বাংলাদেশের বর্তমান মানচিত্র মুঘল সম্রাজ্যেরই সর্বপুর্বের মানচিত্র।ফেনী থেকে শুরু করে আজকের চট্টগ্রাম এলাকাটি শায়েস্তা খান মগ আরাকানের কাছ থেকে ঊদ্ধার করেন।১৬৬৬ সালে সংঘটিত এই অভিযান মুঘল সামরিক শক্তির এক অনন্য নিদর্শন।এই সামরিক অভিযান চলাকালীন সময়ে মুঘল সম্রাট ছিলেন আওরঙ্গজেব,তিনি এই ঘটনায় অত্যন্ত উৎফুল্ল হন এবং তার জীবনী আলমগীর নামায় এই ঘটনার বিস্তারিত বিবরন রেখে যান,তবে আলমগীর নামার অনুবাদক যে এন সরকার তার বইতে আলমগীরনামার পাশাপাশি শিহাবউদ্দিন তালিশ নামের এই যুদ্ধে অংশ নেয়া এক সৈনিকের বিবরনও সম্পুরক হিসেবে যোগ করেছেন।আজকের অংশটি যে এন সরকারের এনেকডোটস অফ আওরঙ্গজেব বইয়ের কনকোয়েস্ট অফ চাটগাঁও অংশের সংক্ষিপ্ত অংশের অনুবাদ।অনুবাদক আমি নিজেই।
শায়েস্তা খান
শাহ সুজার সুবাদারির আমলে তার অবহেলায় শাহী নৌবাহিনী ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়।মুৎসুদ্দিদের চাদাবাজি এবং স্বেচ্ছাচারিতায় নাওয়ারার(flotilla) দেখভালে বরাদ্ধকরা পরগনা গুলো ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়।এই পরগনাগুলোতে নৌবাহিনীতে কর্মরত অনেক নাবিক এবং সৈনিক তীব্র দারিদ্রে এবং খাদ্যাভাবে পতিত হয়।সময়ের সাথে সাথে তাদের অভাব আরও বৃদ্ধি পেতে থাকে।মীর জুমলা বাংলায় পৌছানোর পর এই অবস্থার পরিবর্তনে আগ্রহী হন তিনি নওয়ারার আকার এবং তাঙ্খা দুটোই বৃদ্ধি করেন যা ১৪লাখ রুপি তে যেয়ে দাঁড়ায়,তবে এই বিপুল কর্মযজ্ঞ শেষ করার আগেই মীর জুমলাকে আসামে ছুটে যেতে হয় এবং আসামেঈ তার মৃত্যু হয়(আসামের রানীর কালজাদুতে)মির জুমলা ঢাকা থেকে তার সঙ্গে বিপুল পরিমান নৌ সেনা এবং জেনারেল নিয়ে এসেছিলেন যাদের বেশীরভাগই আসামের যুদ্ধে মারা যায়,তাই মীর জুমলার মৃত্যুর সাথে সাথেই কার্্যবত বাংলার নৌবাহিনী ধ্বংস হয়ে যায়।
কর্নফুলীর তীরে মুঘল আরাকান যুদ্ধের কল্পিত চিত্র
১৩ ডিসেম্বর ১৬৬৪ শায়েস্তা খান ঢাকা এসে পৌছান এবং সঙ্গে সঙ্গেই নওয়ারার পুনর্গঠন শুরু করেন।শুধু তাই নয়,নৌবাহিনীর নাবিকদের রেশন,তাঙ্খা এবং নওয়ারার দেখভালে নিয়োজিত জায়গীরগুলর উন্নতিতে বিশেষ মনযোগ দেন,জাহাজ তৈরী ও মেরামতের জন্যও বিপুল পরিমান কাচামালও যোগাড় হতে থাকে।
বৃদ্ধ,জ্ঞানী,বিশ্বস্ত এবং নবাবের প্রীয়পাত্র হাকিম মুহাম্মদ হুসেন কে নতুন জাহাজ তৈরীর সার্বিক দায়িত্ব দেয়া হয়।মাশরাফি ঈ নওয়ারা এর দায়িত্ব আবারও মুহাম্মদ মুকিম কে দেয়া হয় যাকে মীর জুমলাই ঢাকায় রেখে যান নওয়ারা দেখশোনার জন্য।কিশোর দাস নামক জ্ঞ্যানী এবং বুদ্ধিমান আমলাকে দেয়া হয় নওয়ারার জন্য বরাদ্ধকরা জায়গীরগুলোর আয় ব্যায় তত্ত্বাবধায়ন করার।পুরনো সেনা এবং নৌ সেনাপতিদের প্রায় সবাইকেই বদলি করে নতুন মেধাবী সেনাপতিদের নিয়োগ দেয়া হয়।আর এই বিপুল কর্মযজ্ঞের পুরোটাই নবাব নিজেই তদারকি করতেন যার ফলে সল্পসময়ে এক শক্তিশালী নওয়ারা তৈরী হয়ে যায় মীর জুমলার মৃত্যুর পরে যারা ধ্বংস হয়ে যাওয়া নওয়ারা দেখে হাসি থাট্টা করতো তারা এবার ভয়ে কাপতে থাকে।
নওয়ারা পুনর্গঠন শেষে শায়েস্তা খান চট্টগ্রাম অভিমুখী অভিযানের বেস ক্যাম্প তৈরীতে মনযোগ দেন।এজন্য হুগলীর ফৌজদার মুহাম্মদ শরীফ কে ডেকে আনা হয় এবং বিপুল পরিমান সৈন্য ঘোড়া আর কামান সহপযোগে সংগ্রামগড়((পদ্মা ব্রহ্মপুত্রের মিলনস্থলে অবস্থিত) *রেনেল যায়গাটি খুজে পান নী।ম্যাপ দেখে আমার মনে হচ্ছে জায়গাটা ফরিদপুর মাদারিপুর এলাকায় মনে হচ্ছে যা চট্টগ্রাম অভিমুখী সেনাবাহিনীর বেস ক্যাম্প হতে পারে না)পাঠানো হয় এবং তিনি সেখানে একটি শক্তীশালী দুর্গ গড়ে তোলেন।আবুল হাসান কে ২০০ জাহাজের দায়িত্ব দিয়ে পাঠানো হয় জলদস্যু আটকানোর জন্য।মুহাম্মদ বেগ আবগাশ ১০০ জাহাজ নিয়ে ঢাপায় নোঙ্গর করে থাকেন আবুল হাসান এর রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে।এছাড়া ঘোড়া,কামান আর পদাতিক সৈন্য চালার সুবিধার্থে ঢাপা থেকে সংগ্রামগড় পর্্য ন্ত ১৮কোশ লম্বা উচু সড়ক তৈরী করা হয়।সন্দীপ দ্বীপ টি সংগ্রামগড় এবং চাটগাও এর মাঝামাঝি অবস্থিত তাই এর স্ট্রটেজিক গুরুত্ব ছিলো অসিম এবং সেনাবাহিনীর সাপ্লাই ডিপো হিসেবেও ছিলো অসাধারন।তাই নবাব দ্বীপটি এর জমিদার দিলাওয়ার খান এর কাছ থেকে ছিনিয়ে নেন।১২ নভেম্বর ১৬৬৫ সন্দ্বীপ মুঘলদের পদানত হয় এবং সেখানে মুঘল থানা স্থাপন করে একজন থানেদার নিয়োগ দেয়া হয়।
সম্রাট শাহজাহানও পর্তুগীজদের পছন্দ করতেন না হুগলী আর গুজরাতে উনি পর্তূগীজদের ব্যাপক পিটানি দেন ছবিটা তারই স্মারক
*এই অভিযানের প্রস্তুতির মদ্ধেই শায়েস্তা খান কুটনৈতিক তৎপরতাও চালিয়ে যান।তিনি জানতেন মগ আরাকানিদের যুদ্ধে হারাতে পারলেও পর্তুগীজদের শায়েস্তা করা না গেলে কিছুদিনের মদ্ধেই চট্টগ্রাম আবার মগদের হাতে চলে যাবে।তাই তিনি চট্টগ্রাম এবং তদসংলগ্ন বার্মা অংশের পর্তুগীজ প্রতিনিধী ক্যাপ্টেন মুর কে ডেকে পাঠান বাংলার নবাবের এভাবে পর্তুগীজ জলদস্যুদের সাথে আলোচনা আসলেই অভুতপুর্ব একটা ঘটনা।শায়েস্তা খান পর্তুগীজদের লোভ এবং ভয় দুটোই দেখান।এই কুটনিতীতে কাজ হয় পর্তুগীজরা মুঘল পক্ষে যোগ দেয় শুধু তাই নয় চট্টগ্রাম দুর্গের খুটি নাটি তথ্য এবং সেঈ দুর্গের রক্ষন সামলাতে ধেয়ে আসা বিশাল মগ বাহিনীর তথ্যও শায়েস্তা খান আগে ভাগেই পেয়ে যান পর্তূগীজদের মাদ্ধমে।তবে যুদ্ধের পর শায়েস্তা খান পর্তুগীজদের দেয়া কোন কথাই রাখেননী বরং এসব হার্মাদ দের ঢাকায় নিয়ে এসে একপ্রকার বন্দী করে রাখেন,যা বাংলায় তাদের লুটপাট ও অত্যাচারের পথ চীরতরে বন্ধ করে দেয়।এবং বাংলার উপকুল প্রায় ১৫০ বছরের পর্তুগীজ অত্যাচার থেকে মুক্ত হয়।
(কনকোয়েস্ট অফ চাটগাঁও অংশটি বেশ্ বড় তাই পরের পর্বে শেষষ করা হবে, *অংশ গুলো আমার সংযোজন)
দ্বিতীয় পর্ব
এনেকডোটস অফ আওরংজেব-২
প্রথম পর্বএনেকডোটস অফ আওরংজেব
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ১০:০৮