অবশিষ্ট ৪ টাকা কিভাবে খরচ করবো ভাবতে ভাবতে টিফিন শেষের ঘন্টা পরে যেতো।
আর যেদিন ভাগ্য ভালো ছিলো, স্যার ঘন্টা পরার আগেই টিফিনের জন্য ছুটি দিয়ে দিতো। সেদিন স্কুল ক্যান্টিনে যেতাম। ক্যান্টিনের একপাশে গ্রিলের ফাক দিয়ে হাত ঢুকানো যেতো। হাতের মুঠোয় টাকা গুজে নিয়ে হাত পেতে থাকতাম। এক্সক্লুসিভ আইটেম ছিলো বার্গার, দাম ৬ টাকা। ২ টাকার পাউরুটির ভিতর আলুর টিক্কা, আর ভাগ্য ভালো থাকলে আলুর মাঝে ডিমের অংশ পাওয়া যেতো।
আর যেদিন মিনিট পাচেঁক দেরি হতো ক্লাস থেকে বের হতে সেদিন ঝালমুড়ি ছাড়া আর কোনো গতি ছিলো না। সেই ঝালমুড়িতেও লাইন। খালেকের বিখ্যাত ঝালমুড়ি। একটা বড় বালতির মধ্যে সব মসলা নিয়ে এরপর বালতির মধ্যে হাত দিয়ে দিতো একটা ঘুরান্টি। ব্যাস! ঝালমুড়ি রেডি। ঠেলাঠেলি করে ৫ টাকার ঝালমুড়ি খাওয়ার পর ও আমার ৫ টাকা বেচেঁ যেতো।
টিফিন শেষে বেচে যাওয়াগুলো কেবল কাগজের টাকা ছিলো না, সেই টাকাগুলো ছিলো আমার কাছে এক টুকরো সুখ। চাইলেই দোকান থেকে আমি কিছু কিনে খেতে পারি কিংবা টাকা জমিয়ে একটা বল কিনতে পারি! এই বেপারগুলো ভাবতেই আমি রোমাঞ্চিত অনুভব করতাম। এক প্যান্টের পকেট থেকে আরেক প্যান্টের পকেটে টাকাগুলো ঘুরঘুর করতো, তবে শেষ আর হতো না।
এখন যেমন ঘুমের আগে হতাশার পৃষ্ঠা পালটাতে পালটাতে এক পর্যায়ে বিরক্ত হয়ে ঘুমিয়ে যাই, সেই আগের সময় আমার সব ধ্যান ধারনায় ছিলো সেই এক টুকরো সুখ।
সময় বদলেছে, একে স্কুলের গলিটাও এখন আর আগের মতো নেই। নানান ফ্র্যাঞ্চাইজির ব্রান্চ সেখানে। এখন হয়তো টিফিনের ২০ মিনিট শেষেও দোকানে খাবার রয়ে যায়। ৬ টাকার বার্গার চাইলেও পাওয়া যাবে না, কেবল সৃতিতেই রয়ে গেছে সেই বার্গার। পাওয়া যদি যেতো নিশ্চই কেউ সেই বার্গার খেয়ে ক্ষেত তকমা নিতে চাইতো না। ওই বার্গার তো ফুডব্যাংকেও শেয়ার দেয়া যেতো না সবাই পচানি দিবে বলে।
এখন পকেটের এক কোনে পরে থাকা ১০ টাকার নোটগুলো মূল্যহীন। হাজার টাকার নোটটাও যেনো কিভাবে খরচ হয়ে যায় টের পাই না। কেবল টের পাই নোটের বিপরীতে কেউ আমাকে এখন এক টুকরো সুখ দেয় না।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ১০:১৬