ইনবক্স অণুকাব্য (৩০)
হাসান মনজু
~~~~~~~
নন্দিনী,
সেই একঘেঁয়ে দিনলিপি অগোছালো,
জীবনটা আর লাগছেনা ভালো,
বুঝি জীবনের খুব ঘুম পেয়েছে,
অতীতটা আজ খুব পিছু নিয়েছে,
ডাকছে ষাটের পরিপাটি শৈশব,
নাজাই খাতায় লেখা নেই কিছু বৈভব,
হাত ধরেছে আজ ফেলেআসা কৈশোর,
নিরুচ্চারে বলছে দুরন্ত সত্তর,
নিয়ম বালাইহীন উদভ্রান্ত আশির দিনক্ষণ,
যেখানে যেমন খুশি বাউন্ডুলে জীবন,
এলোমেলো সন্ধ্যা, শরৎ দুপুর,
রিনিঝিনি বাজছে স্মৃতির নুপূর,
শীতের শিশির ভেজা জমাট রাতে,
উষ্ণতা খুঁজেছি শুধু তোমার হাতে,
বিমূর্ত যৌবন বসে মুখোমুখি,
সেইতো ভালোবাসার প্রথম উঁকি,
অকারণ বোকা বোকা লাজুক হাসি,
ফল্গুধারার মত স্বপ্ন রাশিরাশি,
অদ্ভুত চাহনিতে ভেঙ্গেছিলে মনের দুয়ার,
দূর্লভ মুহূর্তগুলো যেনো অমূল্য স্মৃতি ভান্ডার,
সেইসব আজ খুব মনে পড়ছে,
একটিও দুরন্ত দুপুরগুলো ধরে রাখতে পারিনি,
অর্ক,সরি সরি,ব্যস্ত ছিলাম গো,
ইনবক্স খুলতে পারিনি,
এখন কেমন বলো?
=না না তেমন কিছু নয়,সর্দিজ্বর
-ওই হোলো,অসুখ তো....
=আজ বড় জীবন ভাবনা গো...
-আবার !
=বটঝুড়ি দোলনা,তাল পাতার বাঁশী,সেপাই,
যেখানে যেমন ছিলো ছড়ানো ছিটানো শৈশব, ঘুড়ি লাটাই,
চেয়েছি শুধু ঘুঘুডাকা,ঝিমধরা একটি শীতল দুপুর ,
ফেরত চিঠির মত ফিরিয়ে দিয়েছে ক্লান্ত নুপূর,
উদভ্রান্ত,বিবর্ণ বিকেল ছায়াবট,
খেয়ালির স্রোতে ভেসে ভেসে
খুঁজে পাই জীবনের তট,
বৈঠা তুলে,জল ঝেড়ে দিকভ্রান্ত নির্বেদ নাবিক ....
-এমন করে বলছো কেনো গো হঠাৎ? কি করি ?
=অস্থির কেন এতো?জ্বর নেই
-মিথ্যে বলে সান্তনা দিচ্ছো ,
=দুর পাগলী,মিথ্যে নাতো,মেপে দেখেছি,সত্যি নেই।
-কান্নাটা গলার কাছে ঢিপ দিচ্ছে,হার্টবিট বাড়ছে,টের পাচ্ছি।কাঁদতে ইচ্ছে করছে....
=ঠিক আছে লিখছিনা...
-জানোতো,সুখ হলো পাখির মতো মনের খাঁচায় ঢুকতে চায়না,বড্ড স্বাধীন,
আর দুঃখ যেনো টিকটিকি, মনের দেয়ালে লেপ্টে থাকে সারাদিন,
নন্দিনী,সময় বড় অসহিষ্ণু,
দরজা খুলে দিতে কুন্ঠিত নয় আর্তকেও,
বড্ড অধিকার সচেতন,স্বার্থপর,
ইদানীং বলে, বুড়ো বড্ড ব্যাকর ব্যাকর
অসতর্ক ফিসফাস,
খিটখিটে,অসহ্য,ঈশ্বর,কবে যে নেবে...
জীবনের পালে কমছে হাওয়া,
কমছে তালিকার চাওয়া পাওয়া,
মাপা বৃত্তের পরিধি ক্রমশ ছোট হয়ে আসছে,
নিষ্ঠুরতা পরাভূত দয়ার কাছে।
ঈশ্বর,এতো অনিন্দ্য সূন্দর,
এতো পূর্ণ তোমার আয়োজন,
জানিনা আমি সৃষ্টির কোন প্রয়োজন,
যার ঘাস,পাহাড় এতো সবুজ,
যার ভালোবাসা এতোই অবুঝ,
আকাশ,সমুদ্র এতো নীল, নির্মল,
ফল,বায়ু,জল এতো স্নিগ্ধ শীতল,
যার ভালোবাসা হিমালয়,প্রশান্ত,
আল্পস,পামিরে,
সে কখনো রুদ্র হতে পারে ?
ঈশ্বর,তুমিও এক মহান প্রেমিক,
রাতের কপালে দাও তারাদের টিপ,
শরৎ আকাশ সাজাও কত রঙবাহারে,
শুক্লপক্ষে চাঁদকে ডাকো নক্ষত্র দরবারে,
সুর্যের লাল টিপ প্রতিদিন সকালে,
এঁকে দাও নিজ হাতে বসুন্ধরার কপালে।
আমিও পাহাড়ী নদীর মতো নুড়ি পাথর বুকে নিয়ে জীবনের কবিতা লিখে হারিয়ে যাবো চিরতরে....
নদীকে কি কেউ ফেরাতে পারে...?