somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গেইম পাগলদের জন্য - হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য হাফ ব্লাড প্রিন্স

০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৯ রাত ১০:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চোখে গোল চশমা, হাতে জাদুর কাঠি, কপালে গভীর দাগওয়ালা, অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় ছোট্ট বালকটির কথা মনে আছে তো সবার? হ্যারি পটারের কথা কারো ভুলে যাবার কথা নয়। জে. কে. রাউলিংয়ের সৃষ্ট এই অসাধারণ চরিত্রের নাম ছেলে-বুড়ো সবার জানা। হ্যারি পটারের ওপরে বের হয়েছে ৭টি বই। এগুলো হচ্ছে- ফিলোসফার’স স্টোন বা সরসরার’স স্টোন, চেম্বার অব সিক্রেটস, প্রিজনার অব আজকাবান, গবলেট অব ফায়ার, অর্ডার অব দ্য ফিনিক্স, হাফ ব্লাড প্রিন্স ও ডেথলি হ্যালোস। এই বইগুলোর কাহিনীর ওপরে নির্মিত হয়েছে একই নামের ৬টি মুভি। সপ্তম বই ‘ডেথলি হ্যালোস’-এর ওপরে বানানো হবে ২ পর্বের মুভি- যার একটি এই বছরে এবং অপরটি আগামী বছরে বের হবে। বই ও মুভির পাশাপাশি এই সিরিজের কাহিনীর ওপরে ভিত্তি করে মুভি বের হবার পরপরই বের হয়েছে হ্যারি পটারের ভিডিও গেম। পর্যায়ক্রমে মুভির কাহিনীর ভিত্তিতে বের হয়েছে ৬টি গেম এবং মুভির সাথে মিল না রেখে আলাদা একটি গেম বের হয়েছিলো, যার নাম হ্যারি পটার কুইডিচ ওয়ার্ল্ড কাপ। এতে শুধু কুইডিচ গেম খেলার ব্যবস্থা আছে, কোনো মিশন বা অ্যাডভেঞ্চার জাতীয় কিছু নেই। এছাড়াও হ্যারি পটার নিয়ে বানানো আরো কয়েকটি গেমের মাঝে রয়েছে- লেগো ক্রিয়েটর, লেগো হ্যারি পটার : ইয়ার ১-৪, অ্যাকশন ফিগার, ট্রেডিং কার্ড ইত্যাদি।

সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত মুভি হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য হাফ ব্লাড প্রিন্স নিয়ে বের হয়েছে নতুন একটি গেম। বাজারে আসার সাথে সাথেই হ্যারি পটারভক্তদের মাঝে গেমটি দারুণ সাড়া জাগিয়েছে। এই সিরিজের গেমের চাহিদা যে অনেক বেশি তা খুব সহজেই বোঝা যায়, কারণ সব সময় মুভি মুক্তি হবার পরপরই মুভির কাহিনীর ওপরে ভিত্তি করে বানানো গেমগুলো মুক্তি পায়। কিন্তু এবার তার ব্যতিক্রম হয়েছে, মুভির মুক্তির আগেই গেমটি বাজারে এসেছে এবং তা যথেষ্ট ব্যবসায় সফলও হয়েছে। এ গেমে মুভির কাহিনীর আবহ পুরোপুরি বিদ্যমান। গেম খেলার সময় মনে হবে মুভি দেখছেন। গেমটি প্রায় সবধরনের প্লাটফর্মে অবমুক্ত করা হয়েছে। মাইক্রোসফট উইন্ডোজ, ম্যাকিনটোশ অপারেটিং সিস্টেম, প্লে স্টেশন ২ ও ৩, প্লে স্টেশন পোর্টেবল, এক্সবক্স ৩৬০, নিনটেন্ডো ডিএস, উইই এমনকি মোবাইলের জন্যও বাজারে এসেছে। গেমটি বরাবরের মতো পাবলিশ করেছে বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান ইলেকট্রনিক আর্টস এবং গেমটি ডেভেলপ করেছে ইলেকট্রনিক আর্টসের অন্তর্গত ব্রাইট লাইট স্টুডিও।
গেমের কাহিনীতে হগওয়ার্টের জাদুর স্কুলের প্রিন্সিপাল ডাম্পডোর হ্যারি পটারকে তৈরি হতে বলবে তাদের চিরশক্র লর্ড ভলডের্মটের সাথে শেষ যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হতে। ভলডের্মট তার কালোজাদুর ছায়া মাগল (সাধারণ মানুষ যা জাদুর দুনিয়ার বাইরের) জাদুকরদের ওপরে বিস্তার করে তার ক্ষমতা আরো বাড়িয়ে তোলার চেষ্টায় লিপ্ত। তাকে থামিয়ে তার পরিকল্পনায় ছেদ বসানোর জন্য ডাম্পডোর তার পুরনো বন্ধু ও সহযোগীদের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেন। তার ডাকে সাড়া দিয়ে তাদের দলে যোগ দেন প্রফেসর হোরেস স্লাগহর্ন, যার কাছে রয়েছে ভলডের্মটের অতীতের কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। হ্যারি পটারের হাতে এসে পড়বে একটি খাতা যাতে কিছু গোপন পোরশন (জাদুর পানীয়) তৈরির কৌশল লেখা আছে। খাতাটি হাফ ব্লাড প্রিন্স নামের এক ব্যক্তির। কিন্তু কে এই ব্যক্তি? এই প্রশ্নটি হ্যারিকে তাড়া করে ফিরবে। অবশেষে সে জানতে পারবে হাফ ব্লাড প্রিন্স আর কেউ নয়, সে সাক্ষাত প্রফেসর স্নেপ। ভলডের্মটকে সাহায্য করার পেছনে সে জড়িত।

গেমে হ্যারি পটার, রন উইজলি ও রনের বোন জিন্নি উইজলিকে নিয়ে খেলা যাবে। হারমোনিকে নিয়ে খেলার ব্যবস্থা রাখা হয়নি। হ্যারি পটারকে নিয়েই বেশি খেলতে হবে গেমারকে। বাকিদের নিয়ে গেমের কিছু লেভেল খেলার সুযোগ দেয়া হবে। গেমের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ব্যাপার হচ্ছে ডুয়েল ফাইট। গেমে অনেকবার আপনাকে মুখোমুখি হতে হবে প্রতিপক্ষের, যাদের আপনার হারাতে হবে জাদুর কাঠির ভরসায়। একসাথে দুইজনের সাথেও একা লড়াই করতে হবে। প্রতিটি জাদুমন্ত্র মাউসের সাহায্যে প্রয়োগ করতে হবে, যা খুবই মজার বিষয়। কোনো বস্তু ওঠানোর জন্য উইনগারডিয়াম ল্যাভিওসা, কাউকে জোরে ধাক্কা দেবার জন্য এক্সপেলিয়ামাস, কাউকে কিছুক্ষণের জন্য অবশ করার জন্য স্টুপিফাই, আত্মরক্ষার জন্য প্রোটেগো ইত্যাদি পুরনো জাদুমন্ত্রের পাশাপাশি নতুন কিছু জাদুমন্ত্রের প্রয়োগও করা যাবে এতে। কাউকে উল্টো করে ঝুলিয়ে রাখা যাবে, কোনো বস্ত্তকে অনেক দূরে ছুড়ে দেয়া যাবে, আগুন দিয়ে কোনো কিছু পোড়ানো যাবে, খুব তাড়াতাড়ি একের পর এক জাদুমন্ত্র ছুড়ে প্রতিপক্ষকে ধরাশায়ী করা যাবে এই গেমে। জাদুর পানীয় তৈরি করার কৌশলগুলোও বেশ আনকোরা। কুইডিচ ম্যাচে সিকার হিসেবে খেলার মধ্যেও আনা হয়েছে নতুনত্ব।

গেমের গ্রাফিক্স ভালোমানের বলা চলে, কারণ গেমের প্রতিটি চরিত্রের অবয়ব হুবহু মুভিতে অভিনয় করা চরিত্রের সাথে মিলিয়ে বানানো হয়েছে। চেহারার গ্রাফিক্স নিখুঁত বলা চলে না, তবে ভালো হয়নি এই কথাটা বলাও হবে বেশ বড় একটি ভুল। প্রতিটি চরিত্রের মাঝে খুঁজে পাবেন বাস্তবতা এবং তাদের চলাফেরার গতিতে রয়েছে আগের তুলনায় বেশ ভালো রকমের স্বাচ্ছন্দ্য। আগের গেমগুলোতে হ্যারি পটারের দৌড়ানোর গতি ছিলো সাধারণ, কিন্তু এই গেমে সাধারণ দৌড়ের পাশাপাশি আরো জোরে দৌড়ানোর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে এবং দৌড়ানোর সময় ব্লার ইফেক্টের ব্যবহার করা হয়েছে, যা গেমারদের নজর কাড়বে। গেমে প্রত্যেক জাদুমন্ত্রের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে আলাদা বর্ণের ছটা এবং তা দেখতেও বেশ আকর্ষণীয়। গেমের পরিবেশ, স্থাপনাগুলোর দেয়াল, আসবাবপত্র, দরজা, রাস্তা, ব্রিজ, ঘাসে ঢাকা মাঠ সবকিছুর মাঝে নিখুঁত বাস্তবতার ছাপ খুঁজে পাবেন।

গেমে ব্যবহার করা হয়েছে অসাধারণ কিছু সাউন্ড ট্র্যাক। এগুলো কম্পোজ করেছেন জেমস হ্যান্নিগান এবং রেকর্ড করা হয়েছে লন্ডনের বিখ্যাত এয়ার স্টুডিওতে ফিলহারমোনিয়া অর্কেস্ট্রার সাহায্যে। গেমে এই আবহ সঙ্গীতের ব্যবহার গেমের মাঝে এনে দিয়েছে দারুণ এক প্রশান্তি, যা আপনি খেলার সময় উপভোগ করতে পারবেন। গেমের মিউজিকের সাফল্যের সাথে গেমের সাধারণ শব্দশৈলী পাল্লা দিতে পারেনি। কারণ গেমে দ্বৈত যুদ্ধের সময় প্রতিবার জাদুমন্ত্র প্রয়োগের সময় জাদুমন্ত্র উচ্চারণ করার কথা, তা না হলে জাদু হবার কথা নয়। কিন্তু গেমে কয়েকবার জাদুমন্ত্র প্রয়োগের পর একবার জাদুমন্ত্র উচ্চারণ করা হয়েছে। এটি গেমের একটি ভালো ত্রুটির তালিকায় পড়ে। গেমের আরেকটি খারাপ দিকের মাঝে রয়েছে গেমের সময়কাল। খেলতে খেলতে হঠাৎ করেই যেনো গেমটি শেষ হয়ে যাবে মনে হবে গেমারদের, কারণ এর গেমপ্লে টাইম খুব একটা বেশি নয়, যদি আপনি সরাসরি মিশন খেলে গেম শেষ করতে চান। গেমের সময়কাল বাড়ানোর জন্য দেয়া হয়েছে ডুয়েল চ্যাম্পিয়নশিপ, পোরশন বানানোর প্রতিযোগিতা, কুইডিচ ম্যাচে সিকার হিসেবে স্নিচ ধরার কাজ, পুরো হগওয়ার্ট খুঁজে ২০০টির মতো ক্রেস্ট খুঁজে বের করা, ক্লাবগুলোতে খেলে ভালো পয়েন্ট অর্জন করে ৫০টির মতো ব্যাজ সংগ্রহ করা ইত্যাদি।

গেমটি খেলতে যেকোনো ডুয়াল কোরের প্রসেসর (২ গিগাহার্টজের বেশি হলে ভালো), ১ গিগাবাইট মেমরির র?্যাম, ১২৮ মেগাবাইটের গ্রাফিক্স কার্ড (ন্যূনতম জিফোর্স ৫৭০০) হলেই হবে। এটি প্রায় ৬ গিগাবাইটের মতো জায়গা দখল করে এবং এটি উইন্ডোজ এক্সপি ও ভিসতা উভয়ই সমর্থন করে।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৯ রাত ১০:০৭
৫টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×